ঢাকা ০১:৪১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের মামলায় তিন নারীসহ ৬ জন রিমান্ডে

  • আপডেট সময় : ০৯:০৯:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৩ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের মামলায় আরো তিনজনকে গ্রেফতারের পর তিন নারীসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।

তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান তাদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডের আদেশ দেন।

রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন- মাদ্রাসার পরিচালক আল আমিনের স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮), তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার (৩০), আসমানী খাতুন (৩৪), শাহীন ওরফে আবু বকর (৩২), আমিনুর ওরফে দর্জি আমিন (৫০) ও শাফিয়ার রহমান ফকির (৩৬)। তাদের মধ্যে নারীদের তিন দিন করে এবং পুরুষদের সাত দিন করে রিমান্ড দেওয়া হয়েছে। প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই বিশ্বজিৎ দেবনাথ রিমান্ডের এসব তথ্য দেন।

এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার এসআই জহিরুল ইসলাম সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আসামি শাহিন, আমিনুর ও শাফিয়ারের ১০ দিন এবং আছিয়া বেগম, ইয়াসমিন আক্তার ও আসমানী খাতুনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই বিশ্বজিৎ দেবনাথ রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। এসময় আদালত তদন্ত কর্মকর্তার কাছে আসামিদের কার সঙ্গে কী সম্পর্ক জানতে চান।

তদন্ত কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম আদালতকে বলেন, এ মামলার প্রধান আসামি আল আমিন ঘটনার আগের দিন সারারাত বোমা তৈরি করে। ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমায়। পরদিন সকাল সাড়ে ১০টায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ভবনটা তছনছ হয়ে যায়। আছিয়া আল-আমিনের স্ত্রী। আর আছিয়ার ভাবি আসমা। অপর আসামি আসমানী এক সময় জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন। সাত মাস আগে জঙ্গি মামলায় জামিন পান। শাহিনের বিরুদ্ধে চারটা মামলা হয় জঙ্গি সংশ্লিষ্টার অভিযোগে। অপর আসামিরা তাদের সহযোগী।

আসামি আসমানীর পক্ষে তার আইনজীবী গাউছুর রহমান সিরাজী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। বলেন, তার বিরুদ্ধে আগে চারটা মামলা হয়। তবে জঙ্গি কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় দুই মামলায় ইতিমধ্যে খালাস পেয়েছেন। তিনি একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। তাকে রিমান্ডে নেওয়ার মত কোনো উপাদান নেই। তিনি কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের সম্পৃক্ত নন। সম্পৃক্ত থাকলে দুই মামলায় খালাস পেতেন না। তার অপরাধ শুধু পূর্বের মামলা। তার রিমান্ড বাতিল করে প্রয়োজনে জেলগেইটে জিজ্ঞাসা করার প্রার্থনা করছি।

অপর আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলতে চান আছিয়া। বলেন, এ ঘটনার সাথে আমার ভাই-ভাবি, আত্মীয় কেউ কোনোভাবে জড়িত না। আমার স্বামী আল আমিন দ্বিতীয় বার জেলে গেলে আমার ভাই আমাকে মাদ্রাসাটা করে দেয়। যেন আমি টিকে থাকতে পারি। আল আমিন ২০২২ সালের শেষের দিকে জেল থেকে বের হয়। এসে বলে, সে ভালো হয়ে গেছে। ফোনও চালাত না। এক/দেড় বছর ভালো ছিল। আল আমিনের বিষয়ে অনেক কিছু জানতাম না। জানলে আগেই (পুলিশকে) জানাতাম। কারণ সে কিছু করলে আমরাই ফেঁসে যাব এই ভয়ে। সে আমাকে অনেক নির্যাতন করতো। ফোন চেক করলে বুঝতে পারবেন। সে অপরাধ করতে পারে। আমরা তো অপরাধ করিনি।

এসময় আদালত তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এ ধরনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন আছে। তদন্তের দরকারে রিমান্ড চেয়েছে। রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করা সবার দায়িত্ব। জিজ্ঞাসাবাদে সহযোগিতা করবেন। পরে আদালত তাদের রিমান্ডের আদেশ দেয়।

এর আগে শনিবার ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। কেরানীগঞ্জে শুক্রবার সকাল ১০টার পর উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল নামে ওই মাদ্রাসায় ব্যাপক বিস্ফোরণ হয়। এতে মাদ্রাসার দুটো কক্ষের পাশের দেয়ালগুলো ধসে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এতে মাদ্রাসার পরিচালক আল আমিন শেখ (৩২), তার স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮) এবং তাদের তিন সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে উমায়ের (১০) ও আব্দুল্লাহ (৭) আহত হন। আহত স্ত্রী-সন্তানকে ফেলে রেখেই আল আমিন পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। আহতদের মধ্যে উমায়েরের শরীরে পোড়া ক্ষতের পাশাপাশি ভবন ধসের জখম চিহ্ন থাকার কথা বলেছে পুলিশ।

বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হওয়া মাদ্রাসাটি থেকে বিস্ফোরকসহ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারের তথ্য দেয় পুলিশ। ওই ঘটনায় ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের থানার এসআই মো. লিটন সন্ত্রাসীবিরোধী আইনে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

সানা/আপ্র/২৮/১২/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের মামলায় তিন নারীসহ ৬ জন রিমান্ডে

আপডেট সময় : ০৯:০৯:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের মামলায় আরো তিনজনকে গ্রেফতারের পর তিন নারীসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।

তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান তাদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডের আদেশ দেন।

রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন- মাদ্রাসার পরিচালক আল আমিনের স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮), তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার (৩০), আসমানী খাতুন (৩৪), শাহীন ওরফে আবু বকর (৩২), আমিনুর ওরফে দর্জি আমিন (৫০) ও শাফিয়ার রহমান ফকির (৩৬)। তাদের মধ্যে নারীদের তিন দিন করে এবং পুরুষদের সাত দিন করে রিমান্ড দেওয়া হয়েছে। প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই বিশ্বজিৎ দেবনাথ রিমান্ডের এসব তথ্য দেন।

এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার এসআই জহিরুল ইসলাম সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আসামি শাহিন, আমিনুর ও শাফিয়ারের ১০ দিন এবং আছিয়া বেগম, ইয়াসমিন আক্তার ও আসমানী খাতুনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই বিশ্বজিৎ দেবনাথ রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। এসময় আদালত তদন্ত কর্মকর্তার কাছে আসামিদের কার সঙ্গে কী সম্পর্ক জানতে চান।

তদন্ত কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম আদালতকে বলেন, এ মামলার প্রধান আসামি আল আমিন ঘটনার আগের দিন সারারাত বোমা তৈরি করে। ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমায়। পরদিন সকাল সাড়ে ১০টায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ভবনটা তছনছ হয়ে যায়। আছিয়া আল-আমিনের স্ত্রী। আর আছিয়ার ভাবি আসমা। অপর আসামি আসমানী এক সময় জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন। সাত মাস আগে জঙ্গি মামলায় জামিন পান। শাহিনের বিরুদ্ধে চারটা মামলা হয় জঙ্গি সংশ্লিষ্টার অভিযোগে। অপর আসামিরা তাদের সহযোগী।

আসামি আসমানীর পক্ষে তার আইনজীবী গাউছুর রহমান সিরাজী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। বলেন, তার বিরুদ্ধে আগে চারটা মামলা হয়। তবে জঙ্গি কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় দুই মামলায় ইতিমধ্যে খালাস পেয়েছেন। তিনি একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। তাকে রিমান্ডে নেওয়ার মত কোনো উপাদান নেই। তিনি কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের সম্পৃক্ত নন। সম্পৃক্ত থাকলে দুই মামলায় খালাস পেতেন না। তার অপরাধ শুধু পূর্বের মামলা। তার রিমান্ড বাতিল করে প্রয়োজনে জেলগেইটে জিজ্ঞাসা করার প্রার্থনা করছি।

অপর আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলতে চান আছিয়া। বলেন, এ ঘটনার সাথে আমার ভাই-ভাবি, আত্মীয় কেউ কোনোভাবে জড়িত না। আমার স্বামী আল আমিন দ্বিতীয় বার জেলে গেলে আমার ভাই আমাকে মাদ্রাসাটা করে দেয়। যেন আমি টিকে থাকতে পারি। আল আমিন ২০২২ সালের শেষের দিকে জেল থেকে বের হয়। এসে বলে, সে ভালো হয়ে গেছে। ফোনও চালাত না। এক/দেড় বছর ভালো ছিল। আল আমিনের বিষয়ে অনেক কিছু জানতাম না। জানলে আগেই (পুলিশকে) জানাতাম। কারণ সে কিছু করলে আমরাই ফেঁসে যাব এই ভয়ে। সে আমাকে অনেক নির্যাতন করতো। ফোন চেক করলে বুঝতে পারবেন। সে অপরাধ করতে পারে। আমরা তো অপরাধ করিনি।

এসময় আদালত তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এ ধরনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন আছে। তদন্তের দরকারে রিমান্ড চেয়েছে। রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করা সবার দায়িত্ব। জিজ্ঞাসাবাদে সহযোগিতা করবেন। পরে আদালত তাদের রিমান্ডের আদেশ দেয়।

এর আগে শনিবার ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। কেরানীগঞ্জে শুক্রবার সকাল ১০টার পর উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল নামে ওই মাদ্রাসায় ব্যাপক বিস্ফোরণ হয়। এতে মাদ্রাসার দুটো কক্ষের পাশের দেয়ালগুলো ধসে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এতে মাদ্রাসার পরিচালক আল আমিন শেখ (৩২), তার স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮) এবং তাদের তিন সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে উমায়ের (১০) ও আব্দুল্লাহ (৭) আহত হন। আহত স্ত্রী-সন্তানকে ফেলে রেখেই আল আমিন পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। আহতদের মধ্যে উমায়েরের শরীরে পোড়া ক্ষতের পাশাপাশি ভবন ধসের জখম চিহ্ন থাকার কথা বলেছে পুলিশ।

বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হওয়া মাদ্রাসাটি থেকে বিস্ফোরকসহ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারের তথ্য দেয় পুলিশ। ওই ঘটনায় ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের থানার এসআই মো. লিটন সন্ত্রাসীবিরোধী আইনে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

সানা/আপ্র/২৮/১২/২০২৫