ঢাকা ০৫:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
ড্রামভর্তি মরদেহের ২৬ টুকরো

রাজধানীতে রংপুরের ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন

  • আপডেট সময় : ১২:৫৫:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
  • ১৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর শনিরআখড়া এলাকায় রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে ১০ লাখ টাকার ব্ল্যাকমেইল পরিকল্পনা ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব)।

এ মামলার প্রধান আসামি জরেজুল ইসলামের প্রেমিকা শামিমা আক্তার কোহিনুরের (৩৩) স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব-৩।

শুক্রবার সকালে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বড় বিজরা এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে শামিমাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা, ব্ল্যাকমেইলিং এবং লাশ গুমের পুরো সহযোগিতায় জড়িত ছিলেন।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকালে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন।

এদিকে, এ ঘটনায় প্রধান আসামি জরেজকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে ডিবি’র সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে বলে পুলিশে সূত্রে জানা গেছ।

র‌্যাব জানিয়েছে, গত ১১ নভেম্বর রাতে রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন ব্যবসায়ী আশরাফুল হক। তিনি একই এলাকার বন্ধু জরেজুল ইসলামের সঙ্গে ব্যবসায়িক পাওনা আদায়ের জন্য ঢাকায় আসেন। ১২ নভেম্বর সকাল থেকে তার পরিবার তার মোবাইল বন্ধ পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে।

১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট এলাকার পানির পাম্প সংলগ্ন দুটি নীল রঙের ড্রাম থেকে ২৬ টুকরো করা এক অজ্ঞাতপরিচয়ের ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। পরে আঙুলের ছাপ বিশ্লেষণে মরদেহটির পরিচয় নিশ্চিত হয়।

গ্রেফতার শামীমা আক্তারের মোবাইল বিশ্লেষণ ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি ও জরেজুল এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন। জরেজুল তাকে জানান, তার এক বন্ধুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে ১০ লাখ টাকা আদায় করা সম্ভব। এর মধ্যে ৭ লাখ নেবে জরেজুল আর ৩ লাখ পাবে শামীমা।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঘটনার একমাস আগে থেকেই শামীমা নিহত আশরাফুলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে তাকে আকৃষ্ট করেন। নিয়মিত অডিও-ভিডিও কলে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।

ফায়েজুল আরেফীন আরো বলেন, ১১ নভেম্বর রাতে ঢাকায় আসার পর জরেজ ও আশরাফুলের সঙ্গে ঢাকার শনিরআখড়ার নূরপুর এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন শামীমা। সেখানে ব্ল্যাকমেইলের উদ্দেশ্যে আশরাফুলকে মালটার শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। তিনি অচেতন হওয়ার পর জরেজ বাইরে থেকে শামীমা ও আশরাফুলের অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করেন।

শামীমার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ১২ নভেম্বর দুপুরে আশরাফুল পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়লে জরেজ তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে এবং মুখে কসটেপ লাগায়। এরপর ইয়াবা সেবনের উত্তেজনায় জরেজ হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে তাকে হত্যা করে।

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, পরদিন সকালে জরেজ বাজার থেকে চাপাতি ও দুটি ড্রাম এনে লাশ ২৬ টুকরো করে ড্রামে ভরে। দুপুরে একটি সিএনজি ভাড়া করে ড্রামগুলো বাসা থেকে বের করে, পরে মাঝপথে সিএনজি পরিবর্তন করে হাইকোর্টের মাজার গেটের কাছে পৌঁছায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখে তারা ড্রাম দুটি সড়কের পাশের গাছতলায় ফেলে দ্রুত অটোযোগে সায়েদাবাদে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে জরেজ শামীমাকে কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে চলে যেতে বলে। এরপর থেকে দুজনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

শামীমার তথ্য অনুযায়ী, শনিরআখড়ার নূরপুর এলাকা থেকে আশরাফুলের রক্তমাখা পাঞ্জাবি-পায়জামা, হত্যায় ব্যবহৃত দড়ি, কসটেপ, একটি গেঞ্জি ও হাফপ্যান্ট উদ্ধার করেছে র‌্যাব-৩।

র‌্যাব জানিয়েছে, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করা। তবে হত্যাকাণ্ডের পেছনে ব্যক্তিগত শত্রুতার বিষয় আছে কি-না, তা প্রধান আসামি জরেজকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পরিষ্কার হবে।

গ্রেফতার শামীমা আক্তারকে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হবে বলেও জানিয়েছে র‌্যাব।

এসি/আপ্র/১৫/১১/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

ড্রামভর্তি মরদেহের ২৬ টুকরো

রাজধানীতে রংপুরের ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন

আপডেট সময় : ১২:৫৫:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর শনিরআখড়া এলাকায় রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে ১০ লাখ টাকার ব্ল্যাকমেইল পরিকল্পনা ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব)।

এ মামলার প্রধান আসামি জরেজুল ইসলামের প্রেমিকা শামিমা আক্তার কোহিনুরের (৩৩) স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব-৩।

শুক্রবার সকালে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বড় বিজরা এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে শামিমাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা, ব্ল্যাকমেইলিং এবং লাশ গুমের পুরো সহযোগিতায় জড়িত ছিলেন।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকালে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন।

এদিকে, এ ঘটনায় প্রধান আসামি জরেজকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে ডিবি’র সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে বলে পুলিশে সূত্রে জানা গেছ।

র‌্যাব জানিয়েছে, গত ১১ নভেম্বর রাতে রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন ব্যবসায়ী আশরাফুল হক। তিনি একই এলাকার বন্ধু জরেজুল ইসলামের সঙ্গে ব্যবসায়িক পাওনা আদায়ের জন্য ঢাকায় আসেন। ১২ নভেম্বর সকাল থেকে তার পরিবার তার মোবাইল বন্ধ পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে।

১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট এলাকার পানির পাম্প সংলগ্ন দুটি নীল রঙের ড্রাম থেকে ২৬ টুকরো করা এক অজ্ঞাতপরিচয়ের ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। পরে আঙুলের ছাপ বিশ্লেষণে মরদেহটির পরিচয় নিশ্চিত হয়।

গ্রেফতার শামীমা আক্তারের মোবাইল বিশ্লেষণ ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি ও জরেজুল এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন। জরেজুল তাকে জানান, তার এক বন্ধুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে ১০ লাখ টাকা আদায় করা সম্ভব। এর মধ্যে ৭ লাখ নেবে জরেজুল আর ৩ লাখ পাবে শামীমা।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঘটনার একমাস আগে থেকেই শামীমা নিহত আশরাফুলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে তাকে আকৃষ্ট করেন। নিয়মিত অডিও-ভিডিও কলে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।

ফায়েজুল আরেফীন আরো বলেন, ১১ নভেম্বর রাতে ঢাকায় আসার পর জরেজ ও আশরাফুলের সঙ্গে ঢাকার শনিরআখড়ার নূরপুর এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন শামীমা। সেখানে ব্ল্যাকমেইলের উদ্দেশ্যে আশরাফুলকে মালটার শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। তিনি অচেতন হওয়ার পর জরেজ বাইরে থেকে শামীমা ও আশরাফুলের অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করেন।

শামীমার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ১২ নভেম্বর দুপুরে আশরাফুল পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়লে জরেজ তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে এবং মুখে কসটেপ লাগায়। এরপর ইয়াবা সেবনের উত্তেজনায় জরেজ হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে তাকে হত্যা করে।

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, পরদিন সকালে জরেজ বাজার থেকে চাপাতি ও দুটি ড্রাম এনে লাশ ২৬ টুকরো করে ড্রামে ভরে। দুপুরে একটি সিএনজি ভাড়া করে ড্রামগুলো বাসা থেকে বের করে, পরে মাঝপথে সিএনজি পরিবর্তন করে হাইকোর্টের মাজার গেটের কাছে পৌঁছায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখে তারা ড্রাম দুটি সড়কের পাশের গাছতলায় ফেলে দ্রুত অটোযোগে সায়েদাবাদে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে জরেজ শামীমাকে কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে চলে যেতে বলে। এরপর থেকে দুজনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

শামীমার তথ্য অনুযায়ী, শনিরআখড়ার নূরপুর এলাকা থেকে আশরাফুলের রক্তমাখা পাঞ্জাবি-পায়জামা, হত্যায় ব্যবহৃত দড়ি, কসটেপ, একটি গেঞ্জি ও হাফপ্যান্ট উদ্ধার করেছে র‌্যাব-৩।

র‌্যাব জানিয়েছে, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করা। তবে হত্যাকাণ্ডের পেছনে ব্যক্তিগত শত্রুতার বিষয় আছে কি-না, তা প্রধান আসামি জরেজকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পরিষ্কার হবে।

গ্রেফতার শামীমা আক্তারকে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হবে বলেও জানিয়েছে র‌্যাব।

এসি/আপ্র/১৫/১১/২০২৫