ঢাকা ১১:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
৫ দফা দাবিতে আট দলের সমাবেশে জামায়াতের আমির

ছাব্বিশে নির্বাচন দেখতে হলে আগে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লাগবে

  • আপডেট সময় : ০৪:৫৪:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
  • ৪৬ বার পড়া হয়েছে

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর পল্টনে আট দলের সমাবেশে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসা জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ২০২৬ সালে নির্বাচন দেখতে হলে আগে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লাগবে।

‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও উক্ত আদেশের ওপর গণভোট আয়োজন’সহ ৫ দফা দাবিতে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর পল্টন মোড়ে জামায়াতসহ আন্দোলনরত ৮ দলের সমাবেশে এ কথা বলেন শফিকুর রহমান। যাঁরা জুলাই বিপ্লব মানবেন না, তাঁদের জন্য ২৬ সালে কোনো নির্বাচন নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। জামায়াতের আমির বলেন, আমাদের দাবি কম, কিন্তু খুব সুস্পষ্ট। জুলাই বিপ্লবকে স্বীকৃতি দিতে হবে।…আর জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি দিতে হলে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতেই হবে। এই আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

দেশের জনগণ নির্বাচনের আগে গণভোট চায় বলে দাবি করেন শফিকুর রহমান। গণভোটের বিষয়ে সব দল একমত উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাহলে তারিখ নিয়ে এই বায়নাবাজি কেন?

দলগুলো একমত হয়ে যখন জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে, তখন গণভোট আগে হওয়াই যুক্তিযুক্ত মন্তব্য করে জামায়াতের আমির বলেন, এর ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন হলে কোনো সন্দেহ-সংশয় থাকবে না। একই সঙ্গে তিনি বলেন, জামায়াতসহ আট দল আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে জাতীয় নির্বাচন চায়। এটা নিয়ে কেউ যাতে ধূম্রজাল সৃষ্টির পাঁয়তারা না করে।
জামায়াত আমির বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ প্রণীত হয়েছে। গণতন্ত্রের কথা হলো, সংখ্যাগরিষ্ঠরা যা বলবে, বাকিদের তা-ই মেনে নিতে হবে। কিন্তু কেউ কেউ সেটি মেনে নিতে রাজি নয়। জুলাই সনদেই যদি কেউ গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখায়, জাতীয় নির্বাচনের প্রতি তারা শ্রদ্ধা কীভাবে দেখাবে?
কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে জামায়াতের আমির বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত মানুষদের ভাষা বুঝতে হবে। (আগামী নির্বাচনে) কোনো দলের নয়, জনতার বিজয় হবে। জনতা কী চায়, কান পেতে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। যারা এটি বুঝতে ব্যর্থ হবে, নিজের পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। শফিকুর রহমান বলেন, দলগুলো ভদ্র ভাষায় কথা বলছে। ভদ্র ভাষায়ই কথা বলবে। তবে দাবির ব্যাপারে হিমালয়ের মতো অনড় থাকবে। কারণ, এ দাবি জনগণের দাবি, কোনো দলের দাবি নয়। ফ্যাসিবাদের দাবি নয়। তাই ফ্যাসিবাদের দাবির কাছে দেশের মানুষ মাথা নত করবে না। আট দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে জামায়াতের আমির বলেন, তৈরি হোন। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের দাবি আদায় না হবে, আমাদের আন্দোলন দুর্বার গতিতে চলতে থাকবে, ইনশা আল্লাহ।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসবে জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, সমাবেশের পর আট দলের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে মিলিত হবেন। দ্রুতই পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য আট দলের নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতি নিতে বলেন জামায়াতের আমির।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। সঞ্চালনা করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাইয়ুম এবং সহপ্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক কে এম শরীয়াতুল্লাহ।

দিল্লির ষড়যন্ত্রে ১৩ তারিখ আওয়ামী লীগ নাশকতার পরিকল্পনা করছে: জামায়াত সেক্রেটারি: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, দিল্লির ষড়যন্ত্রে আগামী ১৩ তারিখ লকডাউনের নামে আওয়ামী লীগ নতুন নাশকতার পরিকল্পনা করছে।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে পাঁচ দফা দাবিতে সমমনা আটটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশে তিনি এমন মন্তব্য করেন। গোলাম পরওয়ার বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর ঐতিহাসিক পল্টন মোড়ের এ বিশাল মহাসমাবেশ আগামী দিনের রাজনীতির জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য জাতি আজ অপেক্ষারত। সরকার গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রায় নয় মাস চেষ্টা করে সাংবিধানিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় নানা সংস্কারে প্রায় একমত হয়েছিলেন। কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন মহল থেকে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।
জামায়াত নেতা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, যারা দাবি করছেন একদিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন হবে, কীভাবে হবে? বাংলাদেশের সব সংবিধান বিশেষজ্ঞ একমত, জুলাই জাতীয় সনদে ৪৮টি বিষয়ে সংবিধানের অনেক সংস্কার হয়েছে- যেমন দলের প্রধান ও সরকারের প্রধান এক থাকবে না, সাংবিধানিক পদগুলোতে পৃথক নিয়োগ কর্তৃপক্ষ হবে, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রভৃতিসহ যা যা সংশোধন হয়েছে– গণভোট যদি আইনি ভিত্তি না হয়, তাহলে কীসের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন হবে?’
তিনি আরো বলেন, এই সরকারকে হাইকোর্টের আর্টিকেল ১০৬-এর মধ্য দিয়ে রেফারেন্স সহকারে সরকারের বৈধতার কথা অনেকে বলেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞরাও ১০৬ সম্পর্কে আইনের বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। ফলে একমাত্র গণভোটের মধ্য দিয়েই জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণের যত সংস্কার হয়েছে, তার আইনি ভিত্তি দেওয়া সম্ভব। তা না হলে জাতীয় নির্বাচনের বৈধতা ও এই সংস্কার কখনো পূরণ হবে না।

গণভোট না হলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন ২৯ সালে: আযাদ: সংবিধান অনুযায়ী গণভোট না হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ২০২৯ সালে মন্তব্য করেছেন, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী গণভোট ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর পল্টন মোড়ে ৮ দলের সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন সংবিধানে গণভোটের বিধান নেই। তাদের বলতে চাই, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবিধান সংশোধন করে গণভোটের ধারা বাতিল করেছিলেন শেখ হাসিনা। এখন যারা বলেন সংবিধানে গণভোট নেই, তারা কি তাহলে হাসিনার সুরে কথা বলেন না?’
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, পাঁচ বছর পরপর নির্বাচনের কথা সংবিধানে লেখা আছে। ২০২৪ এ যদি নির্বাচন হয়, তাহলে ২০২৬ সালে নির্বাচন হবে কোথায় লেখা আছে? সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হতে হবে ২০২৯ সালে। তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সমাজকে নতুন ভিত্তিতে শক্তিশালী করতে এবং নতুন বাংলাদেশের পথে যাত্রা শুরু করতে হলে জাতীয় নির্বাচনের আগে সংস্কারের অংশ হিসেবে গণভোট দিতে হবে। নির্বাচনের আগে গণভোট ছাড়া জুলাই সনদ বাস্তবায়নও হবে না, সুষ্ঠু নির্বাচনও সম্ভব নয়। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আপনারা আবার নতুন করে ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চান, বাংলাদেশের জনগণ এ ষড়যন্ত্র বাংলার মাটিতে হতে দেবে না। আসুন সরকারকে বলতে চাই জুলাই সনদ আদেশ জারি করুন।

যারা গণভোট নিয়ে টালবাহানা করছেন তারা পালাবেন কোথায়? প্রশ্ন চরমোনাই পীরের: চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, বাংলাদেশে দুই শ্রেণির মানুষ এখন দুই মেরুতে অবস্থান করছে। এক শ্রেণির আমরা যারা দেশপ্রেমিক, আরেক শ্রেণি হলো ক্ষমতাপ্রেমী। আওয়ামী লীগ সরকার দেশপ্রেমিক ছিল না, তারা ছিল ক্ষমতাপ্রেমী। তারা কিন্তু একপর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে অবস্থান করছে।
এসময় প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, যারা ফ্যাসিস্ট হওয়ার চিন্তা করছেন, যারা গণভোট নিয়ে টালবাহানা করছেন- আপনারা পালাবেন কোথায়? আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে সেই দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এছাড়া কিন্তু আপনাদের পালানোর কোনো জায়গা নেই।
পল্টন মোড়ে পাঁচ দাবিতে ৮টি রাজনৈতিক দলের সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মুফতি রেজাউল করীম বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বুঝে গেছে আপনাদের উদ্দেশ্য ভালো না। যদি আপনাদের উদ্দেশ্য ভালোই হয়ে থাকে, যেখানে আইনি ভিত্তির ব্যাপারে আপনারা একমত পোষণ করেছেন। সেখানে গণভোটে এত গড়িমসি কেন? এটা জাতির কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলবো আমরা শান্তিপ্রিয়, বারবার রাস্তায় রোদে আমাদের পোড়াচ্ছেন- আর কত রাস্তায় নামতে হবে? কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, এরপর আমরা বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ নিয়ে এমন কর্মসূচি ঘোষণা করবো, আপনি গণভোট নির্বাচনের আগে দিতে বাধ্য হবেন। আমাদের ওই পথে আপনারা হাঁটাবেন না। আমরাও ওই পথে হাঁটতে চাই না।

১৩ নভেম্বর কোনো বাকশালপন্থিকে রাজপথে নামতে দেবো না: মামুনুল হক: আগামী ১৩ নভেম্বর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচি প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। তিনি বলেন, বাহাত্তরের পরাজিত বাকশালপন্থিরা আগামী ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লকডাউনের নামে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। ১৩ নভেম্বর কোনো বাকশালপন্থিকে বাংলার রাজপথে নামতে দেবো না। যদি কেউ নামার অপচেষ্টা চালায় আমরা তাদের রাজপথে মোকাবিলা করবো ইনশাআল্লাহ।
পল্টন মোড়ে পাঁচ দাবিতে ৮টি রাজনৈতিক দলের সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। মাওলানা মামুনুল হক বলেন, যারা জুলাই সনদের গণভোট জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিরোধিতা করছেন আমরা তাদের সমস্যার কথা জানতে চাই। কোনো যুক্তি নেই। তারা জুলাই সনদের বাস্তবায়নকে ঠেকিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে আবার ফ্যাসিবাদ কায়েম করার ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কার ঘোষণা দিচ্ছি, রক্ত দিয়ে যেই ফ্যাসিবাদ বিদায় করেছি- প্রয়োজনে আবার রক্তের সাগর প্রবাহিত হবে। বাংলার মাটিতে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে না।
মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশ আজ স্পষ্ট দুই ভাগে বিভক্ত। একভাগ বাহাত্তরের বাকশালপন্থি, আরেক ভাগ জুলাইয়ের বিপ্লবপন্থি। আজ বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল এবং পক্ষের কাছে আমার সুস্পষ্ট জিজ্ঞাসা, সবাই যার যার অবস্থান পরিষ্কার করুন। হয় আপনি জুলাই বিপ্লবের পক্ষে, আর না হয় আপনি বাহাত্তরের বাকশালপন্থি।

সমাবেশে বক্তব্য দেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ, জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজাদ্দিদ বিল্লাহ আল মাদানী, খেলাফত মজলিসের আমির আবদুল বাসিত আজাদ ও যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক, মহাসচিব জালালুদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির সরওয়ার কামাল আজিজি, মহাসচিব মুসা বিন ইযহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, মহাসচিব ইউসুফ সাদিক হক্কানী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন, সাধারণ সম্পাদক কাজী নিজামুল হক প্রমুখ।

৮ দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে গণভোট আয়োজনসহ ৫ দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত: রাজধানীর পল্টনে সমাবেশ শেষে বৈঠক করেছেন পাঁচ দাবিতে আন্দোলনরত ৮ দলের শীর্ষ নেতারা। বৈঠক শেষে নভেম্বরেই গণভোটের আয়োজনসহ পাঁচ দাবি আদায়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমাবেশ পরবর্তীতে ৮ দলীয় শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন-ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা সারওয়ার কামাল আজিজী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)’র সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চান, অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার, অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মাওলানা জালাল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, মাওলানা ইউসুফ সাদিক হাক্কানী, মাওলানা মুসা বিন ইজহার, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, নিজামুল হকসহ ৮ দলের শীর্ষ নেতারা।
বৈঠকে নেতারা জুলাই সনদের আইনী স্বীকৃতি ও জাতীয় নির্বাচনের পূর্বেই গণভোটের ব্যাপারে দেশে চলমান আন্দোলনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ৮ দলের শীর্ষ নেতারা চলমান আন্দোলনের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে নিম্মোক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়-
১. জুলাই সনদের আইনী স্বীকৃতি ও জাতীয় নির্বাচনের পূর্বেই গণভোটের ব্যাপারে দেশে চলমান আন্দোলনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় ‘জুলাই সনদের আইনী স্বীকৃতি ও জাতীয় নির্বাচনের পূর্বেই গণভোটের ব্যাপারে’ আলোচনার জন্য আগামীকাল ১২ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চাওয়া হবে।
২. প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় ‘জুলাই সনদের আইনী স্বীকৃতি ও জাতীয় নির্বাচনের পূর্বেই গণভোটের ব্যাপারে’ ফলপ্রসূ কোনো সিদ্ধান্ত না আসলে আগামীকাল (বুধবার) ৮ দলের শীর্ষ নেতারা কঠোর কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক শেখ ফজলুল করীম মারূফ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সানা/এসি/আপ্র/১১/১১/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

৫ দফা দাবিতে আট দলের সমাবেশে জামায়াতের আমির

ছাব্বিশে নির্বাচন দেখতে হলে আগে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লাগবে

আপডেট সময় : ০৪:৫৪:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসা জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ২০২৬ সালে নির্বাচন দেখতে হলে আগে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লাগবে।

‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও উক্ত আদেশের ওপর গণভোট আয়োজন’সহ ৫ দফা দাবিতে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর পল্টন মোড়ে জামায়াতসহ আন্দোলনরত ৮ দলের সমাবেশে এ কথা বলেন শফিকুর রহমান। যাঁরা জুলাই বিপ্লব মানবেন না, তাঁদের জন্য ২৬ সালে কোনো নির্বাচন নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। জামায়াতের আমির বলেন, আমাদের দাবি কম, কিন্তু খুব সুস্পষ্ট। জুলাই বিপ্লবকে স্বীকৃতি দিতে হবে।…আর জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি দিতে হলে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতেই হবে। এই আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

দেশের জনগণ নির্বাচনের আগে গণভোট চায় বলে দাবি করেন শফিকুর রহমান। গণভোটের বিষয়ে সব দল একমত উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাহলে তারিখ নিয়ে এই বায়নাবাজি কেন?

দলগুলো একমত হয়ে যখন জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে, তখন গণভোট আগে হওয়াই যুক্তিযুক্ত মন্তব্য করে জামায়াতের আমির বলেন, এর ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন হলে কোনো সন্দেহ-সংশয় থাকবে না। একই সঙ্গে তিনি বলেন, জামায়াতসহ আট দল আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে জাতীয় নির্বাচন চায়। এটা নিয়ে কেউ যাতে ধূম্রজাল সৃষ্টির পাঁয়তারা না করে।
জামায়াত আমির বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ প্রণীত হয়েছে। গণতন্ত্রের কথা হলো, সংখ্যাগরিষ্ঠরা যা বলবে, বাকিদের তা-ই মেনে নিতে হবে। কিন্তু কেউ কেউ সেটি মেনে নিতে রাজি নয়। জুলাই সনদেই যদি কেউ গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখায়, জাতীয় নির্বাচনের প্রতি তারা শ্রদ্ধা কীভাবে দেখাবে?
কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে জামায়াতের আমির বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত মানুষদের ভাষা বুঝতে হবে। (আগামী নির্বাচনে) কোনো দলের নয়, জনতার বিজয় হবে। জনতা কী চায়, কান পেতে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। যারা এটি বুঝতে ব্যর্থ হবে, নিজের পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। শফিকুর রহমান বলেন, দলগুলো ভদ্র ভাষায় কথা বলছে। ভদ্র ভাষায়ই কথা বলবে। তবে দাবির ব্যাপারে হিমালয়ের মতো অনড় থাকবে। কারণ, এ দাবি জনগণের দাবি, কোনো দলের দাবি নয়। ফ্যাসিবাদের দাবি নয়। তাই ফ্যাসিবাদের দাবির কাছে দেশের মানুষ মাথা নত করবে না। আট দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে জামায়াতের আমির বলেন, তৈরি হোন। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের দাবি আদায় না হবে, আমাদের আন্দোলন দুর্বার গতিতে চলতে থাকবে, ইনশা আল্লাহ।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসবে জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, সমাবেশের পর আট দলের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে মিলিত হবেন। দ্রুতই পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য আট দলের নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতি নিতে বলেন জামায়াতের আমির।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। সঞ্চালনা করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাইয়ুম এবং সহপ্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক কে এম শরীয়াতুল্লাহ।

দিল্লির ষড়যন্ত্রে ১৩ তারিখ আওয়ামী লীগ নাশকতার পরিকল্পনা করছে: জামায়াত সেক্রেটারি: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, দিল্লির ষড়যন্ত্রে আগামী ১৩ তারিখ লকডাউনের নামে আওয়ামী লীগ নতুন নাশকতার পরিকল্পনা করছে।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে পাঁচ দফা দাবিতে সমমনা আটটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশে তিনি এমন মন্তব্য করেন। গোলাম পরওয়ার বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর ঐতিহাসিক পল্টন মোড়ের এ বিশাল মহাসমাবেশ আগামী দিনের রাজনীতির জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য জাতি আজ অপেক্ষারত। সরকার গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রায় নয় মাস চেষ্টা করে সাংবিধানিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় নানা সংস্কারে প্রায় একমত হয়েছিলেন। কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন মহল থেকে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।
জামায়াত নেতা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, যারা দাবি করছেন একদিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন হবে, কীভাবে হবে? বাংলাদেশের সব সংবিধান বিশেষজ্ঞ একমত, জুলাই জাতীয় সনদে ৪৮টি বিষয়ে সংবিধানের অনেক সংস্কার হয়েছে- যেমন দলের প্রধান ও সরকারের প্রধান এক থাকবে না, সাংবিধানিক পদগুলোতে পৃথক নিয়োগ কর্তৃপক্ষ হবে, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রভৃতিসহ যা যা সংশোধন হয়েছে– গণভোট যদি আইনি ভিত্তি না হয়, তাহলে কীসের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন হবে?’
তিনি আরো বলেন, এই সরকারকে হাইকোর্টের আর্টিকেল ১০৬-এর মধ্য দিয়ে রেফারেন্স সহকারে সরকারের বৈধতার কথা অনেকে বলেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞরাও ১০৬ সম্পর্কে আইনের বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। ফলে একমাত্র গণভোটের মধ্য দিয়েই জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণের যত সংস্কার হয়েছে, তার আইনি ভিত্তি দেওয়া সম্ভব। তা না হলে জাতীয় নির্বাচনের বৈধতা ও এই সংস্কার কখনো পূরণ হবে না।

গণভোট না হলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন ২৯ সালে: আযাদ: সংবিধান অনুযায়ী গণভোট না হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ২০২৯ সালে মন্তব্য করেছেন, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী গণভোট ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর পল্টন মোড়ে ৮ দলের সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন সংবিধানে গণভোটের বিধান নেই। তাদের বলতে চাই, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবিধান সংশোধন করে গণভোটের ধারা বাতিল করেছিলেন শেখ হাসিনা। এখন যারা বলেন সংবিধানে গণভোট নেই, তারা কি তাহলে হাসিনার সুরে কথা বলেন না?’
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, পাঁচ বছর পরপর নির্বাচনের কথা সংবিধানে লেখা আছে। ২০২৪ এ যদি নির্বাচন হয়, তাহলে ২০২৬ সালে নির্বাচন হবে কোথায় লেখা আছে? সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হতে হবে ২০২৯ সালে। তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সমাজকে নতুন ভিত্তিতে শক্তিশালী করতে এবং নতুন বাংলাদেশের পথে যাত্রা শুরু করতে হলে জাতীয় নির্বাচনের আগে সংস্কারের অংশ হিসেবে গণভোট দিতে হবে। নির্বাচনের আগে গণভোট ছাড়া জুলাই সনদ বাস্তবায়নও হবে না, সুষ্ঠু নির্বাচনও সম্ভব নয়। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আপনারা আবার নতুন করে ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চান, বাংলাদেশের জনগণ এ ষড়যন্ত্র বাংলার মাটিতে হতে দেবে না। আসুন সরকারকে বলতে চাই জুলাই সনদ আদেশ জারি করুন।

যারা গণভোট নিয়ে টালবাহানা করছেন তারা পালাবেন কোথায়? প্রশ্ন চরমোনাই পীরের: চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, বাংলাদেশে দুই শ্রেণির মানুষ এখন দুই মেরুতে অবস্থান করছে। এক শ্রেণির আমরা যারা দেশপ্রেমিক, আরেক শ্রেণি হলো ক্ষমতাপ্রেমী। আওয়ামী লীগ সরকার দেশপ্রেমিক ছিল না, তারা ছিল ক্ষমতাপ্রেমী। তারা কিন্তু একপর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে অবস্থান করছে।
এসময় প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, যারা ফ্যাসিস্ট হওয়ার চিন্তা করছেন, যারা গণভোট নিয়ে টালবাহানা করছেন- আপনারা পালাবেন কোথায়? আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে সেই দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এছাড়া কিন্তু আপনাদের পালানোর কোনো জায়গা নেই।
পল্টন মোড়ে পাঁচ দাবিতে ৮টি রাজনৈতিক দলের সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মুফতি রেজাউল করীম বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বুঝে গেছে আপনাদের উদ্দেশ্য ভালো না। যদি আপনাদের উদ্দেশ্য ভালোই হয়ে থাকে, যেখানে আইনি ভিত্তির ব্যাপারে আপনারা একমত পোষণ করেছেন। সেখানে গণভোটে এত গড়িমসি কেন? এটা জাতির কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলবো আমরা শান্তিপ্রিয়, বারবার রাস্তায় রোদে আমাদের পোড়াচ্ছেন- আর কত রাস্তায় নামতে হবে? কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, এরপর আমরা বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ নিয়ে এমন কর্মসূচি ঘোষণা করবো, আপনি গণভোট নির্বাচনের আগে দিতে বাধ্য হবেন। আমাদের ওই পথে আপনারা হাঁটাবেন না। আমরাও ওই পথে হাঁটতে চাই না।

১৩ নভেম্বর কোনো বাকশালপন্থিকে রাজপথে নামতে দেবো না: মামুনুল হক: আগামী ১৩ নভেম্বর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচি প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। তিনি বলেন, বাহাত্তরের পরাজিত বাকশালপন্থিরা আগামী ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লকডাউনের নামে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। ১৩ নভেম্বর কোনো বাকশালপন্থিকে বাংলার রাজপথে নামতে দেবো না। যদি কেউ নামার অপচেষ্টা চালায় আমরা তাদের রাজপথে মোকাবিলা করবো ইনশাআল্লাহ।
পল্টন মোড়ে পাঁচ দাবিতে ৮টি রাজনৈতিক দলের সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। মাওলানা মামুনুল হক বলেন, যারা জুলাই সনদের গণভোট জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিরোধিতা করছেন আমরা তাদের সমস্যার কথা জানতে চাই। কোনো যুক্তি নেই। তারা জুলাই সনদের বাস্তবায়নকে ঠেকিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে আবার ফ্যাসিবাদ কায়েম করার ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কার ঘোষণা দিচ্ছি, রক্ত দিয়ে যেই ফ্যাসিবাদ বিদায় করেছি- প্রয়োজনে আবার রক্তের সাগর প্রবাহিত হবে। বাংলার মাটিতে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে না।
মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশ আজ স্পষ্ট দুই ভাগে বিভক্ত। একভাগ বাহাত্তরের বাকশালপন্থি, আরেক ভাগ জুলাইয়ের বিপ্লবপন্থি। আজ বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল এবং পক্ষের কাছে আমার সুস্পষ্ট জিজ্ঞাসা, সবাই যার যার অবস্থান পরিষ্কার করুন। হয় আপনি জুলাই বিপ্লবের পক্ষে, আর না হয় আপনি বাহাত্তরের বাকশালপন্থি।

সমাবেশে বক্তব্য দেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ, জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজাদ্দিদ বিল্লাহ আল মাদানী, খেলাফত মজলিসের আমির আবদুল বাসিত আজাদ ও যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক, মহাসচিব জালালুদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির সরওয়ার কামাল আজিজি, মহাসচিব মুসা বিন ইযহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, মহাসচিব ইউসুফ সাদিক হক্কানী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন, সাধারণ সম্পাদক কাজী নিজামুল হক প্রমুখ।

৮ দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে গণভোট আয়োজনসহ ৫ দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত: রাজধানীর পল্টনে সমাবেশ শেষে বৈঠক করেছেন পাঁচ দাবিতে আন্দোলনরত ৮ দলের শীর্ষ নেতারা। বৈঠক শেষে নভেম্বরেই গণভোটের আয়োজনসহ পাঁচ দাবি আদায়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমাবেশ পরবর্তীতে ৮ দলীয় শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন-ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা সারওয়ার কামাল আজিজী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)’র সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চান, অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার, অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মাওলানা জালাল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, মাওলানা ইউসুফ সাদিক হাক্কানী, মাওলানা মুসা বিন ইজহার, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, নিজামুল হকসহ ৮ দলের শীর্ষ নেতারা।
বৈঠকে নেতারা জুলাই সনদের আইনী স্বীকৃতি ও জাতীয় নির্বাচনের পূর্বেই গণভোটের ব্যাপারে দেশে চলমান আন্দোলনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ৮ দলের শীর্ষ নেতারা চলমান আন্দোলনের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে নিম্মোক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়-
১. জুলাই সনদের আইনী স্বীকৃতি ও জাতীয় নির্বাচনের পূর্বেই গণভোটের ব্যাপারে দেশে চলমান আন্দোলনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় ‘জুলাই সনদের আইনী স্বীকৃতি ও জাতীয় নির্বাচনের পূর্বেই গণভোটের ব্যাপারে’ আলোচনার জন্য আগামীকাল ১২ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চাওয়া হবে।
২. প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় ‘জুলাই সনদের আইনী স্বীকৃতি ও জাতীয় নির্বাচনের পূর্বেই গণভোটের ব্যাপারে’ ফলপ্রসূ কোনো সিদ্ধান্ত না আসলে আগামীকাল (বুধবার) ৮ দলের শীর্ষ নেতারা কঠোর কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক শেখ ফজলুল করীম মারূফ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সানা/এসি/আপ্র/১১/১১/২০২৫