নিজস্ব প্রতিবেদক: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব (কলেজ শাখা) মো. আব্দুল কুদ্দুস-এর বিরুদ্ধে এমপিওভুক্তি, পদোন্নতি, বদলি-বানিজ্যসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির যেন শেষ নেই। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে কাউকেই তিনি পরোয়া করেন না বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
তবে তার দাপটে পিয়ন থেকে শুরু করে অন্যান্য কর্মকর্তা-কজর্মচারিরাও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। বদলি-বানিজ্যের মাধ্যমে গোটা মন্ত্রনালয়কে তিনি দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত করেছেন। একইসঙ্গে কোটি কোটি টাকা আর্থিক লেনদেন ও দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এরআগে ২০১৯ সালে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) থাকাকালে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি ‘দুর্নীতির বরপুত্র” হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। উপসচিব আব্দুল কুদ্দুস ইউএনও হিসেবে বোরহানউদ্দিনে তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য বিশেষভাবে সমালোচিত ছিলেন। পদোন্নতি পেয়ে বরিশাল বদলি হলেও তিনি প্রায় এক বছর ধরে তদবির করে বদলি ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিল-সহকর্মীর ওপর নির্যাতন এবং স্টাফকে লাঠি দিয়ে মারধর করে হাত ভেঙে ফেলার মতো জগন্যতম অপরাধ। এছাড়াও ফেসবুকে লেখালেখির আক্রোশে এসএসসি পরীক্ষার্থী রুবায়েদ ওয়াদুদ গল্পকে পরীক্ষার হলে লিখতে না দিয়ে নাজেহাল করা।
ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে নিজের তৈরি উপজেলা প্রশাসন স্কুলের নামে প্রভাব বিস্তার, তেঁতুলিয়া ইকোপার্কে রাতে অবস্থান ও আড্ডা, খেলার মাঠে দর্শনার্থীদের মারধর। যদিও ব্যক্তিগত জীবন এক বছরে নিজের নামে ৫টি বই প্রকাশ করেছেন এবং পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ। ইউএনও থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদে পদোন্নতি পাওয়া তার স্ত্রী আফরোজা পারুল স্বামীর বোরহানউদ্দিনে অবস্থানকে ভালো চোখে দেখেননি বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। সূত্রটি বলছে, ইউএনও কুদ্দুস মোবাইল ফোন অফিসে রেখে গেলে স্ত্রী তাতে আপত্তিকর ছবি দেখতে পান। ক্ষুব্ধ হয়ে অফিসে ছুটে যান এবং উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসের রাস্তায় প্রকাশ্যে দুজনের মধ্যে ঝগড়া ও বাগবিতণ্ডা হয়। এই দৃশ্যের ভিডিও ফুটেজ দ্রুত ফেসবুকে ভাইরাল হয়। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার আহম্মদ উল্লাহ মিয়া জানান, পরিস্থিতি এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি পর্যন্ত গড়ায় এবং ম্যাডাম পারুল অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক ইউএনও কুদ্দুসকে পদোন্নতির কারণে ভোলা ছাড়তে বাধ্য করেন। যদিও জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম ছিদ্দিক এটিকে এক মাস আগে হওয়া স্বাভাবিক বদলি এবং পারিবারিক ঝামেলা বলে উল্লেখ করেছেন, স্থানীয়রা বলছেন স্ত্রীর সঙ্গে সংঘাতের মুখে তিনি যেতে বাধ্য হন। ওই বছর (২০১৯) দীর্ঘদিন ধরে বদলি ঠেকিয়ে বোরহানউদ্দিনে অবস্থান করার পর নিজের স্ত্রীর সঙ্গে এক সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির মুখে পড়েন এবং অবশেষে ভোলা ছাড়তে বাধ্য হন। তবে এ বিষয়ে মো. আব্দুল কুদ্দুসের বক্তব্য জানার জন্য যোগাযোগ করা হলেও তা পাওয়া যায়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ‘একচ্ছত্র আধিপত্য’ ও দুর্নীতির অভিযোগ: অভিযোগ রয়েছে, মো. আব্দুল কুদ্দুস আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে তার অপকর্ম চালিয়ে গেছেন এবং শাস্তি প্রমাণিত হওয়ার পরও শুধুমাত্র লঘুদণ্ড দিয়ে তাকে ক্ষমা করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করছেন এবং তার কথা ছাড়া কোনো ফাইল নড়ে না। শুধু তাই নয়, এমপিওভুক্তি, পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্ট, বকেয়া আদায়, ভুয়া সনদে কম্পিউটার শিক্ষক নিয়োগ, এমনকি আর্থিক লেনদেন ছাড়া ফাইল আটকে রাখার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে বদলি-বাণিজ্য সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে অর্থবিত্তের মালিক বনে যাওয়া মো. আব্দুল কুদ্দুস গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ। তারমধ্যে রয়েছে-তেঁতুলিয়া রিভার ইকোপার্ক, নিজ নামে কলেজ, মাদ্রাসাসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান, যা তার অবৈধ অর্থ উপার্জনের দিকে ইঙ্গিত করে। স্থানীয় এলাকাবাসি বলছেন,আলাউদ্দিনের চেরাগ পেলেই রাতারাটি কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া যায়। আমাদের গ্রামের শিক্ষা উপসচিব মো. আব্দুল কুদ্দুস আলাউদ্দিনের চেরাগ পেয়েছেন। তাই তেঁতুলিয়া ইকোপার্ক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। সূত্র: ঢাকার সময়।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ