ঢাকা ০৭:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫

জেলের ভয়েও ফিলিস্তিনের পক্ষে সিঙ্গাপুরে তিন নারীর মিছিল

  • আপডেট সময় : ০৬:১৫:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫
  • ১০ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নারী ও শিশু ডেস্ক: সিঙ্গাপুরের কঠোর আইনব্যবস্থার মধ্যে এক নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম দিয়েছেন তিন তরুণী সিতি আমিরাহ মোহাম্মদ আসররি, কোকিলা আন্নামালাই ও মোসাম্মদ সবিকুন নাহার। ফিলিস্তিনের পক্ষে একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল আয়োজনের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। রোববার (২ নভেম্বর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, দেশটির ‘পাবলিক অর্ডার অ্যাক্ট’ অনুযায়ী অনুযায়ী তারা সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার জরিমানার মুখে পড়তে পারতেন। কিন্তু বিচারক জন এনজি সম্প্রতি তাদের নির্দোষ ঘোষণা করেছেন। এই রায় পুরো সিঙ্গাপুরকেই অবাক করে দিয়েছে।

ওই তিন নারী ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালে প্রায় ৭০ জনকে নিয়ে প্রেসিডেন্টের দপ্তর অভিমুখে এক শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা করেন। তাদের দাবি ছিল- ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সিঙ্গাপুর যেন তেলআবিবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। গাজার চলমান যুদ্ধে হাজারো ফিলিস্তিনির মৃত্যু তাদের গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল।

এদিকে প্রসিকিউশন পক্ষ অভিযোগ তোলে, তারা অনুমতি ছাড়া একটি ‘অবৈধ মিছিল’ আয়োজন করেছেন; যা প্রেসিডেন্টের ভবন ‘ইস্তানা’-এর সংরক্ষিত এলাকার পাশ দিয়ে গেছে। কিন্তু বিচারক এনজি তার রায়ে বলেছেন—রাস্তার কোথাও সংরক্ষিত এলাকার কোনো চিহ্ন ছিল না এবং প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে যে, অভিযুক্তরা জানতেন তারা কোনো নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করছেন। এই প্রযুক্তিগত দিকই মামলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

৩৭ বছর বয়সি আন্নামালাই বলেন, ‘আমি প্রায় নিশ্চিত ছিলাম আমরা দোষী সাব্যস্ত হবো; এমনকি রায় ঘোষণার পর আদালতে প্রতিবাদী বক্তব্য পড়ার প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম।’ খালাসের ঘোষণায় আদালতকক্ষে নেমে আসে এক অপ্রত্যাশিত স্বস্তি, নিঃশব্দ উল্লাস।

২৬ বছর বয়সি সবিকুন নাহার জানান, প্রচার পাওয়া নয়, বরং নৈতিক দায়বোধ থেকেই ওই মিছিলের আয়োজন করেছিলেন তারা। তিনি বলেন, ‘গাজার মানুষের যন্ত্রণা দেখে মনে হয়েছে কিছু না কিছু করা জরুরি।’

তাদের মতে, সিঙ্গাপুরে সাধারণ মানুষ রাজনীতি বা প্রতিবাদে অংশ নিতে ভয় পায়। তাই এই রায় সমাজে সাহস জোগাবে।

রায়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহু তরুণ তাদের ‘আশার প্রতীক’ হিসেবে বরণ করেছেন। অনেকেই মনে করেন, এই রায় সিঙ্গাপুরে ভিন্নমত প্রকাশের সংস্কৃতিতে এক ক্ষুদ্র কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা করেছে।

আন্নামালাই বলেন, ‘এই জয় শুধু তিনজনের নয়; এটা সেসব মানুষের বিজয়- যারা ভয়কে অতিক্রম করে সাহসের পক্ষে দাঁড়াতে চায়। সিস্টেম আমাদের বিরুদ্ধে হলেও লড়াই চালিয়ে যাওয়াই আসল শক্তি।’

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

ইতিহাসের সবচেয়ে গরম বছরগুলোর অন্যতম হতে পারে ২০২৫

জেলের ভয়েও ফিলিস্তিনের পক্ষে সিঙ্গাপুরে তিন নারীর মিছিল

আপডেট সময় : ০৬:১৫:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫

নারী ও শিশু ডেস্ক: সিঙ্গাপুরের কঠোর আইনব্যবস্থার মধ্যে এক নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম দিয়েছেন তিন তরুণী সিতি আমিরাহ মোহাম্মদ আসররি, কোকিলা আন্নামালাই ও মোসাম্মদ সবিকুন নাহার। ফিলিস্তিনের পক্ষে একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল আয়োজনের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। রোববার (২ নভেম্বর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, দেশটির ‘পাবলিক অর্ডার অ্যাক্ট’ অনুযায়ী অনুযায়ী তারা সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার জরিমানার মুখে পড়তে পারতেন। কিন্তু বিচারক জন এনজি সম্প্রতি তাদের নির্দোষ ঘোষণা করেছেন। এই রায় পুরো সিঙ্গাপুরকেই অবাক করে দিয়েছে।

ওই তিন নারী ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালে প্রায় ৭০ জনকে নিয়ে প্রেসিডেন্টের দপ্তর অভিমুখে এক শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা করেন। তাদের দাবি ছিল- ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সিঙ্গাপুর যেন তেলআবিবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। গাজার চলমান যুদ্ধে হাজারো ফিলিস্তিনির মৃত্যু তাদের গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল।

এদিকে প্রসিকিউশন পক্ষ অভিযোগ তোলে, তারা অনুমতি ছাড়া একটি ‘অবৈধ মিছিল’ আয়োজন করেছেন; যা প্রেসিডেন্টের ভবন ‘ইস্তানা’-এর সংরক্ষিত এলাকার পাশ দিয়ে গেছে। কিন্তু বিচারক এনজি তার রায়ে বলেছেন—রাস্তার কোথাও সংরক্ষিত এলাকার কোনো চিহ্ন ছিল না এবং প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে যে, অভিযুক্তরা জানতেন তারা কোনো নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করছেন। এই প্রযুক্তিগত দিকই মামলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

৩৭ বছর বয়সি আন্নামালাই বলেন, ‘আমি প্রায় নিশ্চিত ছিলাম আমরা দোষী সাব্যস্ত হবো; এমনকি রায় ঘোষণার পর আদালতে প্রতিবাদী বক্তব্য পড়ার প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম।’ খালাসের ঘোষণায় আদালতকক্ষে নেমে আসে এক অপ্রত্যাশিত স্বস্তি, নিঃশব্দ উল্লাস।

২৬ বছর বয়সি সবিকুন নাহার জানান, প্রচার পাওয়া নয়, বরং নৈতিক দায়বোধ থেকেই ওই মিছিলের আয়োজন করেছিলেন তারা। তিনি বলেন, ‘গাজার মানুষের যন্ত্রণা দেখে মনে হয়েছে কিছু না কিছু করা জরুরি।’

তাদের মতে, সিঙ্গাপুরে সাধারণ মানুষ রাজনীতি বা প্রতিবাদে অংশ নিতে ভয় পায়। তাই এই রায় সমাজে সাহস জোগাবে।

রায়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহু তরুণ তাদের ‘আশার প্রতীক’ হিসেবে বরণ করেছেন। অনেকেই মনে করেন, এই রায় সিঙ্গাপুরে ভিন্নমত প্রকাশের সংস্কৃতিতে এক ক্ষুদ্র কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা করেছে।

আন্নামালাই বলেন, ‘এই জয় শুধু তিনজনের নয়; এটা সেসব মানুষের বিজয়- যারা ভয়কে অতিক্রম করে সাহসের পক্ষে দাঁড়াতে চায়। সিস্টেম আমাদের বিরুদ্ধে হলেও লড়াই চালিয়ে যাওয়াই আসল শক্তি।’

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ