নিজম্ব প্রতিবেদক : মারা যাওয়ার আগে তাঁর গুলশানের বাড়িটি নিয়ে নানা আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন অভিনয়শিল্পী ও সাবেক সাংসদ কবরী। কবরীর মৃত্যুর পরপরই তাঁর ছোট ছেলে শাকের ওসমান চিশতী শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, বাড়িটি দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এর মধ্যে গত ২৭ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে কে বা কারা কবরীর সেই বাড়িতে ঢুকে পড়েন। বহিরাগত লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে ফোন করে পুলিশ ডাকেন শাকের ওসমান। পুলিশের পরামর্শে গত মঙ্গলবার গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন কবরীর ছেলে।
গুলশান থানায় করা সাধারণ ডায়েরিতে শাকের ওসমান চিশতী অভিযোগ করেন, ‘গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে আমার বাসার সিঁড়িতে কিছু মানুষের আনাগোনার আওয়াজ পাই। সিসি ক্যামেরায় দেখি, গ্রাউন্ড ফ্লোরের সব বাতি নেভানো। সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ পেয়ে ইন্টারকমে ফোন করি। কর্তব্যরত সিকিউরিটি গার্ড ফোন না ধরায় আমার সন্দেহ বাড়তে থাকে। ২০ মিনিট পর রাত ২টা ৫০ মিনিটে ক্যামেরায় দেখি তিন ব্যক্তি মুঠোফোনের আলো জ্বালিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছেন, পরে একটি মোটরসাইকেলে করে তাঁরা চলে যান। আমি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে দায়িত্বরত পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করি। আনুমানিক রাত সোয়া তিনটায় পুলিশ আসে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাসার সিকিউরিটি গার্ড সব লাইট জ্বালিয়ে দেন। গার্ড জানান, বাসার কেয়ারটেকার সহিদুল ইসলামের কথায় তিনি লাইট নিভিয়েছিলেন।’
গতকাল শনিবার দুপুরে একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে মামলার তদন্তকারী গুলশান থানার আজিজুল হক বলেন, ‘গত মঙ্গলবার কবরী ম্যাডামের ছেলের অভিযোগ পেয়ে আমরা তাঁদের গুলশান লেক রোডের বাড়িতে যাই। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাই। সহিদুল ও সিকিউরিটি গার্ড যে লাইট নিভিয়েছিলেন, তার প্রমাণও তাৎক্ষণিকভাবে পেয়েছি। আমরা আরও তদন্ত করছি।’
শাকের চিশতী বলেন, ‘মা বেঁচে থাকা অবস্থায় এই বাড়ি নিয়ে একটি চক্র নানা ষড়যন্ত্র করেছিল। মাকে তখন লাঞ্ছিত করা হয়, হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। ওরা ভেবেছে, মা যেহেতু এখন আর নেই, সহজে বাড়ি দখল করতে পারবে! দেশে তো আইন-আদালত সব আছে। আমরাও তা বিশ্বাস করি।’
অভিনয়শিল্পী ও সাংসদ সারাহ বেগম কবরী বেঁচে থাকতেই এই বাড়ি নিয়ে নানা জটিলতার কথা বলেছিলেন। গুলশান ২ নম্বরে তাঁর বাড়ির নিচতলায় তাঁকে লাঞ্ছিত করার কথাও বলেছিলেন। এ ঘটনায় ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল তিনি গুলশান থানায় জিডি করেছিলেন।
জিডিতে কবরী তখন লিখেছিলেন, ‘আমি কবরী গুলশান ২ নম্বরের একটি পাঁচতলা ভবনে থাকি। ১০ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে ওই ভবনের দুটি ফ্ল্যাটের মালিকের কর্মচারীর সাহায্যে পাঁচ-ছয়জন বহিরাগত জোর করে ভেতরে ঢোকেন। ছেলেকে নিয়ে আমি বাড়ির নিচে নেমে বহিরাগতদের কাছে জোর করে ঢোকার কারণ জানতে চাই। তখন তাঁরা বাড়ি রং করার কথা বলেন।’ জিডিতে কবরী এ–ও উল্লেখ করেন, ‘আমার এই বাড়িটি নিয়ে আদালতে মামলা আছে এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই বাড়িতে রং করা যাবে না। একপর্যায়ে বহিরাগতরা আমার ওপর চড়াও হন, আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন এবং মেরে ফেলার হুমকি দেন। এরপর অফিসের কর্মচারীদের খবর দিয়ে দ্রুত পাঁচতলায় ফ্ল্যাটে আশ্রয় নিই।’
তখন যোগাযোগ করা হলে কবরী জানিয়েছিলেন, বাড়ির জমিটি তাঁর। তিনি একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে পাঁচতলা বাড়িটি নির্মাণ করিয়েছেন। দুটি ফ্ল্যাটের মালিকেরা সার্ভিস চার্জ দিচ্ছেন না। তাঁরা বাড়িটি দখলের পাঁয়তারা করছিলেন। এ ঘটনায় কবরী মামলা করার পর নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে কোনো কিছু করা যাবে না বলে আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। কিন্তু দুই ফ্ল্যাটের মালিক তা মানছিলেন না।
গভীর রাতে কবরীর বাড়িতে ওরা কারা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ






















