ঢাকা ০৯:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫

বিভাজন-পক্ষপাতের রাজনীতি আর চলবে না: বিজয় ভাষণে মামদানি

  • আপডেট সময় : ১১:১১:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫
  • ৩৮ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি মঙ্গলবার (৬) রাতে বিজয় ভাষণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরাসরি উদ্দেশ করে বলেন, আমি এমন এক নিউইয়র্ক সিটি হলে প্রবেশ করছি, যেখানে বিভাজন আর পক্ষপাতের রাজনীতি আর চলবে না। ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমি জানি আপনি শুনছেন। আমার কথা মনে রাখুন, আওয়াজটা বাড়ান!

মামদানি যখন জনতার উদ্দেশে ‘আওয়াজটা বাড়ান’ বলে শেষ করছিলেন, ঠিক সেই সময়েই ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে রহস্যজনক একটি পোস্টে লেখেন, সুতরাং শুরু হলো।

ব্রুকলিনে সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া উচ্ছ্বসিত ভাষণে মামদানি বলেন, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোর বিরুদ্ধে নিরঙ্কুশ জয়ের মাধ্যমে নিউইয়র্ক প্রমাণ করেছে, এই শহরই অন্ধকার রাজনীতির সময়ে আলোর পথ দেখাবে।

তিনি বলেন, এখানে আমরা ভালোবাসার মানুষের পক্ষে দাঁড়াই। আপনি অভিবাসী হোন, ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের সদস্য হোন, সেই বহু কৃষ্ণাঙ্গ নারী হোন যাদের ট্রাম্প সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছেন, কিংবা একক মা হোন যিনি এখনো খাদ্যদ্রব্যের দাম কমার অপেক্ষায় আছেন, সবাই নিউইয়র্কের অংশ।

মামদানি নিউইয়র্ক শহরের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র। তাই তো বিজয় ভাষণে তিনি বলেন, এখন আর ইসলামবিদ্বেষের প্রচার করে কেউ নিউইয়র্কে জিততে পারবে না।

এরপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, যদি এমন কোনো শহর থাকে, যা ট্রাম্পকে দেখাতে পারে কীভাবে তাকে হারাতে হয়, তাহলে সেটি সেই শহর, যেখান থেকেই তার (ট্রাম্প) উত্থান ঘটেছিল। ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন ট্রাম্প এই নিউইয়র্ক শহরেই জন্মগ্রহণ করেন। এখান থেকেই তাদের পারিবারিক ব্যবসার উত্থান ঘটে।

উচ্ছ্বাসভরা জনতার সামনে মামদানি বলেন, কোনো স্বৈরশাসককে ভয় দেখানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সেই ব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়া, যা তাকে ক্ষমতা দিয়েছে। এভাবেই আমরা ট্রাম্পকে থামাবো ও তার পরের জনকেও। তাই ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমি জানি আপনি শুনছেন। আমার কথা মনে রাখুন, আওয়াজটা বাড়ান!

রাত ১২টার দিকে ৯১ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, কুয়োমোর চেয়ে ৮ শতাংশের বেশি ব্যবধানে এগিয়ে আছেন মামদানি। এই ফলাফল ডেমোক্র্যাটিক সমাজতান্ত্রিক প্রার্থীর জন্য এক বিশাল উত্থান ও কুয়োমোর রাজনৈতিক পতনের ইঙ্গিত দেয়, যিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ব্যয়বহুল প্রচারণা চালিয়েছিলেন।

বিজয় ভাষণে মামদানি তার নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো পুনর্ব্যক্ত করেন, যেমন- ভাড়াটিয়াদের অধিকার রক্ষায় বাড়িওয়ালাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা, ধনীদের সুবিধাভোগী দুর্নীতির সংস্কৃতি শেষ করা, শ্রমিক অধিকার সম্প্রসারণ ও ইউনিয়নের পাশে থাকা।

তিনি বলেন, আমরা জানি, যেমন ট্রাম্পও জানেন। যখন শ্রমিকদের অধিকার অটুট থাকে, তখন তাদের শোষণ করতে চাওয়া কর্তা শ্রেণিই ক্ষুদ্র হয়ে পড়ে।

মামদানি আরো বলেন, নিউইয়র্ক অভিবাসীদের শহর, অভিবাসীদের হাতে গড়া, তাদের দ্বারা চালিত, এবং আজ থেকে অভিবাসীর হাতেই নেতৃত্ব থাকবে। তাই, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আমাকে শুনুন। আমাদের কাউকে আঘাত করতে চাইলে, আগে আমাদের সবাইকে মোকাবিলা করতে হবে।

তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, ৫৮ দিন পর যখন আমরা সিটি হলে প্রবেশ করব, প্রত্যাশা অনেক থাকবে ও আমরা তা পূরণ করব।

মঙ্গলবারের (৪ নভেম্বর) নির্বাচনে শুধু মামদানিই নন, আরো কয়েকজন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বড় জয় পেয়েছেন। মিকি শেরিল নির্বাচিত হয়েছেন নিউ জার্সির গভর্নর হিসেবে, আর অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্গার হয়েছেন ভার্জিনিয়ার প্রথম নারী গভর্নর।

রাতেই ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করে ডেমোক্র্যাটদের এসব জয়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, কংগ্রেস যেন অবিলম্বে ফিলিবাস্টার প্রথা বাতিল করে ভোটাধিকারের নতুন সংস্কার আনে, যার মধ্যে থাকবে কঠোর ভোটার আইডি আইন ও ডাকযোগে ভোট নিষিদ্ধের দাবি।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

এসি/আপ্র/০৬/১১/২০২৫

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

বিভাজন-পক্ষপাতের রাজনীতি আর চলবে না: বিজয় ভাষণে মামদানি

আপডেট সময় : ১১:১১:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি মঙ্গলবার (৬) রাতে বিজয় ভাষণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরাসরি উদ্দেশ করে বলেন, আমি এমন এক নিউইয়র্ক সিটি হলে প্রবেশ করছি, যেখানে বিভাজন আর পক্ষপাতের রাজনীতি আর চলবে না। ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমি জানি আপনি শুনছেন। আমার কথা মনে রাখুন, আওয়াজটা বাড়ান!

মামদানি যখন জনতার উদ্দেশে ‘আওয়াজটা বাড়ান’ বলে শেষ করছিলেন, ঠিক সেই সময়েই ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে রহস্যজনক একটি পোস্টে লেখেন, সুতরাং শুরু হলো।

ব্রুকলিনে সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া উচ্ছ্বসিত ভাষণে মামদানি বলেন, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোর বিরুদ্ধে নিরঙ্কুশ জয়ের মাধ্যমে নিউইয়র্ক প্রমাণ করেছে, এই শহরই অন্ধকার রাজনীতির সময়ে আলোর পথ দেখাবে।

তিনি বলেন, এখানে আমরা ভালোবাসার মানুষের পক্ষে দাঁড়াই। আপনি অভিবাসী হোন, ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের সদস্য হোন, সেই বহু কৃষ্ণাঙ্গ নারী হোন যাদের ট্রাম্প সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছেন, কিংবা একক মা হোন যিনি এখনো খাদ্যদ্রব্যের দাম কমার অপেক্ষায় আছেন, সবাই নিউইয়র্কের অংশ।

মামদানি নিউইয়র্ক শহরের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র। তাই তো বিজয় ভাষণে তিনি বলেন, এখন আর ইসলামবিদ্বেষের প্রচার করে কেউ নিউইয়র্কে জিততে পারবে না।

এরপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, যদি এমন কোনো শহর থাকে, যা ট্রাম্পকে দেখাতে পারে কীভাবে তাকে হারাতে হয়, তাহলে সেটি সেই শহর, যেখান থেকেই তার (ট্রাম্প) উত্থান ঘটেছিল। ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন ট্রাম্প এই নিউইয়র্ক শহরেই জন্মগ্রহণ করেন। এখান থেকেই তাদের পারিবারিক ব্যবসার উত্থান ঘটে।

উচ্ছ্বাসভরা জনতার সামনে মামদানি বলেন, কোনো স্বৈরশাসককে ভয় দেখানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সেই ব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়া, যা তাকে ক্ষমতা দিয়েছে। এভাবেই আমরা ট্রাম্পকে থামাবো ও তার পরের জনকেও। তাই ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমি জানি আপনি শুনছেন। আমার কথা মনে রাখুন, আওয়াজটা বাড়ান!

রাত ১২টার দিকে ৯১ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, কুয়োমোর চেয়ে ৮ শতাংশের বেশি ব্যবধানে এগিয়ে আছেন মামদানি। এই ফলাফল ডেমোক্র্যাটিক সমাজতান্ত্রিক প্রার্থীর জন্য এক বিশাল উত্থান ও কুয়োমোর রাজনৈতিক পতনের ইঙ্গিত দেয়, যিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ব্যয়বহুল প্রচারণা চালিয়েছিলেন।

বিজয় ভাষণে মামদানি তার নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো পুনর্ব্যক্ত করেন, যেমন- ভাড়াটিয়াদের অধিকার রক্ষায় বাড়িওয়ালাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা, ধনীদের সুবিধাভোগী দুর্নীতির সংস্কৃতি শেষ করা, শ্রমিক অধিকার সম্প্রসারণ ও ইউনিয়নের পাশে থাকা।

তিনি বলেন, আমরা জানি, যেমন ট্রাম্পও জানেন। যখন শ্রমিকদের অধিকার অটুট থাকে, তখন তাদের শোষণ করতে চাওয়া কর্তা শ্রেণিই ক্ষুদ্র হয়ে পড়ে।

মামদানি আরো বলেন, নিউইয়র্ক অভিবাসীদের শহর, অভিবাসীদের হাতে গড়া, তাদের দ্বারা চালিত, এবং আজ থেকে অভিবাসীর হাতেই নেতৃত্ব থাকবে। তাই, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আমাকে শুনুন। আমাদের কাউকে আঘাত করতে চাইলে, আগে আমাদের সবাইকে মোকাবিলা করতে হবে।

তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, ৫৮ দিন পর যখন আমরা সিটি হলে প্রবেশ করব, প্রত্যাশা অনেক থাকবে ও আমরা তা পূরণ করব।

মঙ্গলবারের (৪ নভেম্বর) নির্বাচনে শুধু মামদানিই নন, আরো কয়েকজন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বড় জয় পেয়েছেন। মিকি শেরিল নির্বাচিত হয়েছেন নিউ জার্সির গভর্নর হিসেবে, আর অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্গার হয়েছেন ভার্জিনিয়ার প্রথম নারী গভর্নর।

রাতেই ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করে ডেমোক্র্যাটদের এসব জয়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, কংগ্রেস যেন অবিলম্বে ফিলিবাস্টার প্রথা বাতিল করে ভোটাধিকারের নতুন সংস্কার আনে, যার মধ্যে থাকবে কঠোর ভোটার আইডি আইন ও ডাকযোগে ভোট নিষিদ্ধের দাবি।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

এসি/আপ্র/০৬/১১/২০২৫