নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, ‘আদালতে মামলা করা যায় না, এটা নিয়ে বলার এক্তিয়ার বোধ হয় আমার নেই। আদালত যদি কগনিজেন্স নিয়ে থেকে থাকেন, আদালতে নিশ্চয় বলা হচ্ছে। তারপরও যদি আদালত বিবেচনায় না নেন। রায়গুলো ক্ষমতাকে খর্ব করছে কি-না যদি বলেন, এক অর্থে একটা প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থানে আছে।’
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ দফতরের সামনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
ইসির ক্ষমতা খর্ব হচ্ছে কী—প্রশ্নের জবাবে আখতার আহমেদ বলেন, ‘আমাদের এটা (ক্ষমতা) প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। খর্ব ও প্রশ্নবিদ্ধের মধ্যে পার্থক্য আছে। খর্ব হচ্ছে বাতিল আর প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে কোয়েশ্চনএবল, যেটা উইচ ক্যান বি চ্যালেঞ্জড।’
উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইনের ৭ ধারায় নির্বাচন কমিশনের কার্যধারা সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপনে বাধা-নিষেধের কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন কৃত সীমানা নির্ধারণ বা কোনও আঞ্চলিক নির্বাচনি এলাকার গঠন বা কমিশন কর্তৃক বা কমিশনের কর্তৃত্বাধীনে গৃহীত কোনও কার্যধারা বা কৃত কোনও কাজকর্মের বৈধতা সম্পর্কে কোনও আদালতে বা অন্য কোনও কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।
তফসিলের পর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কতটা প্রস্তুত করতে পারবেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এজন্য আইন-বিধি, পরিপত্র তৈরি করা আছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে যা প্রয়োজন হবে তা আমরা করবো। দলগুলোরও সদিচ্ছা থাকতে হবে। আমার বিশ্বাস তারা সহায়তা করবে।’
তফসিলের পর রদবদল করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রদবদল একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রয়োজন হলে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি বা সম্মতি নিয়ে রদবদল করা হবে।’
গাজীপুর ও বাগেরহাট আসনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, ‘আদালতের আদেশ সংশোধন করা হচ্ছে। সময় হলে গেজেট প্রকাশ করা হবে। ৩০০ আসনে তফসিল ঘোষণা করা হবে।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা কারা হবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তফসিল ঘোষণা করার পর জানতে পারবেন কারা রিটার্নিং কর্মকর্তা হবেন।’
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, ‘নির্বাচন কাজে নিয়োজিতদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দান নিবন্ধন শুরু করতে পারবেন আগামী ১৬ বা ১৭ ডিসেম্বর থেকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যারা সরাসরি নির্বাচনের কাজে যুক্ত থাকবেন তাদের আরও কিছুটা সময় লাগবে।’
গত ৪ সেপ্টেম্বর সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ আসনের গেজেট প্রকাশ করে ইসি। এতে বাগেরহাটের চারটি থেকে একটি আসন কমানো হয়। এবং গাজীপুরে পাঁচটি থেকে বাড়িয়ে ছয়টি করা হয়। ওই গেজেট অনুযায়ী বাগেরহাট সদর, চিতলমারী ও মোল্লাহাট নিয়ে বাগেরহাট-১ আসন; ফকিরহাট, রামপাল ও মোংলা নিয়ে বাগেরহাট-২ আসন এবং কচুয়া, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা নিয়ে বাগেরহাট-৩ আসন গঠন করা হয়। সর্বশেষ গেজেটের আগে চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট নিয়ে ছিল বাগেরহাট-১ আসন; বাগেরহাট সদর-কচুয়া নিয়ে ছিল বাগেরহাট-২ আসন; রামপাল-মোংলা নিয়ে ছিল বাগেরহাট-৩ আসন এবং মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা নিয়ে ছিল বাগেরহাট-৪ আসন।
এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের গেজেট চ্যালেঞ্জ করে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহালের আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে দুটি রিট আবেদন করা হয়। মামলা দুটি করে বাগেরহাট প্রেসক্লাব, জেলা আইনজীবী সমিতি, জেলা বিএনপি, জেলা জামায়াতে ইসলামী, জেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জেলা ট্রাক মালিক সমিতি। এতে বিবাদী করা হয় বাংলাদেশ সরকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে।
আবেদনের শুনানি করে গত ১০ নভেম্বর বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার ও বিচারপতি ফয়সাল হাসান আরিফের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেন। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের গেজেট অবৈধ ঘোষণা করে বাগেরহাটের চারটি আসন বহাল রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর গত ৩ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেলে নির্বাচন কমিশন ও গাজীপুর-৬ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি সরকার জাবেদ আহমেদ আপিলের আবেদন করেন। এছাড়া গাজীপুর–৬ আসন থেকে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হাফিজুর রহমানও আগে আপিল বিভাগে একটি আবেদন করেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল এবং ওই আবেদনগুলো একসঙ্গে শুনানির জন্য তোলা হয়। সেই শুনানি শেষে ১০ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের আবেদন নাকচ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত। ফলে সীমানার গেজেট সংশোধন করে এখন আগের মতোই বাগেরহাটে চারটি এবং গাজীপুরে পাঁচটি আসনে যেতে হবে ইসিকে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে তফসিল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। এক্ষেত্রে রায়ের কপি পরে এলে তফসিলের আইনি বৈধতা নষ্ট হবে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু আমরা আদালতের রায় বাস্তবায়ন করবো, সেহেতু বৈধতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠবে না।
ওআ/আপ্র/১১/১২/২০২৫





















