ঢাকা ০২:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

খনিজের ভান্ডার কামরাঙা

  • আপডেট সময় : ০৫:২৬:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
  • ৬ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: শরৎ চলে গেল। কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে শীতের হাতছানি। এসময় বাজারে পাওয়া যায় তারার মতো দেখতে তিরতিরে এক টক ফল কামরাঙা। তবে পাকলে এর টক স্বাদ অনেকটাই কমে আসে। আড়াআড়ি কাটলে একদম নিখুঁত এক তারার মতো দেখায় বলে ইংরেজিতে ফলটির নামই স্টারফ্রুট। কামরাঙা দেখতে যেমন সুন্দর, স্বাদ আর পুষ্টিগুণেও তেমনই অসাধারণ। তবে এটিকে আলাদা করে তোলে এর অনন্য খনিজ ও অ্যাসিড প্রোফাইল – বিশেষ করে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও অক্সালিক অ্যাসিড। এই উপাদানগুলো শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হজম ও বিপাকক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১. রক্তচাপ ও হার্টের যত্নে কার্যকর: অনেক ফলেই ভিটামিন সি থাকে, কিন্তু কামরাঙার বিশেষত্ব হলো এতে উচ্চমাত্রার পটাসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম-দুটি উপাদানই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিকাল নিউট্রিশন-এর গবেষণায় দেখা গেছে, কামরাঙার মতো পটাসিয়ামসমৃদ্ধ ফল নিয়মিত খেলে রক্তনালির সংকোচন কমে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

২. হজমে প্রাকৃতিক সহায়তা: আমড়ার মতো কামরাঙাও হজমে সাহায্য করে, তবে কারণ ভিন্ন। এতে থাকা প্রাকৃতিক অর্গানিক অ্যাসিড পাকরস নিঃসরণ বাড়ায়, ফলে খাবার দ্রুত হজম হয়। জার্নাল অব গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল হেলথ-এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কামরাঙায় থাকা টক যৌগগুলো পাকস্থলীর এনজাইম সক্রিয় করে, যা খাবার ভাঙার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে এবং গ্যাসঅম্বল কমায়।

৩. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নয়, খনিজে সমৃদ্ধ ফল: অন্য টক ফলের তুলনায় কামরাঙায় ভিটামিন সি তুলনামূলকভাবে কম, কিন্তু এতে খনিজ উপাদান বেশি। পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস ও সামান্য আয়রন শরীরের কোষের কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই কারণেই এটি শারীরিক ভারসাম্য রক্ষায় এবং ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক।

৪. ওজন ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা: কামরাঙার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর অত্যন্ত কম ক্যালরি ও চিনি। জার্নাল অব নিউট্রিশনাল বায়োকেমিস্ট্রি-এর গবেষণা অনুযায়ী, এতে থাকা পলিফেনল ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় ও শর্করার শোষণ ধীর করে। তাই এটি ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ফল।

৫. কিডনি রোগীদের জন্য সতর্কতা: কামরাঙায় থাকে অক্সালিক অ্যাসিড, যা কিডনির কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলতে পারে। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল কিডনি রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর তথ্যমতে, কিডনি রোগীরা বেশি পরিমাণ কামরাঙা খেলে বিষাক্ত যৌগ জমে যেতে পারে, যা ক্ষতিকর। তাই যাদের কিডনি দুর্বল, তাদের এই ফল খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

মেহেদী/সানা/আপ্র/১৫/১০/২০২৫

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

খনিজের ভান্ডার কামরাঙা

আপডেট সময় : ০৫:২৬:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: শরৎ চলে গেল। কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে শীতের হাতছানি। এসময় বাজারে পাওয়া যায় তারার মতো দেখতে তিরতিরে এক টক ফল কামরাঙা। তবে পাকলে এর টক স্বাদ অনেকটাই কমে আসে। আড়াআড়ি কাটলে একদম নিখুঁত এক তারার মতো দেখায় বলে ইংরেজিতে ফলটির নামই স্টারফ্রুট। কামরাঙা দেখতে যেমন সুন্দর, স্বাদ আর পুষ্টিগুণেও তেমনই অসাধারণ। তবে এটিকে আলাদা করে তোলে এর অনন্য খনিজ ও অ্যাসিড প্রোফাইল – বিশেষ করে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও অক্সালিক অ্যাসিড। এই উপাদানগুলো শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হজম ও বিপাকক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১. রক্তচাপ ও হার্টের যত্নে কার্যকর: অনেক ফলেই ভিটামিন সি থাকে, কিন্তু কামরাঙার বিশেষত্ব হলো এতে উচ্চমাত্রার পটাসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম-দুটি উপাদানই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিকাল নিউট্রিশন-এর গবেষণায় দেখা গেছে, কামরাঙার মতো পটাসিয়ামসমৃদ্ধ ফল নিয়মিত খেলে রক্তনালির সংকোচন কমে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

২. হজমে প্রাকৃতিক সহায়তা: আমড়ার মতো কামরাঙাও হজমে সাহায্য করে, তবে কারণ ভিন্ন। এতে থাকা প্রাকৃতিক অর্গানিক অ্যাসিড পাকরস নিঃসরণ বাড়ায়, ফলে খাবার দ্রুত হজম হয়। জার্নাল অব গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল হেলথ-এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কামরাঙায় থাকা টক যৌগগুলো পাকস্থলীর এনজাইম সক্রিয় করে, যা খাবার ভাঙার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে এবং গ্যাসঅম্বল কমায়।

৩. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নয়, খনিজে সমৃদ্ধ ফল: অন্য টক ফলের তুলনায় কামরাঙায় ভিটামিন সি তুলনামূলকভাবে কম, কিন্তু এতে খনিজ উপাদান বেশি। পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস ও সামান্য আয়রন শরীরের কোষের কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই কারণেই এটি শারীরিক ভারসাম্য রক্ষায় এবং ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক।

৪. ওজন ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা: কামরাঙার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর অত্যন্ত কম ক্যালরি ও চিনি। জার্নাল অব নিউট্রিশনাল বায়োকেমিস্ট্রি-এর গবেষণা অনুযায়ী, এতে থাকা পলিফেনল ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় ও শর্করার শোষণ ধীর করে। তাই এটি ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ফল।

৫. কিডনি রোগীদের জন্য সতর্কতা: কামরাঙায় থাকে অক্সালিক অ্যাসিড, যা কিডনির কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলতে পারে। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল কিডনি রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর তথ্যমতে, কিডনি রোগীরা বেশি পরিমাণ কামরাঙা খেলে বিষাক্ত যৌগ জমে যেতে পারে, যা ক্ষতিকর। তাই যাদের কিডনি দুর্বল, তাদের এই ফল খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

মেহেদী/সানা/আপ্র/১৫/১০/২০২৫