ঢাকা ০৩:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

আমার ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখতে চাই : আবু সাঈদের বাবা

  • আপডেট সময় : ০৪:৩৪:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
  • ৪৯ বার পড়া হয়েছে

ফাইল ছবি

রংপুর সংবাদদাতা: চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে শহীদ আবু সাঈদের পরিবার।

রায় ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় শহীদ আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যরা পলাতক শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য আসামিদের দ্রুত দেশে এনে রায় কার্যকর করার দাবি জানান।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, আমি রায়ে খুশি কিন্তু বিচার দেখতে চাই। আমার ছেলে শহীদ হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশ আমার ছেলেকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছে। আমি হুকুমদাতাসহ পুলিশের বিচার চাই। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই। হত্যা করার অনুমতি দিয়েছিল বলেই আমার ছেলের মতো হাজার হাজার মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অনেকে হাত পা হারিয়েছে, পঙ্গু হয়েছেন। কারো কারো চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। হাসপাতালে এখনো অনেকে কাতরাচ্ছে। ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে বাংলার মাটিতে নিয়ে এসে রায় কার্যকর করতে হবে।

আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, আমরা সবার বিচার চাই। যারা হুকুম দিয়েছে, যারা গুলি করেছে সবাইকে ফাঁসি দিতে হবে। আমি মা, আজ বুঝতে পারছি ছেলে হারানোর কষ্ট। আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে আমার মতো অনেক মা, বোন, ভাই সন্তান হারিয়েছে, স্বামী হারিয়েছে। অনেক জীবন সংসার শেষ হয়ে গেছে। এসবের বিচার হতে হবে।

আবু সাঈদের বড়ভাই আবু হোসেন বলেন, শুধু রায় ঘোষণা করলে হবে না বিচার কার্যকর করতে হবে। শেখ হাসিনা ও তার দোসররা দীর্ঘদিন স্বৈরাচারি সিস্টেমে গুম খুন করেছে। জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্র জনতাকে নির্মমভাবে গণহত্যা করে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে। আজ প্রথম রায় হয়েছে। শুধু রায় নয়, এটি কার্যকর করতে হলে শেখ হাসিনাকে এই দেশের মাটিতে এনে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। তা না হলে শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে না।

আবু সাঈদ হত্যা মামলার বাদী ও আরেক বড়ভাই রমজান আলী বলেন, আবু সাঈদকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো বিশ্ব দেখেছে। প্রকাশ্যে পুলিশ তাকে গুলি করে হত্যা করেছে। সেই ভিডিও ফুটেজ সবাই দেখেছে। এটা তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। তাদের নির্দেশ পেয়ে পুলিশ সাহস করে গুলি করে আবু সাঈদকে শহীদ করে দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা বুঝতেছেন ভাই হারানো, বোন হারানো, মা হারানো, স্বামী হারানো কত যন্ত্রণার। আমরা এমন বিচার দেখতে চাই, খুনিরা যে দেশেই পালিয়ে থাকুক তাদের ধরে এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। তাদেরকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে বাংলার মানুষকে দেখাতে হবে এমন স্বৈরাচারের বিচার কী হতে পারে।

প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আবু সাঈদের গ্রামের স্থানীয়রা জানান, শেখ হাসিনাসহ এসব হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের সবার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আমরা রায়ে খুশি, কিন্তু তা যদি কার্যকর না হয় তাহলে সবকিছুই বৃথা যাবে। যেভাবে গণহত্যা চালিয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তার জন্য প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা উচিত। শুধু তাই নয়, রায়ের পর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সারাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে শহীদ ও আহতসহ জুলাই যোদ্ধারা সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ নিতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসরদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া কিংবা পুনর্বাসন করা যাবে না।

প্রসঙ্গত, সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। এই ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পাশাপাশি এই মামলার অন্য আসামি হলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক।

এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন।

এসি/আপ্র/১৭/১১/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

আমার ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখতে চাই : আবু সাঈদের বাবা

আপডেট সময় : ০৪:৩৪:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

রংপুর সংবাদদাতা: চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে শহীদ আবু সাঈদের পরিবার।

রায় ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় শহীদ আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যরা পলাতক শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য আসামিদের দ্রুত দেশে এনে রায় কার্যকর করার দাবি জানান।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, আমি রায়ে খুশি কিন্তু বিচার দেখতে চাই। আমার ছেলে শহীদ হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশ আমার ছেলেকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছে। আমি হুকুমদাতাসহ পুলিশের বিচার চাই। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই। হত্যা করার অনুমতি দিয়েছিল বলেই আমার ছেলের মতো হাজার হাজার মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অনেকে হাত পা হারিয়েছে, পঙ্গু হয়েছেন। কারো কারো চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। হাসপাতালে এখনো অনেকে কাতরাচ্ছে। ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে বাংলার মাটিতে নিয়ে এসে রায় কার্যকর করতে হবে।

আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, আমরা সবার বিচার চাই। যারা হুকুম দিয়েছে, যারা গুলি করেছে সবাইকে ফাঁসি দিতে হবে। আমি মা, আজ বুঝতে পারছি ছেলে হারানোর কষ্ট। আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে আমার মতো অনেক মা, বোন, ভাই সন্তান হারিয়েছে, স্বামী হারিয়েছে। অনেক জীবন সংসার শেষ হয়ে গেছে। এসবের বিচার হতে হবে।

আবু সাঈদের বড়ভাই আবু হোসেন বলেন, শুধু রায় ঘোষণা করলে হবে না বিচার কার্যকর করতে হবে। শেখ হাসিনা ও তার দোসররা দীর্ঘদিন স্বৈরাচারি সিস্টেমে গুম খুন করেছে। জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্র জনতাকে নির্মমভাবে গণহত্যা করে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে। আজ প্রথম রায় হয়েছে। শুধু রায় নয়, এটি কার্যকর করতে হলে শেখ হাসিনাকে এই দেশের মাটিতে এনে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। তা না হলে শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে না।

আবু সাঈদ হত্যা মামলার বাদী ও আরেক বড়ভাই রমজান আলী বলেন, আবু সাঈদকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো বিশ্ব দেখেছে। প্রকাশ্যে পুলিশ তাকে গুলি করে হত্যা করেছে। সেই ভিডিও ফুটেজ সবাই দেখেছে। এটা তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। তাদের নির্দেশ পেয়ে পুলিশ সাহস করে গুলি করে আবু সাঈদকে শহীদ করে দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা বুঝতেছেন ভাই হারানো, বোন হারানো, মা হারানো, স্বামী হারানো কত যন্ত্রণার। আমরা এমন বিচার দেখতে চাই, খুনিরা যে দেশেই পালিয়ে থাকুক তাদের ধরে এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। তাদেরকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে বাংলার মানুষকে দেখাতে হবে এমন স্বৈরাচারের বিচার কী হতে পারে।

প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আবু সাঈদের গ্রামের স্থানীয়রা জানান, শেখ হাসিনাসহ এসব হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের সবার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আমরা রায়ে খুশি, কিন্তু তা যদি কার্যকর না হয় তাহলে সবকিছুই বৃথা যাবে। যেভাবে গণহত্যা চালিয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তার জন্য প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা উচিত। শুধু তাই নয়, রায়ের পর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সারাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে শহীদ ও আহতসহ জুলাই যোদ্ধারা সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ নিতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসরদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া কিংবা পুনর্বাসন করা যাবে না।

প্রসঙ্গত, সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। এই ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পাশাপাশি এই মামলার অন্য আসামি হলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক।

এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন।

এসি/আপ্র/১৭/১১/২০২৫