ঢাকা ১২:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

বাজারে লোহার চেয়ে ১০ গুণ বেশি শক্ত কাঠ ‘সুপারউড’

  • আপডেট সময় : ০৯:২৮:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
  • ৬ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক: বাজারে এলো লোহার চেয়ে ১০ গুণ বেশি শক্ত কাঠ ‘সুপারউড’। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী এই নতুন ধরনের কাঠ তৈরি করেছেন, যা ওজনের অনুপাতে লোহার চেয়ে ১০ গুণ বেশি শক্ত এবং ছয়গুণ পর্যন্ত হালকা। উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান ‘ইনভেন্টউড’ এরই মধ্যে সুপারউডকে বাণিজ্যিকভাবে বাজারে ছেড়েছে।

চমকপ্রদ এই উদ্ভাবনের পেছনে রয়েছেন উপাদানবিজ্ঞানী লিয়াংবিং হু। তিনি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কাঠকে প্রকৌশলগতভাবে রূপান্তরের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর মেটেরিয়ালস ইনোভেশন’-এ কাজ করার সময় তিনি কাঠ থেকে এর প্রধান উপাদান লিগনিন অপসারণ করে একসময় সেটিকে স্বচ্ছও করেছিলেন। বর্তমানে তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তবে হুর আসল লক্ষ্য ছিল কাঠকে আরো শক্তিশালী করা। তিনি কাঠের মূল উপাদান সেলুলোজ ব্যবহার করে কাঠের গঠন পুনর্র্নিমাণের দিকে মনোনিবেশ করেন।

২০১৭ সালে তার গবেষণায় বড় ধরনের অগ্রগতি আসে। কাঠকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সেদ্ধ ও চাপ দিয়ে ঘন করে তোলা হয়, যাতে কোষীয় স্তরে কাঠের গঠন সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে এর ঘনত্ব ও শক্তি বেড়ে যায় বহুগুণ। এই গবেষণা প্রকাশিত হয় ন্যাচার সাময়িকীতে। এতে দেখা যায়, কাঠটির শক্তি-ওজন অনুপাত বেশিরভাগ ধাতু ও সংকর ধাতুর চেয়েও বেশি।

বছরের পর বছর প্রক্রিয়াটি নিখুঁত করার পর এবং ১৪০টিরও বেশি পেটেন্ট নেওয়ার পর অবশেষে ‘সুপারউড’ এখন বাণিজ্যিক উৎপাদনে এসেছে।

ইনভেন্টউডের প্রধান নির্বাহী অ্যালেক্স লাও বলেন, রাসায়নিক ও বাস্তব দিক থেকে এটি এখনো কাঠই, তবে এটি আরো শক্তিশালী, টেকসই এবং কাঠের সব ভালো গুণগুলোর উন্নত সংস্করণ। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই কাঠ দিয়ে তৈরি ভবনগুলো আজকের চেয়ে চারগুণ পর্যন্ত হালকা হতে পারে, যা ভূমিকম্প প্রতিরোধে সহায়ক হবে এবং নির্মাণ খরচও কমাবে। প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি বাইরের নির্মাণকাজে-যেমন বারান্দা, দেয়ালের আবরণ ইত্যাদিতে এই কাঠ ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে। এরপর আগামী বছর থেকে ঘরের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার যেমন মেঝে, দেওয়াল প্যানেল ও আসবাব তৈরিতে এটি ব্যবহার করার লক্ষ্য রয়েছে।

সাধারণ কাঠের তুলনায় সুপারউড ২০ গুণ বেশি শক্ত ও ১০ গুণ বেশি ডেন্ট-প্রতিরোধী। কাঠের ছিদ্রযুক্ত গঠন সম্পূর্ণভাবে সংকুচিত করে এটি তৈরি হওয়ায় ছত্রাক ও পোকামাকড় এতে বাসা বাঁধতে পারে না। এমনকি অগ্নিরোধ পরীক্ষাতেও এটি সর্বোচ্চ মান অর্জন করেছে। তবে বর্তমানে এটি সাধারণ কাঠের তুলনায় ব্যয়বহুল এবং উৎপাদনে কিছুটা বেশি কার্বন নির্গমন হয়। তবুও লাও বলেন, লোহা উৎপাদনের তুলনায় এর কার্বন নিঃসরণ ৯০ শতাংশ কম। আমাদের লক্ষ্য কাঠের চেয়ে সস্তা হওয়া নয়, বরং লোহার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা। সূত্র: সিএনএন

সানা/আপ্র/১৪/১০/২০২৫

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

বাজারে লোহার চেয়ে ১০ গুণ বেশি শক্ত কাঠ ‘সুপারউড’

আপডেট সময় : ০৯:২৮:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: বাজারে এলো লোহার চেয়ে ১০ গুণ বেশি শক্ত কাঠ ‘সুপারউড’। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী এই নতুন ধরনের কাঠ তৈরি করেছেন, যা ওজনের অনুপাতে লোহার চেয়ে ১০ গুণ বেশি শক্ত এবং ছয়গুণ পর্যন্ত হালকা। উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান ‘ইনভেন্টউড’ এরই মধ্যে সুপারউডকে বাণিজ্যিকভাবে বাজারে ছেড়েছে।

চমকপ্রদ এই উদ্ভাবনের পেছনে রয়েছেন উপাদানবিজ্ঞানী লিয়াংবিং হু। তিনি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কাঠকে প্রকৌশলগতভাবে রূপান্তরের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর মেটেরিয়ালস ইনোভেশন’-এ কাজ করার সময় তিনি কাঠ থেকে এর প্রধান উপাদান লিগনিন অপসারণ করে একসময় সেটিকে স্বচ্ছও করেছিলেন। বর্তমানে তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তবে হুর আসল লক্ষ্য ছিল কাঠকে আরো শক্তিশালী করা। তিনি কাঠের মূল উপাদান সেলুলোজ ব্যবহার করে কাঠের গঠন পুনর্র্নিমাণের দিকে মনোনিবেশ করেন।

২০১৭ সালে তার গবেষণায় বড় ধরনের অগ্রগতি আসে। কাঠকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সেদ্ধ ও চাপ দিয়ে ঘন করে তোলা হয়, যাতে কোষীয় স্তরে কাঠের গঠন সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে এর ঘনত্ব ও শক্তি বেড়ে যায় বহুগুণ। এই গবেষণা প্রকাশিত হয় ন্যাচার সাময়িকীতে। এতে দেখা যায়, কাঠটির শক্তি-ওজন অনুপাত বেশিরভাগ ধাতু ও সংকর ধাতুর চেয়েও বেশি।

বছরের পর বছর প্রক্রিয়াটি নিখুঁত করার পর এবং ১৪০টিরও বেশি পেটেন্ট নেওয়ার পর অবশেষে ‘সুপারউড’ এখন বাণিজ্যিক উৎপাদনে এসেছে।

ইনভেন্টউডের প্রধান নির্বাহী অ্যালেক্স লাও বলেন, রাসায়নিক ও বাস্তব দিক থেকে এটি এখনো কাঠই, তবে এটি আরো শক্তিশালী, টেকসই এবং কাঠের সব ভালো গুণগুলোর উন্নত সংস্করণ। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই কাঠ দিয়ে তৈরি ভবনগুলো আজকের চেয়ে চারগুণ পর্যন্ত হালকা হতে পারে, যা ভূমিকম্প প্রতিরোধে সহায়ক হবে এবং নির্মাণ খরচও কমাবে। প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি বাইরের নির্মাণকাজে-যেমন বারান্দা, দেয়ালের আবরণ ইত্যাদিতে এই কাঠ ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে। এরপর আগামী বছর থেকে ঘরের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার যেমন মেঝে, দেওয়াল প্যানেল ও আসবাব তৈরিতে এটি ব্যবহার করার লক্ষ্য রয়েছে।

সাধারণ কাঠের তুলনায় সুপারউড ২০ গুণ বেশি শক্ত ও ১০ গুণ বেশি ডেন্ট-প্রতিরোধী। কাঠের ছিদ্রযুক্ত গঠন সম্পূর্ণভাবে সংকুচিত করে এটি তৈরি হওয়ায় ছত্রাক ও পোকামাকড় এতে বাসা বাঁধতে পারে না। এমনকি অগ্নিরোধ পরীক্ষাতেও এটি সর্বোচ্চ মান অর্জন করেছে। তবে বর্তমানে এটি সাধারণ কাঠের তুলনায় ব্যয়বহুল এবং উৎপাদনে কিছুটা বেশি কার্বন নির্গমন হয়। তবুও লাও বলেন, লোহা উৎপাদনের তুলনায় এর কার্বন নিঃসরণ ৯০ শতাংশ কম। আমাদের লক্ষ্য কাঠের চেয়ে সস্তা হওয়া নয়, বরং লোহার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা। সূত্র: সিএনএন

সানা/আপ্র/১৪/১০/২০২৫