প্রত্যাশা ডেস্ক: নীল আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা পেঁজা তুলোর মতো মেঘ দেখে আমাদের সবারই মনে হয় এর যেন কোনো ওজনই নেই, অনেকটা বাতাসের চেয়েও হালকা। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। আমাদের মাথার ওপর ভেসে বেড়ানো সাধারণ এক টুকরো মেঘের ওজন আসলে ১০০টি হাতির সমান হতে পারে। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটিই সত্যি। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফিয়ারিক রিসার্চ’ বা এনসিএআর এর বিজ্ঞানীরা মেঘের এই বিস্ময়কর ওজনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এনসিএআর-এর বিজ্ঞানী পেগি লেমোন মেঘের ওজন নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করেছেন। তিনি জানান, আমরা সাধারণত আকাশে যে সাদা স্তূপাকৃতির মেঘ বা ‘কিউমুলাস ক্লাউড’ দেখি, তার ঘনত্ব এবং আয়তন পরিমাপ করে এই ওজন বের করা হয়েছে। বিজ্ঞানের হিসাব অনুযায়ী, মেঘ মূলত কোটি কোটি ক্ষুদ্র জলকণা দিয়ে তৈরি। বিজ্ঞানীরা একটি সাধারণ কিউমুলাস মেঘের পানির ঘনত্ব পরিমাপ করে দেখেছেন যে, এক ঘনমিটার মেঘে প্রায় ০.৫ গ্রাম পানি থাকে।
এখন যদি ১ কিলোমিটার চওড়া এবং ১ কিলোমিটার লম্বা একটি মেঘের আয়তন হিসাব করা হয়, তবে তার মোট ওজন দাঁড়ায় প্রায় ৫ লক্ষ কেজি বা ১.১ মিলিয়ন পাউন্ড।
তুলনা করার সুবিধার্থে বিজ্ঞানী লেমোন হাতির উদাহরণ টেনেছেন। যদি একটি প্রাপ্তবয়স্ক হাতির গড় ওজন ৬ টন বা ৬০০০ কেজি ধরা হয়, তবে ওই এক খণ্ড মেঘের ওজন দাঁড়ায় প্রায় ৮৩টি থেকে ১০০টি হাতির সমান। যদি আরও বড় উদাহরণ দেওয়া হয়, তবে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী বিমান বোয়িং-৭৪৭ এর ওজনের প্রায় সমান বা তার চেয়েও বেশি।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, ১০০টি হাতির সমান ওজনের বস্তু কীভাবে ভেসে থাকে বা নিচে পড়ে যায় না কেন? এর উত্তর লুকিয়ে আছে ‘ঘনত্ব’ এবং ‘বাতাসের প্রবাহে’। ৫ লক্ষ কেজি ওজনটি বিশাল একটি এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকে, ফলে মেঘের ভেতরের বাতাস এবং জলকণাগুলো অনেক পাতলা হয়। মেঘের ঠিক নিচের শুষ্ক বাতাসের ঘনত্ব মেঘের জলকণাযুক্ত বাতাসের চেয়ে বেশি।
তাই ভারী বাতাস হালকা মেঘকে ঠেলে উপরে রাখে। এ ছাড়া পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে গরম বাতাস যখন ওপরের দিকে ওঠে, তখন তা এই মেঘকে ভাসিয়ে রাখতে সাহায্য করে। যখন মেঘের জলকণাগুলো বড় হয়ে বাতাসের চেয়ে ভারী হয়ে যায়, তখনই কেবল তা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। তাই পরের বার যখন আকাশের দিকে তাকাবেন এবং ‘হালকা’ মেঘ ভেসে যেতে দেখবেন, মনে রাখবেন আপনার মাথার ওপর দিয়ে আসলে ১০০টি হাতির সমান ওজনের বিশাল জলকণা ভেসে যাচ্ছে।
সূত্র: মেন্টাল ফ্লোস
ওআ/আপ্র/২৪/১১/২০২৫

























