ঢাকা ১০:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
আল জাজিরার এক্সপ্লেইনার

পৃথিবীতে আঘাত হানছে সৌরঝড়

  • আপডেট সময় : ০৫:১৭:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
  • ২৩ বার পড়া হয়েছে

প্রতীকী ছবি

প্রযুক্তি ডেস্ক: চলতি সপ্তাহেই পৃথিবীতে একাধিক সূর্য বা ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় আঘাত হানতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের কিছু অঞ্চলের আকাশজুড়ে দেখা যেতে পারে মনোমুগ্ধকর অরোরা বা নর্দার্ন লাইটস। তবে এর প্রভাবে সাময়িকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে যোগাযোগ ব্যবস্থাও।

গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) পূর্বাভাস দিয়েছে, গত কয়েক দিন ধরে সূর্য থেকে নির্গত একাধিক ‘করোনাল ম্যাস ইজেকশন (সিএমই)’ বা সৌর বস্তুকণার বিস্ফোরণ পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে।

এই সিএমইগুলো মূলত সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে তৈরি হওয়া শক্তিশালী চৌম্বকীয় শক্তি ও কণার বিস্ফোরণ। যা পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের সঙ্গে সংঘর্ষে মনোমুগ্ধকর অরোরার সৃষ্টি করে। এতে কখনো কখনো স্যাটেলাইট সংকেত বা রেডিও যোগাযোগে সমস্যা তৈরি হয়।

এনওএএ এই ঘটনাকে জি-৪ স্তরের ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় হিসেবে ঘোষণা করেছে। জি-৪ স্তরের অর্থ হলো সৌরঝড়ের মাত্রাটি হবে তীব্র। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বাসিন্দা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নর্দার্ন লাইটস বা অরোরা বোরিয়ালিস এর মনোমুগ্ধকর ভিডিও শেয়ার করেছেন।

সৌরঝড় কী

সূর্যের পৃষ্ঠে সংঘটিত তীব্র ঝড় যখন পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রকে প্রভাবিত করে, তখন সেটিকে জিওম্যাগনেটিক স্টর্ম বা সৌরঝড় বলা হয়। অর্থাৎ, সূর্যে সংঘটিত ঝড় পৃথিবীতে পৌঁছালে সেটিই হয়ে ওঠে সৌরঝড়।

সৌরঝড় মূলত দুইভাবে ঘটে। এর এক ধরনকে বলা হয়- করোনাল ম্যাস ইজেকশন (সিএমই)। যা সূর্যের গ্যাস বিস্ফোরণের মতো ছিটকে পড়ে এবং ঘণ্টায় ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন কিলোমিটার বেগে পৃথিবীর দিকে ধাবিত হয়। এগুলো ১৫ ঘণ্টা থেকে কয়েকদিনের মধ্যে পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারে। তবে এটি নির্ভর করে ধয়ে আসার গতির ওপর।

সৌরঝড়ের আরেকটি ধরন হলো ‘সোলার ফ্লেয়ার’ বা হঠাৎ সৃষ্ট তড়িৎচৌম্বক বিকিরণের বিস্ফোরণ। এগুলো আলোর গতিতে ছোটে। পৃথিবীতে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৮ মিনিট, স্থায়ীত্ব কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত। অর্থ্যাৎ, দুই ধরনের ঝড়ই ঘটে সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্রের পুনর্বিন্যাসের ফলে। খুবই বিরল কিছু মুহূর্তে এই দুই ঝড় একই সঙ্গে তৈরি হয়।

মোবাইল ফোনে অরোরার দৃশ্য ধারণ করেন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর এক বাসিন্দা। স্থানীয় সময় বুধবার। ছবি: এক্স থেকে নেওয়া
মোবাইল ফোনে অরোরার দৃশ্য ধারণ করেন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর এক বাসিন্দা। স্থানীয় সময় বুধবার। ছবি: এক্স থেকে নেওয়া

টেলিস্কোপের মাধ্যমে সিএমই ধরনের ঝড় দেখলে মনে হয়, এটি একটি বিশাল আকারের ছুটন্ত মেঘ। আর সোলার ফ্লেয়ার দেখা যায় একাধিক দিকে ছড়িয়ে পড়া উজ্জ্বল আলো হিসেবে। কামান থেকে গোলা ছুড়লে যে ঝলকানি দেখা যায়; সোলার ফ্লেয়ার দেখতে অনেকটা সেরকম। আর সিএমই দেখায় ছুটন্ত গোলার মতো।

সৌরঝড় আঘাত হানার পূর্বাভাস

ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) মঙ্গলবার জানিয়েছে, কমপক্ষে তিনটি সিএমই পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে। পৌঁছানোর সম্ভাব্য সময় মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবারের (১৩ নভেম্বর) মধ্যে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বুধবার সকালে সংস্থাটি জানায়, ৯ ও ১০ নভেম্বর তৈরি হওয়া দুটি সিএমই এরইমধ্যে পৃথিবীতে আঘাত হানেছে। এগুলো অনেক শক্তিশালী ছিল। তৃতীয় ঝড়টি এগুলোর চেয়েও দ্রুত গতির। ১১ নভেম্বর তৈরি হওয়া এই ঝড়টি ইস্টার্ন টাইম ১২টায় (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ১টা) আঘাত হানবে। এই ঝড়ের প্রভাবে এরই মধ্যে আফ্রিকা ও ইউরোপে কিছু সময়ের জন্য রেডিও ব্ল্যাকআউট দেখা গেছে।

সৌরঝড় কীভাবে অরোরা তৈরি করে

সোলার ফ্লেয়ার বা সিএমই যখন পৃথিবীর দিকে আসে, তখন এগুলোর চার্জযুক্ত কণার সঙ্গে পৃথিবীর উচ্চতম বায়ুমণ্ডলের গ্যাসের সংঘর্ষ হয়। এর ফলে কণাগুলো তাদের শক্তি গ্যাসে রূপান্তর করে। ঠিক ওই সময় এক ধরনের আলোর পরিবেশ তৈরি হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে এটি সবুজ কিংবা গাঢ় গোলাপি দেখায়।

আলোর এমন প্রদর্শনকে বলা হয় ‘অরোরা বোরিয়ালিস’ বা উত্তরী আলো। এটি উত্তর গোলার্ধে দেখা যায়। দক্ষিণ গোলার্ধে এ ধরনের আলোর প্রদর্শনকে বলা হয় ‘অরোরা অস্ট্রালিস’ বা দক্ষিণী আলো।

প্রতি ১১ বছরে সূর্যের ধ্রুবতারা (পোল) স্থান পরিবর্তন করে। এর ফলে তীব্র চৌম্বকীয় কার্যক্রম ঘটে। বর্তমানে সূর্য এই ১১ বছরের কার্যক্রম চক্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে। এ কারণে গত কয়েক মাস ধরেই আলোর এমন প্রদর্শন দেখা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, বর্তমান চক্রের শেষ ধাপটি আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতে পারে।

গত বছরের মে মাসে গত দুই দশকের সবচেয়ে শক্তিশালী জিওম্যাগনেটিক স্টর্ম পৃথিবীতে আঘাত হেনেছিল। তখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানিতে চমকপ্রদ আলোর প্রদর্শন দেখা যায়।

কোথায় দেখা যাচ্ছে

চলতি সপ্তাহে উত্তরী আলো বিভিন্ন দেশে দেখা যাচ্ছে। আলো কতটা উজ্জ্বল ও কোথায় দেখা যাবে তা নির্ভর করে- সূর্যের কণাগুলোর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় এবং সেগুলো কীভাবে মিথস্ক্রিয়া করে সেটির ওপর। আলোটি ভালোভাবে দেখার উপযোগী স্থান হলো অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকা।

এনওএএ-এর তথ্য অনুযায়ী, এই আলো সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যাবে। এর মধ্যে আছে- ইলিনয়, কলোরাডো, ম্যাসাচুসেটস, ওয়াশিংটন, ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন, টেক্সাস, জর্জিয়া, নর্থ ডাকোটা, নিউইয়র্ক, ওয়াইওমিং, নর্থ ক্যারোলিনা ও আয়োয়া।

অন্য দেশগুলোর মধ্যে স্থানীয় সময় বুধবার কানাডার মন্ট্রিয়াল, এডমন্টন, ভ্যানকুভার, হোয়াইটহর্স এবং যুক্তরাজ্যের উত্তরাঞ্চলের আলো দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

সৌরঝড় কি ক্ষতিকর

প্রত্যক্ষভাবে মানুষের জন্য বিপজ্জনক নয়। কারণ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল আমাদের বিকিরণ থেকে রক্ষা করে। তবে, সূর্যের এই শক্তির বিস্ফোরণ সাময়িকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে। এর ফলে জিপিএস ন্যাভিগেশন, রেডিও যোগাযোগ ও স্যাটেলাইট ব্যবস্থা প্রভাবিত হতে পারে। এর মধ্যে উড়োজাহাজের ট্রাফিক কন্ট্রোল রেডিও এবং মহাকাশে থাকা স্যাটেলাইটও অন্তর্ভুক্ত। তীব্র সৌরঝড় সাময়িকভাবে বিদ্যুতের গ্রিডেও বিঘ্ন ঘটাতে পারে।

কিছু ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে সৌর বিস্ফোরণ বা ঝড় মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। ১৮৫৯ সালের সেপ্টেম্বরে হওয়া একটি তীব্র সৌরঝড় ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার টেলিগ্রাফ স্টেশনে অগ্নিকাণ্ড ঘটায়। এটি ইতিহাসের সবচেয়ে তীব্র সৌরঝড় হিসেবে পরিচিত।

ওআ/আপ্র/১৩/১১/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

আল জাজিরার এক্সপ্লেইনার

পৃথিবীতে আঘাত হানছে সৌরঝড়

আপডেট সময় : ০৫:১৭:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫

প্রযুক্তি ডেস্ক: চলতি সপ্তাহেই পৃথিবীতে একাধিক সূর্য বা ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় আঘাত হানতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের কিছু অঞ্চলের আকাশজুড়ে দেখা যেতে পারে মনোমুগ্ধকর অরোরা বা নর্দার্ন লাইটস। তবে এর প্রভাবে সাময়িকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে যোগাযোগ ব্যবস্থাও।

গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) পূর্বাভাস দিয়েছে, গত কয়েক দিন ধরে সূর্য থেকে নির্গত একাধিক ‘করোনাল ম্যাস ইজেকশন (সিএমই)’ বা সৌর বস্তুকণার বিস্ফোরণ পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে।

এই সিএমইগুলো মূলত সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে তৈরি হওয়া শক্তিশালী চৌম্বকীয় শক্তি ও কণার বিস্ফোরণ। যা পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের সঙ্গে সংঘর্ষে মনোমুগ্ধকর অরোরার সৃষ্টি করে। এতে কখনো কখনো স্যাটেলাইট সংকেত বা রেডিও যোগাযোগে সমস্যা তৈরি হয়।

এনওএএ এই ঘটনাকে জি-৪ স্তরের ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় হিসেবে ঘোষণা করেছে। জি-৪ স্তরের অর্থ হলো সৌরঝড়ের মাত্রাটি হবে তীব্র। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বাসিন্দা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নর্দার্ন লাইটস বা অরোরা বোরিয়ালিস এর মনোমুগ্ধকর ভিডিও শেয়ার করেছেন।

সৌরঝড় কী

সূর্যের পৃষ্ঠে সংঘটিত তীব্র ঝড় যখন পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রকে প্রভাবিত করে, তখন সেটিকে জিওম্যাগনেটিক স্টর্ম বা সৌরঝড় বলা হয়। অর্থাৎ, সূর্যে সংঘটিত ঝড় পৃথিবীতে পৌঁছালে সেটিই হয়ে ওঠে সৌরঝড়।

সৌরঝড় মূলত দুইভাবে ঘটে। এর এক ধরনকে বলা হয়- করোনাল ম্যাস ইজেকশন (সিএমই)। যা সূর্যের গ্যাস বিস্ফোরণের মতো ছিটকে পড়ে এবং ঘণ্টায় ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন কিলোমিটার বেগে পৃথিবীর দিকে ধাবিত হয়। এগুলো ১৫ ঘণ্টা থেকে কয়েকদিনের মধ্যে পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারে। তবে এটি নির্ভর করে ধয়ে আসার গতির ওপর।

সৌরঝড়ের আরেকটি ধরন হলো ‘সোলার ফ্লেয়ার’ বা হঠাৎ সৃষ্ট তড়িৎচৌম্বক বিকিরণের বিস্ফোরণ। এগুলো আলোর গতিতে ছোটে। পৃথিবীতে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৮ মিনিট, স্থায়ীত্ব কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত। অর্থ্যাৎ, দুই ধরনের ঝড়ই ঘটে সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্রের পুনর্বিন্যাসের ফলে। খুবই বিরল কিছু মুহূর্তে এই দুই ঝড় একই সঙ্গে তৈরি হয়।

মোবাইল ফোনে অরোরার দৃশ্য ধারণ করেন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর এক বাসিন্দা। স্থানীয় সময় বুধবার। ছবি: এক্স থেকে নেওয়া
মোবাইল ফোনে অরোরার দৃশ্য ধারণ করেন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর এক বাসিন্দা। স্থানীয় সময় বুধবার। ছবি: এক্স থেকে নেওয়া

টেলিস্কোপের মাধ্যমে সিএমই ধরনের ঝড় দেখলে মনে হয়, এটি একটি বিশাল আকারের ছুটন্ত মেঘ। আর সোলার ফ্লেয়ার দেখা যায় একাধিক দিকে ছড়িয়ে পড়া উজ্জ্বল আলো হিসেবে। কামান থেকে গোলা ছুড়লে যে ঝলকানি দেখা যায়; সোলার ফ্লেয়ার দেখতে অনেকটা সেরকম। আর সিএমই দেখায় ছুটন্ত গোলার মতো।

সৌরঝড় আঘাত হানার পূর্বাভাস

ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) মঙ্গলবার জানিয়েছে, কমপক্ষে তিনটি সিএমই পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে। পৌঁছানোর সম্ভাব্য সময় মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবারের (১৩ নভেম্বর) মধ্যে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বুধবার সকালে সংস্থাটি জানায়, ৯ ও ১০ নভেম্বর তৈরি হওয়া দুটি সিএমই এরইমধ্যে পৃথিবীতে আঘাত হানেছে। এগুলো অনেক শক্তিশালী ছিল। তৃতীয় ঝড়টি এগুলোর চেয়েও দ্রুত গতির। ১১ নভেম্বর তৈরি হওয়া এই ঝড়টি ইস্টার্ন টাইম ১২টায় (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ১টা) আঘাত হানবে। এই ঝড়ের প্রভাবে এরই মধ্যে আফ্রিকা ও ইউরোপে কিছু সময়ের জন্য রেডিও ব্ল্যাকআউট দেখা গেছে।

সৌরঝড় কীভাবে অরোরা তৈরি করে

সোলার ফ্লেয়ার বা সিএমই যখন পৃথিবীর দিকে আসে, তখন এগুলোর চার্জযুক্ত কণার সঙ্গে পৃথিবীর উচ্চতম বায়ুমণ্ডলের গ্যাসের সংঘর্ষ হয়। এর ফলে কণাগুলো তাদের শক্তি গ্যাসে রূপান্তর করে। ঠিক ওই সময় এক ধরনের আলোর পরিবেশ তৈরি হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে এটি সবুজ কিংবা গাঢ় গোলাপি দেখায়।

আলোর এমন প্রদর্শনকে বলা হয় ‘অরোরা বোরিয়ালিস’ বা উত্তরী আলো। এটি উত্তর গোলার্ধে দেখা যায়। দক্ষিণ গোলার্ধে এ ধরনের আলোর প্রদর্শনকে বলা হয় ‘অরোরা অস্ট্রালিস’ বা দক্ষিণী আলো।

প্রতি ১১ বছরে সূর্যের ধ্রুবতারা (পোল) স্থান পরিবর্তন করে। এর ফলে তীব্র চৌম্বকীয় কার্যক্রম ঘটে। বর্তমানে সূর্য এই ১১ বছরের কার্যক্রম চক্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে। এ কারণে গত কয়েক মাস ধরেই আলোর এমন প্রদর্শন দেখা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, বর্তমান চক্রের শেষ ধাপটি আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতে পারে।

গত বছরের মে মাসে গত দুই দশকের সবচেয়ে শক্তিশালী জিওম্যাগনেটিক স্টর্ম পৃথিবীতে আঘাত হেনেছিল। তখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানিতে চমকপ্রদ আলোর প্রদর্শন দেখা যায়।

কোথায় দেখা যাচ্ছে

চলতি সপ্তাহে উত্তরী আলো বিভিন্ন দেশে দেখা যাচ্ছে। আলো কতটা উজ্জ্বল ও কোথায় দেখা যাবে তা নির্ভর করে- সূর্যের কণাগুলোর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় এবং সেগুলো কীভাবে মিথস্ক্রিয়া করে সেটির ওপর। আলোটি ভালোভাবে দেখার উপযোগী স্থান হলো অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকা।

এনওএএ-এর তথ্য অনুযায়ী, এই আলো সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যাবে। এর মধ্যে আছে- ইলিনয়, কলোরাডো, ম্যাসাচুসেটস, ওয়াশিংটন, ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন, টেক্সাস, জর্জিয়া, নর্থ ডাকোটা, নিউইয়র্ক, ওয়াইওমিং, নর্থ ক্যারোলিনা ও আয়োয়া।

অন্য দেশগুলোর মধ্যে স্থানীয় সময় বুধবার কানাডার মন্ট্রিয়াল, এডমন্টন, ভ্যানকুভার, হোয়াইটহর্স এবং যুক্তরাজ্যের উত্তরাঞ্চলের আলো দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

সৌরঝড় কি ক্ষতিকর

প্রত্যক্ষভাবে মানুষের জন্য বিপজ্জনক নয়। কারণ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল আমাদের বিকিরণ থেকে রক্ষা করে। তবে, সূর্যের এই শক্তির বিস্ফোরণ সাময়িকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে। এর ফলে জিপিএস ন্যাভিগেশন, রেডিও যোগাযোগ ও স্যাটেলাইট ব্যবস্থা প্রভাবিত হতে পারে। এর মধ্যে উড়োজাহাজের ট্রাফিক কন্ট্রোল রেডিও এবং মহাকাশে থাকা স্যাটেলাইটও অন্তর্ভুক্ত। তীব্র সৌরঝড় সাময়িকভাবে বিদ্যুতের গ্রিডেও বিঘ্ন ঘটাতে পারে।

কিছু ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে সৌর বিস্ফোরণ বা ঝড় মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। ১৮৫৯ সালের সেপ্টেম্বরে হওয়া একটি তীব্র সৌরঝড় ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার টেলিগ্রাফ স্টেশনে অগ্নিকাণ্ড ঘটায়। এটি ইতিহাসের সবচেয়ে তীব্র সৌরঝড় হিসেবে পরিচিত।

ওআ/আপ্র/১৩/১১/২০২৫