খলিলুর রহমান খলিল, তারাগঞ্জ (রংপুর): রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের এইচবিএল-২ ইটভাটাটি পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা ও সরকারি আদেশ অমান্য করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এতে এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে। শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জমিতে ফসল ভালো হচ্ছে না। গাছ থেকে ফুল ও ফল ঝরে পড়ছে। এ অবস্থার প্রতিকারে ভাটাটি বন্ধের দাবী জানিয়ে স্থানীয় লোকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) দাখিল করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের বিধি-বিধান অমান্য করে ফসলি জমির মাঠে অনুমোদনবিহীনভাবে ইটভাটা স্থাপন করেছে।
এলাকাবাসী বলছেন, অগ্রহণযোগ্য স্থানে ভাটা স্থাপন ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির দায়ে অধিদপ্তর চলতি বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর মেসার্স হক ব্রিকস (এইচবিএল-২) ইটভাটাকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে এবং তাৎক্ষণিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করে। অধিদপ্তরের আদেশে উল্লেখ করা হয়, ভাটার কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখতে হবে, অন্যথায় পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী মামলা দায়েরসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অন্তত ৫০ জন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশ অমান্য করে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাবের আলীর যোগসাজশে ইটভাটাটি পুনরায় চালু করা হয়েছে। জাবের আলী স্থানীয় আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি এবং তার ছেলে রেজওয়ানুল হক রঞ্জু ভাটার ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি আবার ওয়ার্ড যুবলীগেরও সভাপতি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাতাইটারি গ্রামের একজন কৃষক অভিযোগ করেন, সরকারের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ভাটার মালিক কার্যক্রম চালু করেছে। এতে স্কুলগামী শিশু-কিশোর নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জমিতে ভালো ফসল হচ্ছে না। ফুল ও ফল ঝরে পড়ছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আর্কষণ করলে ইটভাটার ম্যানেজার রেজওয়ানুল হক রঞ্জু বলেন, “ভাটার মালিকগণ চালাতে বলছে তাই চালাচ্ছি। আমাকে না বলে মালিকের সঙ্গে কথা বলেন।”
হারিয়ারকুঠি ইউনিয়নের বাসিন্দা জব্বার হোসেন বলেন, ইটভাটার কারণে কৃষিজমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, গাছপালা মরে যাচ্ছে এবং এলাকায় ধুলা ও ধোঁয়ার কারণে বায়ুদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। উজিয়াল আফানের পাড়া গ্রামের বাসিন্দা জাদু মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘কাগজে ইটভাটা বন্ধ দেখালেও বাস্তবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে এলাকার ফসল নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসন যদি এটি বন্ধ করে দেয়, আমরা অনেক উপকৃত হবো।” এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল রানা বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভাটার কার্যক্রম চালু থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রিয়াজ/সানা/আপ্র/২৮/১০/২০২৫

























