ঢাকা ০৯:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫

জমে থাকা পানিতে কৃষকরা পানিফল চাষে অধিক লাভবান

  • আপডেট সময় : ০৮:২৯:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

কৃষি ও কৃষক ডেস্ক: জয়পুরহাটে বাণিজ্যিকভাবে পানিফল চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন কৃষকরা। খরচ কম আর লাভ বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক এই চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। বিভিন্ন এলাকায় নিচু জমিতে সারা বছর পানি জমে থাকায় তেমন কোনো ফসলের চাষ না হওয়ায় এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন তারা। এতে ব্যাপক সফলতা পাচ্ছেন কৃষকরা, হচ্ছেন লাভবান। এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস জেলা কৃষি বিভাগের।

সরেজমিন জানা গেছে, জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল ও গতনশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কের পাশে নিচু জমিতে সারাবছর পানি জমে থাকায় তেমন কোনো ফসলের চাষ হয় না। এই জমিগুলোই কাজে লাগিয়েছেন অর্ধশতাধিক কৃষক। মাত্র নিজ মেধা ও উদ্যোগে এসব জমিতে তারা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেছেন পুষ্টিগুণে ভরপুর পানিফল। এ ফল চাষে খরচ একেবারেই কম। তেমনি নেই রোগবালাই। প্রথমে অল্প কিছু জমিতে এর চাষ শুরু হলেও লাভ বেশি হওয়ায় এখন ছড়িয়ে পড়ছে এর চাষ।

কৃষকরা জানান, বিঘাপ্রতি জমিতে মাত্র ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ করে পানিফল বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। বিঘাপ্রতি জমিতে ৪০ থেকে ৪০ মণ পর্যন্ত ফলন হয়। কৃষকরা পানিফল জমি থেকে সংগ্রহ করে সড়কের পাশেই বিক্রি করছেন। সরকারিভাবে সহায়তা পেলে এ চাষ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন চাষিরা।

সদর উপজেলার গতনশহর এলাকার কৃষক ময়নুল ইসলাম বলেন, পানিফল চাষে খরচ অনেক কম। এক বিঘা জমিতে শ্রমিক দিয়ে সব কাজ করালে সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। আর নিজে করলে ২-৩ হাজার টাকা আরও কম হয়। বর্তমান বাজারে পানিফল ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। ৪০ থেকে ৫০ মণ পর্যন্ত ফলন হয় বিঘাপ্রতি জমিতে। সব খরচ বাদ দিলেও ৪০ হাজার টাকার মতো লাভ থাকবে।

একই এলাকার কৃষক মোহাম্মদ আজাদ বলেন, আমাদের এলাকার জমিতেগুলো অনেক নিচু এজন্য সারাবছর পানি জমে থাকে। এ কারণে কোনো ফসল চাষ করতে পারি না। এজন্য আমি চার বছর থেকে পানিফল চাষ করে আসছি। এবার এক একর জমিতে চাষ করেছি। ধান আলুর চেয়ে পানিফল অনেক লাভজনক।
কৃষক আইয়ুব হোসেন বলেন, আমাদের এলাকায় প্রায় ১শ বিঘা জমিতে পানি জমে থাকায় কোনো ফসল চাষ হয় না। তাই আমরা পানিফলের চাষ করেছি। এতে আমরা অনেক লাভবান হচ্ছি। মান অনুযায়ী ৪০ থেকে ৭০ টাকা কেজিদরে পানিফল বিক্রি করছি। সড়কের পাশে জমি হওয়ায় জমি থেকে পানিফল তুলে সড়কের পাশেই বসে বিক্রি করছি। অনেক মানুষ কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

পাঁচবিবি আটাপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক কাজে জয়পুরহাট শহরে এসেছিলাম। টাটকা পানিফল বিক্রি হচ্ছে দেখে যাওয়ার পথে দুই কেজি ৪০ টাকা দরে কিনলাম।

সদরের ভাদসা গ্রামের আব্দুল লতিফ বলেন, এখানকার পানিফল অনেক সুস্বাদু। যখন এই দিক দিয়ে যাই, তখন বাড়ির জন্য কেনার চেষ্টা করি। আজ এক কেজি কিনেছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের রের উপ-পরিচালক একেএম সাদিকুল ইসলাম বলেন, পানিফল চাষে খরচ অনেক কম। বাজারে এর অনেক চাহিদা আছে। পুষ্টিগুনের দিক দিয়ে পানিফল অনেক ভালো একটি ফল। এর মধ্যে খনিজ পদার্থ আছে। যা আমাদের শরীর গঠনের জন্য উপকারী। এবার জেলায় প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে পানিফলের চাষ হয়েছে। কৃষকরা যাতে আরও লাভজনক পর্যায়ে এটি চাষ করতে পারে এ বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জমে থাকা পানিতে কৃষকরা পানিফল চাষে অধিক লাভবান

আপডেট সময় : ০৮:২৯:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫

কৃষি ও কৃষক ডেস্ক: জয়পুরহাটে বাণিজ্যিকভাবে পানিফল চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন কৃষকরা। খরচ কম আর লাভ বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক এই চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। বিভিন্ন এলাকায় নিচু জমিতে সারা বছর পানি জমে থাকায় তেমন কোনো ফসলের চাষ না হওয়ায় এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন তারা। এতে ব্যাপক সফলতা পাচ্ছেন কৃষকরা, হচ্ছেন লাভবান। এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস জেলা কৃষি বিভাগের।

সরেজমিন জানা গেছে, জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল ও গতনশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কের পাশে নিচু জমিতে সারাবছর পানি জমে থাকায় তেমন কোনো ফসলের চাষ হয় না। এই জমিগুলোই কাজে লাগিয়েছেন অর্ধশতাধিক কৃষক। মাত্র নিজ মেধা ও উদ্যোগে এসব জমিতে তারা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেছেন পুষ্টিগুণে ভরপুর পানিফল। এ ফল চাষে খরচ একেবারেই কম। তেমনি নেই রোগবালাই। প্রথমে অল্প কিছু জমিতে এর চাষ শুরু হলেও লাভ বেশি হওয়ায় এখন ছড়িয়ে পড়ছে এর চাষ।

কৃষকরা জানান, বিঘাপ্রতি জমিতে মাত্র ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ করে পানিফল বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। বিঘাপ্রতি জমিতে ৪০ থেকে ৪০ মণ পর্যন্ত ফলন হয়। কৃষকরা পানিফল জমি থেকে সংগ্রহ করে সড়কের পাশেই বিক্রি করছেন। সরকারিভাবে সহায়তা পেলে এ চাষ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন চাষিরা।

সদর উপজেলার গতনশহর এলাকার কৃষক ময়নুল ইসলাম বলেন, পানিফল চাষে খরচ অনেক কম। এক বিঘা জমিতে শ্রমিক দিয়ে সব কাজ করালে সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। আর নিজে করলে ২-৩ হাজার টাকা আরও কম হয়। বর্তমান বাজারে পানিফল ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। ৪০ থেকে ৫০ মণ পর্যন্ত ফলন হয় বিঘাপ্রতি জমিতে। সব খরচ বাদ দিলেও ৪০ হাজার টাকার মতো লাভ থাকবে।

একই এলাকার কৃষক মোহাম্মদ আজাদ বলেন, আমাদের এলাকার জমিতেগুলো অনেক নিচু এজন্য সারাবছর পানি জমে থাকে। এ কারণে কোনো ফসল চাষ করতে পারি না। এজন্য আমি চার বছর থেকে পানিফল চাষ করে আসছি। এবার এক একর জমিতে চাষ করেছি। ধান আলুর চেয়ে পানিফল অনেক লাভজনক।
কৃষক আইয়ুব হোসেন বলেন, আমাদের এলাকায় প্রায় ১শ বিঘা জমিতে পানি জমে থাকায় কোনো ফসল চাষ হয় না। তাই আমরা পানিফলের চাষ করেছি। এতে আমরা অনেক লাভবান হচ্ছি। মান অনুযায়ী ৪০ থেকে ৭০ টাকা কেজিদরে পানিফল বিক্রি করছি। সড়কের পাশে জমি হওয়ায় জমি থেকে পানিফল তুলে সড়কের পাশেই বসে বিক্রি করছি। অনেক মানুষ কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

পাঁচবিবি আটাপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক কাজে জয়পুরহাট শহরে এসেছিলাম। টাটকা পানিফল বিক্রি হচ্ছে দেখে যাওয়ার পথে দুই কেজি ৪০ টাকা দরে কিনলাম।

সদরের ভাদসা গ্রামের আব্দুল লতিফ বলেন, এখানকার পানিফল অনেক সুস্বাদু। যখন এই দিক দিয়ে যাই, তখন বাড়ির জন্য কেনার চেষ্টা করি। আজ এক কেজি কিনেছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের রের উপ-পরিচালক একেএম সাদিকুল ইসলাম বলেন, পানিফল চাষে খরচ অনেক কম। বাজারে এর অনেক চাহিদা আছে। পুষ্টিগুনের দিক দিয়ে পানিফল অনেক ভালো একটি ফল। এর মধ্যে খনিজ পদার্থ আছে। যা আমাদের শরীর গঠনের জন্য উপকারী। এবার জেলায় প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে পানিফলের চাষ হয়েছে। কৃষকরা যাতে আরও লাভজনক পর্যায়ে এটি চাষ করতে পারে এ বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ