ঢাকা ০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫

নামমাত্র ক্ষমতা নিয়ে গঠিত হচ্ছে ‘নখদন্তহীন’ পুলিশ কমিশন

  • আপডেট সময় : ০৯:২৪:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ২৩ বার পড়া হয়েছে

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুলিশকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবমুক্ত করতে অনেক দাবি উপেক্ষা করেই পুলিশ কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

পুলিশের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, যে খসড়াটি অনুমোদন হয়েছে, তাতে স্বাধীন পুলিশ কমিশন হচ্ছে না। এটি পুলিশ পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষও হবে না। এ কমিশনের কার্যক্রমকে সীমিত ও সুপারিশকেন্দ্রিক করা হয়েছে। নামমাত্র ক্ষমতা দিয়ে অনেকটা ‘নখদন্তহীন’ কমিশন করা হচ্ছে।

তবে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল গত বৃহস্পতিবার রাতে এ বিষয়ে একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিককে বলেছেন, পুলিশ কমিশন নিয়ে প্রত্যাশার অনেক কিছুই পূরণ হয়েছে। প্রায় সবকিছু রাখা গেছে। এটি বাস্তবায়িত হলে নাগরিক ভোগান্তি কমবে, পুলিশের জবাবদিহি অনেকখানি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে এবং পুলিশের ওপর রাজনৈতিক খবরদারি হ্রাস পাবে।

পুলিশ কমিশনের তিনটি খসড়া নিয়েই শুরু থেকে আপত্তি করে আসছিল পুলিশসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন। এই খসড়া অনুমোদন হলে পুলিশের ওপর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের পুরোনো ধারা থেকে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। পুলিশকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধে নীতিমালা করে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি কমিশনের অধীনে নিয়ে আসার দাবি ছিল তাদের। পুলিশের পক্ষ থেকে বাহিনী পরিচালনায় কার্যগত স্বায়ত্তশাসন চাওয়া হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা খসড়ায় বেশির ভাগ দাবি উপেক্ষিত রয়ে গেছে। অর্থাৎ পুলিশ পরিচালনার সব ক্ষমতা আগের মতোই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকে যাচ্ছে। সূত্রমতে, এই খসড়ার দু-একটি বিষয়ে পরিবর্তন এনে অধ্যাদেশ জারি করা হতে পারে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর পুলিশ বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের জোর দাবি ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আইন উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি পুলিশ কমিশনের খসড়া তৈরি করে। সেই খসড়ায় পুলিশ কমিশনকে খুবই সামান্য ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়। এরপরও সেখানে যা ছিল, সেগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গেলে পাল্টে যায়। গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ বাদ দেওয়া হয়। সেটি উপদেষ্টা পরিষদে উঠলে তা ফেরত পাঠিয়ে সংশোধন করে পরিষদের গতকালের সভায় উপস্থাপন করতে বলা হয়েছিল। এরপর ১ ডিসেম্বর পাঁচ উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার একজন বিশেষ সহকারী, তিন সচিব ও আইজিপির উপস্থিতিতে এক বৈঠকে খসড়াটি নিয়ে আলোচনা হয়। তবে সেখানে যেসব বিষয় এসেছে, উপদেষ্টা পরিষদে বৃহস্পতিবার উপস্থাপন করা খসড়া থেকে তার অনেক বিষয় বাদ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

পুলিশের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে বৈঠকের পরও পুলিশকে আগের মতোই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাখার পক্ষে শক্ত অবস্থান নেন আমলারা। ফলে যেভাবে কমিশন হচ্ছে, তাতে আগের মতোই কমিশনের ওপর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকবে।

অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর যেহেতু বারবার পুলিশ কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে, তাই লোকদেখানোর জন্য একটা কমিশন করা হলো। এখানে পুলিশের ওপর খবরদারির সব আয়োজন রাখা হয়েছে। আগের মতো চালানোর সব আয়োজন রেখে একটি সুপারিশকেন্দ্রিক ও অকার্যকর কমিশন গঠন করা হচ্ছে। এমন কমিশন গঠনের ফলে পুলিশ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত হতে পারল না। এর মাধ্যমে নতুন করে পুলিশের ওপর হস্তক্ষেপের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।

যা আছে অনুমোদিত খসড়ায়: পুলিশ কমিশনের অধ্যাদেশ জারি হলে এর আওতায় পাঁচ সদস্যের একটি কমিশন থাকবে। কমিশনের প্রধান হবেন সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। এ কমিশন নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান-নিষ্পত্তি, পুলিশ সদস্যদের সংক্ষোভ নিরসন ইত্যাদি বিষয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ করবে।

বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পুলিশ কমিশনের খসড়া অনুমোদনের পর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। সেখানে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের বিষয়বস্তু তুলে ধরে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে প্রধান করে গঠিত এ কমিশনের সদস্যরা হবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন, এমন কোনো অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, যিনি কর্মরতও হতে পারেন বা অবসরপ্রাপ্তও হতে পারেন এবং মানবাধিকার ও সুশাসন বিষয়ে অন্তত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন একজন ব্যক্তি।

কমিশনের নিয়োগপ্রক্রিয়া কেমন হবে, সে বিষয়ে করা প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, একটি বাছাই কমিটির মাধ্যমে কমিশনের নামগুলো আসবে। তার ভিত্তিতে সরকার নিয়োগ দেবে। বাছাই কমিটিতে থাকবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং জাতীয় সংসদের দুজন প্রতিনিধি।

কমিশনের উদ্দেশ্য-কাজ: কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যের বিষয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পুলিশকে জনবান্ধব ও জনমুখী করা হবে। এ কমিশন সরকারের সঙ্গে মিলে কাজ করবে। পুলিশ যেন প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারে, সে ব্যাপারে কী কী করণীয়, সে বিষয়ে কমিশন সরকারকে সুপারিশ করবে। এ ছাড়া পুলিশ যাতে মানবাধিকার সংবেদনশীল হয়, সে বিষয়ে পুলিশের আধুনিকায়ন কোথায় কোথায় দরকার, কী ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার, সেগুলোও কমিশন চিহ্নিত করবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ কমিশনের আরো দুটি কাজ হচ্ছে পুলিশের বিষয়ে নাগরিকদের যেসব অভিযোগ থাকবে, সেগুলো তদন্ত ও নিষ্পত্তি করা এবং পেশাগত বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সেগুলোর নিষ্পত্তি করা। পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা ও উৎকর্ষ আনা, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান ইত্যাদি কাজও হবে এ কমিশনের।

সরকার কমিশনের সুপারিশ মানতে বাধ্য কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সুপারিশ-পরামর্শ কেউ কখনো মানতে বাধ্য না। পুলিশের সঙ্গে জনগণের একটা ব্রিজ করে দেওয়ার জন্য এ কমিশন। আর পুলিশের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে, আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে, মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে, পুলিশের পেশাগত সংক্ষোভ নিরসনের ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সরকারের একটা যোগসূত্র স্থাপন করে দেওয়ার কাজ হচ্ছে এ কমিশনের।

সানা/ওআ/আপ্র/০৫/১২/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

নামমাত্র ক্ষমতা নিয়ে গঠিত হচ্ছে ‘নখদন্তহীন’ পুলিশ কমিশন

আপডেট সময় : ০৯:২৪:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুলিশকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবমুক্ত করতে অনেক দাবি উপেক্ষা করেই পুলিশ কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

পুলিশের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, যে খসড়াটি অনুমোদন হয়েছে, তাতে স্বাধীন পুলিশ কমিশন হচ্ছে না। এটি পুলিশ পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষও হবে না। এ কমিশনের কার্যক্রমকে সীমিত ও সুপারিশকেন্দ্রিক করা হয়েছে। নামমাত্র ক্ষমতা দিয়ে অনেকটা ‘নখদন্তহীন’ কমিশন করা হচ্ছে।

তবে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল গত বৃহস্পতিবার রাতে এ বিষয়ে একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিককে বলেছেন, পুলিশ কমিশন নিয়ে প্রত্যাশার অনেক কিছুই পূরণ হয়েছে। প্রায় সবকিছু রাখা গেছে। এটি বাস্তবায়িত হলে নাগরিক ভোগান্তি কমবে, পুলিশের জবাবদিহি অনেকখানি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে এবং পুলিশের ওপর রাজনৈতিক খবরদারি হ্রাস পাবে।

পুলিশ কমিশনের তিনটি খসড়া নিয়েই শুরু থেকে আপত্তি করে আসছিল পুলিশসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন। এই খসড়া অনুমোদন হলে পুলিশের ওপর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের পুরোনো ধারা থেকে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। পুলিশকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধে নীতিমালা করে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি কমিশনের অধীনে নিয়ে আসার দাবি ছিল তাদের। পুলিশের পক্ষ থেকে বাহিনী পরিচালনায় কার্যগত স্বায়ত্তশাসন চাওয়া হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা খসড়ায় বেশির ভাগ দাবি উপেক্ষিত রয়ে গেছে। অর্থাৎ পুলিশ পরিচালনার সব ক্ষমতা আগের মতোই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকে যাচ্ছে। সূত্রমতে, এই খসড়ার দু-একটি বিষয়ে পরিবর্তন এনে অধ্যাদেশ জারি করা হতে পারে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর পুলিশ বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের জোর দাবি ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আইন উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি পুলিশ কমিশনের খসড়া তৈরি করে। সেই খসড়ায় পুলিশ কমিশনকে খুবই সামান্য ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়। এরপরও সেখানে যা ছিল, সেগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গেলে পাল্টে যায়। গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ বাদ দেওয়া হয়। সেটি উপদেষ্টা পরিষদে উঠলে তা ফেরত পাঠিয়ে সংশোধন করে পরিষদের গতকালের সভায় উপস্থাপন করতে বলা হয়েছিল। এরপর ১ ডিসেম্বর পাঁচ উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার একজন বিশেষ সহকারী, তিন সচিব ও আইজিপির উপস্থিতিতে এক বৈঠকে খসড়াটি নিয়ে আলোচনা হয়। তবে সেখানে যেসব বিষয় এসেছে, উপদেষ্টা পরিষদে বৃহস্পতিবার উপস্থাপন করা খসড়া থেকে তার অনেক বিষয় বাদ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

পুলিশের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে বৈঠকের পরও পুলিশকে আগের মতোই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাখার পক্ষে শক্ত অবস্থান নেন আমলারা। ফলে যেভাবে কমিশন হচ্ছে, তাতে আগের মতোই কমিশনের ওপর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকবে।

অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর যেহেতু বারবার পুলিশ কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে, তাই লোকদেখানোর জন্য একটা কমিশন করা হলো। এখানে পুলিশের ওপর খবরদারির সব আয়োজন রাখা হয়েছে। আগের মতো চালানোর সব আয়োজন রেখে একটি সুপারিশকেন্দ্রিক ও অকার্যকর কমিশন গঠন করা হচ্ছে। এমন কমিশন গঠনের ফলে পুলিশ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত হতে পারল না। এর মাধ্যমে নতুন করে পুলিশের ওপর হস্তক্ষেপের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।

যা আছে অনুমোদিত খসড়ায়: পুলিশ কমিশনের অধ্যাদেশ জারি হলে এর আওতায় পাঁচ সদস্যের একটি কমিশন থাকবে। কমিশনের প্রধান হবেন সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। এ কমিশন নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান-নিষ্পত্তি, পুলিশ সদস্যদের সংক্ষোভ নিরসন ইত্যাদি বিষয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ করবে।

বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পুলিশ কমিশনের খসড়া অনুমোদনের পর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। সেখানে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের বিষয়বস্তু তুলে ধরে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে প্রধান করে গঠিত এ কমিশনের সদস্যরা হবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন, এমন কোনো অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, যিনি কর্মরতও হতে পারেন বা অবসরপ্রাপ্তও হতে পারেন এবং মানবাধিকার ও সুশাসন বিষয়ে অন্তত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন একজন ব্যক্তি।

কমিশনের নিয়োগপ্রক্রিয়া কেমন হবে, সে বিষয়ে করা প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, একটি বাছাই কমিটির মাধ্যমে কমিশনের নামগুলো আসবে। তার ভিত্তিতে সরকার নিয়োগ দেবে। বাছাই কমিটিতে থাকবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং জাতীয় সংসদের দুজন প্রতিনিধি।

কমিশনের উদ্দেশ্য-কাজ: কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যের বিষয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পুলিশকে জনবান্ধব ও জনমুখী করা হবে। এ কমিশন সরকারের সঙ্গে মিলে কাজ করবে। পুলিশ যেন প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারে, সে ব্যাপারে কী কী করণীয়, সে বিষয়ে কমিশন সরকারকে সুপারিশ করবে। এ ছাড়া পুলিশ যাতে মানবাধিকার সংবেদনশীল হয়, সে বিষয়ে পুলিশের আধুনিকায়ন কোথায় কোথায় দরকার, কী ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার, সেগুলোও কমিশন চিহ্নিত করবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ কমিশনের আরো দুটি কাজ হচ্ছে পুলিশের বিষয়ে নাগরিকদের যেসব অভিযোগ থাকবে, সেগুলো তদন্ত ও নিষ্পত্তি করা এবং পেশাগত বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সেগুলোর নিষ্পত্তি করা। পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা ও উৎকর্ষ আনা, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান ইত্যাদি কাজও হবে এ কমিশনের।

সরকার কমিশনের সুপারিশ মানতে বাধ্য কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সুপারিশ-পরামর্শ কেউ কখনো মানতে বাধ্য না। পুলিশের সঙ্গে জনগণের একটা ব্রিজ করে দেওয়ার জন্য এ কমিশন। আর পুলিশের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে, আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে, মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে, পুলিশের পেশাগত সংক্ষোভ নিরসনের ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সরকারের একটা যোগসূত্র স্থাপন করে দেওয়ার কাজ হচ্ছে এ কমিশনের।

সানা/ওআ/আপ্র/০৫/১২/২০২৫