ঢাকা ০২:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতির দাবিতে উত্তাল হবে জেনেভা

  • আপডেট সময় : ০২:১৯:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ১৪৪ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : একাত্তরে বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার বাহিনীর নারকীয় হত্যালীলাকে জাতিসংঘ যাতে ‘গণহত্যা’ বলে স্বীকৃতি দেয়, সেই লক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় দিনভর নানা আন্দোলন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিরা ছাড়াও বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্য, অ্যাক্টিভিস্ট, রাজনীতিবিদ, গবেষক ও লেখকরা এই আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছেন।
জেনেভায় এই মুহূর্তে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের ৪৮তম অধিবেশনও চলছে। গোটা কর্মসূচি পরিকল্পনা করা হয়েছে সেই বিশেষ ইভেন্টের সঙ্গে সময় মিলিয়ে।
মূল অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে ইউরোপব্যাপী প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরাম (ইবিএফ), সঙ্গে রয়েছে সুইজারল্যান্ডস হিউম্যান রাইটস কমিশন (বাংলাদেশ)।
আজ বৃহস্পতিবার জেনেভা প্রেস ক্লাবে তারা ‘১৯৭১ বাংলাদেশ গণহত্যার স্বীকৃতি’ শিরোনামে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে—যেখানে দেশ-বিদেশের বক্তারা তাদের বক্তব্য পেশ করবেন। সম্মেলনে ‘একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ’ বিষয়ে একটি তথ্যচিত্রও দেখানো হবে।
‘ব্রোকেন চেয়ার’ : জেনেভায় জাতিসংঘ কার্যালয়ের সামনে যে বিখ্যাত ‘ব্রোকেন চেয়ার’ নামে স্থাপত্যটি রয়েছে, প্রেস ক্লাবের অনুষ্ঠানের ঠিক আগে তার সামনে বিক্ষোভও দেখাবেন অ্যাক্টিভিস্টরা।
সুইস শিল্পী ড্যানিয়েল বের্সেটের পরিকল্পিত এই ভাঙা চেয়ার স্থাপত্যটি পৃথিবীতে ল্যান্ডমাইন ও ক্লাস্টার বোম্ব (গুচ্ছ বোমা)-এর মতো বিপদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাওয়ার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশে পঞ্চাশ বছর আগে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও যে সারা বিশ্বের জন্য একটি অসমাপ্ত এজেন্ডা – সেই চেয়ারের নিচে বিক্ষোভ দেখিয়ে দুনিয়াকে আরও একবার তা মনে করিয়ে দেবেন তারা। জেনেভা প্রেস ক্লাবের সম্মেলনে কাল যারা গণহত্যার স্বীকৃতির দাবিতে সরব হচ্ছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন :
ক) ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের মেম্বার (ইতালি থেকে) বা এমইপি ব্র্যান্ডো বেনিফেই। খ) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের লেবার পার্টি সদস্য রুশনারা আলি। গ) নেদারল্যান্ডসের সোশ্যালিস্ট পার্টির রাজনীতিবিদ ও সাবেক এমপি হ্যারি ভন বোমেল। ঘ) আমস্টার্ডাম ভ্রিজে ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড: অ্যান্টনি হোলস্লাগ। ঙ) ডাচ দৈনিক দ্য ভোলস্ক্রান্ট-এর তুরস্ক সংবাদদাতা রব ভ্রিকান। চ) ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরামের (আইসিএসএফ) ট্রাস্টি ড. রায়হান রশিদ। ছ) একাত্তরে বাংলাদেশে একটি নিপীড়িত পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের সদস্য ড: আসিফ মুনীর এবং আরও অনেকে।
জেনেভা প্রেস ক্লাব : জেনেভা প্রেস ক্লাবের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সংগঠকরা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, কনফারেন্সে তাদের প্রধান দাবি হবে ১৯৭১-র নারকীয় হত্যাযজ্ঞের জন্য পাকিস্তানের কঠোর নিন্দা করে জাতিসংঘকে একটি প্রস্তাব নিতে হবে। সেই গণহত্যার জন্য যারা দায়ী তাদেরকেও আনতে হবে বিচারের আওতায়।
একজন উদ্যোক্তার কথায়, ‘বাংলাদেশের জনতা, যাদেরও বাকি দুনিয়ার মতোই সমান মানবাধিকার পাওয়ার কথা ছিল, তাদের সঙ্গে একদিন কী নির্মম আচরণ করা হয়েছিল সেটাও আমরা বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই।’
প্রসঙ্গত, গত বছর ঢাকায় পাকিস্তানের নবনিযুক্ত হাই-কমিশনার যখন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে আসেন, শেখ হাসিনা তাকে পরিষ্কার জানিয়ে দেন একাত্তরে পাকিস্তান যা করেছে তা বাংলাদেশের পক্ষে কখনোই ভোলা সম্ভব নয় ও তাদের ক্ষমা করাও যায় না। একাত্তরকে গণহত্যার ‘স্বীকৃতি’ র দাবি তখন থেকেই আবার জোরেশোরে উঠতে থাকে। ভারতও অনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মঞ্চে এরকম কোনও দাবি জানালে তারা সমর্থন জানাবে। তারপর সেই দাবির সমর্থনে বিদেশে এত বড় মাপের সমাবেশ ও আন্দোলন জেনেভাতেই প্রথম হচ্ছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতির দাবিতে উত্তাল হবে জেনেভা

আপডেট সময় : ০২:১৯:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

প্রত্যাশা ডেস্ক : একাত্তরে বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার বাহিনীর নারকীয় হত্যালীলাকে জাতিসংঘ যাতে ‘গণহত্যা’ বলে স্বীকৃতি দেয়, সেই লক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় দিনভর নানা আন্দোলন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিরা ছাড়াও বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্য, অ্যাক্টিভিস্ট, রাজনীতিবিদ, গবেষক ও লেখকরা এই আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছেন।
জেনেভায় এই মুহূর্তে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের ৪৮তম অধিবেশনও চলছে। গোটা কর্মসূচি পরিকল্পনা করা হয়েছে সেই বিশেষ ইভেন্টের সঙ্গে সময় মিলিয়ে।
মূল অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে ইউরোপব্যাপী প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরাম (ইবিএফ), সঙ্গে রয়েছে সুইজারল্যান্ডস হিউম্যান রাইটস কমিশন (বাংলাদেশ)।
আজ বৃহস্পতিবার জেনেভা প্রেস ক্লাবে তারা ‘১৯৭১ বাংলাদেশ গণহত্যার স্বীকৃতি’ শিরোনামে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে—যেখানে দেশ-বিদেশের বক্তারা তাদের বক্তব্য পেশ করবেন। সম্মেলনে ‘একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ’ বিষয়ে একটি তথ্যচিত্রও দেখানো হবে।
‘ব্রোকেন চেয়ার’ : জেনেভায় জাতিসংঘ কার্যালয়ের সামনে যে বিখ্যাত ‘ব্রোকেন চেয়ার’ নামে স্থাপত্যটি রয়েছে, প্রেস ক্লাবের অনুষ্ঠানের ঠিক আগে তার সামনে বিক্ষোভও দেখাবেন অ্যাক্টিভিস্টরা।
সুইস শিল্পী ড্যানিয়েল বের্সেটের পরিকল্পিত এই ভাঙা চেয়ার স্থাপত্যটি পৃথিবীতে ল্যান্ডমাইন ও ক্লাস্টার বোম্ব (গুচ্ছ বোমা)-এর মতো বিপদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাওয়ার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশে পঞ্চাশ বছর আগে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও যে সারা বিশ্বের জন্য একটি অসমাপ্ত এজেন্ডা – সেই চেয়ারের নিচে বিক্ষোভ দেখিয়ে দুনিয়াকে আরও একবার তা মনে করিয়ে দেবেন তারা। জেনেভা প্রেস ক্লাবের সম্মেলনে কাল যারা গণহত্যার স্বীকৃতির দাবিতে সরব হচ্ছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন :
ক) ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের মেম্বার (ইতালি থেকে) বা এমইপি ব্র্যান্ডো বেনিফেই। খ) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের লেবার পার্টি সদস্য রুশনারা আলি। গ) নেদারল্যান্ডসের সোশ্যালিস্ট পার্টির রাজনীতিবিদ ও সাবেক এমপি হ্যারি ভন বোমেল। ঘ) আমস্টার্ডাম ভ্রিজে ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড: অ্যান্টনি হোলস্লাগ। ঙ) ডাচ দৈনিক দ্য ভোলস্ক্রান্ট-এর তুরস্ক সংবাদদাতা রব ভ্রিকান। চ) ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরামের (আইসিএসএফ) ট্রাস্টি ড. রায়হান রশিদ। ছ) একাত্তরে বাংলাদেশে একটি নিপীড়িত পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের সদস্য ড: আসিফ মুনীর এবং আরও অনেকে।
জেনেভা প্রেস ক্লাব : জেনেভা প্রেস ক্লাবের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সংগঠকরা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, কনফারেন্সে তাদের প্রধান দাবি হবে ১৯৭১-র নারকীয় হত্যাযজ্ঞের জন্য পাকিস্তানের কঠোর নিন্দা করে জাতিসংঘকে একটি প্রস্তাব নিতে হবে। সেই গণহত্যার জন্য যারা দায়ী তাদেরকেও আনতে হবে বিচারের আওতায়।
একজন উদ্যোক্তার কথায়, ‘বাংলাদেশের জনতা, যাদেরও বাকি দুনিয়ার মতোই সমান মানবাধিকার পাওয়ার কথা ছিল, তাদের সঙ্গে একদিন কী নির্মম আচরণ করা হয়েছিল সেটাও আমরা বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই।’
প্রসঙ্গত, গত বছর ঢাকায় পাকিস্তানের নবনিযুক্ত হাই-কমিশনার যখন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে আসেন, শেখ হাসিনা তাকে পরিষ্কার জানিয়ে দেন একাত্তরে পাকিস্তান যা করেছে তা বাংলাদেশের পক্ষে কখনোই ভোলা সম্ভব নয় ও তাদের ক্ষমা করাও যায় না। একাত্তরকে গণহত্যার ‘স্বীকৃতি’ র দাবি তখন থেকেই আবার জোরেশোরে উঠতে থাকে। ভারতও অনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মঞ্চে এরকম কোনও দাবি জানালে তারা সমর্থন জানাবে। তারপর সেই দাবির সমর্থনে বিদেশে এত বড় মাপের সমাবেশ ও আন্দোলন জেনেভাতেই প্রথম হচ্ছে।