নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সম্ভাবনা এখন পুরোপুরিই নির্ভর করছে চিকিৎসায় নিয়োজিত মেডিকেল বোর্ডের চূড়ান্ত মতের ওপর। বোর্ড ‘সেফ টু ফ্লাই’ সার্টিফাই করলেই তাকে (খালেদা জিয়া) দ্রুততম সময়ে লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি। ডা. জাহিদ বলেন, সব প্রস্তুতি রয়েছে। নিরাপত্তা ও চিকিৎসা-দুটো দিকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। মেডিকেল বোর্ডের অনুমতি পেলেই বিদেশে নেওয়া হবে। তিনি জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখছেন। দলীয়ভাবেও চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তকে ‘ফাইনাল অথরিটি’ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
গত ছয় বছর ধরে দায়িত্ব পালনকারী মেডিকেল বোর্ডের পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার প্রশংসা করে ডা. জাহিদ বলেন, মেডিকেল বোর্ড অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করে আসছে। তাদের পরামর্শেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা একনিষ্ঠভাবে চলছে। এ সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে ছড়িয়ে পড়া নানা গুজবের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ডা. জাহিদ। তিনি বলেন, সময়ের অভাবে সবকিছু দেখতে পারি না। কিন্তু অনুরোধ, কেউ গুজব ছড়াবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না, অন্যকেও বিভ্রান্ত করবেন না। দোয়া করবেন-আল্লাহ যেন তাকে দ্রুত সুস্থতা দান করেন।
বিদেশযাত্রা প্রসঙ্গে ডা. জাহিদ হোসেন আরো জানান, প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র, লজিস্টিক ও মেডিকেল অ্যারেঞ্জমেন্ট তৈরি রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে কাতার সরকার ও অন্তর্বর্তী সরকারও সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।
খালেদা জিয়ার সুস্থতার বিষয়ে মেডিকেল বোর্ডের আশাবাদের কথা উল্লেখ করে ডা. এজেডএম জাহিদ বলেন, এর আগেও তিনি আরো গুরুতর অবস্থায় ছিলেন-আল্লাহর রহমতে তখনো সুস্থ হয়েছিলেন। এবারও আমরা আশাবাদী, ইনশাআল্লাহ দ্রুতই তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
এর আগে জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবি এম আব্দুস সাত্তার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ম্যাডামের লন্ডন যাত্রা পিছিয়েছে। এই মুহূর্তে নতুন করে কোনো তারিখ বলতে পারছি না। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসার পরে যে কোনো দিনই উনাকে নেওয়া হবে।’
এ নিয়ে লন্ডন যাত্রা তৃতীয় বারের মতো পেছানো হয়। বিএনপির একজন চিকিৎসক বলেন, ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা গত কয়েক দিন একই জায়গায়তে আছে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দেরিতে আসার পাশাপাশি ম্যাডোমের শারীরিক অবস্থা ফ্লাই করার জন্য কতটা উপযুক্ত সেটাও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে।
বিএনপির একটি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিতে কাতারের ব্যবস্থাপনায় নতুন করে যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, সেটি ৬ ডিসেম্বর ঢাকায় অবতরণের কথা থাকলেও পরে সময়সূচিও পুনর্নির্ধারণ করে ৯ ডিসেম্বর করা হয়েছে। সেটি ঢাকা থেকে ১০ ডিসেম্বর ছেড়ে যাওয়ার প্রাথমিক সময় সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।
গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়াকে কাতারের আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে লন্ডন নেওয়ার কথা ছিল। তবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কারিগরি ত্রুটির কারণে শেষ মুহূর্তে আটকে যায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাত্রার প্রক্রিয়া। এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয় সবকিছু ঠিক থাকলে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি শনিবার ঢাকায় পৌঁছাতে পারে। এরপর শরীর সাপোর্ট করলে রোববার ফ্লাই করতে পারেন খালেদা জিয়া। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত শুক্রবার বলেছিলেন, বিমান কখন ছাড়বে তা নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ওপর।
মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিলেই ঢাকায় আসবে কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স: বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড সবুজসংকেত দিলেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে কাতারের রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। দলের পক্ষ থেকে কাতারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিনিই এই বিষয়ে যোগাযোগ করছেন। এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ম্যাডামের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তক্রমে কাতারের রয়্যাল অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশে আসবে। তাঁরা এখন সেভাবে প্রস্তুত আছেন। মেডিকেল বোর্ড যখনই সিদ্ধান্ত জানাবে, তখনই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবে এবং বেগম জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন নিয়ে যাবে। সবকিছুই কাতার কর্তৃপক্ষ অ্যারেঞ্জমেন্ট করেছে।’
জার্মানি থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনার বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আমরা নই, কাতার কর্তৃপক্ষই জার্মানি থেকে একটি অত্যাধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের অ্যারেঞ্জমেন্ট করে দিচ্ছে।’
এভারকেয়ারে কমছে ভিড়: খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে ঘিরে বেশ কয়েকদিন ধরেই উৎসক জনতার চাপ ছিল রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতাল ঘিরে। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সে চাপ দেখা যায়নি। পেশাগত কাজে সাংবাদিক ও বিভিন্ন সংস্থার কিছু লোক ছাড়া তেমন কারো উপস্থিতি চোখে পড়েনি। এ কারণে যেমন স্বস্তিতে আছে হাসপাতাল প্রশাসন, একইভাবে অন্যান্য রোগীদের ভোগান্তি কমেছে।
গত ২৩ নভেম্বর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে যাওয়ার পর ওইদিন থেকেই ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন খালেদা জিয়া। ২৭ নভেম্বর তার অবস্থা সংকটাপন্ন হলে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে নিয়ে নিবিড় চিকিৎসা দিচ্ছে মেডিকেল বোর্ড। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার পরই দেশের চিকিৎসক টিমের সাথে যুক্ত হন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চিকিৎসরা। ৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, কিডনি ও চোখের সমস্যাসহ ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসের মতো নানা জটিলতায় ভুগছেন।
সানা/আপ্র/০৬/১২/২০২৫
























