খান অপূর্ব আহমদ
ছাগলের রোগ ব্যবস্থাপনায় এ কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, মুক্তভাবে ছাগল প্রতিপালনের তুলনায় আবদ্ধ অবস্থায় ছাগল পালন অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এ ব্যবস্থায় বৈজ্ঞানিক চিন্তা ভাবনা ও প্রযুক্তির সমন্নয় না ঘটালে খামারিকে বিস্তর সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এটা একটি বাস্তব উপলব্ধি। এ জন্য ছাগলের সুখ সাচ্ছন্দ্য ও স্বাস্থ্যের প্রতি খামারিকে স্বতন্ত্রভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
ছাগলের খামারে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে। তাই বিভিন্ন রোগ দমনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে খামার থেকে লাভের আশা করা যায় না।
ছাগলের রোগ ব্যবস্থাপনা: খামারে ছাগল আনার পর থেকে প্রতিদিনই প্রতিটি ছাগলের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। প্রথম পাঁচ দিন সকাল ও বিকেলে দুইবার থার্মোমিটার দিয়ে ছাগলের দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হবে। হঠাৎ কোনো রোগ দেখা মাত্রই গবাদি প্রাণি চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।
তীব্র শীতের সময় সব ছাগলের, বিশেষ করে ছাগী বা বাচ্চার গায়ে চট পেঁচিয়ে দেওয়া যেতে পারে। মাচার নিচ ও ঘর প্রতিদিন সকালে পরিষ্কার করতে হবে এবং কর্মসূচি অনুযায়ী জীবাণুনাশের ব্যবস্থা নিতে হবে।
সুস্থ ছাগলের বৈশিষ্ট্য সুস্থ ছাগলের নাড়ির স্পন্দন প্রতি মিনিটে ৭০-৯০ বার, শ্বাস-প্রশ্বাস প্রতি মিনিটে ২৫-৪০ বার এবং তাপমাত্রা ৩৯.৫০ সেন্টিগ্রেট হওয়া উচিত।
সুস্থ ছাগল দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করে, মাথা সব সময় উঁচু থাকে, নাসারন্ধ্র থাকবে পরিষ্কার, চামড়া নরম, পশম মসৃণ ও চকচকে দেখাবে এবং পায়ু অঞ্চল থাকবে পরিচ্ছন্ন।
ছাগল সুস্থ রাখতে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক, সেগুলো হলে-
টিকা প্রদান: ভাইরাসজনিত রোগ তথা এনথ্রাক্স ব্রুসেলোসিস ইত্যাদি খুবই মারাত্মক বলে এগুলোর বিরুদ্ধে যথারীতি টিকা প্রদান করতে হবে। যেসব ছাগীকে আগে পিপিআর, গোটপক্স, একথাইমা, ব্রুসেলোসিস ইত্যাদি টিকা দেওয়া হয়নি, সেগুলোর গর্ভের পঞ্চম মাসে ওওই ভ্যাকসিনগুলো দিতে হবে। বাচ্চার বয়স যখন পাঁচ মাস, তখন তাকে পিপিআর ভ্যাকসিন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন দিতে হবে।
কৃমিনাশক ঔষধ প্রয়োগ: সব ছালকে নির্ধারিত মাত্রায় বছরে দুইবার কৃমিনাশক ঔষধ প্রদান করতে হবে। এ ছাড়া গবাদি প্রাণি চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সঠিক ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
ছাগলের খামারের জৈব নিরাপত্তা খামার এলাকায় বেড়া বা নিরাপত্তা বেষ্টনী এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে- যাতে সেখানে অনাকাক্সিক্ষত ব্যক্তি, শেয়াল, কুকুর ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী প্রবেশ করতে না পারে। প্রবেশপথে ফুটপাতে বা পা ধোয়ার জন্য ছোট চৌবাচ্চায় জীবাণুনাশক মেশানো পানি রাখতে হবে। খামারে প্রবেশের আগে খামারে গমনকারী তার জুতা বা পা ডুবিয়ে জীবাণু মুক্ত করবেন।
খামারের জন্য সংগৃহীত নতুন ছাগল সরাসরি খামারে আগে বিদ্যমান ছাগলের সঙ্গে রাখা যাবে না। নতুন আনা ছাগলদের স্বতন্ত্র ঘরে সাময়িকভাবে পালনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ধরনের ঘরকে পৃথকীকরণ ঘর বা আইসোলেশন শেড বলে। অন্ততপক্ষে দুই সপ্তাহ এই শেডে রাখা বিশেষ জরুরি। এসব ছাগলের জন্য প্রাথমিক কিছু চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথমে এগুলোকে কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে। এ জন্য বহিঃপরজীবী ও আন্তঃপরজীবীর জন্য কার্যকর কৃমিনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
চর্মরোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিটি ছাগলকে ০.৫ শতাংশ ম্যালাথিয়ন দ্রবণে গোসল করাতে হবে। আইসোলেশন শেডে ছাগল রাখার পর ১৫ দিনের মধ্যে যদি কোনো রোগ না দেখা দেয় তাহলে প্রথম পিপিআর রোগের এবং সাত দিন পর গোটপক্সের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। শেষ টিকা প্রদানের সাত দিন পর এসব ছাগলকে মূল খামারে নেওয়া যেতে পারে।
প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে ছাগলের ঘর পরিষ্কার করতে হবে। কোনো ছাগল যদি অসুস্থ হয়, তাহলে তাকে আলাদা করে আইসোলেশন শেডে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি কোনো ছাগল মারা যায়, তাহলে অবশ্যই তার কারণ শনাক্ত করতে হবে। ল্যাবরেটরিতে রোগ নির্ণয়ের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
রোগাক্রান্ত ছাগলের ব্যবহার্য সরঞ্জাম ও দ্রব্যাদি সঠিকভাবে জীবাণু মুক্ত করতে হবে। মৃত ছাগলকে খামার থেকে দূরে নিয়ে মাটির গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ


























