ঢাকা ০৪:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পনে ১০ জনের মৃত্যু

প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে কাঁপিয়ে গেল দেশ

  • আপডেট সময় : ০৮:১৬:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫
  • ৫৩ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

প্রত্যাশা ডেস্ক: গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে দেশের তিন জেলায় শিশুসহ অন্তত দশ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত ৬ শতাধিক মানুষ।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০.৩৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে এই ভূমিকম্প হয়। এটি কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। ভূমিকম্পের সময় ও এর পরপরই রাজধানীর সব পাড়া-মহল্লার প্রচুর লোকজন আতঙ্কে রাস্তায় বের হয়ে আসেন। ভূমিকম্পের সময় বাসাবাড়ি প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে কেঁপেছে বলে এই প্রতিবেদকের পরিবার এবং প্রতিবেশীরাও অনুভব করেছেন। ঢাকার বাইরে থেকে অনেকে ফেসবুকে লিখেছেন- সেসব স্থানেও ঘরবাড়ি প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে কেঁপে উঠেছে।

নরসিংদীর মাধবদীকে কেন্দ্র করে হওয়া এ কম্পনে সারাদেশে এ পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬০০  জন চিকিৎসা নেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে রাজধানীর বংশালের কসাইটুলী এলাকায় একটি পাঁচতলা ভবনের রেলিং ভেঙে নিচে পড়ে তিন পথচারী নিহত হন। নিহতদের মধ্যে বাবা–ছেলে হলেন হাজি আব্দুল রহিম (৪৭) ও মেহরাব হোসেন রিমন (১৩)। একই ঘটনায় মায়ের সঙ্গে বাজার করতে গিয়ে নিহত হন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাফি। তার মা নুসরাত গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ ছাড়া রাজধানীর মুগদার মদিনা বাগ এলাকায় ভূমিকম্পে নির্মাণাধীন ভবনের রেলিং ধসে পড়ে মাকসুদ (৫০) নামে এক নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ইসলামবাগ এলাকায় ভূমিকম্পের সময় একটি টিনশেড বাড়ির দেয়াল ধসে পড়ে এক বছর বয়সি শিশু ফাতেমার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার মা কুলসুম বেগম এবং প্রতিবেশী জেসমিন বেগম আহত হন। ঘটনাটি রূপগঞ্জ থানার ওসি তরিকুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।

অন্যদিকে নরসিংদী সদর উপজেলার গাবতলী এলাকায় ভূমিকম্পের সময় বাড়ির সানশেড ভেঙে পড়ে ওমর (১০) নামে এক শিশু নিহত হয়। একই ঘটনায় তার বাবা দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল আহত অবস্থায় পরে মারা যান। ওমরের চাচা জাকির হোসেন জানান, ভূমিকম্প শুরু হলে দেলোয়ার তিন সন্তানকে নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তখনই সানশেড ভেঙে তাদের ওপর পড়ে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে ওমরকে মৃত ঘোষণা করা হয় এবং পরে ঢামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেলোয়ারের মৃত্যু হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ওসি মো. ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়া জেলার পলাশ উপজেলার মালিতা গ্রামে মাটির ঘরের দেয়াল ধসে কাজেম আলী ভূঁইয়া (৭৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি কাজীরচর নয়াপাড়া গ্রামের নাসির উদ্দিন (৬৫) এবং শিবপুরের জয়নগর ইউনিয়নের আজকীতলা গ্রামের ফোরকান মিয়া (৪৫)–ও ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছেন।

ক্ষয়ক্ষতির খবর আসে সারাদিন ধরে: সময় গড়াবার সাথে সাথে রাজধানীসহ বিভিন্নস্থান থেকে ঘরবাড়ি হেলেদুলে পড়া ও ফাটল ধরার খবর আসতে থাকে। তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকার মেরুল বাড্ডার স্কুল শিক্ষক প্রদীপ রায়ের স্ত্রী জয়ন্তী রায় আজকের প্রত্যাশাকে জানান, তারা পশ্চিম মেরুলের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় গলির ৬ তলা যে বিশাল ভবনটিতে বাস করেন, সেটিতে ফাটল ধরেছে। ভূমিকম্পের সময় প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে কেঁপে ওঠে ভবনটি। সাথে সাথে ভবনের বাসিন্দারা দ্রুতবেগে রাস্তায় বের হয়ে আসেন বলে জানান জয়ন্তী রায়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালের পুলিশ ক্যম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ৬ শিক্ষার্থীসহ ৪১ জন জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীসহ ৬ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়া পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে ১০ জনকে নেওয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরেও আহত হয়েছেন অনেকে।

শুক্রবার ছুটির দিনের সকালে ১০টা ৩৮ মিনিটে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৭; উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার পাশে নরসিংদীর মাধবদীতে। ২৬ সেকেন্ড স্থায়ী এ ভূমিকম্পে প্রাথমিকভাবে আতঙ্ক ছড়ায়, বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে মানুষ। এরপর আসতে থাকে প্রাণহানি আর ক্ষয়ক্ষতির তথ্য। এই ভূখণ্ডে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পেরও ইতিহাস রয়েছে। তবে গত কয়েক দশকের মধ্যে এমন প্রাণঘাতি ভূমিকম্প দেশের মানুষ আর দেখেনি।

ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, দুটো প্লেটের সংযোগস্থলে এ ভূমিকম্পটি হয়েছে, ইন্দো-বার্মা টেকটোনিক প্লেটে। ভূমিকম্পের কম্পনের তীব্রতা ছিল বেশ। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এক বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

হতাহতের চিত্র: ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আরমানিটোলার কসাইটুলি এলাকার একটি ৮ তলা ভবনের পাশের দেয়াল এবং কার্নিশ থেকে ইট ও পালেস্তারা খসে নিচে পড়ে, যেখানে একটি গরুর মাংস বিক্রির দোকান ছিল। সেখানে থাকা ক্রেতা ও পথচারীরা আহত হন। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই স্থানীয় লোকজন তাদের হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা ৩ জনকে মৃত ঘোষণা করেন।
বংশাল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন নিহতরা হলেন আনুমানিক ২২ বছর বয়সী রাফিউল ইসলাম, হাজী আবদুর রহিম (৪৭) ও তার ছেলে মেহরাব হোসেন রিমন (১২)।

রাফিউল ইসলাম স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমুহ) চিকিৎসক আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার একটি ভবনের দেয়াল ধসে দশ মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
রূপগঞ্জ থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার সকালে উপজেলার গোলাকান্দাইল এলাকায় এ ঘটনায় শিশুটির মাসহ আরো দুজন আহত হন। নিহত শিশু ফাতেমা ওই এলাকার আব্দুল হকের মেয়ে; তিনি ঢাকার শ্যামবাজারে ব্যবসা করেন।

উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে নিহত ৪, আহত শতাধিক: দেশে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পের কারণে উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতেই প্রাণ হারিয়েছেন চারজন। আহত হয়েছেন শতাধিক। নিহতদের মধ্যে সানশেড ভেঙে মাথায় পড়ে এক শিশু, দেয়াল চাপায় এক বৃদ্ধ ও গাছ থেকে পড়ে একজন মারা গেছেন। অপরজন প্রাণ হারিয়েছেন আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। সদর হাসপাতাল ও পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষসহ নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন এসব তথ্য জানিয়েছেন।

নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলি এলাকার দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বলের ছেলে হাফেজ মো. ওমর (৮), পলাশ উপজেলার মালিতা পশ্চিমপাড়া গ্রামের কাজেম আলী ভূইয়া (৭৫) ও কাজীরচর নয়াপাড়া গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিনের ছেলে নাসির উদ্দিন (৬৫) এবং শিবপুরের জয়নগর ইউনিয়নের আজকীতলা গ্রামের ফোরকান মিয়া (৪৫)। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে নরসিংদী সদর ও পলাশ উপজেলার মধ্যবর্তী অঞ্চলে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার এ ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব ছিল ২৬ সেকেন্ড। এতে সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। নরসিংদীতে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক ভবনসহ বিভিন্ন ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।

যেভাবে মারা গেলেন চারজন: ভূমিকম্পের সময় সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলি এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল থেকে ইট ধসে পাশের বসতবাড়ির ছাদের ওপর আছড়ে পড়ে। এতে বাড়ির সানশেড ভেঙে মো. ওমর (৮), তার বাবা দেলোয়ার হোসেন ও দুই বোন আহত হয়। তাদেরকে প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাবা ও ছেলেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে নিয়ে গেলে ছেলে মো. ওমরকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। বাবা দেলোয়ার হোসেন আশংকাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ওমরের চাচা জাকির হোসেন বলেন, ভূমিকম্পের সময় দেলোয়ার তার এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে বাইরে যাচ্ছিলেন। এসময় বাসার সানশেড ভেঙে তাদের উপর পড়ে দুইজন গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাদেরকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে বাবা ও ছেলেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলে চিকিৎসক ওমরকে মৃত ঘোষণা করেন। দেলোয়ার হোসেন উজ্জল গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং দেলোয়ারের দুই মেয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে ভূমিকম্পের সময় মাটির ঘরের দেয়াল ধসে প্রাণ হানিয়েছে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার মালিতা পশ্চিমপাড়া গ্রামের কাজেম আলী ভূইয়া (৭৫)। তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে নরসিংদী ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আব্দুল্লাহ আল মামুন। অপরদিকে শিবপুর মডেল থানার ওসি মো. আফজাল হোসাইন বলেন, ভূমিকম্পের সময় গাছ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন শিবপুর উপজেলার ইউনিয়নের আজকীতলা পূর্বপাড়া গ্রামের শরাফত আলীর ছেলে ফোরকান মিয়া (৪৫)। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে সেখানে তিনি মারা যান।
এ ছাড়া ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হন ৬৫ বছরের নাসির উদ্দিন। তিনি কাজীরচর নয়াপাড়া গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিনের ছেলে। স্থানীয়দের বরাতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বলেন, ভূমিকম্পের সময় ফসলী জমি থেকে আতঙ্কিত হয়ে দৌড়ে আসার পথে হৃদরোগে আক্রান্ত হন নাসির উদ্দিন। রাস্তা থেকে নিচে পড়ে ঘটনাস্থলেই তাৎক্ষণিক মৃত্যুবরণ করায় নিকটাত্মীয়রা তার লাশ হাসাপাতালে নেননি।

বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন শতাধিক: ভূমিকম্পে শহর-গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন ভবন, বসতবাড়ি, মার্কেট ও দোকানপাট থেকে তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে অনেকে আহত হয়েছেন। এছাড়া ভূমিকম্পের সময় অনেকে মাথা ঘুরপাক খেয়ে বা বুকে ব্যথা নিয়ে পড়ে গিয়েও আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহতদের মধ্যে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ৫৩ জন চিকিৎসা নিয়েছেন এবং ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ১০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে অর্ধশত চিকিৎসা নিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন সৈয়দ আমীরুল হক শামীম।

ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন, সার কারখানা বন্ধ: ভূমিকম্পে ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পুড়ে যায়। যার কারণে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। পলাশ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. আব্দুল শহীদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে পলাশ ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিটের চেষ্টায় অল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়। ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. এনামুল হক জানান, ভূমিকম্পে এ আগুনের ঘটনা ঘটে। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কাজ চলছে। এছাড়া ভূ-কম্পণে কারণে সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার কারখানার ইউরিয়া উৎপাদন। ভূমিকম্পের সময় কারখানার ইঞ্জিন মেশিনারিজ ভাইব্রেশনের মাধ্যমে বন্ধ হয়ে যায়। সেসব মেশিনারিজ এখন চেকিং অপারেশনে আছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিভিন্ন ভবনে ফাটল, মাটি ফেটে চৌচির: ভূমিকম্পে জেলার বড় কোনো ভবন ধসের ঘটনা না ঘটলেও সার্কিট হাউসহ অনেক ভবন ও বাড়িঘরে ছোট বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। হেলে গেছে একটি ভবন। এর মধ্যে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চারটি আবাসিক ভবনে কিছুটা ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ফাটল দেখা দিয়েছে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল বাজারের ছয়তলা বিল্ডিং এসএ প্লাজায়। এ ভবনে থাকা মারকাযুস্ সুন্নাহ তাহ্ফীজুল কুরআন মাদ্রাসার পরিচালক মুফতী সালাহ উদ্দীন আনসারী তা নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া ঘোড়াশালের লেবুপাড়া এলাকায় ঘোড়াশাল ডেইরী ফার্মের মাঠের মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এছাড়া পলাশ রেসিডেনসিয়াল স্কুলের পাশে একটি বিল্ডিং এ ফাটল দিয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। ঘোড়াশাল নতুন বাজার গ্রামের ইসহাক মিয়ার বাড়ি ভেঙে পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার খ্যাত পাইকারী কাপড়ের হাট নরসিংদীর শেখেরচর বাবুরহাট বাজারের ধুমকেতু মাঠে একটি চারতলা ভবন সামান্য হেলে গেছে। শহরের গাবতলী এলাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আরাফাত শাহ বলেন, ভূমিকম্পে আমার চারতলা বিল্ডিং এর বিভিন্ন দেয়ালের টাইলস ভেঙে পড়ে। এতে বিভিন্ন আসবাবপত্র ভেঙে গেছে। তবে বাসার সবাই সুস্থ আছি, কিন্তু আতংকে রয়েছি। বিশেষ করে বাচ্চারা অনেক ভয় পেয়েছে।

নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। বিভিন্ন টিমের মাধ্যমে সমন্বয় করে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সরকারের নির্দেশনামতে পরবর্তীতে সবধরনের সহায়তা করা হবে। নরসিংদী জেলা হাসপাতালে আহত ৪৫ এর মধ্যে গুরুতর অসুস্থ ৩ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরর হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের তিনতলা ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের চারতলা থেকে নিচে লাফ দিয়ে তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এছাড়া সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পা ভেঙেছেন ছাত্রদল নেতা তানভীর বারী হামিম, আহত হয়েছেন আরো অনেকে। কলাবাগানের লেক সার্কাস রোড, হাতিরপুল, সেন্ট্রাল রোড, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, এলিফেন্ট রোড, মিরপুর, গুলশান, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায়, মানুষকে দ্রুত ভবন ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় কে কার আগে নামবেন তা নিয়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিও হয়।

শ্রীপুরে পোশাক কারখানায় শতাধিক শ্রমিক আহত: গাজীপুরের শ্রীপুরে ভূমিকম্পের সময় সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে গিয়ে ‘ডেনিম্যাক’ নামের একটি পোশাক কারখানার শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। কারখানাটি শ্রীপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কেওয়া পূর্ব খন্ড গারো পাড়া এলাকায় অবস্থিত। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে অনুভূত ভূমিকম্পের সময় শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নামতে গেলে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। শ্রমিকরা জানান, ভূমিকম্প অনুভূত হতেই কর্মরত সবাই কান্নাকাটি করে ও চিৎকার দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে একসাথে হুড়োহুড়ি শুরু করে। সিঁড়িতে জায়গা কম থাকায় অনেকে সিঁড়িতে পড়ে যান; অনেকে অন্যের ওপর পড়ে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত পান। কারখানার সাধারণ শ্রমিক এবং স্থানীয়রা আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ স্থানীয় ক্লিনিকে নেন। শ্রীপুর উপজেলা সদর সরকারি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. বিজন মালাকার জানান, ‘কারখানার সিঁড়ি বেয়ে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গাজীপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের অবস্থা স্থিতিশীল, প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’

শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ভূমিকম্পের সময় শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে দরজা-সিঁড়ির দিকে ছুটে গেলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। কারখানার কোনো কাঠামোগত ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।’ স্থানীয়রা মনে করছেন, আতঙ্ক এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রশিক্ষণের অভাব এই মানবিক দুর্ঘটনার মূল কারণ।
এদিকে গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজের উপ-পরিচালক আব্দুল সালাম সরকার বলেন, এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ভূমিকম্পে কম বেশি আহত এ হাসপাতালে এসেছেন। তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ৭২ জনের মধ্যে ৪৯ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন ৫৩ জন। তাদের মধ্যে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন ১৫ জন।

কুমিল্লা ইপিজেডের অর্ধশতাধিক নারী শ্রমিক অজ্ঞান: ভূমিকম্পের সময় কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) তাড়াহুড়ো করে বের হওয়ার সময় অর্ধশতাধিক নারী শ্রমিক অচেতন হয়ে পড়েছেন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে ভূমিকম্পের সময় তাড়াহুড়ো করে নামার সময় তারা অচেতন হয়ে পড়েন। এ সময় ৫ নারী আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কুমিল্লা ইপিজেডের ভবনগুলোতে ভূমিকম্প অনুভূত হতেই নারী কর্মীরা আতঙ্কে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। অনেকেই দৌড়ে বের হতে গিয়ে পড়ে গিয়ে আঘাত পান। কেউ কেউ ভয়ে অজ্ঞান হয়ে অফিসের মেঝেতে পড়ে যান। পরে তাদের উদ্ধার করে ইপিজেডের বেপজা হাসপাতাল এবং কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ভবনে ফাটল: ঢাকায় অনেক ভবনে ফাটল ও পলেস্তরা খসে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। উত্তর বাড্ডার বাসিন্দা সাংবাদিক ইমরান হোসেন জানান, শুক্রবার সকালে ঘুমের মধ্যে শক্ত ঝাঁকুনি অনুভব করে অনেকেই বিচলিত হয়ে পড়েন। ভূমিকম্প টের পেয়ে অনেকেই বাসভবন থেকে বেরিয়ে পড়েন। অনেক ভবনে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। ঘটনার এক ঘণ্টা বাদেও বাসায় ঢুকতে ভয় পাচ্ছেন। তিনি বলেন, আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, শেলফ থালা-বাসন নিচে পড়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতি দেখতে কোনো জরুরি সাড়াদানকারী দলকে তিনি দেখেননি। মেরামতের জন্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না। নিউ মার্কেট থানার ওসি এ কে এম মাহফুজুল হক বলেন, তাদের থানা ভবনের ৩,৪ ও ৫ তলায় ফাটল ধরেছে। নিউ মার্কেটের সামনে একটি ভবন হেলে পড়ার গুঞ্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, সে রকম কিছু না। ভবন মালিকের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, ভবনের ডিজাইনই এ রকম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসিন হল, কবি জসীমউদ্দিন হল, স্যার এ এফ রহমান, মোকাররম ভবন, শেখ ফজলুল হলসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়েছে। গাজীপুরে হেলে পড়েছে ছয়তলা একটি ভবন, ফাটল ধরেছে এক মাদ্রাসার দেয়ালে। টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, স্টেশন রোডে একটি ছয় তলা ভবন হেলে আরেকটি ভবনের সঙ্গে লেগে গেছে। এতে ভবনটির বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভূমিকম্পের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ভূমিকম্প টের পেয়ে আতঙ্কিত মানুষ ছুটে ভবনের নীচে নেমে ফাঁকা জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। বহুতল ভবনগুলোতে মানুষ পিলার ধরে থাকার কথা জানিয়েছেন। অনেকে ভূমিকম্পের সিসি ক্যামেরার ভিডিও শেয়ার করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের একটি কক্ষের জিনিসপত্র তছনছ হয়ে গেছে।

সারা দেশে ৭ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ: ঢাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে দেশে বৃহৎ ও ছোট আকারের সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ট্রিপ (বন্ধ) করেছে। একইসঙ্গে একটি সাবস্টেশনও দুর্ঘটনার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকায় গ্রিডে বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে পরিস্থিতি ঠিক হতে কিছুটা সময় লাগবে।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পর বেলা ১১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও একটি গ্রিড সাবস্টেশন বন্ধের খবর পেয়েছে। বাকি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গ্রিডের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিপিডিবির পাঠানো তথ্যে জানা গেছে, ভূমিকম্পের কারণে সামিটের বিবিয়ানায় ৩৪১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। বিপিডিবির বিবিয়ানা-৩ (৪০০ মেগাওয়াট) বিদ্যুৎকেন্দ্র, আশুগঞ্জে ২২৫ মেগাওয়াট, ৫৫ মেগাওয়াট ও ৫০ মেগাওয়াটের তিনটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া চট্টগ্রামে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র এসএস পাওয়ার ৬০০ ইউনিটের একটি কেন্দ্র, সিরাজগঞ্জে ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৭৫ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া ঘোড়াশালের গ্রিড সাবস্টেশন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৩০ কেভি, ১৩২ কেভি ও ৩৩ কেভি লাইন বন্ধ হয়ে গেছে। বিপিডিবির নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ভূমিকম্পে ১১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত বিভিন্ন কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। আরো কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব কেন্দ্র চালু করতে সময় লাগবে। তবে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকায় লোডশেডিং হওয়ার তেমন কোনো আশঙ্কা নেই। এর আগে শুক্রবার সকালে তীব্র ভূকম্পন অনূভূত হওয়ার দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন ও বিতরণ বন্ধ হওয়ার কথা জানায় বিপিডিবি। সংস্থাটির পরিচালক (জনসংযোগ) শামীম হাসান এর পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়, শক্তিশালী ভূমিকম্পজনিত কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় সাময়িক বিঘ্ন ঘটেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ স্বাভাবিক করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

 

ফায়ার সার্ভিসের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা: বেলা ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া ক্ষয়ক্ষতির একটি তালিকা দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
১. আরমানিটোলার কসাইটুলি এলাকায় ৮ তলা ভবন ধসে পড়ার খবর পেয়ে সদরঘাট ও সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশন থেকে দুটি ইউনিট সেখানে যায়। তারা দেখতে পায় পলেস্তারার কিছু আলগা অংশ এবং কিছু ইট খসে পড়েছে। ভবনের কোনো ক্ষতি হয়নি।

২. খিলগাঁও নির্মাণাধীন ভবন থেকে পার্শ্ববর্তী দোতলা একটি ভবনে একটি ইট পড়ে একজন আহত হয়েছেন। স্থানীয় লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
৩. বারিধারা ব্লক-এফ, রোড-৫ এ একটি বাসায় আগুনের খবর পাওয়া যায়। বারিধারা ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট সেখানে গিয়ে আগুন নেভায়। ভূমিকম্পের কারণেই ওই আগুন লেগেছিল কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
৪. সূত্রাপুর স্বামীবাগ আট তলা একটি ভবন অন্য একটি ভবনে হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। সূত্রাপুর ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গেছেন।
৫. প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। স্যাটেলাইট ফায়ার স্টেশন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। কোনো ক্ষয়ক্ষতি নেই।
৬. কলাবাগানের আবেদখালী রোডে একটি ৭ তলা ভবন হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশন থেকে একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ভবন ঠিক আছে, লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ফোন করেছিল।
৭. মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় একটি বাসা বাড়িতে আগুন লাগে। গজারিয়া ফায়ার স্টেশন থেকে দুটি ইউনিট সেখানে গেছে।

সানা/ওআ/আপ্র/২১/১১/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

দিনাজপুরে বাস-ইজিবাইক সংঘর্ষে একই পরিবারের ৫ জন নিহত

কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পনে ১০ জনের মৃত্যু

প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে কাঁপিয়ে গেল দেশ

আপডেট সময় : ০৮:১৬:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে দেশের তিন জেলায় শিশুসহ অন্তত দশ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত ৬ শতাধিক মানুষ।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০.৩৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে এই ভূমিকম্প হয়। এটি কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। ভূমিকম্পের সময় ও এর পরপরই রাজধানীর সব পাড়া-মহল্লার প্রচুর লোকজন আতঙ্কে রাস্তায় বের হয়ে আসেন। ভূমিকম্পের সময় বাসাবাড়ি প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে কেঁপেছে বলে এই প্রতিবেদকের পরিবার এবং প্রতিবেশীরাও অনুভব করেছেন। ঢাকার বাইরে থেকে অনেকে ফেসবুকে লিখেছেন- সেসব স্থানেও ঘরবাড়ি প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে কেঁপে উঠেছে।

নরসিংদীর মাধবদীকে কেন্দ্র করে হওয়া এ কম্পনে সারাদেশে এ পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬০০  জন চিকিৎসা নেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে রাজধানীর বংশালের কসাইটুলী এলাকায় একটি পাঁচতলা ভবনের রেলিং ভেঙে নিচে পড়ে তিন পথচারী নিহত হন। নিহতদের মধ্যে বাবা–ছেলে হলেন হাজি আব্দুল রহিম (৪৭) ও মেহরাব হোসেন রিমন (১৩)। একই ঘটনায় মায়ের সঙ্গে বাজার করতে গিয়ে নিহত হন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাফি। তার মা নুসরাত গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ ছাড়া রাজধানীর মুগদার মদিনা বাগ এলাকায় ভূমিকম্পে নির্মাণাধীন ভবনের রেলিং ধসে পড়ে মাকসুদ (৫০) নামে এক নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ইসলামবাগ এলাকায় ভূমিকম্পের সময় একটি টিনশেড বাড়ির দেয়াল ধসে পড়ে এক বছর বয়সি শিশু ফাতেমার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার মা কুলসুম বেগম এবং প্রতিবেশী জেসমিন বেগম আহত হন। ঘটনাটি রূপগঞ্জ থানার ওসি তরিকুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।

অন্যদিকে নরসিংদী সদর উপজেলার গাবতলী এলাকায় ভূমিকম্পের সময় বাড়ির সানশেড ভেঙে পড়ে ওমর (১০) নামে এক শিশু নিহত হয়। একই ঘটনায় তার বাবা দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল আহত অবস্থায় পরে মারা যান। ওমরের চাচা জাকির হোসেন জানান, ভূমিকম্প শুরু হলে দেলোয়ার তিন সন্তানকে নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তখনই সানশেড ভেঙে তাদের ওপর পড়ে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে ওমরকে মৃত ঘোষণা করা হয় এবং পরে ঢামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেলোয়ারের মৃত্যু হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ওসি মো. ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়া জেলার পলাশ উপজেলার মালিতা গ্রামে মাটির ঘরের দেয়াল ধসে কাজেম আলী ভূঁইয়া (৭৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি কাজীরচর নয়াপাড়া গ্রামের নাসির উদ্দিন (৬৫) এবং শিবপুরের জয়নগর ইউনিয়নের আজকীতলা গ্রামের ফোরকান মিয়া (৪৫)–ও ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছেন।

ক্ষয়ক্ষতির খবর আসে সারাদিন ধরে: সময় গড়াবার সাথে সাথে রাজধানীসহ বিভিন্নস্থান থেকে ঘরবাড়ি হেলেদুলে পড়া ও ফাটল ধরার খবর আসতে থাকে। তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকার মেরুল বাড্ডার স্কুল শিক্ষক প্রদীপ রায়ের স্ত্রী জয়ন্তী রায় আজকের প্রত্যাশাকে জানান, তারা পশ্চিম মেরুলের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় গলির ৬ তলা যে বিশাল ভবনটিতে বাস করেন, সেটিতে ফাটল ধরেছে। ভূমিকম্পের সময় প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে কেঁপে ওঠে ভবনটি। সাথে সাথে ভবনের বাসিন্দারা দ্রুতবেগে রাস্তায় বের হয়ে আসেন বলে জানান জয়ন্তী রায়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালের পুলিশ ক্যম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ৬ শিক্ষার্থীসহ ৪১ জন জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীসহ ৬ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়া পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে ১০ জনকে নেওয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরেও আহত হয়েছেন অনেকে।

শুক্রবার ছুটির দিনের সকালে ১০টা ৩৮ মিনিটে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৭; উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার পাশে নরসিংদীর মাধবদীতে। ২৬ সেকেন্ড স্থায়ী এ ভূমিকম্পে প্রাথমিকভাবে আতঙ্ক ছড়ায়, বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে মানুষ। এরপর আসতে থাকে প্রাণহানি আর ক্ষয়ক্ষতির তথ্য। এই ভূখণ্ডে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পেরও ইতিহাস রয়েছে। তবে গত কয়েক দশকের মধ্যে এমন প্রাণঘাতি ভূমিকম্প দেশের মানুষ আর দেখেনি।

ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, দুটো প্লেটের সংযোগস্থলে এ ভূমিকম্পটি হয়েছে, ইন্দো-বার্মা টেকটোনিক প্লেটে। ভূমিকম্পের কম্পনের তীব্রতা ছিল বেশ। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এক বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

হতাহতের চিত্র: ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আরমানিটোলার কসাইটুলি এলাকার একটি ৮ তলা ভবনের পাশের দেয়াল এবং কার্নিশ থেকে ইট ও পালেস্তারা খসে নিচে পড়ে, যেখানে একটি গরুর মাংস বিক্রির দোকান ছিল। সেখানে থাকা ক্রেতা ও পথচারীরা আহত হন। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই স্থানীয় লোকজন তাদের হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা ৩ জনকে মৃত ঘোষণা করেন।
বংশাল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন নিহতরা হলেন আনুমানিক ২২ বছর বয়সী রাফিউল ইসলাম, হাজী আবদুর রহিম (৪৭) ও তার ছেলে মেহরাব হোসেন রিমন (১২)।

রাফিউল ইসলাম স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমুহ) চিকিৎসক আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার একটি ভবনের দেয়াল ধসে দশ মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
রূপগঞ্জ থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার সকালে উপজেলার গোলাকান্দাইল এলাকায় এ ঘটনায় শিশুটির মাসহ আরো দুজন আহত হন। নিহত শিশু ফাতেমা ওই এলাকার আব্দুল হকের মেয়ে; তিনি ঢাকার শ্যামবাজারে ব্যবসা করেন।

উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে নিহত ৪, আহত শতাধিক: দেশে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পের কারণে উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতেই প্রাণ হারিয়েছেন চারজন। আহত হয়েছেন শতাধিক। নিহতদের মধ্যে সানশেড ভেঙে মাথায় পড়ে এক শিশু, দেয়াল চাপায় এক বৃদ্ধ ও গাছ থেকে পড়ে একজন মারা গেছেন। অপরজন প্রাণ হারিয়েছেন আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। সদর হাসপাতাল ও পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষসহ নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন এসব তথ্য জানিয়েছেন।

নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলি এলাকার দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বলের ছেলে হাফেজ মো. ওমর (৮), পলাশ উপজেলার মালিতা পশ্চিমপাড়া গ্রামের কাজেম আলী ভূইয়া (৭৫) ও কাজীরচর নয়াপাড়া গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিনের ছেলে নাসির উদ্দিন (৬৫) এবং শিবপুরের জয়নগর ইউনিয়নের আজকীতলা গ্রামের ফোরকান মিয়া (৪৫)। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে নরসিংদী সদর ও পলাশ উপজেলার মধ্যবর্তী অঞ্চলে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার এ ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব ছিল ২৬ সেকেন্ড। এতে সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। নরসিংদীতে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক ভবনসহ বিভিন্ন ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।

যেভাবে মারা গেলেন চারজন: ভূমিকম্পের সময় সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলি এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল থেকে ইট ধসে পাশের বসতবাড়ির ছাদের ওপর আছড়ে পড়ে। এতে বাড়ির সানশেড ভেঙে মো. ওমর (৮), তার বাবা দেলোয়ার হোসেন ও দুই বোন আহত হয়। তাদেরকে প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাবা ও ছেলেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে নিয়ে গেলে ছেলে মো. ওমরকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। বাবা দেলোয়ার হোসেন আশংকাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ওমরের চাচা জাকির হোসেন বলেন, ভূমিকম্পের সময় দেলোয়ার তার এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে বাইরে যাচ্ছিলেন। এসময় বাসার সানশেড ভেঙে তাদের উপর পড়ে দুইজন গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাদেরকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে বাবা ও ছেলেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলে চিকিৎসক ওমরকে মৃত ঘোষণা করেন। দেলোয়ার হোসেন উজ্জল গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং দেলোয়ারের দুই মেয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে ভূমিকম্পের সময় মাটির ঘরের দেয়াল ধসে প্রাণ হানিয়েছে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার মালিতা পশ্চিমপাড়া গ্রামের কাজেম আলী ভূইয়া (৭৫)। তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে নরসিংদী ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আব্দুল্লাহ আল মামুন। অপরদিকে শিবপুর মডেল থানার ওসি মো. আফজাল হোসাইন বলেন, ভূমিকম্পের সময় গাছ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন শিবপুর উপজেলার ইউনিয়নের আজকীতলা পূর্বপাড়া গ্রামের শরাফত আলীর ছেলে ফোরকান মিয়া (৪৫)। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে সেখানে তিনি মারা যান।
এ ছাড়া ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হন ৬৫ বছরের নাসির উদ্দিন। তিনি কাজীরচর নয়াপাড়া গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিনের ছেলে। স্থানীয়দের বরাতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বলেন, ভূমিকম্পের সময় ফসলী জমি থেকে আতঙ্কিত হয়ে দৌড়ে আসার পথে হৃদরোগে আক্রান্ত হন নাসির উদ্দিন। রাস্তা থেকে নিচে পড়ে ঘটনাস্থলেই তাৎক্ষণিক মৃত্যুবরণ করায় নিকটাত্মীয়রা তার লাশ হাসাপাতালে নেননি।

বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন শতাধিক: ভূমিকম্পে শহর-গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন ভবন, বসতবাড়ি, মার্কেট ও দোকানপাট থেকে তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে অনেকে আহত হয়েছেন। এছাড়া ভূমিকম্পের সময় অনেকে মাথা ঘুরপাক খেয়ে বা বুকে ব্যথা নিয়ে পড়ে গিয়েও আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহতদের মধ্যে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ৫৩ জন চিকিৎসা নিয়েছেন এবং ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ১০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে অর্ধশত চিকিৎসা নিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন সৈয়দ আমীরুল হক শামীম।

ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন, সার কারখানা বন্ধ: ভূমিকম্পে ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পুড়ে যায়। যার কারণে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। পলাশ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. আব্দুল শহীদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে পলাশ ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিটের চেষ্টায় অল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়। ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. এনামুল হক জানান, ভূমিকম্পে এ আগুনের ঘটনা ঘটে। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কাজ চলছে। এছাড়া ভূ-কম্পণে কারণে সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার কারখানার ইউরিয়া উৎপাদন। ভূমিকম্পের সময় কারখানার ইঞ্জিন মেশিনারিজ ভাইব্রেশনের মাধ্যমে বন্ধ হয়ে যায়। সেসব মেশিনারিজ এখন চেকিং অপারেশনে আছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিভিন্ন ভবনে ফাটল, মাটি ফেটে চৌচির: ভূমিকম্পে জেলার বড় কোনো ভবন ধসের ঘটনা না ঘটলেও সার্কিট হাউসহ অনেক ভবন ও বাড়িঘরে ছোট বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। হেলে গেছে একটি ভবন। এর মধ্যে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চারটি আবাসিক ভবনে কিছুটা ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ফাটল দেখা দিয়েছে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল বাজারের ছয়তলা বিল্ডিং এসএ প্লাজায়। এ ভবনে থাকা মারকাযুস্ সুন্নাহ তাহ্ফীজুল কুরআন মাদ্রাসার পরিচালক মুফতী সালাহ উদ্দীন আনসারী তা নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া ঘোড়াশালের লেবুপাড়া এলাকায় ঘোড়াশাল ডেইরী ফার্মের মাঠের মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এছাড়া পলাশ রেসিডেনসিয়াল স্কুলের পাশে একটি বিল্ডিং এ ফাটল দিয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। ঘোড়াশাল নতুন বাজার গ্রামের ইসহাক মিয়ার বাড়ি ভেঙে পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার খ্যাত পাইকারী কাপড়ের হাট নরসিংদীর শেখেরচর বাবুরহাট বাজারের ধুমকেতু মাঠে একটি চারতলা ভবন সামান্য হেলে গেছে। শহরের গাবতলী এলাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আরাফাত শাহ বলেন, ভূমিকম্পে আমার চারতলা বিল্ডিং এর বিভিন্ন দেয়ালের টাইলস ভেঙে পড়ে। এতে বিভিন্ন আসবাবপত্র ভেঙে গেছে। তবে বাসার সবাই সুস্থ আছি, কিন্তু আতংকে রয়েছি। বিশেষ করে বাচ্চারা অনেক ভয় পেয়েছে।

নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। বিভিন্ন টিমের মাধ্যমে সমন্বয় করে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সরকারের নির্দেশনামতে পরবর্তীতে সবধরনের সহায়তা করা হবে। নরসিংদী জেলা হাসপাতালে আহত ৪৫ এর মধ্যে গুরুতর অসুস্থ ৩ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরর হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের তিনতলা ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের চারতলা থেকে নিচে লাফ দিয়ে তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এছাড়া সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পা ভেঙেছেন ছাত্রদল নেতা তানভীর বারী হামিম, আহত হয়েছেন আরো অনেকে। কলাবাগানের লেক সার্কাস রোড, হাতিরপুল, সেন্ট্রাল রোড, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, এলিফেন্ট রোড, মিরপুর, গুলশান, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায়, মানুষকে দ্রুত ভবন ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় কে কার আগে নামবেন তা নিয়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিও হয়।

শ্রীপুরে পোশাক কারখানায় শতাধিক শ্রমিক আহত: গাজীপুরের শ্রীপুরে ভূমিকম্পের সময় সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে গিয়ে ‘ডেনিম্যাক’ নামের একটি পোশাক কারখানার শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। কারখানাটি শ্রীপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কেওয়া পূর্ব খন্ড গারো পাড়া এলাকায় অবস্থিত। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে অনুভূত ভূমিকম্পের সময় শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নামতে গেলে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। শ্রমিকরা জানান, ভূমিকম্প অনুভূত হতেই কর্মরত সবাই কান্নাকাটি করে ও চিৎকার দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে একসাথে হুড়োহুড়ি শুরু করে। সিঁড়িতে জায়গা কম থাকায় অনেকে সিঁড়িতে পড়ে যান; অনেকে অন্যের ওপর পড়ে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত পান। কারখানার সাধারণ শ্রমিক এবং স্থানীয়রা আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ স্থানীয় ক্লিনিকে নেন। শ্রীপুর উপজেলা সদর সরকারি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. বিজন মালাকার জানান, ‘কারখানার সিঁড়ি বেয়ে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গাজীপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের অবস্থা স্থিতিশীল, প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’

শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ভূমিকম্পের সময় শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে দরজা-সিঁড়ির দিকে ছুটে গেলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। কারখানার কোনো কাঠামোগত ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।’ স্থানীয়রা মনে করছেন, আতঙ্ক এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রশিক্ষণের অভাব এই মানবিক দুর্ঘটনার মূল কারণ।
এদিকে গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজের উপ-পরিচালক আব্দুল সালাম সরকার বলেন, এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ভূমিকম্পে কম বেশি আহত এ হাসপাতালে এসেছেন। তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ৭২ জনের মধ্যে ৪৯ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন ৫৩ জন। তাদের মধ্যে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন ১৫ জন।

কুমিল্লা ইপিজেডের অর্ধশতাধিক নারী শ্রমিক অজ্ঞান: ভূমিকম্পের সময় কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) তাড়াহুড়ো করে বের হওয়ার সময় অর্ধশতাধিক নারী শ্রমিক অচেতন হয়ে পড়েছেন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে ভূমিকম্পের সময় তাড়াহুড়ো করে নামার সময় তারা অচেতন হয়ে পড়েন। এ সময় ৫ নারী আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কুমিল্লা ইপিজেডের ভবনগুলোতে ভূমিকম্প অনুভূত হতেই নারী কর্মীরা আতঙ্কে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। অনেকেই দৌড়ে বের হতে গিয়ে পড়ে গিয়ে আঘাত পান। কেউ কেউ ভয়ে অজ্ঞান হয়ে অফিসের মেঝেতে পড়ে যান। পরে তাদের উদ্ধার করে ইপিজেডের বেপজা হাসপাতাল এবং কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ভবনে ফাটল: ঢাকায় অনেক ভবনে ফাটল ও পলেস্তরা খসে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। উত্তর বাড্ডার বাসিন্দা সাংবাদিক ইমরান হোসেন জানান, শুক্রবার সকালে ঘুমের মধ্যে শক্ত ঝাঁকুনি অনুভব করে অনেকেই বিচলিত হয়ে পড়েন। ভূমিকম্প টের পেয়ে অনেকেই বাসভবন থেকে বেরিয়ে পড়েন। অনেক ভবনে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। ঘটনার এক ঘণ্টা বাদেও বাসায় ঢুকতে ভয় পাচ্ছেন। তিনি বলেন, আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, শেলফ থালা-বাসন নিচে পড়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতি দেখতে কোনো জরুরি সাড়াদানকারী দলকে তিনি দেখেননি। মেরামতের জন্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না। নিউ মার্কেট থানার ওসি এ কে এম মাহফুজুল হক বলেন, তাদের থানা ভবনের ৩,৪ ও ৫ তলায় ফাটল ধরেছে। নিউ মার্কেটের সামনে একটি ভবন হেলে পড়ার গুঞ্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, সে রকম কিছু না। ভবন মালিকের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, ভবনের ডিজাইনই এ রকম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসিন হল, কবি জসীমউদ্দিন হল, স্যার এ এফ রহমান, মোকাররম ভবন, শেখ ফজলুল হলসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়েছে। গাজীপুরে হেলে পড়েছে ছয়তলা একটি ভবন, ফাটল ধরেছে এক মাদ্রাসার দেয়ালে। টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, স্টেশন রোডে একটি ছয় তলা ভবন হেলে আরেকটি ভবনের সঙ্গে লেগে গেছে। এতে ভবনটির বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভূমিকম্পের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ভূমিকম্প টের পেয়ে আতঙ্কিত মানুষ ছুটে ভবনের নীচে নেমে ফাঁকা জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। বহুতল ভবনগুলোতে মানুষ পিলার ধরে থাকার কথা জানিয়েছেন। অনেকে ভূমিকম্পের সিসি ক্যামেরার ভিডিও শেয়ার করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের একটি কক্ষের জিনিসপত্র তছনছ হয়ে গেছে।

সারা দেশে ৭ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ: ঢাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে দেশে বৃহৎ ও ছোট আকারের সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ট্রিপ (বন্ধ) করেছে। একইসঙ্গে একটি সাবস্টেশনও দুর্ঘটনার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকায় গ্রিডে বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে পরিস্থিতি ঠিক হতে কিছুটা সময় লাগবে।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পর বেলা ১১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও একটি গ্রিড সাবস্টেশন বন্ধের খবর পেয়েছে। বাকি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গ্রিডের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিপিডিবির পাঠানো তথ্যে জানা গেছে, ভূমিকম্পের কারণে সামিটের বিবিয়ানায় ৩৪১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। বিপিডিবির বিবিয়ানা-৩ (৪০০ মেগাওয়াট) বিদ্যুৎকেন্দ্র, আশুগঞ্জে ২২৫ মেগাওয়াট, ৫৫ মেগাওয়াট ও ৫০ মেগাওয়াটের তিনটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া চট্টগ্রামে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র এসএস পাওয়ার ৬০০ ইউনিটের একটি কেন্দ্র, সিরাজগঞ্জে ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৭৫ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া ঘোড়াশালের গ্রিড সাবস্টেশন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৩০ কেভি, ১৩২ কেভি ও ৩৩ কেভি লাইন বন্ধ হয়ে গেছে। বিপিডিবির নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ভূমিকম্পে ১১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত বিভিন্ন কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। আরো কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব কেন্দ্র চালু করতে সময় লাগবে। তবে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকায় লোডশেডিং হওয়ার তেমন কোনো আশঙ্কা নেই। এর আগে শুক্রবার সকালে তীব্র ভূকম্পন অনূভূত হওয়ার দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন ও বিতরণ বন্ধ হওয়ার কথা জানায় বিপিডিবি। সংস্থাটির পরিচালক (জনসংযোগ) শামীম হাসান এর পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়, শক্তিশালী ভূমিকম্পজনিত কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় সাময়িক বিঘ্ন ঘটেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ স্বাভাবিক করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

 

ফায়ার সার্ভিসের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা: বেলা ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া ক্ষয়ক্ষতির একটি তালিকা দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
১. আরমানিটোলার কসাইটুলি এলাকায় ৮ তলা ভবন ধসে পড়ার খবর পেয়ে সদরঘাট ও সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশন থেকে দুটি ইউনিট সেখানে যায়। তারা দেখতে পায় পলেস্তারার কিছু আলগা অংশ এবং কিছু ইট খসে পড়েছে। ভবনের কোনো ক্ষতি হয়নি।

২. খিলগাঁও নির্মাণাধীন ভবন থেকে পার্শ্ববর্তী দোতলা একটি ভবনে একটি ইট পড়ে একজন আহত হয়েছেন। স্থানীয় লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
৩. বারিধারা ব্লক-এফ, রোড-৫ এ একটি বাসায় আগুনের খবর পাওয়া যায়। বারিধারা ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট সেখানে গিয়ে আগুন নেভায়। ভূমিকম্পের কারণেই ওই আগুন লেগেছিল কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
৪. সূত্রাপুর স্বামীবাগ আট তলা একটি ভবন অন্য একটি ভবনে হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। সূত্রাপুর ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গেছেন।
৫. প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। স্যাটেলাইট ফায়ার স্টেশন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। কোনো ক্ষয়ক্ষতি নেই।
৬. কলাবাগানের আবেদখালী রোডে একটি ৭ তলা ভবন হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশন থেকে একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ভবন ঠিক আছে, লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ফোন করেছিল।
৭. মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় একটি বাসা বাড়িতে আগুন লাগে। গজারিয়া ফায়ার স্টেশন থেকে দুটি ইউনিট সেখানে গেছে।

সানা/ওআ/আপ্র/২১/১১/২০২৫