আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে আঘাত হানা এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ৭ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে এবং দেশটির স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এতে ১৫০ জন আহত হয়েছেন। ভূমিকম্পের পর বর্তমানে উদ্ধারকাজ চলছে এবং নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, সোমবার (৩ নভেম্বর) ভোরে হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। প্রাথমিকভাবে ভূমিকম্পের গভীরতা ১০ কিলোমিটার বলা হলেও পরে তা সংশোধন করে ২৮ কিলোমিটার (১৭ মাইল) জানানো হয়। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ইউএসজিএস জানায়, রোববার রাত থেকে সোমবার ভোরের দিকে বিশেষ করে, স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে খলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। প্রায় ৫ লাখ ২৩ হাজার জনসংখ্যার নগরী মাজার-ই-শরিফের কাছেই এর উপকেন্দ্র ছিল। রাজধানী কাবুলে এএফপির সংবাদদাতারাও ভূমিকম্প অনুভব করেন।
সামাঙ্গান প্রদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র সামিম জোয়ানদা রয়টার্সকে জানান, ‘সকাল পর্যন্ত মোট ১৫০ জন আহত ও সাতজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে এবং সবাইকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।’
দরিদ্র এই দেশের পূর্বাঞ্চলে দুই মাস আগে আরেকটি ভূমিকম্পে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
বালখ প্রদেশের মুখপাত্র হাজি জায়েদ জানান, ভূমিকম্পে মাজার-ই-শরিফের পবিত্র মাজারের (ব্লু মসজিদ) একটি অংশ ধ্বংস হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা এবং ভবনের ধ্বসে পড়া অংশের বিভিন্ন ভিডিও ও ছবি শেয়ার করা হয়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে কয়েকটি মরদেহ টেনে বের করছেন।
ইউএসজিএসের স্বয়ংক্রিয় ভূমিকম্প সতর্কতা ব্যবস্থা কমলা সতর্কতা জারি করেছে, সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘উল্লেখযোগ্য প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে এবং এই দুর্যোগটি ব্যাপক হতে পারে।’
২০২১ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে তালেবান কর্তৃপক্ষকে একাধিক বড় ভূমিকম্পের মোকাবিলা করতে হয়েছে। ২০২৩ সালে ইরান সীমান্তবর্তী পশ্চিম হেরাত অঞ্চলে সংঘটিত ভূমিকম্পে এক হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয় এবং ৬৩ হাজারের বেশি বাড়ি ধসে পড়ে।
এ বছরের ৩১ আগস্ট দেশের পূর্বাঞ্চলে ৬.০ মাত্রার আরেকটি অগভীর ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে ২,২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়—যা সাম্প্রতিক আফগান ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্প।
দক্ষিণ এশিয়ার হিন্দু কুশ পর্বতমালার কাছ দিয়ে ইউরেশীয় ও ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল হওয়ায় আফগানিস্তানে ভূমিকম্প প্রায়শই ঘটে থাকে।
দীর্ঘ যুদ্ধের পর আফগানিস্তান বর্তমানে নানা সংকট মোকাবিলা করছে। স্থায়ী দারিদ্র্য, তীব্র খরা এবং পাকিস্তান ও ইরান থেকে জোরপূর্বক ফিরিয়ে দেওয়া লাখো মানুষের স্রোতে বিপর্যস্ত দেশটি।
এসি/আপ্র/০৩/১১/২০২৫
























