ক্রীড়া ডেস্ক: শুভমন গিলের ক্যাচটা হ্যারিস রউফ মিড-অনে লাফিয়ে ধরার পরেই দুবাই স্টেডিয়ামের গ্যালারির দিকে ঘুরে গেল ক্যামেরা। স্তব্ধ, হতবাক ভারতীয় সমর্থকদের মুখ ইঙ্গিত দিচ্ছিল, তীরে এসে হয়তো তরী ডুবতে চলেছে। স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছিল, ২০ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেটটি হারিয়েছে ভারত। শেষ পর্যন্ত তরী ডুবল না। টানা তৃতীয় বার পাকিস্তানকে হারাল এবং এশিয়া কাপ জিতে নিল ভারত। তবে ফাইনাল হল ফাইনালের মতোই। শেষ বল পর্যন্ত টান টান উত্তেজনার, রুদ্ধশ্বাস লড়াই। খাদের কিনারায় দাঁড়িয়েও ভারতীয় দল দেখিয়ে দিল, তাদের কখনওই হিসাবের বাইরে রাখলে চলে না।
টসে হেরে আগে ব্যাট করে পাকিস্তান শেষ হয়ে গিয়েছিল ১৪৭ রানে। জবাবে ভারত পাঁচ উইকেট বাকি থাকতে জয়ের রান তুলে নিল। পাকিস্তানের এই রান নিঃসন্দেহে পৌঁছতে পারত দুশোর কাছাকাছি। নিশ্চিত ভাবেই সেই ম্যাচ বার করা সম্ভব হত না ভারতের পক্ষে। কিন্তু ব্যাটিংয়ের সময় পাকিস্তান যে কাজ করল, সেটা তাদের পক্ষেই সম্ভব। তবু যে রান পাকিস্তান তুলেছে, তাতেও বেশ হাঁসফাঁস করতে হল ভারতকে। শেষ পর্যন্ত জয়ের তিলক ভারতের কপালে পরিয়ে দিলেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলা এক ব্যাটার। তিনি তিলক বর্মা। চাপের মুখে তাঁর অর্ধশতরান না এলে এই ম্যাচ বারই করতে পারত না ভারত। তিনি বাঁচিয়ে দিলেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের আর এক ক্রিকেটারকে, তিনি সূর্যকুমার যাদব। এই ম্যাচে হারলে সূর্যের অধিনায়কত্ব নিঃসন্দেহে প্রশ্নের মুখে পড়ত।
কিছু দিন আগেই সূর্য বলেছিলেন, ভারত-পাকিস্তানকে আর লড়াই বলা চলে না। এই ম্যাচে পাকিস্তান তাঁকে মুখের উপর জবাব দিতেই পারত। নিজেদের দোষেই তারা সেটা পারল না। তবে সলমন আঘারা এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই পাকিস্তানকে খুব হেলাফেলা করা যাবে না। লড়াই করার ক্ষমতা এই দলের রয়েছে।
ভারতের জয়তিলক: শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে সবে রউফকে তুলে ছয় মেরেছেন। ক্যামেরা ঘুরল ভারতের সাজঘরের দিকে। দুম দুম করে টেবিলে মারছেন গৌতম গম্ভীর। যেন ভেঙেই ফেলবেন। বোঝা গেল, কতটা চাপে ছিলেন তিনি। অন্যান্য সময় যখন তাঁকে ক্যামেরা ধরেছে, প্রতি বারই ভাবলেশহীন দেখাচ্ছিল তাঁর মুখ। কিন্তু তিলকের ওই একটা শট বার করে আনল তাঁর আবেগ। এটাই তিলক। তাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচয় এ ভাবে দেওয়া যেতে পারে, দরকারের সময় খেলেন। দলের হয়ে খেলেন। অতীতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে একাধিক ম্যাচে জিতিয়েছেন। সেই সুবাদেই ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া। সূর্যকুমারকে বলেকয়ে তিন নম্বরের জায়গা আদায় করে নিয়েছিলেন। এশিয়া কাপে ‘কথা রাখেননি’ সূর্য। নিজেই তিনে নেমেছেন। তিলক বুঝিয়ে দিয়েছেন, চারে নামলেও তিনি একই রকম ক্ষুরধার।
পাকিস্তানের ওপেনারদের দাপট: পাকিস্তান শুরুটা যে ভাবে করেছিল তাতে মনেই হচ্ছিল তাদের অনেক কিছুর জবাব দেওয়ার আছে। পেসার থেকে স্পিনার, প্রথম ৯ ওভারে ভারতের বোলারদের দাঁড়াতেই দেয়নি তারা। ফখর জ়মান এমনিতেই প্রতিষ্ঠিত ব্যাটার। কিন্তু ভাল লেগেছে সাহিবজ়াদা ফারহানের খেলা। ভারতের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে অর্ধশতরান করেছিলেন। এ দিন যে ভাবে দাপট দেখালেন তাতে পাকিস্তান দলে তাঁর জায়গা আরও মজবুত হল। ভারতের বিরুদ্ধে অতীতে বার বার ভাল খেলেছেন শোয়েব মালিক। সেই দিকেই এগিয়ে চলেছেন ফারহান। ৯ ওভারে বিনা উইকেটে পাকিস্তান ৭৭ তুলে দেওয়ার পর এমন কোনও ভারতীয় সমর্থক ছিলেন না যাঁর বুক কাঁপেনি।
ছন্দহীন বুমরাহ: পাকিস্তানের ওপেনারেরা দাপট দেখার সময় বার বার করে হার্দিক পাণ্ড্যের অভাব বোঝা যাচ্ছিল। চাপের সময় রান আটকাতে পারেন হার্দিক। বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং করতে পারেন। শিবম দুবে অতীতে কোনও দিন বোলিংয়ে ওপেন করেননি। হার্দিকের জায়গায় খারাপ বল করেননি। উল্টো দিক থেকে বুমরাহ রান হজম করছিলেন। চলতি এশিয়া কাপে একেবারেই ভাল খেলতে পারছেন না বুমরাহ। পাকিস্তানের কাছে আগের ম্যাচে ভালই রান হজম করেছেন। এই ম্যাচে শেষ দিকে উইকেট নেওয়া ছাড়া বাকি সময়ে তাঁকে ছন্দহীন লেগেছে। পরিকল্পনাহীন বল করেছেন বুমরাহ। তাঁর গতি কাজে লাগিয়েছেন পাকিস্তানের ব্যাটারেরা।
পাকিস্তানের ব্যাটিং ধস: ভারতকে চাপে ফেলার পরেও পাকিস্তান যে কাজ করল, তা বোধহয় তাদের পক্ষেই সম্ভব। ফারহান অর্ধশতরান করে ফিরে যাওয়ার পরেই সাইম আয়ুবের সঙ্গে জুটি বেধে পাকিস্তানকে ভালই টানছিলেন জমান। আয়ুব ফিরতেই কী হল কে জানে, তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল পাকিস্তানের ব্যাটিং। ১৩তম ওভারে আউট হন আয়ুব। পরের ওভারে ফেরেন হ্যারিস। তার পরের ওভারে জমান। এ ভাবে সাত ওভারে বাকি ৯টি উইকেট পড়ে গেল পাকিস্তান। ১১৩/১ থেকে তারা অলআউট হয়ে গেল ১৪৬ রানে। অন্ধ সমর্থকও বিশ্বাস করতে পারেননি যে এমন হতে পারে। যে দুবাই স্টেডিয়াম ম্যাচের শুরু থেকে পাকিস্তান সমর্থকের চিৎকারে মুখরিত ছিল, সেখানেই সবুজ জার্সি পরা দর্শককের মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। সূত্র: আনন্দবাজার
সানা/আপ্র/২৯/০৯/২০২৫