ঢাকা ০৫:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫

মহাকাশে ৯ মাস ধরে শ্যাওলা টিকে থাকায় ‘বিস্মিত’ বিজ্ঞানীরা

  • আপডেট সময় : ০৫:৫৯:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

প্রযুক্তি ডেস্ক: মহাকাশের চরম পরিবেশে শৈবাল বা শ্যাওলা কেমন করে টিকে থাকতে পারে তা দেখার জন্য আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের বাইরে একটি গবেষণা চালিয়েছেন গবেষকরা, যার ফলাফল তাদের ‘সত্যিকার অর্থেই বিস্মিত’ করেছে। কারণ মহাকাশে নয় মাস পর্যন্ত টিকে ছিল শ্যাওলা।

শ্যাওলা পৃথিবীর অন্যতম সহনশীল জীব, যা হিমালয়ের চূড়া থেকে শুরু করে অ্যান্টার্কটিক বা তুন্দ্রা অঞ্চল পর্যন্ত সবচেয়ে চরম পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ পত্রিকা ইন্ডিপেনডেন্ট।

বেশ কয়েকটি গণবিলুপ্তির মতো পরিস্থিতি সহ্য করে টিকে রয়েছে এ উদ্ভিদ প্রজাতিটি, যা গবেষকদের মধ্যে কৌতূহল তৈরি করেছে, পৃথিবীর বাইরে কেমন করে টিকে থাকবে শ্যাওলা। জাপানের ‘হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটি’র একাধিক ধাপের পরীক্ষায় উঠে এসেছিল, অতিবেগুনী রশ্মির বিকিরণ, চরম গরম ও ঠান্ডা তাপমাত্রা এবং ভ্যাকুয়াম অবস্থার মতো চাপের পরিবেশে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে কীভাবে টিকে থাকতে পারে ‘স্প্রেডিং আর্থমস’ প্রজাতির শ্যাওলা। প্রত্যেকটি চ্যালেঞ্জ আলাদা করে সফলভাবে পরীক্ষার পর গবেষকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এ উদ্ভিদটিকে মাহাকাশে পাঠাবেন তারা, যাতে সেখানে সব চ্যালেঞ্জ একসঙ্গে ও মাইক্রোগ্র্যাভিটি সহ্য করতে পারে কি না তা জানা যায়।

২০২২ সালের মার্চে শত শত শ্যাওলার ‘স্পোরোফাইট’ বা স্পোর ধারণ করে ও প্রজননের জন্য দায়ী এমন শ্যাওলাকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাঠান গবেষকরা। এরপর নভোচারীরা এগুলোকে স্টেশনের বাইরের অংশে দুইশো ৮৩ দিন ধরে স্থাপন করেছেন। এরপর আরো পরীক্ষার জন্য পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল এগুলোকে।

হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটি’র গবেষক ও এ গবেষণার নেতৃত্বে থাকা তোমোমিচি ফুজিতা বলেছেন, “এগুলোর টিকে থাকার আশা আমরা একেবারে ছেড়েই দিয়েছিলাম। তবে গবেষণার ফলাফল আমাদের পুরোপুরি বিস্মিত করেছে, অধিকাংশ স্পোরই টিকে ছিল। এ ছোট উদ্ভিদ কোষের অসাধারণ স্থায়িত্ব বা সহনশীলতা দেখে আমরা সত্যিই বিস্মিত হয়েছি।

গবেষণায় উঠে এসেছে, ৮০ শতাংশের বেশি শ্যাওলার স্পোর টিকে রয়েছে এবং এদের মধ্যে অধিকাংশ পৃথিবীতে ফেরার পরও অঙ্কুরোদগম করেছে। এ পরীক্ষার তথ্য ব্যবহার করে গবেষকরা অনুমান করছেন, মহাকাশে প্রায় ১৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারবে এসব শ্যাওলা।

গবেষকরা বলছেন, শ্যাওলার এ দীর্ঘায়ু ভবিষ্যতের বিভিন্ন চাঁদ ও মঙ্গল অভিযানের জন্য বিশেষভাবে কাজে লাগতে পারে। কারণ মহাকাশে কৃষি ব্যবস্থা তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে এ গবেষণা। অধ্যাপক ফুজিতা বলেছেন, মানুষসহ সব ধরনের জীবিত সত্তা মহাকাশের শূন্যতায় অল্প সময়ের জন্যও বেঁচে থাকতে পারে না। তবে শ্যাওলার এসব স্পোর ৯ মাস সরাসরি মহাকাশের সংস্পর্শে থাকার পরও টিকে ছিল। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, পৃথিবীতে বিবর্তিত বিভিন্ন প্রাণের কোষে এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা মহাকাশের চরম পরিবেশ সহ্য করতে পারে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সেল প্রেস’-এর ‘আইসায়েন্স’-এ।

সানা/ওআ/আপ্র/২৬/১১/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

মহাকাশে ৯ মাস ধরে শ্যাওলা টিকে থাকায় ‘বিস্মিত’ বিজ্ঞানীরা

আপডেট সময় : ০৫:৫৯:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

প্রযুক্তি ডেস্ক: মহাকাশের চরম পরিবেশে শৈবাল বা শ্যাওলা কেমন করে টিকে থাকতে পারে তা দেখার জন্য আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের বাইরে একটি গবেষণা চালিয়েছেন গবেষকরা, যার ফলাফল তাদের ‘সত্যিকার অর্থেই বিস্মিত’ করেছে। কারণ মহাকাশে নয় মাস পর্যন্ত টিকে ছিল শ্যাওলা।

শ্যাওলা পৃথিবীর অন্যতম সহনশীল জীব, যা হিমালয়ের চূড়া থেকে শুরু করে অ্যান্টার্কটিক বা তুন্দ্রা অঞ্চল পর্যন্ত সবচেয়ে চরম পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ পত্রিকা ইন্ডিপেনডেন্ট।

বেশ কয়েকটি গণবিলুপ্তির মতো পরিস্থিতি সহ্য করে টিকে রয়েছে এ উদ্ভিদ প্রজাতিটি, যা গবেষকদের মধ্যে কৌতূহল তৈরি করেছে, পৃথিবীর বাইরে কেমন করে টিকে থাকবে শ্যাওলা। জাপানের ‘হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটি’র একাধিক ধাপের পরীক্ষায় উঠে এসেছিল, অতিবেগুনী রশ্মির বিকিরণ, চরম গরম ও ঠান্ডা তাপমাত্রা এবং ভ্যাকুয়াম অবস্থার মতো চাপের পরিবেশে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে কীভাবে টিকে থাকতে পারে ‘স্প্রেডিং আর্থমস’ প্রজাতির শ্যাওলা। প্রত্যেকটি চ্যালেঞ্জ আলাদা করে সফলভাবে পরীক্ষার পর গবেষকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এ উদ্ভিদটিকে মাহাকাশে পাঠাবেন তারা, যাতে সেখানে সব চ্যালেঞ্জ একসঙ্গে ও মাইক্রোগ্র্যাভিটি সহ্য করতে পারে কি না তা জানা যায়।

২০২২ সালের মার্চে শত শত শ্যাওলার ‘স্পোরোফাইট’ বা স্পোর ধারণ করে ও প্রজননের জন্য দায়ী এমন শ্যাওলাকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাঠান গবেষকরা। এরপর নভোচারীরা এগুলোকে স্টেশনের বাইরের অংশে দুইশো ৮৩ দিন ধরে স্থাপন করেছেন। এরপর আরো পরীক্ষার জন্য পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল এগুলোকে।

হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটি’র গবেষক ও এ গবেষণার নেতৃত্বে থাকা তোমোমিচি ফুজিতা বলেছেন, “এগুলোর টিকে থাকার আশা আমরা একেবারে ছেড়েই দিয়েছিলাম। তবে গবেষণার ফলাফল আমাদের পুরোপুরি বিস্মিত করেছে, অধিকাংশ স্পোরই টিকে ছিল। এ ছোট উদ্ভিদ কোষের অসাধারণ স্থায়িত্ব বা সহনশীলতা দেখে আমরা সত্যিই বিস্মিত হয়েছি।

গবেষণায় উঠে এসেছে, ৮০ শতাংশের বেশি শ্যাওলার স্পোর টিকে রয়েছে এবং এদের মধ্যে অধিকাংশ পৃথিবীতে ফেরার পরও অঙ্কুরোদগম করেছে। এ পরীক্ষার তথ্য ব্যবহার করে গবেষকরা অনুমান করছেন, মহাকাশে প্রায় ১৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারবে এসব শ্যাওলা।

গবেষকরা বলছেন, শ্যাওলার এ দীর্ঘায়ু ভবিষ্যতের বিভিন্ন চাঁদ ও মঙ্গল অভিযানের জন্য বিশেষভাবে কাজে লাগতে পারে। কারণ মহাকাশে কৃষি ব্যবস্থা তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে এ গবেষণা। অধ্যাপক ফুজিতা বলেছেন, মানুষসহ সব ধরনের জীবিত সত্তা মহাকাশের শূন্যতায় অল্প সময়ের জন্যও বেঁচে থাকতে পারে না। তবে শ্যাওলার এসব স্পোর ৯ মাস সরাসরি মহাকাশের সংস্পর্শে থাকার পরও টিকে ছিল। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, পৃথিবীতে বিবর্তিত বিভিন্ন প্রাণের কোষে এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা মহাকাশের চরম পরিবেশ সহ্য করতে পারে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সেল প্রেস’-এর ‘আইসায়েন্স’-এ।

সানা/ওআ/আপ্র/২৬/১১/২০২৫