ঢাকা ০৮:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে, পরিস্থিতি এখনো থমথমে

  • আপডেট সময় : ১২:৪৫:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
  • ৩৪ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাভারের আশুলিয়ার খাগান এলাকায় দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সাভারের সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস ও এর আশপাশের এলাকা।

রোববার (২৬ অক্টোবর) দিবাগত রাতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আশুলিয়ায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় স্থাপনা ও গাড়িতে হামলা, ভাঙচুর চালানো হয়। দেওয়া হয় আগুন। এতে আহত হয়েছেন দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। তবে এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো প্রকার সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার সকালে সাভারের বিরুলিয়া এলাকায় সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে প্রবেশের ফটকেই দেখা যায় আগুনে পোড়ার দৃশ্য। বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কাঁচ, কাঠসহ ভাঙা বিভিন্ন জিনিসপত্র। ভেঙে দেওয়া হয়েছে একটি প্রাইভেটকার, দুটি মাইক্রোবাস, দুটি মোটরসাইকেল। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে অন্তত তিনটি বাস, পাঁচটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকারে। এর মধ্যে কোনোটিতে সকালেও ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়।

অ্যাকাডেমিক ভবনেও চালানো হয়েছে ধ্বংসযজ্ঞ। পুরো ভবনের জানালার থাই গ্লাস ভাঙা দেখা যায়, কোনোটি সম্পূর্ণ ভাঙা হয়েছে, কোনোটি আংশিক ভাঙা হয়েছে। ভেতরে ঢুকে প্রায় প্রতিটি ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় ফাইলের কাগজপত্র, ভাঙা কাচ ও ভাঙা আসবাবপত্র। সেখানে প্রায় প্রতিটি কক্ষের চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার, বাথরুমের কমোড, বেসিন, দরজা, এসি, ফটোকপি মেশিন, প্রিন্টার, অফিসকক্ষ, অভ্যর্থনাকক্ষ ও কর্মকর্তাদের ডেস্কগুলো সম্পূর্ণ ভাঙচুর করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চালানো হয়েছে ব্যাপক লুটপাট। ল্যাপটপ, টাকাসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল রোববার সন্ধ্যার পর ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ভাড়া বাসা ‘ব্যাচেলর প্যারাডাইস হোস্টেল’ পাশে বসে ছিল সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্য এক শিক্ষার্থী থুথু ফেললে অসতর্কতাবশত সেখান দিয়ে মোটরসাইকেলে যাওয়া ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর শরীরে লাগে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে রাত ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী দেশি অস্ত্র ও ইট-পাটকেল নিয়ে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের ভাড়া করা ওই বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হন। একপর্যায়ে তারা সিটি ইউনিভার্সিটির দিকে অগ্রসর হন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এ সময় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হন। তারা সিটি ইউনিভার্সিটির প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়ে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। এরই মধ্যে সিটি ইউনিভার্সিটি সংলগ্ন এলাকায় পৃথক একটি স্থানে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ড্যাফোডিলের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। পরে ড্যফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি ইউভার্সিটি ক্যাম্পাসে ঢোকেন। এ সময় ক্যাম্পাসে দাঁড় করিয়ে রাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বাস, দুটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। একটি বাস, দুটি প্রাইভেটকার, একটি মোটরসাইকেল, প্রশাসনিক ভবন ভাঙচুর করা হয়। পরে ভাঙচুর শেষে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটি এলাকা ত্যাগ করে। এ সময় উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ওই এলাকায় ছিলেন।

সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ড্যাফোডিলের এক ছাত্রের গায়ে থুথু লাগা থেকে ঘটনার শুরু। পরবর্তী সময়ে সে স্যরিও বলেছে। কিন্তু তারা বিষয়টিকে সেভাবে নেয়নি, তাকে সেখানে মারধর করে। এরপর তাকে আটকে রাখে। যখন বিষয়টা আমাদের কাছে এসেছে, তখন আমরা এগোই। এভাবেই শুরু হয়। আমরা ঢিল ছুড়ছি, এমন পর্যন্তই ছিল। কিন্তু পরে তারা, আমাদের ভেতরে গেলে দেখবেন, অ্যাকাউন্টসে কোনও টাকা নেই, পাঁচটি গাড়ি ভেঙেছে। প্রত্যেকটা রুমে রুমে সব ভাঙছে। কিছুই নেই। এগুলো কী ধরনের আচরণ। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কীভাবে পারে।’

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘ঘুমন্ত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। তারা অস্ত্র নিয়ে আসে। মেয়েদের হলের কলাপসিবল গেটে ভাঙচুরের চেষ্টা করে, ইট ছুড়ে মারে। সেগুলো মেয়েদের গায়ে লেগেছে। আমাদের পুরো ক্যাম্পাস ভাঙচুর করেছে।’

সিটি ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘রাত ১২টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত প্রশাসনের অনেক সহযোগিতা চেয়েছি আমরা। ওরা এসে পুরো ক্যাম্পাসে আগুন দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে। শত শত ছাত্রকে মেরেছে, আহত করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা পাইনি। তারা খাগান পর্যন্ত এসেছে। ড্যাফোডিলের ছেলেরা এখানে এসে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিল। কেউ রক্ষা করতে আসেনি। টানা হামলা হয়েছে, কিন্তু কেউ আসেনি। হাজার হাজার ছাত্র এখানে, আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। দুটি ছাত্রী হল আছে, তারাও আতঙ্কে আছে। আমরা সবাই নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’

সিটি ইউনিভার্সিটির প্রক্টর অধ্যাপক আবু জায়েদ বলেন, ‘ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে হয়েছিল সেটি এখনো আমরা নিশ্চিত নই। ছাত্রদের মারামারি থেকে ক্যাম্পাস পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা হতে পারে? এটি পরিকল্পিত। আমাদের শিক্ষার্থী আহতের সংখ্যা আনুমানিক অর্ধশতাধিক হতে পারে।’

এদিকে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, ‘অসর্তকতাবশতই সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ফেলা থুথু ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীর শরীরে লাগে। সেখানে স্যরি বলে বিষয়টি সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু রাতে এসে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের মেসে ভাংচুরের ঘটনাটি কাম্য নয়। উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদেরই সন্তান আমাদের শিক্ষার্থী। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সমাধানের।’

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রক্টর শেখ মুহাম্মদ আলিয়ার বলেন, ‘এখনও আমাদের ৯ জন শিক্ষার্থীকে সিটি ইউনিভার্সিটিতে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সমাধানের। এ ঘটনায় ড্যাফোডিলের প্রায় দেড়শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।’

ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম আ্যান্ড অপস.) মো. আরাফাতুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে। ঝগড়াবিবাদ, ভাঙচুর যা হয়েছে রাতেই হয়ে গেছে। আর এ ঘটনা কেনো ঘটলো, সেটি আসলে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে পরিবেশ কিছুটা থমথমে।’

এসি/আপ্র/২৭/১০/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা পাচ্ছেন বড় সুখবর

সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে, পরিস্থিতি এখনো থমথমে

আপডেট সময় : ১২:৪৫:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাভারের আশুলিয়ার খাগান এলাকায় দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সাভারের সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস ও এর আশপাশের এলাকা।

রোববার (২৬ অক্টোবর) দিবাগত রাতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আশুলিয়ায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় স্থাপনা ও গাড়িতে হামলা, ভাঙচুর চালানো হয়। দেওয়া হয় আগুন। এতে আহত হয়েছেন দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। তবে এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো প্রকার সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার সকালে সাভারের বিরুলিয়া এলাকায় সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে প্রবেশের ফটকেই দেখা যায় আগুনে পোড়ার দৃশ্য। বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কাঁচ, কাঠসহ ভাঙা বিভিন্ন জিনিসপত্র। ভেঙে দেওয়া হয়েছে একটি প্রাইভেটকার, দুটি মাইক্রোবাস, দুটি মোটরসাইকেল। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে অন্তত তিনটি বাস, পাঁচটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকারে। এর মধ্যে কোনোটিতে সকালেও ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়।

অ্যাকাডেমিক ভবনেও চালানো হয়েছে ধ্বংসযজ্ঞ। পুরো ভবনের জানালার থাই গ্লাস ভাঙা দেখা যায়, কোনোটি সম্পূর্ণ ভাঙা হয়েছে, কোনোটি আংশিক ভাঙা হয়েছে। ভেতরে ঢুকে প্রায় প্রতিটি ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় ফাইলের কাগজপত্র, ভাঙা কাচ ও ভাঙা আসবাবপত্র। সেখানে প্রায় প্রতিটি কক্ষের চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার, বাথরুমের কমোড, বেসিন, দরজা, এসি, ফটোকপি মেশিন, প্রিন্টার, অফিসকক্ষ, অভ্যর্থনাকক্ষ ও কর্মকর্তাদের ডেস্কগুলো সম্পূর্ণ ভাঙচুর করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চালানো হয়েছে ব্যাপক লুটপাট। ল্যাপটপ, টাকাসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল রোববার সন্ধ্যার পর ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ভাড়া বাসা ‘ব্যাচেলর প্যারাডাইস হোস্টেল’ পাশে বসে ছিল সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্য এক শিক্ষার্থী থুথু ফেললে অসতর্কতাবশত সেখান দিয়ে মোটরসাইকেলে যাওয়া ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর শরীরে লাগে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে রাত ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী দেশি অস্ত্র ও ইট-পাটকেল নিয়ে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের ভাড়া করা ওই বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হন। একপর্যায়ে তারা সিটি ইউনিভার্সিটির দিকে অগ্রসর হন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এ সময় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হন। তারা সিটি ইউনিভার্সিটির প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়ে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। এরই মধ্যে সিটি ইউনিভার্সিটি সংলগ্ন এলাকায় পৃথক একটি স্থানে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ড্যাফোডিলের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। পরে ড্যফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি ইউভার্সিটি ক্যাম্পাসে ঢোকেন। এ সময় ক্যাম্পাসে দাঁড় করিয়ে রাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বাস, দুটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। একটি বাস, দুটি প্রাইভেটকার, একটি মোটরসাইকেল, প্রশাসনিক ভবন ভাঙচুর করা হয়। পরে ভাঙচুর শেষে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটি এলাকা ত্যাগ করে। এ সময় উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ওই এলাকায় ছিলেন।

সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ড্যাফোডিলের এক ছাত্রের গায়ে থুথু লাগা থেকে ঘটনার শুরু। পরবর্তী সময়ে সে স্যরিও বলেছে। কিন্তু তারা বিষয়টিকে সেভাবে নেয়নি, তাকে সেখানে মারধর করে। এরপর তাকে আটকে রাখে। যখন বিষয়টা আমাদের কাছে এসেছে, তখন আমরা এগোই। এভাবেই শুরু হয়। আমরা ঢিল ছুড়ছি, এমন পর্যন্তই ছিল। কিন্তু পরে তারা, আমাদের ভেতরে গেলে দেখবেন, অ্যাকাউন্টসে কোনও টাকা নেই, পাঁচটি গাড়ি ভেঙেছে। প্রত্যেকটা রুমে রুমে সব ভাঙছে। কিছুই নেই। এগুলো কী ধরনের আচরণ। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কীভাবে পারে।’

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘ঘুমন্ত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। তারা অস্ত্র নিয়ে আসে। মেয়েদের হলের কলাপসিবল গেটে ভাঙচুরের চেষ্টা করে, ইট ছুড়ে মারে। সেগুলো মেয়েদের গায়ে লেগেছে। আমাদের পুরো ক্যাম্পাস ভাঙচুর করেছে।’

সিটি ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘রাত ১২টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত প্রশাসনের অনেক সহযোগিতা চেয়েছি আমরা। ওরা এসে পুরো ক্যাম্পাসে আগুন দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে। শত শত ছাত্রকে মেরেছে, আহত করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা পাইনি। তারা খাগান পর্যন্ত এসেছে। ড্যাফোডিলের ছেলেরা এখানে এসে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিল। কেউ রক্ষা করতে আসেনি। টানা হামলা হয়েছে, কিন্তু কেউ আসেনি। হাজার হাজার ছাত্র এখানে, আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। দুটি ছাত্রী হল আছে, তারাও আতঙ্কে আছে। আমরা সবাই নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’

সিটি ইউনিভার্সিটির প্রক্টর অধ্যাপক আবু জায়েদ বলেন, ‘ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে হয়েছিল সেটি এখনো আমরা নিশ্চিত নই। ছাত্রদের মারামারি থেকে ক্যাম্পাস পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা হতে পারে? এটি পরিকল্পিত। আমাদের শিক্ষার্থী আহতের সংখ্যা আনুমানিক অর্ধশতাধিক হতে পারে।’

এদিকে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, ‘অসর্তকতাবশতই সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ফেলা থুথু ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীর শরীরে লাগে। সেখানে স্যরি বলে বিষয়টি সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু রাতে এসে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের মেসে ভাংচুরের ঘটনাটি কাম্য নয়। উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদেরই সন্তান আমাদের শিক্ষার্থী। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সমাধানের।’

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রক্টর শেখ মুহাম্মদ আলিয়ার বলেন, ‘এখনও আমাদের ৯ জন শিক্ষার্থীকে সিটি ইউনিভার্সিটিতে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সমাধানের। এ ঘটনায় ড্যাফোডিলের প্রায় দেড়শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।’

ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম আ্যান্ড অপস.) মো. আরাফাতুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে। ঝগড়াবিবাদ, ভাঙচুর যা হয়েছে রাতেই হয়ে গেছে। আর এ ঘটনা কেনো ঘটলো, সেটি আসলে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে পরিবেশ কিছুটা থমথমে।’

এসি/আপ্র/২৭/১০/২০২৫