ঢাকা ১০:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরলো ৯ প্রাণ

সব হারিয়ে মেয়েকে নিয়ে বেঁচে ছিলেন, সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিলো দুজনকে

  • আপডেট সময় : ০৯:১০:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ২৫ বার পড়া হয়েছে

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আবেদিতা চৌধুরী ও মেয়ে প্রথমা চৌধুরী -ছবি সংগৃহীত

প্রত্যাশা ডেস্ক: স্বামীর মৃত্যুর পর সম্পদসহ নানা বিষয় নিয়ে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কিছুটা মনোমালিন্য দেখা দেয়। একপর্যায়ে আবেদিতা চৌধুরী (আঁখি) একমাত্র মেয়ে প্রথমা চৌধুরীকে নিয়ে হবিগঞ্জ থেকে চলে আসেন সুনামগঞ্জে। শহরের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। মেয়ে পড়তো শহরের সুনামগঞ্জ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে, অষ্টম শ্রেণিতে। মেয়েকে নিয়ে সব স্বপ্ন ছিল আঁখি চৌধুরীর। তাকে অবলম্বন করেই বেঁচে ছিলেন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনায় সব কিছু থেমে গেছে। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে সড়কে ঝরে গেছে মা ও মেয়ের প্রাণ।

শুক্রবার ছুটির দিনে সুনামগঞ্জে তিনজনসহ তিন জেলায় অন্তত ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

আবেদিতা চৌধুরীর (৪০) পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তার বাবার বাড়ি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায়। তাঁর বিয়ে হয় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার নজিরপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রণয় দাসের সঙ্গে। বছর আট আগে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বামী মারা যান।

দুর্গাপূজা সামনে রেখে শুক্রবার সকালে মেয়েকে নিয়ে হবিগঞ্জ শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন আবেদিতা। তাঁদের বহনকারী অটোরিকশাটি সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই আবেদিতা চৌধুরী, তাঁর মেয়ে প্রথমা চৌধুরী ও অটোরিকশা চালক সজল ঘোষ (৫০) মারা যান।

আবেদিতা চৌধুরীর আত্মীয় পবিত্র দাস বলেন, সড়কে একটি পরিবার শেষ হয়ে গেছে। মেয়েকে নিয়ে সব স্বপ্ন ছিল আবেদিতা চৌধুরীর। সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য জানান, আবেদিতা চৌধুরী মেয়েকে নিয়ে মহিলা পরিষদের সাপ্তাহিক পাঠচক্রে নিয়মিত আসতেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর মেয়ের কথা ভেবে আর সংসার পর্যন্ত করেননি। তিনি বলেন, বেপরোয়া ট্রাক মহূর্তেই মা-মেয়েসহ তিনজনের প্রাণ কেড়ে নিলো। আসলে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কেউ ভাবে না, যে কারণে সড়কে মৃত্যু বাড়ছে। একেকটি পরিবার শেষ হয়ে যাচ্ছে।
একই সড়কে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত আটজন মারা গেছেন। এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস এলাকায় একটি প্রাইভেট কারের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ ঘটনাস্থলেই জেলা প্রশাসনের জারিকারক সুহেল মিয়া (৩৮) ও সবদর আলী (৩৭) মারা যান। একই সড়কে সদর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় ৬ সেপ্টেম্বর একটি অটোরিকশা ও যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী স্নেহা চক্রবর্তী, সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনিস্টিউটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা খুশি ও ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম (৭০) মারা যান। তাঁরা একটি অটোরিকশায় করে শান্তিগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে ফিরছিলেন।
সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি রবিউল লেইস ক্ষোভ প্রকাশ করে করেন, ‘এই সড়কের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে কিছু দিনের মধ্যে দুর্ঘটনায় দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, জেলা প্রশাসনের কর্মীসহ আটজনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা মহাসড়কে অটোরিকশা, ইজিবাইক চলাচল বন্ধের বিষয়ে বিভিন্ন ফোরামে কথা বলি। কিন্তু দায়িত্বশীলেরা কানে তোলেন না। যে কারণে সড়কে মৃত্যু বাড়ছে। অবিলম্বে মহাসড়কে অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল বন্ধ করা উচিত।’

বগুড়ায় ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষে বাবা-ছেলেসহ নিহত ৩: বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বালুবাহী ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে বাবা-ছেলেসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন একই পরিবারের মা ও মেয়ে।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টার দিকে বগুড়া-সারিয়াকান্দি সড়কের ফুলবাড়ি কাঁঠালতলা এলাকায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার কুঠিবাড়ি গ্রামের বিপুল চন্দ্র দাস (৩৮) ও তার ছেলে বিপ্লব চন্দ্র দাস (৫) ও শিবগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের অটোরিকশার চালক শুকুর আলী (৪০)।
অপরদিকে আহতরা হলেন, বিপুলের স্ত্রী মমতা রানী দাস (৩২) ও মেয়ে রূপা মনি দাস (১২)। তারা দুজনেই বর্তমানে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
সারিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামিরুল ইসলাম জানান, বিপুল চন্দ্র দাস পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। দুর্গাপূজার ছুটিতে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার নারচী গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছিলেন। ভোরে ঢাকা থেকে বাসযোগে বগুড়ায় নেমে তারা একটি সিএনজি অটোরিকশা করে নারচীর দিকে যাচ্ছিলেন। ফুলবাড়ি কাঁঠালতলা এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বেপরোয়া গতির বালুবাহী ট্রাকের সঙ্গে অটোরিকশাটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের তীব্রতায় অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ওসি আরো জানান, ঘটনাস্থলেই অটোরিকশা চালক শুকুর আলী মারা যান। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহত চারজনকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৯টার দিকে বিপুল ও তার ছেলে বিপ্লব মারা যান।
এদিকে দুর্ঘটনার পরপরই ট্রাকের চালক ও সহকারী পালিয়ে গেছেন। ট্রাকটি পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। নিহত তিনজনের মরদেহ আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

রংপুরে পিকআপ ভ্যানে বালুবোঝাই ট্রাকের ধাক্কা, মা-ছেলেসহ নিহত ৩: রংপুর নগরীতে বালুবোঝাই একটি ট্রাকের ধাক্কায় পিকআপ ভ্যানে থাকা মা ও ছেলেসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো তিনজন।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভোর ৪টার দিকে নগরীর দমদমা এলাকায় রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- পিকআপ ভ্যানের সহকারী (হেলপার) নগর মীরগঞ্জ এলাকার ইউসুফ আলীর ছেলে আরিফ হোসেন (২০), যাত্রী পীরগাছার সাতদরগা এলাকার মোতালেব হোসেনের স্ত্রী শাহিনা বেগম (২৮) ও তার এক বছর বয়সী ছেলে ওয়ালিদ হোসেন স্বাধীন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে দমদমা ব্রিজের একটু আগে উত্তরে মালবাহী একটি পিকআপভ্যানকে ঢাকাগামী বালুবোঝাই একটি ট্রাক ধাক্কা দেয়। পিকআপ ভ্যানটি মাহিগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশে সেখানে ইউটার্ন নেওয়ার সময় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই পিকআপ ভ্যানে থাকা যাত্রীসহ হেলপার নিহত হন। আহত তিনজনের মধ্যে গুরুতর আহত পিকআপ ভ্যানচালক নিশাত মিয়াকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি দুজন নিহত শাহিনা বেগমের দেবর ও তার স্ত্রী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। রংপুর মহানগর পুলিশের তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান আলী বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দু’টি উদ্ধার করে থানায় রাখা হয়েছে। ট্রাকের চালক ও তার সহকারী পলাতক রয়েছে।

সানা/আপ্র/২৬/০৯/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরলো ৯ প্রাণ

সব হারিয়ে মেয়েকে নিয়ে বেঁচে ছিলেন, সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিলো দুজনকে

আপডেট সময় : ০৯:১০:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: স্বামীর মৃত্যুর পর সম্পদসহ নানা বিষয় নিয়ে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কিছুটা মনোমালিন্য দেখা দেয়। একপর্যায়ে আবেদিতা চৌধুরী (আঁখি) একমাত্র মেয়ে প্রথমা চৌধুরীকে নিয়ে হবিগঞ্জ থেকে চলে আসেন সুনামগঞ্জে। শহরের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। মেয়ে পড়তো শহরের সুনামগঞ্জ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে, অষ্টম শ্রেণিতে। মেয়েকে নিয়ে সব স্বপ্ন ছিল আঁখি চৌধুরীর। তাকে অবলম্বন করেই বেঁচে ছিলেন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনায় সব কিছু থেমে গেছে। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে সড়কে ঝরে গেছে মা ও মেয়ের প্রাণ।

শুক্রবার ছুটির দিনে সুনামগঞ্জে তিনজনসহ তিন জেলায় অন্তত ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

আবেদিতা চৌধুরীর (৪০) পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তার বাবার বাড়ি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায়। তাঁর বিয়ে হয় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার নজিরপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রণয় দাসের সঙ্গে। বছর আট আগে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বামী মারা যান।

দুর্গাপূজা সামনে রেখে শুক্রবার সকালে মেয়েকে নিয়ে হবিগঞ্জ শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন আবেদিতা। তাঁদের বহনকারী অটোরিকশাটি সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই আবেদিতা চৌধুরী, তাঁর মেয়ে প্রথমা চৌধুরী ও অটোরিকশা চালক সজল ঘোষ (৫০) মারা যান।

আবেদিতা চৌধুরীর আত্মীয় পবিত্র দাস বলেন, সড়কে একটি পরিবার শেষ হয়ে গেছে। মেয়েকে নিয়ে সব স্বপ্ন ছিল আবেদিতা চৌধুরীর। সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য জানান, আবেদিতা চৌধুরী মেয়েকে নিয়ে মহিলা পরিষদের সাপ্তাহিক পাঠচক্রে নিয়মিত আসতেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর মেয়ের কথা ভেবে আর সংসার পর্যন্ত করেননি। তিনি বলেন, বেপরোয়া ট্রাক মহূর্তেই মা-মেয়েসহ তিনজনের প্রাণ কেড়ে নিলো। আসলে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কেউ ভাবে না, যে কারণে সড়কে মৃত্যু বাড়ছে। একেকটি পরিবার শেষ হয়ে যাচ্ছে।
একই সড়কে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত আটজন মারা গেছেন। এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস এলাকায় একটি প্রাইভেট কারের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ ঘটনাস্থলেই জেলা প্রশাসনের জারিকারক সুহেল মিয়া (৩৮) ও সবদর আলী (৩৭) মারা যান। একই সড়কে সদর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় ৬ সেপ্টেম্বর একটি অটোরিকশা ও যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী স্নেহা চক্রবর্তী, সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনিস্টিউটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা খুশি ও ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম (৭০) মারা যান। তাঁরা একটি অটোরিকশায় করে শান্তিগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে ফিরছিলেন।
সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি রবিউল লেইস ক্ষোভ প্রকাশ করে করেন, ‘এই সড়কের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে কিছু দিনের মধ্যে দুর্ঘটনায় দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, জেলা প্রশাসনের কর্মীসহ আটজনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা মহাসড়কে অটোরিকশা, ইজিবাইক চলাচল বন্ধের বিষয়ে বিভিন্ন ফোরামে কথা বলি। কিন্তু দায়িত্বশীলেরা কানে তোলেন না। যে কারণে সড়কে মৃত্যু বাড়ছে। অবিলম্বে মহাসড়কে অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল বন্ধ করা উচিত।’

বগুড়ায় ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষে বাবা-ছেলেসহ নিহত ৩: বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বালুবাহী ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে বাবা-ছেলেসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন একই পরিবারের মা ও মেয়ে।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টার দিকে বগুড়া-সারিয়াকান্দি সড়কের ফুলবাড়ি কাঁঠালতলা এলাকায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার কুঠিবাড়ি গ্রামের বিপুল চন্দ্র দাস (৩৮) ও তার ছেলে বিপ্লব চন্দ্র দাস (৫) ও শিবগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের অটোরিকশার চালক শুকুর আলী (৪০)।
অপরদিকে আহতরা হলেন, বিপুলের স্ত্রী মমতা রানী দাস (৩২) ও মেয়ে রূপা মনি দাস (১২)। তারা দুজনেই বর্তমানে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
সারিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামিরুল ইসলাম জানান, বিপুল চন্দ্র দাস পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। দুর্গাপূজার ছুটিতে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার নারচী গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছিলেন। ভোরে ঢাকা থেকে বাসযোগে বগুড়ায় নেমে তারা একটি সিএনজি অটোরিকশা করে নারচীর দিকে যাচ্ছিলেন। ফুলবাড়ি কাঁঠালতলা এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বেপরোয়া গতির বালুবাহী ট্রাকের সঙ্গে অটোরিকশাটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের তীব্রতায় অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ওসি আরো জানান, ঘটনাস্থলেই অটোরিকশা চালক শুকুর আলী মারা যান। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহত চারজনকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৯টার দিকে বিপুল ও তার ছেলে বিপ্লব মারা যান।
এদিকে দুর্ঘটনার পরপরই ট্রাকের চালক ও সহকারী পালিয়ে গেছেন। ট্রাকটি পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। নিহত তিনজনের মরদেহ আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

রংপুরে পিকআপ ভ্যানে বালুবোঝাই ট্রাকের ধাক্কা, মা-ছেলেসহ নিহত ৩: রংপুর নগরীতে বালুবোঝাই একটি ট্রাকের ধাক্কায় পিকআপ ভ্যানে থাকা মা ও ছেলেসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো তিনজন।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভোর ৪টার দিকে নগরীর দমদমা এলাকায় রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- পিকআপ ভ্যানের সহকারী (হেলপার) নগর মীরগঞ্জ এলাকার ইউসুফ আলীর ছেলে আরিফ হোসেন (২০), যাত্রী পীরগাছার সাতদরগা এলাকার মোতালেব হোসেনের স্ত্রী শাহিনা বেগম (২৮) ও তার এক বছর বয়সী ছেলে ওয়ালিদ হোসেন স্বাধীন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে দমদমা ব্রিজের একটু আগে উত্তরে মালবাহী একটি পিকআপভ্যানকে ঢাকাগামী বালুবোঝাই একটি ট্রাক ধাক্কা দেয়। পিকআপ ভ্যানটি মাহিগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশে সেখানে ইউটার্ন নেওয়ার সময় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই পিকআপ ভ্যানে থাকা যাত্রীসহ হেলপার নিহত হন। আহত তিনজনের মধ্যে গুরুতর আহত পিকআপ ভ্যানচালক নিশাত মিয়াকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি দুজন নিহত শাহিনা বেগমের দেবর ও তার স্ত্রী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। রংপুর মহানগর পুলিশের তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান আলী বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দু’টি উদ্ধার করে থানায় রাখা হয়েছে। ট্রাকের চালক ও তার সহকারী পলাতক রয়েছে।

সানা/আপ্র/২৬/০৯/২০২৫