ঢাকা ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

শেখ হাসিনার রায় ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা

  • আপডেট সময় : ০৯:২৬:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
  • ২৩ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিন জনের রায় ঘোষণাকে ঘিরে রাজধানীজুড়ে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রায় ঘোষণার জন্য ধার্য করা দিন সোমবার (১৭ নভেম্বর) সামনে রেখে রোববার (১৬ নভেম্বর) থেকেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, সরকারি স্থাপনা, কোর্ট প্রাঙ্গণ, কূটনৈতিক এলাকা, বিশ্ববিদ্যালয় ও গণজমায়েতপ্রবণ স্থানগুলোতে ব্যাপক পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে র‌্যাব, সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

পুলিশ বলছে, এই রায়কে কেন্দ্র করে যেকোনও ধরনের নাশকতা বা সহিংসতা ঠেকাতে তারা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে। পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘যারা নাশকতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রায়কে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা বরদাশত করা হবে না।’

ট্রাইব্যুনাল ঘিরে নিরাপত্তার বলয়: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চারপাশে বসানো হয়েছে অতিরিক্ত চেকপোস্ট, আর্চওয়ে, পুলিশি ব্যারিকেড ও মোবাইল স্ক্যানার। রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম বলেন, ‘যেহেতু কাল (সোমবার) রায় ঘোষণা হবে, তাই আজ (রোববার) থেকেই সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের চারপাশে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবিও মোতায়েন রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘কোনও ধরনের নাশকতা, মিছিল বা সমাবেশ যাতে আদালত এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রাজধানীজুড়ে চেকপোস্ট-টহল-নজরদারি: রায়কে কেন্দ্র করে রোববার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দেখা গেছে অতিরিক্ত টহল টিম, আর্মড পুলিশ, র‌্যাবের আর্মার্ড ভেহিকল, ডগ স্কোয়াড এবং সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্যদের উপস্থিতি। তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ইবনে মিজান বলেন, আজ থেকে পেট্রোলিং জোরদার করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। আমরা কোনো শঙ্কা দেখছি না, তবে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, শাহবাগ, প্রেসক্লাব, মতিঝিল, গুলিস্তান, কাওরান বাজার, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এবং হাইকোর্ট-ট্রাইব্যুনাল এলাকায় রয়েছে সর্বোচ্চ নজরদারি। ডিএমপি জানিয়েছে, রায় ঘোষণার আগে ‘এক ইঞ্চি জমিও’ নিরাপত্তার বাইরে রাখা হবে না।

ককটেল-অগ্নিসংযোগে অস্থিরতা: শেখ হাসিনার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন রাজধানীতে ককটেল বিস্ফোরণ ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা বেড়েছে। যা জনমনে উদ্বেগ তৈরি করেছে। রায়ের আগের কয়েক দিনে নিউ ইস্কাটন, আগারগাঁও, বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, মিরপুর-হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক ককটেল বিস্ফোরণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রোববার নিউ ইস্কাটন রোডে বিস্ফোরণে পথচারী আবদুল বাসির (৫০) আহত হন। একই সময়ে মিরপুর-হাতিরঝিল এলাকাজুড়ে চারটি বিস্ফোরণ এবং গত দুই দিনে রাজধানীতে ৯টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন প্রশ্ন তৈরি করেছে।

ডিএমপি জানায়, ১ থেকে ১১ নভেম্বর রাজধানীর ১৫টি স্থানে মোট ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। গত দুই দিনেই ৯টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও নথিভুক্ত হয়েছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭টি মামলা হয়েছে এবং ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যদিও বিস্ফোরণ বা অগ্নিসংযোগের কোনোটিতেই বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, তবে ধারাবাহিক ঘটনার ফলে নগরবাসীর মধ্যে অস্থিরতা বাড়ছে। সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘এই সহিংসতা একটি সংঘবদ্ধ নাশকতা চক্রের কাজ।’ তিনি উল্লেখ করেন, রাজধানীতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। যেকোনও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ইউনিট সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান তিনি।

রাজধানীসহ ৪ জেলায় বিজিবি: বিজিবি সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, ঢাকা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও মাদারীপুরে বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, প্রয়োজনে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ‘মুভিং কনভয়’ মোতায়েন করা হতে পারে।
আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচি: শেখ হাসিনার রায়কে ঘিরে ইতোমধ্যে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ঢাকাসহ সারা দেশে ‘লকডাউন’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। দলটি অভিযোগ করছে, শেখ হাসিনার মামলাটি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।

অন্যদিকে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, আইন অনুযায়ী বিচার সম্পন্ন হয়েছে এবং কেউ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চাইলে কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। শেখ হাসিনা ও আরো দুই জনের বিরুদ্ধে ১৯৭২-৭৫ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এই মামলার বিচার চলছে দীর্ঘদিন ধরে। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, তাদের কাছে অপরাধের ‘পর্যাপ্ত প্রমাণ’ রয়েছে। অন্যদিকে আসামিপক্ষ দাবি করছে-মামলাটি ‘অবৈধ’ এবং এটি ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার’ ফল। রায় ঘোষণা হলে এটি দেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পরিস্থিতি ঘিরে জনমনে উদ্বেগ: এই রায় ঘিরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ী-যাত্রী-নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা গেছে। মিরপুরের ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, যে হারে বিস্ফোরণ হচ্ছে, মানুষ আতঙ্কে আছে। কাল রায়ের দিন দোকান খুলবো কিনা জানি না। একইভাবে বাসযাত্রী মোস্তাফিজ বলেন, ‘গত দুই দিনে গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনার পর নাইট শিফট কর্মীরা বাসা থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘যেকোনও ধরনের নাশকতা ঠেকাতে পুলিশ সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

সানা/ওআ/আপ্র/১৬/১১/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

শেখ হাসিনার রায় ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা

আপডেট সময় : ০৯:২৬:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিন জনের রায় ঘোষণাকে ঘিরে রাজধানীজুড়ে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রায় ঘোষণার জন্য ধার্য করা দিন সোমবার (১৭ নভেম্বর) সামনে রেখে রোববার (১৬ নভেম্বর) থেকেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, সরকারি স্থাপনা, কোর্ট প্রাঙ্গণ, কূটনৈতিক এলাকা, বিশ্ববিদ্যালয় ও গণজমায়েতপ্রবণ স্থানগুলোতে ব্যাপক পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে র‌্যাব, সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

পুলিশ বলছে, এই রায়কে কেন্দ্র করে যেকোনও ধরনের নাশকতা বা সহিংসতা ঠেকাতে তারা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে। পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘যারা নাশকতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রায়কে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা বরদাশত করা হবে না।’

ট্রাইব্যুনাল ঘিরে নিরাপত্তার বলয়: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চারপাশে বসানো হয়েছে অতিরিক্ত চেকপোস্ট, আর্চওয়ে, পুলিশি ব্যারিকেড ও মোবাইল স্ক্যানার। রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম বলেন, ‘যেহেতু কাল (সোমবার) রায় ঘোষণা হবে, তাই আজ (রোববার) থেকেই সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের চারপাশে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবিও মোতায়েন রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘কোনও ধরনের নাশকতা, মিছিল বা সমাবেশ যাতে আদালত এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রাজধানীজুড়ে চেকপোস্ট-টহল-নজরদারি: রায়কে কেন্দ্র করে রোববার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দেখা গেছে অতিরিক্ত টহল টিম, আর্মড পুলিশ, র‌্যাবের আর্মার্ড ভেহিকল, ডগ স্কোয়াড এবং সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্যদের উপস্থিতি। তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ইবনে মিজান বলেন, আজ থেকে পেট্রোলিং জোরদার করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। আমরা কোনো শঙ্কা দেখছি না, তবে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, শাহবাগ, প্রেসক্লাব, মতিঝিল, গুলিস্তান, কাওরান বাজার, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এবং হাইকোর্ট-ট্রাইব্যুনাল এলাকায় রয়েছে সর্বোচ্চ নজরদারি। ডিএমপি জানিয়েছে, রায় ঘোষণার আগে ‘এক ইঞ্চি জমিও’ নিরাপত্তার বাইরে রাখা হবে না।

ককটেল-অগ্নিসংযোগে অস্থিরতা: শেখ হাসিনার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন রাজধানীতে ককটেল বিস্ফোরণ ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা বেড়েছে। যা জনমনে উদ্বেগ তৈরি করেছে। রায়ের আগের কয়েক দিনে নিউ ইস্কাটন, আগারগাঁও, বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, মিরপুর-হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক ককটেল বিস্ফোরণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রোববার নিউ ইস্কাটন রোডে বিস্ফোরণে পথচারী আবদুল বাসির (৫০) আহত হন। একই সময়ে মিরপুর-হাতিরঝিল এলাকাজুড়ে চারটি বিস্ফোরণ এবং গত দুই দিনে রাজধানীতে ৯টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন প্রশ্ন তৈরি করেছে।

ডিএমপি জানায়, ১ থেকে ১১ নভেম্বর রাজধানীর ১৫টি স্থানে মোট ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। গত দুই দিনেই ৯টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও নথিভুক্ত হয়েছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭টি মামলা হয়েছে এবং ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যদিও বিস্ফোরণ বা অগ্নিসংযোগের কোনোটিতেই বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, তবে ধারাবাহিক ঘটনার ফলে নগরবাসীর মধ্যে অস্থিরতা বাড়ছে। সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘এই সহিংসতা একটি সংঘবদ্ধ নাশকতা চক্রের কাজ।’ তিনি উল্লেখ করেন, রাজধানীতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। যেকোনও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ইউনিট সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান তিনি।

রাজধানীসহ ৪ জেলায় বিজিবি: বিজিবি সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, ঢাকা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও মাদারীপুরে বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, প্রয়োজনে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ‘মুভিং কনভয়’ মোতায়েন করা হতে পারে।
আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচি: শেখ হাসিনার রায়কে ঘিরে ইতোমধ্যে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ঢাকাসহ সারা দেশে ‘লকডাউন’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। দলটি অভিযোগ করছে, শেখ হাসিনার মামলাটি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।

অন্যদিকে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, আইন অনুযায়ী বিচার সম্পন্ন হয়েছে এবং কেউ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চাইলে কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। শেখ হাসিনা ও আরো দুই জনের বিরুদ্ধে ১৯৭২-৭৫ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এই মামলার বিচার চলছে দীর্ঘদিন ধরে। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, তাদের কাছে অপরাধের ‘পর্যাপ্ত প্রমাণ’ রয়েছে। অন্যদিকে আসামিপক্ষ দাবি করছে-মামলাটি ‘অবৈধ’ এবং এটি ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার’ ফল। রায় ঘোষণা হলে এটি দেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পরিস্থিতি ঘিরে জনমনে উদ্বেগ: এই রায় ঘিরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ী-যাত্রী-নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা গেছে। মিরপুরের ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, যে হারে বিস্ফোরণ হচ্ছে, মানুষ আতঙ্কে আছে। কাল রায়ের দিন দোকান খুলবো কিনা জানি না। একইভাবে বাসযাত্রী মোস্তাফিজ বলেন, ‘গত দুই দিনে গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনার পর নাইট শিফট কর্মীরা বাসা থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘যেকোনও ধরনের নাশকতা ঠেকাতে পুলিশ সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

সানা/ওআ/আপ্র/১৬/১১/২০২৫