নারী ও শিশু ডেস্ক: জাতীয় নির্বাচনের আগে শিশুদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার, রাজনৈতিক দল এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছে ছয় দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে দেশের দুই শতাধিক শিশু। রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে এই ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।
শিশুদের এই ইশতেহারে মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, মতামত ও অংশগ্রহণের সুযোগ, সাইবার নিরাপত্তা, জলবায়ু ন্যায়বিচার ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি বাল্যবিয়ে, শিশুশ্রম ও সহিংসতা বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগের দাবি জানানো হয়েছে।
‘শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২৫’ উপলক্ষে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নেয় দুই শতাধিক শিশু।
এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘শিশুদের ক্ষমতায়ন, বাল্যবিয়ের অবসান- ডিজিটাল দুনিয়ায় নিরাপদ শৈশবের আহ্বান।’
অনুষ্ঠানে ‘শিশুদের ক্ষমতায়ন, বাল্যবিয়ের অবসান, ডিজিটাল দুনিয়ায় নিরাপদ শৈশব’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়। একশনএইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবিরের সঞ্চালনায় এতে সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার শিশু অধিকার বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।
বক্তারা বলেন, শিশুদের বিকাশ, সুরক্ষা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
ফারাহ কবির বলেন, শিশুদের নিয়ে তৈরি নীতিগুলো তাদের জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করে। তাই তাদের কণ্ঠস্বর শোনা এবং নীতি প্রণয়নে অন্তর্ভুক্ত করা শুধু অধিকার নয়, বরং কার্যকর নীতি বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত; বিশেষ করে ডিজিটাল বিশ্বে শিশুদের নিরাপত্তা ও সুযোগ নিশ্চিত করতে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
শিশু প্রতিনিধি তামান্না বলেন, আমরা চাই প্রতিটি স্কুলে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার বিষয়টি বাধ্যতামূলকভাবে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হোক। বাল্যবিয়ে এবং সাইবার ঝুঁকি বন্ধে আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি সচেতনতা ও জীবনদক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শবনম মোস্তারী বলেন, সাইবার হয়রানি রোধে দ্রুত কার্যকর সাইবার সেল গঠন এবং ডিজিটাল সাক্ষরতাকে পাঠ্যক্রমে বাধ্যতামূলক করা জরুরি। শিশুদের জন্য ন্যায়ভিত্তিক ও নিরাপদ সমাজ গঠনে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
শিশু একাডেমির মহাপরিচালক দিলারা বেগম বলেন, শিশুদের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাদের দাবিগুলো নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে উপস্থাপন করার পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।
ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষার প্রধান নাটালি ম্যাককলি বলেন, শিশুদের ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়ে শিশুদের কেন্দ্র করে একটি স্থায়ী ও স্বতন্ত্র বিভাগ গঠন করলে এ খাতে কাজ আরও সমন্বিত হবে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ এমদাদ-উল-বারি বলেন, শিশুদের নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ নিশ্চিত করতে অভিভাবকদের ডিজিটাল দক্ষতা বাড়াতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে শক্তিশালী আইন প্রণয়ন প্রয়োজন।
ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ইলিয়াস জিকু বলেন, অনলাইনে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইন সংস্কার এবং প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন আইন প্রণয়ন জরুরি।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য তানিয়া হক বলেন, বাল্যবিবাহ সমাজে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, যা মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন। শিশু সুরক্ষায় আইন আরও শক্তিশালী করতে হবে এবং জেন্ডার নিরপেক্ষ সন্তানপালন নীতিতে জোর দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া শিশুরা সংগীত, নাটক ও নৃত্যের মাধ্যমে শিশু অধিকার, নির্যাতন ও সুরক্ষাবিষয়ক বার্তা তুলে ধরে। এর পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয় একটি প্রতীকী ‘শিশু সংসদ অধিবেশন’; যেখানে প্রান্তিক এলাকার শিশুরা সরাসরি তাদের উদ্বেগ ও প্রস্তাব তুলে ধরে সরকারি কর্মকর্তা ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সামনে।
অনুষ্ঠানে আইন ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব এসএম শাফায়েত হোসেন, আইএসপিএবি সভাপতি মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম, স্কলাস্টিকা স্কুলের সিনিয়র ভাইস প্রিন্সিপাল নুরুন্নাহার মজুমদারসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ






















