আন্তর্জাতিক ডেস্ক: শীতকালীন ঝড় ‘বায়রন’ এর প্রভাবে সৃষ্ট ভারী বৃষ্টিপাত এবং তীব্র ঠান্ডায় গাজা উপত্যকায় শোচনীয় পরিস্থিতির মধ্যে বসবাসরত বাস্তুচ্যুত লাখো ফিলিস্তিনি ভয়াবহ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা। শিগগিরই এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এবং ব্যাপক প্রাণহানির শঙ্কাও রয়েছে।
ইউনিসেফের মুখপাত্র জোনাথন ক্রিক্স বিবিসিকে বলেছেন, রাতের আবহাওয়া ছিল ‘ভয়াবহ’, বৃষ্টি এতটাই তীব্র ছিল যে তিনি তার অফিসের কাছে মাটিতে প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার (ছয় ইঞ্চি) পানি জমতে দেখেছেন।
তিনি বলেন, তাঁবু ও অস্থায়ী আশ্রয়ে বসবাসরত শিশুরা ভেজা পোশাকে থাকায় হাইপোথারমিয়া (শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমে যাওয়ার পর সৃষ্ট জটিলতা) ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অত্যন্ত বেশি।
এদিকে গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা কতৃপক্ষ জানিয়েছে, ঝড় বায়রন আশ্রয়কেন্দ্র এবং ঘরবাড়িকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে, যার মধ্যে অনেকগুলো ইসরায়েলি আক্রমণের কারণে আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। ইতোমধ্যেই বেশ তয়েকটি স্থানে বাড়িঘর ধসে পড়ে প্রাণহানি হয়েছে।
গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবার হাইপোথারমিয়ায় একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে এবং ভয়াবহ আবহাওয়ার কারণে ভবন ধসে অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ফিলিস্তিনের স্বরাষ্ট্র ও জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবার ভোর থেকে একটানা বৃষ্টিপাতের ফলে গাজার একাধিক আশ্রয় শিবিরে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তাঁবুগুলো প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে ইসরায়েলের দুই বছরের গণহত্যার কারণে ইতোমধ্যেই বাস্তুচ্যুত প্রায় ৮ লাখ মানুষের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়।
জাতিসংঘ ও এর সহযোগীরা অনুমান করছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৫ হাজার পরিবার বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের আশ্রয় ও জিনিসপত্র নষ্ট বা ধ্বংস হয়েছে। গত সোম ও মঙ্গলবারের ভারী বৃষ্টির পর ৪০টিরও বেশি নির্ধারিত জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র মারাত্মকভাবে প্লাবিত হয়েছে, ফলে অনেক মানুষকে আবারও স্থানান্তরিত হতে হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে শত শত আশ্রয় শিবির প্লাবিত হয়েছে, যেখানে মাঝারি বৃষ্টিপাতও ‘দ্রুত বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে’।
সংস্থাটি বলছে, গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর গাজায় ১০ লাখেরও বেশি আশ্রয় সামগ্রী পাঠিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জলরোধী তাঁবু, তাপীয় কম্বল, ঘুমানোর মাদুর এবং টারপলিন। কিন্তু এই সরবরাহগুলো ‘বন্যা সহ্য করতে পারবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছে আইওএম।
ইউনিসেফ স্টেট অব প্যালেস্টাইনের যোগাযোগ প্রধান জোনাথন ক্রিক্স বুধবার বিবিসির টুডে প্রোগ্রামে বলেন, ‘গত রাতটি পরিবারগুলোর জন্য সত্যিই ভয়াবহ ছিল। বৃষ্টি এতটাই তীব্র ছিল যে আমাদের অফিস ও অতিথিশালা থেকে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার (চার থেকে ছয় ইঞ্চি) পানি দেখা যাচ্ছিল। আর বাতাসও ছিল খুব শক্তিশালী।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ সকালে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় আমি দেখেছি, অনেক মানুষ বালতি দিয়ে পানি সরানোর চেষ্টা করছে’।
তিনি উল্লেখ করেন, অনুমানিক ১০ লাখ মানুষ যারা তাঁবু ও অস্থায়ী আশ্রয়ে বসবাস করছেন, তারা গত দুই বছরের ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যে বহুবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং তাদের কাছে পোশাকের কোনো বাড়তি মজুত নেই বা খুবই কম। অনেক তাঁবু শক্তিশালী বাতাসে উড়ে যাওয়ার বা ধ্বংস হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, কারণ এগুলো শুধু একটি ত্রিপল বা প্লাস্টিকের শিট দিয়ে তৈরি, যা দুর্বল কাঠের কাঠামোয় পেরেক দিয়ে আটকানো।
ফিলিস্তিনি মেডিকেল রিলিফ সোসাইটি জানিয়েছে, বৃষ্টিতে তাদের কমপক্ষে চারটি মেডিকেল পয়েন্ট প্লাবিত হয়েছে, যার ফলে সরঞ্জামের ক্ষতি হয়েছে এবং চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি, আলজাজিরা
ওআ/আপ্র/১৮/১২/২০২৫


























