ঢাকা ১২:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

কৃষক ন্যায্য দাম না পেলে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তায় বাড়বে ঝুঁকি

  • আপডেট সময় : ০৮:১৯:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ১৫ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিক অগ্রগতি সত্ত্বেও পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা আজও বড় জাতীয় চ্যালেঞ্জ। দেশের বহু মানুষ এখনো নিরাপদ, পুষ্টিসম্পন্ন ও সুষম খাদ্যের অভাবে ভুগছেন। শিশুর অপুষ্টি, খর্বাকৃতি, রক্তস্বল্পতা, গর্ভবতীর পুষ্টি ঘাটতি- এসব সমস্যা উন্নয়নের গতিকে অন্তরায় করে তুলছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, খরা, নদীভাঙন এখনো বহু পরিবারের খাদ্যপ্রাপ্তিকে অনিশ্চিত করে তোলে। একই সঙ্গে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতাকে চেপে ধরেছে। বাজারে ভেজাল ও রাসায়নিকের ব্যবহার সাধারণ খাদ্যকেও অনিরাপদ করে তুলছে। অন্যদিকে কৃষক উৎপাদনের ন্যায্য দাম না পেলে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থাই দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ বিষয় নিয়েই এবারের কৃষি ও কৃষক পাতার প্রধান ফিচার

পুষ্টিহীনতা এখনো দেশের সবচেয়ে বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। অনেক পরিবার পর্যাপ্ত চাল-ডাল পেলেও প্রোটিন, ভিটামিন বা মিনারেলের ঘাটতি পূরণ করতে পারে না। ভাত নির্ভর খাদ্যাভ্যাস সুষম খাবারের সুযোগ কমিয়ে দেয়। শিশুর খর্বাকৃতি, কম ওজন, গর্ভবতী মায়ের রক্তস্বল্পতা- এসবই দীর্ঘমেয়াদী জাতীয় ক্ষতির কারণ। বাজারে সহজলভ্য খাদ্যের মধ্যে আছে কেমিক্যাল মেশানো ফল, অতিরিক্ত রং বা সংরক্ষণকারীযুক্ত খাবার, যা প্রতিদিনের খাদ্যকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। তাই খাদ্য নিরাপত্তা, উৎপাদন বা প্রাপ্যতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে গুণগত মান, নিরাপত্তা ও সুষমতা নিশ্চিত করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ।

নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি, খাদ্যে ভেজাল ও অনিরাপদ সংরক্ষণ কৃষি উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সুষ্ঠু সরবরাহ ব্যবস্থার ঘাটতি পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতার অভাব। স্কুল-কলেজ থেকে কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত পুষ্টি শিক্ষা জোরদার করা জরুরি। মা ও শিশুর পুষ্টি বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্যসেবা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। কৃষিপণ্য সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে বাজারে পৌঁছানোর ব্যবস্থা, সমবায় বাজার এবং ডিজিটাল কৃষি প্ল্যাটফর্মগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

কৃষক ন্যায্য দাম না পেলে উৎপাদন টিকবে না। ভেজাল খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণনে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। ডিম, দুধ, মাছ, সবজি, ফল—এসবের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও ভর্তুকি প্রদান সাধারণ মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য, উৎপাদনশীলতা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানসিক-শারীরিক বিকাশের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত না হলে শিক্ষা, কর্মসংস্থান, অর্থনীতি কোনো ক্ষেত্রেই কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন সম্ভব নয়। তাই উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্যের গুণগতমান, পুষ্টিমান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি।

একটি সুস্থ, সচেতন ও সক্ষম বাংলাদেশ গড়তে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তাকে জাতীয় অগ্রাধিকারে আনতে হবে। আজকের বিনিয়োগই আগামী প্রজন্মকে দেবে শক্তিশালী ভিত্তি। দেবে একটি স্বাস্থ্যসমৃদ্ধ ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

কৃষক ন্যায্য দাম না পেলে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তায় বাড়বে ঝুঁকি

আপডেট সময় : ০৮:১৯:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিক অগ্রগতি সত্ত্বেও পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা আজও বড় জাতীয় চ্যালেঞ্জ। দেশের বহু মানুষ এখনো নিরাপদ, পুষ্টিসম্পন্ন ও সুষম খাদ্যের অভাবে ভুগছেন। শিশুর অপুষ্টি, খর্বাকৃতি, রক্তস্বল্পতা, গর্ভবতীর পুষ্টি ঘাটতি- এসব সমস্যা উন্নয়নের গতিকে অন্তরায় করে তুলছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, খরা, নদীভাঙন এখনো বহু পরিবারের খাদ্যপ্রাপ্তিকে অনিশ্চিত করে তোলে। একই সঙ্গে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতাকে চেপে ধরেছে। বাজারে ভেজাল ও রাসায়নিকের ব্যবহার সাধারণ খাদ্যকেও অনিরাপদ করে তুলছে। অন্যদিকে কৃষক উৎপাদনের ন্যায্য দাম না পেলে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থাই দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ বিষয় নিয়েই এবারের কৃষি ও কৃষক পাতার প্রধান ফিচার

পুষ্টিহীনতা এখনো দেশের সবচেয়ে বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। অনেক পরিবার পর্যাপ্ত চাল-ডাল পেলেও প্রোটিন, ভিটামিন বা মিনারেলের ঘাটতি পূরণ করতে পারে না। ভাত নির্ভর খাদ্যাভ্যাস সুষম খাবারের সুযোগ কমিয়ে দেয়। শিশুর খর্বাকৃতি, কম ওজন, গর্ভবতী মায়ের রক্তস্বল্পতা- এসবই দীর্ঘমেয়াদী জাতীয় ক্ষতির কারণ। বাজারে সহজলভ্য খাদ্যের মধ্যে আছে কেমিক্যাল মেশানো ফল, অতিরিক্ত রং বা সংরক্ষণকারীযুক্ত খাবার, যা প্রতিদিনের খাদ্যকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। তাই খাদ্য নিরাপত্তা, উৎপাদন বা প্রাপ্যতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে গুণগত মান, নিরাপত্তা ও সুষমতা নিশ্চিত করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ।

নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি, খাদ্যে ভেজাল ও অনিরাপদ সংরক্ষণ কৃষি উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সুষ্ঠু সরবরাহ ব্যবস্থার ঘাটতি পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতার অভাব। স্কুল-কলেজ থেকে কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত পুষ্টি শিক্ষা জোরদার করা জরুরি। মা ও শিশুর পুষ্টি বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্যসেবা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। কৃষিপণ্য সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে বাজারে পৌঁছানোর ব্যবস্থা, সমবায় বাজার এবং ডিজিটাল কৃষি প্ল্যাটফর্মগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

কৃষক ন্যায্য দাম না পেলে উৎপাদন টিকবে না। ভেজাল খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণনে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। ডিম, দুধ, মাছ, সবজি, ফল—এসবের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও ভর্তুকি প্রদান সাধারণ মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য, উৎপাদনশীলতা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানসিক-শারীরিক বিকাশের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত না হলে শিক্ষা, কর্মসংস্থান, অর্থনীতি কোনো ক্ষেত্রেই কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন সম্ভব নয়। তাই উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্যের গুণগতমান, পুষ্টিমান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি।

একটি সুস্থ, সচেতন ও সক্ষম বাংলাদেশ গড়তে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তাকে জাতীয় অগ্রাধিকারে আনতে হবে। আজকের বিনিয়োগই আগামী প্রজন্মকে দেবে শক্তিশালী ভিত্তি। দেবে একটি স্বাস্থ্যসমৃদ্ধ ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ