নারী ও শিশু ডেস্ক: প্রতিনিয়তই কোমলমতি শিশুকন্যাদের জন্য এক সুরক্ষিত স্বাস্থ্যসম্মত বলয় সুনিশ্চিত করা পরিবার থেকে সমাজের বিশেষ দায়বদ্ধতা। আজকের শিশু আগামীর বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে সব মানুষকে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয়, সেখানে কন্যাশিশুরা কতখানি নিরাপদ আর নির্বিঘ্ন থাকতে পারে- এ প্রশ্ন থেকেই যায়। আর সমাজ সংস্কারের চিরায়ত বিধিতে কন্যা আর পুত্রের মধ্যে যে ফারাক বিভাজন- সেখানে শুধু কি কন্যা? জন্মদাত্রী মায়েরও যে কত দুর্ভোগ দুর্বিপাক সামলাতে হয় বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতিনিয়তই গণমাধ্যমের পাতা ভারী হয় পর পর কন্যাসন্তান জন্মালে মা পড়ে যান কত বিপদ আর নির্মমতার ঘটনায়। যা চেপে বসেছে, তাও পরিবার থেকে সামাজিক বলয় দুর্বিপাকে পড়তে সময় লাগছে না। আর পথ শিশুকন্যারা নির্মমতার জাঁতাকলে পিষ্ট হয় দুঃসহ এক বাতাবরণে।
বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সামনের দিকে এগিয়ে চললেও ঐতিহ্যিক বিধি, সংস্কারকে অত সহজে মুছে ফেলা যায় না; বরং তথ্যপ্রযুক্তির সমৃদ্ধ যুগে হিত-বিপরীতের চরম কোপানলে পড়ছে যেমন কন্যা শিশুরা পাশাপাশি নারী সমাজও। আবার পরিবার থেকে অনেক কন্যাশিশু বিচ্ছিন্ন হয়ে পথেঘাটে কিংবা স্বল্প মজুরিতে গৃহস্থ বাড়িতে বেঁচে থাকার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তাদের অবস্থা যে কত শোচনীয়, সেটিও আড়ালে-আবডালে থাকেই না।
সাধারণত আর্থিকভাবে অসচ্ছল দম্পতি নিজ শিশুকন্যাকে অন্যের বাড়িতে কাজে দিয়ে দেয়। সেখানে থাকা-খাওয়া নিশ্চিত হলেও সারা দিনের জীবন হয় এক অনিশ্চিত, দুরবস্থার। সময় মতো দুপুরে কিংবা রাতের খাবার জোটে না। তার চেয়েও বেশি আর এক শিশুর দায়-দায়িত্ব চাপানো হয়। ১২-১৩ বছরের শিশু কন্যা লালন পালন করছে ১ থেকে ৪ বছরের ছোট বাচ্চার দায়-দায়িত্ব। এমন চিত্র সারাদেশের জন্য খুব স্বস্তিকর কিংবা নির্বিঘ্ন থাকেই না। গণমাধ্যমের খবরে আরও উঠে আসে দরিদ্র পিতা-মাতা তাদের কন্যা সন্তানকে নিজের কাছে রাখতেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠিত হন। প্রথমত, অর্থাভাব। আরো আছে পারিবারিক কন্যাশিশু নির্যাতন, যা সমাজ-সংসারের জন্য এক অযাচিত দুর্ভোগই শুধু নয় নিপীড়ন-নির্যাতনেরও এক রুদ্ধতার বেষ্টনী।
কন্যাশিশুদের অধিকার আদায়, পারিবারিক ন্যায্যতা, সামাজিক সুরক্ষার বলয় এবং নিরাপদ, নির্বিঘ্ন স্বাচ্ছন্দ্য, স্বাস্থ্যকর আঙিনা সুনিশ্চিত করা দরকার। নিত্যদিনের যাপিতজীবনে মানবিক সাহচর্যের পরিবেশ তৈরি করে তাদের ভবিষ্যৎ জীবন সুস্থ, স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে নিয়ে অধিকার ও স্বাধীনতাকে এক সুতায় বেঁধে দিতে হবে; যাতে তারা ঘর থেকে বাইরে শেষ অবধি পুরো সামাজিক আঙিনায় নিজেদের সুন্দর শৈশব, প্রাণোচ্ছল তারুণ্য ছাড়াও মূল্যবান জীবনকে যথাযথভাবে তৈরি করতে পারে। যা শুরু করা প্রয়োজন নিজ আঙিনা পরিবার থেকেই। পথশিশু কন্যাদের যাতে বেসামাল সামাজিক প্রতিবেশের শিকার হতে না হয় তেমন নিরাপত্তার বলয় একদিনে তৈরি হবে না। অত্যাচার, ধ্বংসলীল চোখের পলকে ঘটে যায়। কিন্তু এর যথাযথ বিধান, কার্যক্রম শুরু করাও যে কত দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া সব সময় প্রকটভাবে সামনে আসছে। তাই দিবসটির তাৎপর্যে যাই সন্নিবেশিত হোক না কেন তাদের জন্য এক নিরাপদ, সুরক্ষার বলয় তৈরি পরিস্থিতির ন্যায্যতা দাবি করে। আর আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা পথশিশু কন্যাই শুধু নয়, গৃহশ্রমে নিয়োজিত শিশু কন্যাদের কীভাবে তাদের যাপিত জীবনকে সুস্থ, স্বাভাবিক আর নিরাপদ রাখা যায়; সেটিই ভাবতে হবে। কথার কথা বিষয় নয়, এমন দুঃসহ সমস্যা উত্তরণ ততোধিক কঠিন। দীর্ঘকালীন অভিশাপ, লঞ্ছনা দূরীভূত করতে গেলে শুধু দিবস দিয়ে নয় সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিত্যদিনই তাকে লালন, ধারণ করতে হবে। যে জগদ্দল পাহাড়সম পাথর শিশুকন্যাদের জীবনযাত্রাকে অসহনীয় আর অনিরাপত্তার বেষ্টনীতে আটকে দিচ্ছে, তেমন জমাটবদ্ধ দুরবস্থা ভাঙাও অত সহজ নয়। প্রতিদিনের চর্চা আর কর্মযোগ সঙ্গে পিতামাতার সচেতন দায়বদ্ধতায় বিপন্ন, বিবদমান অব্যবস্থাকে সমূলে উৎখাত করা ছাড়া বিকল্প আর কোনো পথ খোলা নেই।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

























