প্রত্যাশা ডেস্ক: তাইওয়ান শত্রু হামলা ঠেকাতে বিপুল অর্থ ব্যয়ে একটি নতুন বহুস্তরীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে যাচ্ছে। ‘টি-ডোম’ নামের ওই ব্যবস্থার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে দেশটির প্রেসিডেন্ট লাই ছিং তে বলপ্রয়োগের নীতি ত্যাগ করার জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানান। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
তাইওয়ানের জাতীয় দিবসের ভাষণে শুক্রবার (১০ অক্টোবর) প্রেসিডেন্ট লাই বলেন, তার সরকার প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং বছরের শেষ নাগাদ একটি বিশেষ সামরিক বাজেট পেশ করা হবে, যা সরকারের প্রতিরক্ষা অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করবে।
তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির উদ্দেশ্য স্পষ্ট—এটি শত্রুর হুমকি মোকাবিলার জন্য অপরিহার্য এবং আমাদের প্রতিরক্ষা শিল্প বিকাশের চালিকাশক্তি। আমরা ‘টি-ডোম’ নির্মাণ দ্রুত এগিয়ে নেব—বহুস্তরীয় প্রতিরক্ষা, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন শনাক্তকরণ ও কার্যকর বাধা ব্যবস্থাসহ একটি সুসংগঠিত আকাশ প্রতিরক্ষা কাঠামো তৈরি করব, যা নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের সুরক্ষায় এক নিরাপত্তা জাল হিসেবে কাজ করবে।
গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত তাইওয়ান দীর্ঘদিন ধরে চীনের দিক থেকে ক্রমবর্ধমান সামরিক ও রাজনৈতিক চাপ সামলে আসছে। তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে বেইজিং। যদিও তাইপের সরকার দৃঢ়ভাবে তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
চীনের বিশাল সামরিক সক্ষমতার বিপরীতে তাইওয়ান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি এবং আধুনিকীকরণ কর্মসূচি জোরদার করছে। চীন ইতোমধ্যে স্টেলথ যুদ্ধবিমান, রণতরি এবং বিপুল পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্রসহ উন্নত অস্ত্রভাণ্ডার বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিয়েছে।
‘টি-ডোম’ সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে রয়টার্সের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’-এর আদলে তৈরি হতে পারে।
তাইওয়ানের বিদ্যমান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রনির্মিত প্যাট্রিয়ট ও দেশীয়ভাবে তৈরি ‘স্কাই বো’ ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল। গত মাসে তাইপেতে অনুষ্ঠিত একটি প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে দেশটি নতুন ‘চিয়াং-কং’ ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করে, যা মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম এবং প্যাট্রিয়টের চেয়েও উচ্চতর আকাশসীমায় পৌঁছাতে পারে।
চীন এখনও লাইয়ের বক্তব্যের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। বেইজিং তাকে বরাবরই ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ আখ্যায়িত করে আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
ওই ভাষণে প্রেসিডেন্ট লাই আরও বলেন, চীন যেন বলপ্রয়োগ বা জবরদস্তির মাধ্যমে তাইওয়ান প্রণালির বর্তমান অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা না করে। তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে তাকালে দেখা যায়, যুদ্ধ ও আগ্রাসনের যন্ত্রণায় লাখো মানুষ ভুগেছে। আমাদের সেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে, যেন সেই ট্র্যাজেডি আর কখনও না ফিরে আসে।
তাইওয়ানের জাতীয় দিবস উদযাপিত হয় ১৯১১ সালের সেই বিপ্লবের স্মরণে, যা চীনের শেষ সাম্রাজ্যবাদী রাজবংশের পতন ঘটিয়ে প্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠা করেছিল। ১৯৪৯ সালে মাও সেতুংয়ের কমিউনিস্ট বাহিনীর কাছে গৃহযুদ্ধে পরাজিত হয়ে প্রজাতন্ত্রী সরকারের নেতারা তাইওয়ানে চলে আসেন। তখন থেকেই ‘রিপাবলিক অব চায়না’ নামটি তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রীয় পরিচয় হিসেবে বহাল রয়েছে।
সানা/আপ্র/১০/১০/২০২৫