ঢাকা ০৪:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

অ্যানথ্রাক্স কীভাবে ছড়ায়, প্রতিরোধে করণীয়

  • আপডেট সময় : ০৭:৩৯:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫
  • ৩৫ বার পড়া হয়েছে

প্রতীকী ছবি

লাইফস্টাইল ডেস্ক: দেশের উত্তরাঞ্চলে নতুন আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে অ্যানথ্রাক্স। মূলত গবাদি পশুর দেহে হওয়া রোগ এটি। কিন্তু বর্তমানে মানবদেহে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে রোগটি। নতুন করে আটজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে। ঐ এলাকার কিছু ফ্রিজে রাখা মাংসেও মিলেছে রোগটির জীবাণু। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাই রোগটি সম্পর্কে জানা এবং সচেতন হওয়া জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অ্যানথ্রাক্স বাংলায় তড়কা রোগ নামে পরিচিত। এটি তীব্র ও গুরুতর সংক্রামক রোগ। ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস ব্যাকটেরিয়ার কারণে এ রোগ শরীরে বাসা বাঁধে।

অ্যানথ্রাক্স কীভাবে মানবদেহে ছড়ায়?

ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস ব্যাকটেরিয়া তিনভাবে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়। যেমন-

১। ত্বকের মাধ্যমে: পশুজাত পণ্য (পশম, হাড়) থেকে ত্বকের কাটা বা আঁচড়ের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।

২। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে: ব্যাকটেরিয়ার রেণু শ্বাস নেয়ার মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে।

৩। খাবারের মাধ্যমে: অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর মাংস খাওয়ার কারণে সংক্রমণ হতে পারে।

অর্থাৎ, অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু মূলত ছড়ায় আক্রান্ত প্রাণীর মাধ্যমে। এই জীবাণু মাটিতেও থাকতে পারে। কেউ যদি অসুস্থ প্রাণীর মাংস খান কিংবা শ্বাসের মাধ্যমে যদি অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু তার শরীরে ঢুকে যায়, তাহলে তিনি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

অন্যান্য বায়ুবাহিত রোগের মতো মানুষের হাঁচি-কাশির মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্স ছড়ায় না। ত্বকে কোনো ক্ষত থাকলে সেই ক্ষত দিয়েও অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ

কারও দেহে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু কীভাবে প্রবেশ করছে, তার ওপর এর উপসর্গ নির্ভর করে।

মাংস খাওয়ার মাধ্যমে কেউ আক্রান্ত হলে দেখা দেয় বমিভাব, বমি, রক্তবমি, পেটব্যথা, মাথাব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, জ্বর, গলাব্যথা বা ঘাড় ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা। কিছুদিন পর অতিরিক্ত মাত্রায় রক্তমিশ্রিত পাতলা পায়খানা হতে পারে।

শ্বাসের মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হলে দেখা দিতে পারে গলাব্যথা, জ্বর, ক্লান্তি, পেশি ব্যথার মতো সাদামাটা উপসর্গ। তারপর দেখা দিতে পারে বুকে অস্বস্তি ও শ্বাসকষ্ট। বমিভাব থাকতে পারে। কফের সঙ্গে রক্ত আসতে পারে। ঢোঁক গিলতে গেলে গলা ব্যথা হতে পারে। জ্বরের তীব্রতাও বাড়তে পারে। মস্তিষ্কের পর্দায় হতে পারে প্রদাহ। কমে যেতে পারে রক্তচাপ।

ত্বকের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ালে ত্বকে পোকার কামড়ের মতো ফোলা ধরনের ক্ষত সৃষ্টি হয়। চুলকানিও থাকে। দ্রুতই তা ব্যথাহীন হয়ে পড়ে, ক্ষতস্থানের মাঝখানটা কালো হয়ে যায়। ক্ষতের আশপাশেও ফুলে যেতে পারে। জ্বরও থাকে।

অ্যানথ্রাক্সের চিকিৎসা কী?

সাধারণত মানুষ থেকে মানুষে অ্যানথ্রাক্স ছড়ায় না। কিন্তু মানুষের শরীর ও পোশাক এই রোগের জীবাণু বহন করতে পারে। শরীর থেকে জীবাণু দূর করার জন্য ব্যাকটেরিয়া নিরোধক সাবান দিয়ে গোসল করুন। গোসলের পানি ব্লিচ বা কোনো ব্যাকটেরিয়া নিরোধক দ্বারা শোধিত করে নিন।

জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত জিনিসপত্র ৩০ মিনিটের অধিক সময় ধরে গরম পানিতে ফুটাতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির কাপড় পুড়িয়ে ফেলা জীবাণু ধ্বংসের একটি কার্যকর পদ্ধতি।

অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ এবং টিকার মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্স রোগের চিকিৎসা দেবেন।

অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধের উপায়

খুব ভালোভাবে সেদ্ধ করে রান্না করা হয়নি এমন কোনো মাংসের পদ খাবেন না।

ত্বকে কোনো কাটাছেঁড়া থাকলে কাঁচা মাংস খালি হাতে নাড়াচাড়া করবেন না। গ্লাভস পরে নিন।

গবাদিপশু পালনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকলে পশুকে নিয়মমাফিক অ্যানথ্রাক্সের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। যিনি অসুস্থ পশুর দেখাশোনা করেন, তার সুরক্ষাসামগ্রী, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং যত্নের ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।

অসুস্থ গবাদিপশুর মাংস খাওয়া, কাটাকুটি করা বা নাড়াচাড়া করা থেকে বিরত থাকুন।

অ্যানথ্রাক্স নিয়ন্ত্রণে সচেতন হওয়া জরুরি। এটি ভয়ংকর সংক্রমণ হলেও সঠিক প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পশুকে নিয়মিত টিকা দেওয়া, মৃত পশু সঠিকভাবে মাটি চাপা দেওয়া এবং অসুস্থ পশুর মাংস না খাওয়াই হলো প্রধান প্রতিরোধ ব্যবস্থা। পাশাপাশি বাড়াতে হবে জনসচেতনতা। আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।

ওআ/আপ্র/১০/০৬/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

অ্যানথ্রাক্স কীভাবে ছড়ায়, প্রতিরোধে করণীয়

আপডেট সময় : ০৭:৩৯:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫

লাইফস্টাইল ডেস্ক: দেশের উত্তরাঞ্চলে নতুন আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে অ্যানথ্রাক্স। মূলত গবাদি পশুর দেহে হওয়া রোগ এটি। কিন্তু বর্তমানে মানবদেহে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে রোগটি। নতুন করে আটজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে। ঐ এলাকার কিছু ফ্রিজে রাখা মাংসেও মিলেছে রোগটির জীবাণু। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাই রোগটি সম্পর্কে জানা এবং সচেতন হওয়া জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অ্যানথ্রাক্স বাংলায় তড়কা রোগ নামে পরিচিত। এটি তীব্র ও গুরুতর সংক্রামক রোগ। ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস ব্যাকটেরিয়ার কারণে এ রোগ শরীরে বাসা বাঁধে।

অ্যানথ্রাক্স কীভাবে মানবদেহে ছড়ায়?

ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস ব্যাকটেরিয়া তিনভাবে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়। যেমন-

১। ত্বকের মাধ্যমে: পশুজাত পণ্য (পশম, হাড়) থেকে ত্বকের কাটা বা আঁচড়ের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।

২। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে: ব্যাকটেরিয়ার রেণু শ্বাস নেয়ার মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে।

৩। খাবারের মাধ্যমে: অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর মাংস খাওয়ার কারণে সংক্রমণ হতে পারে।

অর্থাৎ, অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু মূলত ছড়ায় আক্রান্ত প্রাণীর মাধ্যমে। এই জীবাণু মাটিতেও থাকতে পারে। কেউ যদি অসুস্থ প্রাণীর মাংস খান কিংবা শ্বাসের মাধ্যমে যদি অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু তার শরীরে ঢুকে যায়, তাহলে তিনি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

অন্যান্য বায়ুবাহিত রোগের মতো মানুষের হাঁচি-কাশির মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্স ছড়ায় না। ত্বকে কোনো ক্ষত থাকলে সেই ক্ষত দিয়েও অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ

কারও দেহে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু কীভাবে প্রবেশ করছে, তার ওপর এর উপসর্গ নির্ভর করে।

মাংস খাওয়ার মাধ্যমে কেউ আক্রান্ত হলে দেখা দেয় বমিভাব, বমি, রক্তবমি, পেটব্যথা, মাথাব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, জ্বর, গলাব্যথা বা ঘাড় ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা। কিছুদিন পর অতিরিক্ত মাত্রায় রক্তমিশ্রিত পাতলা পায়খানা হতে পারে।

শ্বাসের মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হলে দেখা দিতে পারে গলাব্যথা, জ্বর, ক্লান্তি, পেশি ব্যথার মতো সাদামাটা উপসর্গ। তারপর দেখা দিতে পারে বুকে অস্বস্তি ও শ্বাসকষ্ট। বমিভাব থাকতে পারে। কফের সঙ্গে রক্ত আসতে পারে। ঢোঁক গিলতে গেলে গলা ব্যথা হতে পারে। জ্বরের তীব্রতাও বাড়তে পারে। মস্তিষ্কের পর্দায় হতে পারে প্রদাহ। কমে যেতে পারে রক্তচাপ।

ত্বকের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ালে ত্বকে পোকার কামড়ের মতো ফোলা ধরনের ক্ষত সৃষ্টি হয়। চুলকানিও থাকে। দ্রুতই তা ব্যথাহীন হয়ে পড়ে, ক্ষতস্থানের মাঝখানটা কালো হয়ে যায়। ক্ষতের আশপাশেও ফুলে যেতে পারে। জ্বরও থাকে।

অ্যানথ্রাক্সের চিকিৎসা কী?

সাধারণত মানুষ থেকে মানুষে অ্যানথ্রাক্স ছড়ায় না। কিন্তু মানুষের শরীর ও পোশাক এই রোগের জীবাণু বহন করতে পারে। শরীর থেকে জীবাণু দূর করার জন্য ব্যাকটেরিয়া নিরোধক সাবান দিয়ে গোসল করুন। গোসলের পানি ব্লিচ বা কোনো ব্যাকটেরিয়া নিরোধক দ্বারা শোধিত করে নিন।

জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত জিনিসপত্র ৩০ মিনিটের অধিক সময় ধরে গরম পানিতে ফুটাতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির কাপড় পুড়িয়ে ফেলা জীবাণু ধ্বংসের একটি কার্যকর পদ্ধতি।

অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ এবং টিকার মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্স রোগের চিকিৎসা দেবেন।

অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধের উপায়

খুব ভালোভাবে সেদ্ধ করে রান্না করা হয়নি এমন কোনো মাংসের পদ খাবেন না।

ত্বকে কোনো কাটাছেঁড়া থাকলে কাঁচা মাংস খালি হাতে নাড়াচাড়া করবেন না। গ্লাভস পরে নিন।

গবাদিপশু পালনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকলে পশুকে নিয়মমাফিক অ্যানথ্রাক্সের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। যিনি অসুস্থ পশুর দেখাশোনা করেন, তার সুরক্ষাসামগ্রী, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং যত্নের ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।

অসুস্থ গবাদিপশুর মাংস খাওয়া, কাটাকুটি করা বা নাড়াচাড়া করা থেকে বিরত থাকুন।

অ্যানথ্রাক্স নিয়ন্ত্রণে সচেতন হওয়া জরুরি। এটি ভয়ংকর সংক্রমণ হলেও সঠিক প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পশুকে নিয়মিত টিকা দেওয়া, মৃত পশু সঠিকভাবে মাটি চাপা দেওয়া এবং অসুস্থ পশুর মাংস না খাওয়াই হলো প্রধান প্রতিরোধ ব্যবস্থা। পাশাপাশি বাড়াতে হবে জনসচেতনতা। আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।

ওআ/আপ্র/১০/০৬/২০২৫