নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার আশুলিয়া থেকে সংঘবদ্ধ ইজিবাইক চোর চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচ সদস্যকে আটক করেছে র্যাব-৩। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হেয়েছে বিভিন্ন রংয়ের ব্যাটারিচালিত ১৮টি। আটককৃতরা হলেন-মো. বশির আহম্মদ, মো. মোস্তফা কামাল, মো. জিয়াউর রহমান, মো. আবদুল জলিল এবং মো. ওসমান শেখ।
গতকাল বুধবার সকালে র্যাব-৩ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) বীণা রানী দাস স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, র্যাব-৩ এর একটি দল জানতে পারে যে, আশুলিয়া থানার জিরানি এলাকায় বিভিন্ন গ্যারেজের ভিতর কিছু সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে চোরাই ও ছিনতাইকরা বিভিন্ন রংয়ের ব্যাটারিচালিত চোরাই এবং ছিনতাইকৃত ইজিবাইক মজুদ করেছে। পরে তার রং পরিবর্তন করে বিক্রি করে আসছে। এই চক্রের মূল হোতা বশির।
বিষয়টি জানার পর র্যাব-৩ এর একটি দল গত মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে আশুলিয়া থানার জিরানি এলাকায় বিভিন্ন গ্যারেজের ভেতরে অভিযান চালায়। অভিযানে মো. বশির আহম্মদ, মো. মোস্তফা কামাল, মো. জিয়াউর রহমান, মো. আবদুল জলিল এবং মো. ওসমান শেখ নামের সংঘবদ্ধ ইজিবাইক চোর চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। আটককৃতদের কাছ থেকে বিভিন্ন রংয়ের ব্যাটারিচালিত ১৮টি ইজিবাইক উদ্ধার করা হয়।
আটককৃতদের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, চক্রটি অভিনব কায়দায় ইজিবাইক চুরি করত। তারা প্রথমে প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাসযোগে টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী জেলায় গিয়ে নতুন ইজিবাইকের ওপর নজরদারি করত। তারপর ইজিবাইকের সামনে গিয়ে ইজিবাইকের চালককে শুনিয়ে উচ্চস্বরে মোবাইলে কথা বলত ‘আম্মা হাসপাতালে ভর্তি। মাঝ পথে গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেল, কিভাবে আম্মার কাছে পৌঁছাবো? আম্মাকে গিয়ে জীবিত পাব কিনা জানি না।’ তখন অপর প্রান্ত থেকে বলত, একটা ইজিবাইক নিয়ে চলে আয়। তারপর তারা ইজিবাইকের চালককে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুনয় বিনয় করত। পরে ইজিবাইক যাত্রা শুরু করার কিছুক্ষণ পর তারা জানাত, তাদের কিছু জরুরি কাগজপত্র গাড়িতে রয়ে গেছে। ইজিবাইকের চালককে ওই কাগজ গাড়ি থেকে নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করত। এরপর ইজিবাইকের চালক গাড়ি থেকে নেমে গেলে আটককৃতরা ভুক্তভোগী ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যেত। এছাড়াও তারা বিভিন্ন সময় ইজিবাইক ভাড়া করে নির্জন স্থানে গিয়ে কখনও চালকের হাত পা বেঁধে আবার কখনও চালককে অজ্ঞান করে তাকে রাস্তায় ফেলে রেখে তার ইজিবাইক ছিনতাই করত।
র্যাব আরও জানায়, চক্রের সবাই গাড়ি চালনায় পারদর্শী। ইজিবাইক চুরি চক্রের মূল হোতা বশির। তিনি ইজিবাইক চুরি ও ছিনতাইয়ের মূল পরিকল্পনাকারী। আটক মোস্তফা প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস সরবরাহ করত। আর জিয়া মোবাইল ফোনে কথা বলার অভিনয় করত। আবদুল জলিল ও ওসমান ইজিবাইক চালিয়ে গ্যারেজে পৌঁছে দিত। এসব চোরাই ও ছিনতাইকরা ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক বিভিন্ন গ্যারেজে এনে লুকিয়ে রাখত।
র্যাব জানায়, ওই চক্রের মূলহোতা বশির ও তার অন্যতম সহযোগী জিয়ার সহায়তায় চোরাই করা ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের রং, সিট কভার পরিবর্তন করে একটি বাম্পার লাগিয়ে বিভিন্ন লোকজনের কাছে বাজার দামের অর্ধেক দামে বিক্রি করে দিত। এভাবে ওই চক্র টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিগত তিন বছর যাবত ৫০০ র বেশি ইজিবাইক চুরি ও ছিনতাই করে গরিব ও নিরীহ ইজিবাইক মালিকদের সর্বস্ব লুট করে।
আটককৃতরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়া বিভিন্ন গ্যারেজকে নিরাপদ জায়গা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছে। তাদের এমন এরূপ কার্যকলাপের কারণে গরিব ও নিরীহ মোটর ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের মালিকগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। র্যাবের অভিযানে তারা আটক হওয়ার ফলে গরিব ও নিরীহ ইজিবাইক মালিকদের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
৫ শ’র বেশি ইজিবাইক ছিনতাই করেছিল চক্রটি
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ