নিজস্ব প্রতিবেদক: বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৪, ১৮ ও ২৪) দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিদের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব থেকে যথাসম্ভব বিরত রাখা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
রোববার (১২ অক্টোবর) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বয়ে একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মাঠপর্যায়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ওসিদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যেন আইনবহির্ভূত কোনো কাজ না করে সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হবে।
‘নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঝুঁকিপূর্ণ সব ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক বডি ওর্ন ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন অবনতি না ঘটে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হবে।’
সভা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সভায় মূলত নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করণীয় বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা হবে। সবাই একটি সুষ্ঠু ভোট চায়। এক্ষেত্রে যেকোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা গ্রুপকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করা হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। নির্বাচনে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ২৮টি ব্যাচে তিনদিন মেয়াদি প্রশিক্ষণ সারাদেশে (জেলা, মহানগর ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান) ১৩০টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে একটি ব্যাচের (৬ হাজার ৫০০ জন) প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে এবং আরেকটি (২য়) ব্যাচের (৬ হাজার ৫০০ জন) প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। নির্বাচনের জন্য পুলিশের চূড়ান্ত (৪র্থ পর্যায়ের) প্রশিক্ষণ গত ৫ অক্টোবর শুরু হয়েছে এবং আগামী ১৫ জানুয়ারি সব ব্যাচের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, এবারের জাতীয় নির্বাচনে বিজিবির ১১০০ প্লাটুনে ৩৩ হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবে। এরই মধ্যে ৬০ শতাংশ নির্বাচনী প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর প্রশিক্ষণ সমাপ্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এছাড়া নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ৮০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হবে।
তিনি বলেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সীমানা পুনর্নির্ধারণকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন অবনতি না ঘটে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কমে এসেছে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল আগের তুলনায় অনেকটাই কমে এসেছে বলে জানান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। পার্বত্য অঞ্চলের উত্তেজনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি এখন শান্ত ও ভালো রয়েছে। সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সারাদেশের বিভিন্ন থানা থেকে যেসব অস্ত্র লুট হয়েছে তার কী পরিমাণ উদ্ধার হয়েছে। এক্ষেত্রে যে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল তা কতজন পেয়েছে। নির্বাচনের সময় এসব অস্ত্র ব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাংবাদিকরা এসব বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি আইজি সাহেবের সঙ্গে কথা বলে হয়তো আপনাদের পরে জানাতে পারবো। পরের মিটিংয়ে হয়তো জানাতে পারবো। এসব অস্ত্র ব্যবহার করে নির্বাচনের সময় যেন কোনো অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সব অস্ত্র তো সবসময় উদ্ধার হয় না। কিছু তো বাইরে থাকবেই, এজন্য তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যদি সবকিছু উদ্ধার হতো, সবকিছু নরমাল হতো, তাহলে তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাগতো না, নরমাল ইলেকশন হয়ে যেতো।
গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে সেনাবাহিনীর যে অফিসারদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে তাদের সেনাবাহিনী নিজ হেফাজতে রাখতে চায়। ট্রাইব্যুনাল আদেশ দিয়েছে- সেখানে তারা নিয়ে যাবে নিয়ে আসবে। এখন প্রসিকিউটর বলেছেন যে, একটি সাবজেল যদি করে বা কোর্ট যে আদেশ দেবে সেটা হবে। এ নিয়ে আপনাদের পৃথক কোনো নির্দেশনা আছে কি না—জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এটির ক্ষেত্রে আইনি যে প্রক্রিয়া, আমরা সেটিই গ্রহণ করবো।
এসি/আপ্র/১২/১০/২০২৫