ঢাকা ০৩:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
স্বাস্থ্য প্রতিদিন=====

জন্মগতভাবে হৃদরোগ নিয়ে জন্মায় ৯০ শতাংশ শিশু

  • আপডেট সময় : ০৬:৩৬:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
  • ১২ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

প্রত্যাশা ডেস্ক: দেশে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা। তাদের অধিকাংশই জন্মগতভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মায়। কিডস হার্ট ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রতিদিন প্রায় আট হাজার শিশু জন্ম নেয়। তাদের মধ্যে অন্তত ২০০টি শিশু জন্ম নেয় হৃদরোগ নিয়ে। অর্থাৎ বছরে প্রায় ৭৩ হাজার শিশু জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মায়।

বর্তমানে দেশে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। কিন্তু এ বিপুলসংখ্যক রোগীর চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো, জনবল এবং প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞ এখনো নেই; বিশেষ করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোয় শিশু হৃদরোগ শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। ফলে অধিকাংশ পরিবার বাধ্য হয়ে রাজধানীর বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোর দ্বারস্থ হয়। কিন্তু ঢাকাতেও এ চিকিৎসা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট রয়েছেন মাত্র ৫৩ জন এবং পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জন আছেন মাত্র ১৫ জন। এত অল্পসংখ্যক বিশেষজ্ঞ দিয়ে দেশের বিপুলসংখ্যক শিশু হৃদরোগীর চিকিৎসা দেয়া কার্যত অসম্ভব। ফলে অনেক শিশুই সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করছে। অথচ সময়মতো রোগ শনাক্ত ও সঠিক চিকিৎসা পেলে অধিকাংশ শিশুর জীবন রক্ষা করা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশু হৃদরোগের চিকিৎসায় দক্ষ সার্জন তৈরি, আধুনিক চিকিৎসা অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং সরকারি ভর্তুকির ব্যবস্থা এখন জরুরি। এর পাশাপাশি অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরু-ি যাতে শিশুর জন্মের পর থেকেই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রাথমিক স্ক্রিনিং করা হয়। সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগে চিকিৎসাসেবা সম্প্রসারণে দক্ষ চিকিৎসক তৈরি ও হাসপাতালের সক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

চিকিৎসকরা বলছেন, এখনো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ রোগের কারণ অজানা রয়ে গেছে। এ অসুখ কদাচিৎ বংশগত কারণে দেখা দিতে পারে। ৩ শতাংশ জিনের গঠনগত ত্রুটি এবং ৫-৮ শতাংশ ক্ষেত্রে ক্রোমোজমের অস্বাভাবিকতা রোগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে; যেমন ডাউন ও টারনার সিনড্রোমের কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ। গর্ভাবস্থায় মা জার্মান হাম (রুবেলা) ডায়াবেটিস, এসএলই ইত্যাদি রোগে ভুগলে বা নির্দিষ্ট ক্ষতিকর ওষুধ সেবন করলে শিশুর হার্টে জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে। এ রকম ওষুধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে লিথিয়াম, ইথানল, থালিডোমাইড ও খিঁচুনি বন্ধের কিছু ওষুধ।

জন্মের পর শিশুর হৃদরোগ শনাক্ত করা অনেক সময় জীবনরক্ষাকারী ভূমিকা পালন করতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, জন্মের এক সপ্তাহ বয়সের মধ্যে ৪০-৫০ শতাংশ এবং এক মাস বয়সের মধ্যে ৫০-৬০ শতাংশ শিশুর ক্ষেত্রে জন্মগত হৃদরোগ শনাক্ত করা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন দক্ষ চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। তাই নবজাতকের শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত ঘাম, বারবার অসুস্থ হওয়া, দুধ না খাওয়া বা অস্বাভাবিক রঙ পরিবর্তনের মতো লক্ষণ দেখা দিলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।

আগেভাগে যদি এ রোগ শনাক্ত করা যায়, তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগটি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে ও যথাযথ চিকিৎসা দিলে শিশুর জীবন রক্ষা করা যায়।

বিশ্বের অন্য অনেক দেশে হাজারে ৮-১০ শিশু জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে জন্মায়। অথচ বাংলাদেশে এ সংখ্যা অনেক বেশি। এনআইসিভিডির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে চার-পাঁচ লাখ শিশু হৃদরোগে ভুগছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ শিশু জন্মগতভাবে হৃদরোগ নিয়ে জন্মায়। আর ১০ শতাংশ জন্মের পর জ্বর, সংক্রমণ বা হৃৎপেশির দুর্বলতার কারণে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

দেশে প্রতি বছর ৩০-৪০ হাজার শিশু হৃদরোগী হিসেবে শনাক্ত হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক। এ অবস্থায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে চিকিৎসা সুবিধার অপ্রতুলতা।

আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজির তথ্য বলছে, বাংলাদেশের বর্তমান রোগীর সংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হলে কমপক্ষে ২০০ জন পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট এবং ১০০ জন পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জন থাকা প্রয়োজন। অথচ বাস্তবে দেশের হাতে রয়েছে এর এক-চতুর্থাংশেরও কম বিশেষজ্ঞ।

বর্তমানে দেশে শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা সুবিধা আছে মোট ১৫টি হাসপাতালে; যার মধ্যে নয়টি রয়েছে ঢাকায়। ফলে রাজধানীর বাইরে চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ কার্যত নেই বললেই চলে। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত ৩০ জন পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট এবং ১০ জন সার্জন মিলে দেশের পাঁচ লাখ শিশু হৃদরোগীর চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছেন।

চিকিৎসা সুবিধার অপ্রতুলতার কারণে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য শিশুর হৃদরোগ চিকিৎসা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এ চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবারগুলো বিদেশে চিকিৎসা করাতে পারলেও দরিদ্র পরিবারগুলো রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়।

হাসপাতালগুলোয় জনবল ও অবকাঠামো সংকটের কারণে অনেক শিশু সময়মতো অস্ত্রোপচার বা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না। শিশু হৃদরোগের চিকিৎসায় বিশেষ ভর্তুকি দেয়া প্রয়োজন। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো কিছুটা স্বস্তি পাবে। জাতীয় স্বাস্থ্য বাজেটের একটি নির্দিষ্ট অংশ এ খাতে বরাদ্দ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বও গড়ে তোলা যেতে পারে।

শিশুর হৃদরোগ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোও জরুরি। অনেক অভিভাবক শিশুর শারীরিক দুর্বলতা বা অস্বাভাবিক ক্লান্তিকে স্বাভাবিক মনে করেন। ফলে হৃদরোগের লক্ষণ ধরা পড়ে দেরিতে। গর্ভকালীন থেকে শুরু করে জন্মের পর পর্যন্ত নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বিশেষ করে হৃদযন্ত্রের স্ক্রিনিংকে বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে সচেতনতা কার্যক্রম বাড়াতে হবে।

শিশু হৃদরোগের চিকিৎসাকে জাতীয় অগ্রাধিকারের তালিকায় আনা উচিত। একটি দেশের ভবিষ্যৎ শিশুদের ওপর নির্ভর করে। যদি তারা জন্মের পর থেকেই চিকিৎসা সংকটে পড়ে যায়, তবে সেই জাতির উন্নয়নযাত্রা থেমে যাবে। তাই শুধু রাজধানীতেই নয়, বিভাগীয় শহরগুলোয়ও শিশু হৃদরোগ কেন্দ্র গড়ে তোলা অপরিহার্য। বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, বিদেশি সহযোগিতা ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এ খাতকে আরো শক্তিশালী করতে হবে।

শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। ভবিষ্যতে যাতে কোনো শিশু চিকিৎসা সুবিধার অভাবে প্রাণ না হারায়, এদিকেও রাষ্ট্রকে গুরুত্ব দিতে হবে।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

স্বাস্থ্য প্রতিদিন=====

জন্মগতভাবে হৃদরোগ নিয়ে জন্মায় ৯০ শতাংশ শিশু

আপডেট সময় : ০৬:৩৬:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: দেশে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা। তাদের অধিকাংশই জন্মগতভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মায়। কিডস হার্ট ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রতিদিন প্রায় আট হাজার শিশু জন্ম নেয়। তাদের মধ্যে অন্তত ২০০টি শিশু জন্ম নেয় হৃদরোগ নিয়ে। অর্থাৎ বছরে প্রায় ৭৩ হাজার শিশু জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মায়।

বর্তমানে দেশে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। কিন্তু এ বিপুলসংখ্যক রোগীর চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো, জনবল এবং প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞ এখনো নেই; বিশেষ করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোয় শিশু হৃদরোগ শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। ফলে অধিকাংশ পরিবার বাধ্য হয়ে রাজধানীর বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোর দ্বারস্থ হয়। কিন্তু ঢাকাতেও এ চিকিৎসা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট রয়েছেন মাত্র ৫৩ জন এবং পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জন আছেন মাত্র ১৫ জন। এত অল্পসংখ্যক বিশেষজ্ঞ দিয়ে দেশের বিপুলসংখ্যক শিশু হৃদরোগীর চিকিৎসা দেয়া কার্যত অসম্ভব। ফলে অনেক শিশুই সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করছে। অথচ সময়মতো রোগ শনাক্ত ও সঠিক চিকিৎসা পেলে অধিকাংশ শিশুর জীবন রক্ষা করা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশু হৃদরোগের চিকিৎসায় দক্ষ সার্জন তৈরি, আধুনিক চিকিৎসা অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং সরকারি ভর্তুকির ব্যবস্থা এখন জরুরি। এর পাশাপাশি অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরু-ি যাতে শিশুর জন্মের পর থেকেই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রাথমিক স্ক্রিনিং করা হয়। সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগে চিকিৎসাসেবা সম্প্রসারণে দক্ষ চিকিৎসক তৈরি ও হাসপাতালের সক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

চিকিৎসকরা বলছেন, এখনো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ রোগের কারণ অজানা রয়ে গেছে। এ অসুখ কদাচিৎ বংশগত কারণে দেখা দিতে পারে। ৩ শতাংশ জিনের গঠনগত ত্রুটি এবং ৫-৮ শতাংশ ক্ষেত্রে ক্রোমোজমের অস্বাভাবিকতা রোগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে; যেমন ডাউন ও টারনার সিনড্রোমের কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ। গর্ভাবস্থায় মা জার্মান হাম (রুবেলা) ডায়াবেটিস, এসএলই ইত্যাদি রোগে ভুগলে বা নির্দিষ্ট ক্ষতিকর ওষুধ সেবন করলে শিশুর হার্টে জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে। এ রকম ওষুধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে লিথিয়াম, ইথানল, থালিডোমাইড ও খিঁচুনি বন্ধের কিছু ওষুধ।

জন্মের পর শিশুর হৃদরোগ শনাক্ত করা অনেক সময় জীবনরক্ষাকারী ভূমিকা পালন করতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, জন্মের এক সপ্তাহ বয়সের মধ্যে ৪০-৫০ শতাংশ এবং এক মাস বয়সের মধ্যে ৫০-৬০ শতাংশ শিশুর ক্ষেত্রে জন্মগত হৃদরোগ শনাক্ত করা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন দক্ষ চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। তাই নবজাতকের শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত ঘাম, বারবার অসুস্থ হওয়া, দুধ না খাওয়া বা অস্বাভাবিক রঙ পরিবর্তনের মতো লক্ষণ দেখা দিলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।

আগেভাগে যদি এ রোগ শনাক্ত করা যায়, তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগটি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে ও যথাযথ চিকিৎসা দিলে শিশুর জীবন রক্ষা করা যায়।

বিশ্বের অন্য অনেক দেশে হাজারে ৮-১০ শিশু জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে জন্মায়। অথচ বাংলাদেশে এ সংখ্যা অনেক বেশি। এনআইসিভিডির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে চার-পাঁচ লাখ শিশু হৃদরোগে ভুগছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ শিশু জন্মগতভাবে হৃদরোগ নিয়ে জন্মায়। আর ১০ শতাংশ জন্মের পর জ্বর, সংক্রমণ বা হৃৎপেশির দুর্বলতার কারণে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

দেশে প্রতি বছর ৩০-৪০ হাজার শিশু হৃদরোগী হিসেবে শনাক্ত হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক। এ অবস্থায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে চিকিৎসা সুবিধার অপ্রতুলতা।

আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজির তথ্য বলছে, বাংলাদেশের বর্তমান রোগীর সংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হলে কমপক্ষে ২০০ জন পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট এবং ১০০ জন পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জন থাকা প্রয়োজন। অথচ বাস্তবে দেশের হাতে রয়েছে এর এক-চতুর্থাংশেরও কম বিশেষজ্ঞ।

বর্তমানে দেশে শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা সুবিধা আছে মোট ১৫টি হাসপাতালে; যার মধ্যে নয়টি রয়েছে ঢাকায়। ফলে রাজধানীর বাইরে চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ কার্যত নেই বললেই চলে। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত ৩০ জন পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট এবং ১০ জন সার্জন মিলে দেশের পাঁচ লাখ শিশু হৃদরোগীর চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছেন।

চিকিৎসা সুবিধার অপ্রতুলতার কারণে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য শিশুর হৃদরোগ চিকিৎসা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এ চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবারগুলো বিদেশে চিকিৎসা করাতে পারলেও দরিদ্র পরিবারগুলো রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়।

হাসপাতালগুলোয় জনবল ও অবকাঠামো সংকটের কারণে অনেক শিশু সময়মতো অস্ত্রোপচার বা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না। শিশু হৃদরোগের চিকিৎসায় বিশেষ ভর্তুকি দেয়া প্রয়োজন। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো কিছুটা স্বস্তি পাবে। জাতীয় স্বাস্থ্য বাজেটের একটি নির্দিষ্ট অংশ এ খাতে বরাদ্দ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বও গড়ে তোলা যেতে পারে।

শিশুর হৃদরোগ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোও জরুরি। অনেক অভিভাবক শিশুর শারীরিক দুর্বলতা বা অস্বাভাবিক ক্লান্তিকে স্বাভাবিক মনে করেন। ফলে হৃদরোগের লক্ষণ ধরা পড়ে দেরিতে। গর্ভকালীন থেকে শুরু করে জন্মের পর পর্যন্ত নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বিশেষ করে হৃদযন্ত্রের স্ক্রিনিংকে বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে সচেতনতা কার্যক্রম বাড়াতে হবে।

শিশু হৃদরোগের চিকিৎসাকে জাতীয় অগ্রাধিকারের তালিকায় আনা উচিত। একটি দেশের ভবিষ্যৎ শিশুদের ওপর নির্ভর করে। যদি তারা জন্মের পর থেকেই চিকিৎসা সংকটে পড়ে যায়, তবে সেই জাতির উন্নয়নযাত্রা থেমে যাবে। তাই শুধু রাজধানীতেই নয়, বিভাগীয় শহরগুলোয়ও শিশু হৃদরোগ কেন্দ্র গড়ে তোলা অপরিহার্য। বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, বিদেশি সহযোগিতা ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এ খাতকে আরো শক্তিশালী করতে হবে।

শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। ভবিষ্যতে যাতে কোনো শিশু চিকিৎসা সুবিধার অভাবে প্রাণ না হারায়, এদিকেও রাষ্ট্রকে গুরুত্ব দিতে হবে।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ