ঢাকা ০২:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
আইএমএফের পূর্বাভাস

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪.৯%

  • আপডেট সময় : ০১:০১:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
  • ২২ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

প্রত্যাশা ডেস্ক: ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৃদু পুনরুদ্ধারের পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি বলেছে, চলতি ধীরগতির অর্থনীতি আগামী অর্থবছরে কিছুটা গতি পেতে পারে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যা আগের অর্থবছরের ৩ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভা উপলক্ষে প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ বা ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক পূর্বাভাস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আইএমএফের নতুন পূর্বাভাস অনুসারে, এ বছর বৈশ্বিক গড় জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ২ শতাংশ।

আইএমএফের সর্বশেষ মূল্যায়নে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৮ শতাংশে নামবে এবং পরবর্তী অর্থবছরে তা আরও কমে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।

তবে সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়েছে যে, শক্তিশালী সংস্কার বাস্তবায়নের ঘাটতি, ব্যাংকিং খাতে চাপ, জ্বালানি সরবরাহ সংকট এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য অনিশ্চয়তা বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, কড়া মুদ্রানীতি, এবং বাণিজ্যে নতুন প্রতিবন্ধকতা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনাকে দুর্বল করেছে। একই সঙ্গে, ব্যাংকিং খাতে বর্ধিত চাপ এবং সংস্কার বাস্তবায়নে ধীরগতি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকিতে ফেলছে।

আইএমএফ আরো উল্লেখ করেছে, বৈশ্বিক নীতি অনিশ্চয়তা ও বাণিজ্য বিঘ্ন, বিশেষ করে জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি এবং মূল্যস্ফীতির প্রত্যাশিত হারে না কমা, সামনের বছরগুলোতে অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি হিসেবে রয়ে যাবে।

সংস্থাটি বাংলাদেশের জন্য কয়েকটি মূল সুপারিশ করেছে—
প্রথমত, সংস্কার কর্মসূচির অগ্রগতি নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা যায় এবং উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়।

দ্বিতীয়ত, রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও শৃঙ্খলা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে আইএমএফ, বিশেষ করে বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক ঋণ সীমিত রাখার ওপর জোর দিয়ে।

তৃতীয়ত, জলবায়ু সহনশীলতা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার দিকেও মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রবৃদ্ধি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও দীর্ঘমেয়াদি হয়।

সর্বশেষ বিশ্ব অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ২০২৫ সালের এপ্রিল সংস্করণের তুলনায় কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। তবে এটি এখনো নীতিগত পরিবর্তনের আগের পূর্বাভাসের তুলনায় কম।

বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি ২০২৪ সালে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমে ২০২৫ সালে ৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ৩ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। উন্নত অর্থনীতিগুলোর প্রবৃদ্ধি গড়ে ১ দশমিক ৫ শতাংশ হবে এবং উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোতে এই হার ৪ শতাংশের কিছু উপরে থাকবে।

বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি কমতে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, তবে এটি দেশভেদে ভিন্ন হবে। যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি থাকবে এবং সেখানে ঊর্ধ্বমুখী ঝুঁকি রয়েছে। অন্যদিকে, অন্যান্য দেশে এটি অপেক্ষাকৃত দমনযোগ্য থাকবে।

বর্তমানে ঝুঁকিগুলো নিচের দিকেই ঝুঁকে আছে। দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা, বাণিজ্য সুরক্ষাবাদ এবং শ্রমবাজারে বিঘ্নতা প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করতে পারে। একই সঙ্গে, রাজস্ব খাতের দুর্বলতা, আর্থিক বাজারে ধসের সম্ভাবনা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতার অবনতি বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা যেন বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এজন্য প্রয়োজন যথাযথ, স্বচ্ছ ও টেকসই নীতিমালা গ্রহণ।

বাণিজ্য নিয়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। বাজেট ঘাটতি কাটিয়ে তুলতে রাজস্ব সঞ্চয় শক্তিশালী করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা রক্ষা করা উচিত। গঠনমূলক সংস্কারে আরো জোর দিতে হবে।

প্রতিবেদনের দ্বিতীয় অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে, নীতিগত কাঠামো উন্নয়নের পূর্বের প্রচেষ্টা বিভিন্ন দেশকে ইতিবাচক ফল দিয়েছে। তৃতীয় অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে, শিল্পনীতি প্রয়োগ করা যেতে পারে, তবে এর সুযোগ-খরচ ও আপসের দিকগুলো বিবেচনায় নেওয়া আবশ্যক।

এসি/আপ্র/১৫/১০/২০২৫

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

আইএমএফের পূর্বাভাস

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪.৯%

আপডেট সময় : ০১:০১:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৃদু পুনরুদ্ধারের পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি বলেছে, চলতি ধীরগতির অর্থনীতি আগামী অর্থবছরে কিছুটা গতি পেতে পারে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যা আগের অর্থবছরের ৩ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভা উপলক্ষে প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ বা ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক পূর্বাভাস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আইএমএফের নতুন পূর্বাভাস অনুসারে, এ বছর বৈশ্বিক গড় জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ২ শতাংশ।

আইএমএফের সর্বশেষ মূল্যায়নে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৮ শতাংশে নামবে এবং পরবর্তী অর্থবছরে তা আরও কমে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।

তবে সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়েছে যে, শক্তিশালী সংস্কার বাস্তবায়নের ঘাটতি, ব্যাংকিং খাতে চাপ, জ্বালানি সরবরাহ সংকট এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য অনিশ্চয়তা বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, কড়া মুদ্রানীতি, এবং বাণিজ্যে নতুন প্রতিবন্ধকতা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনাকে দুর্বল করেছে। একই সঙ্গে, ব্যাংকিং খাতে বর্ধিত চাপ এবং সংস্কার বাস্তবায়নে ধীরগতি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকিতে ফেলছে।

আইএমএফ আরো উল্লেখ করেছে, বৈশ্বিক নীতি অনিশ্চয়তা ও বাণিজ্য বিঘ্ন, বিশেষ করে জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি এবং মূল্যস্ফীতির প্রত্যাশিত হারে না কমা, সামনের বছরগুলোতে অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি হিসেবে রয়ে যাবে।

সংস্থাটি বাংলাদেশের জন্য কয়েকটি মূল সুপারিশ করেছে—
প্রথমত, সংস্কার কর্মসূচির অগ্রগতি নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা যায় এবং উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়।

দ্বিতীয়ত, রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও শৃঙ্খলা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে আইএমএফ, বিশেষ করে বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক ঋণ সীমিত রাখার ওপর জোর দিয়ে।

তৃতীয়ত, জলবায়ু সহনশীলতা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার দিকেও মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রবৃদ্ধি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও দীর্ঘমেয়াদি হয়।

সর্বশেষ বিশ্ব অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ২০২৫ সালের এপ্রিল সংস্করণের তুলনায় কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। তবে এটি এখনো নীতিগত পরিবর্তনের আগের পূর্বাভাসের তুলনায় কম।

বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি ২০২৪ সালে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমে ২০২৫ সালে ৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ৩ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। উন্নত অর্থনীতিগুলোর প্রবৃদ্ধি গড়ে ১ দশমিক ৫ শতাংশ হবে এবং উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোতে এই হার ৪ শতাংশের কিছু উপরে থাকবে।

বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি কমতে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, তবে এটি দেশভেদে ভিন্ন হবে। যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি থাকবে এবং সেখানে ঊর্ধ্বমুখী ঝুঁকি রয়েছে। অন্যদিকে, অন্যান্য দেশে এটি অপেক্ষাকৃত দমনযোগ্য থাকবে।

বর্তমানে ঝুঁকিগুলো নিচের দিকেই ঝুঁকে আছে। দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা, বাণিজ্য সুরক্ষাবাদ এবং শ্রমবাজারে বিঘ্নতা প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করতে পারে। একই সঙ্গে, রাজস্ব খাতের দুর্বলতা, আর্থিক বাজারে ধসের সম্ভাবনা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতার অবনতি বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা যেন বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এজন্য প্রয়োজন যথাযথ, স্বচ্ছ ও টেকসই নীতিমালা গ্রহণ।

বাণিজ্য নিয়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। বাজেট ঘাটতি কাটিয়ে তুলতে রাজস্ব সঞ্চয় শক্তিশালী করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা রক্ষা করা উচিত। গঠনমূলক সংস্কারে আরো জোর দিতে হবে।

প্রতিবেদনের দ্বিতীয় অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে, নীতিগত কাঠামো উন্নয়নের পূর্বের প্রচেষ্টা বিভিন্ন দেশকে ইতিবাচক ফল দিয়েছে। তৃতীয় অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে, শিল্পনীতি প্রয়োগ করা যেতে পারে, তবে এর সুযোগ-খরচ ও আপসের দিকগুলো বিবেচনায় নেওয়া আবশ্যক।

এসি/আপ্র/১৫/১০/২০২৫