ঢাকা ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নেপালে সরকার পতনের নেপথ্যে সুদান গুরুং

  • আপডেট সময় : ০৫:৪৫:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৩১ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

প্রত্যাশা ডেস্ক: নেপালের সম্প্রতিক ইতিহাসে এমন রাজনৈতিক মুহূর্ত বিরল যেখাে দুদিনের মধ্যে একটি ক্ষমতাশালী সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। যে বিক্ষোভে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির পতন হয়েছে তার নেপথ্যে ছিলেন এক তরুণ সমাজকর্মী—সুদান গুরুং। তার নেতৃত্বে ‘জেনারেশন জেড’-এর আন্দোলন কেবল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সুশাসনের অভাবের বিরুদ্ধে এক সর্বজনীন বিক্ষোভে পরিণত হয়।

৩৬ বছর বয়সী সুদানের যাত্রা শুরু হয়েছিল এক ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি থেকে। ২০১৫ সালের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে তিনি সন্তান হারান। সেই শোক তাকে ঠেলে দেয় সমাজসেবায়, এবং তিনি গড়ে তোলেন “হামি নেপাল” নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রথমদিকে এই সংগঠন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ ও সহায়তা প্রদান করলেও, ধীরে ধীরে এটি তরুণদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার সচেতনতার প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা ছিল আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ। সুদান কৌশল ঠিক করলেন আন্দোলনকে এমনভাবে সাজানোর, যাতে তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয় এবং একই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ কিন্তু প্রভাবশালী প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।

আন্দোলন সংগঠনে সুদানের প্রথম ধাপ ছিল ডিজিটাল নেটওয়ার্ক গঠন। নিষেধাজ্ঞার মাঝেও তিনি বিকল্প মেসেজিং অ্যাপ, ভিপিএন, এবং মুখে মুখে প্রচারের মাধ্যমে বার্তা ছড়ালেন। হামি নেপালের স্বেচ্ছাসেবীরা রাতভর ফোন কল, হ্যান্ডবিল ও পোস্টারের মাধ্যমে বিক্ষোভের সময়, স্থান ও নিরাপত্তা নির্দেশনা জানিয়ে দিলেন।

দ্বিতীয় ধাপে নিলেন প্রতীকী প্রতিবাদের কৌশল। তিনি তরুণদের স্কুল ইউনিফর্ম পরে, হাতে বই নিয়ে রাস্তায় নামতে আহ্বান জানালেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও এই চিত্র ভাইরাল হয়, যা আন্দোলনের প্রতি বিশ্বজনমতের সহানুভূতি তৈরি করে।

তৃতীয় ধাপ ছিল ক্ষেত্র সমন্বয়। সুদান প্রতিটি শহরে স্থানীয় সমন্বয়ক নিয়োগ দেন, যারা ভিড় পরিচালনা, মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ, এবং পুলিশি বাধা সামলানোর পরিকল্পনা করতেন। হাসপাতাল ও চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থাও আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাখা হয়, যাতে আহতরা দ্রুত সহায়তা পান।

চতুর্থ ধাপে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পুনরায় চালুর দাবির পাশাপাশি তিনি সরাসরি সরকারের পদত্যাগের আহ্বান জানান। এই সংগঠিত, সুপরিকল্পিত আন্দোলন দুই দিনের মধ্যেই সরকারকে চরম চাপে ফেলে। রাজধানী থেকে প্রাদেশিক শহর—সবখানে তরুণদের বিক্ষোভ, আন্তর্জাতিক মহলের নজর, এবং জনসমর্থনের ঢেউ—সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

সরকার পতনের পর সুদান গুরুং আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বার্তায় বলেন—এটি শুধু একটি দাবির জয় নয়, বরং নেপালের জন্য নতুন এক সূচনা। তিনি সবাইকে শান্ত থাকতে, সহিংসতা এড়াতে এবং অর্জিত সাফল্যকে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনে রূপ দিতে আহ্বান জানান। তার ভাষায়, এখনই সময় নেপালকে দুর্নীতি ও অকার্যকারিতার পথ থেকে সরিয়ে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থার পথে নিয়ে যাওয়ার।

ওআ/আপ্র/০৯/০৯/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নেপালে সরকার পতনের নেপথ্যে সুদান গুরুং

আপডেট সময় : ০৫:৪৫:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: নেপালের সম্প্রতিক ইতিহাসে এমন রাজনৈতিক মুহূর্ত বিরল যেখাে দুদিনের মধ্যে একটি ক্ষমতাশালী সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। যে বিক্ষোভে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির পতন হয়েছে তার নেপথ্যে ছিলেন এক তরুণ সমাজকর্মী—সুদান গুরুং। তার নেতৃত্বে ‘জেনারেশন জেড’-এর আন্দোলন কেবল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সুশাসনের অভাবের বিরুদ্ধে এক সর্বজনীন বিক্ষোভে পরিণত হয়।

৩৬ বছর বয়সী সুদানের যাত্রা শুরু হয়েছিল এক ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি থেকে। ২০১৫ সালের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে তিনি সন্তান হারান। সেই শোক তাকে ঠেলে দেয় সমাজসেবায়, এবং তিনি গড়ে তোলেন “হামি নেপাল” নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রথমদিকে এই সংগঠন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ ও সহায়তা প্রদান করলেও, ধীরে ধীরে এটি তরুণদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার সচেতনতার প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা ছিল আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ। সুদান কৌশল ঠিক করলেন আন্দোলনকে এমনভাবে সাজানোর, যাতে তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয় এবং একই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ কিন্তু প্রভাবশালী প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।

আন্দোলন সংগঠনে সুদানের প্রথম ধাপ ছিল ডিজিটাল নেটওয়ার্ক গঠন। নিষেধাজ্ঞার মাঝেও তিনি বিকল্প মেসেজিং অ্যাপ, ভিপিএন, এবং মুখে মুখে প্রচারের মাধ্যমে বার্তা ছড়ালেন। হামি নেপালের স্বেচ্ছাসেবীরা রাতভর ফোন কল, হ্যান্ডবিল ও পোস্টারের মাধ্যমে বিক্ষোভের সময়, স্থান ও নিরাপত্তা নির্দেশনা জানিয়ে দিলেন।

দ্বিতীয় ধাপে নিলেন প্রতীকী প্রতিবাদের কৌশল। তিনি তরুণদের স্কুল ইউনিফর্ম পরে, হাতে বই নিয়ে রাস্তায় নামতে আহ্বান জানালেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও এই চিত্র ভাইরাল হয়, যা আন্দোলনের প্রতি বিশ্বজনমতের সহানুভূতি তৈরি করে।

তৃতীয় ধাপ ছিল ক্ষেত্র সমন্বয়। সুদান প্রতিটি শহরে স্থানীয় সমন্বয়ক নিয়োগ দেন, যারা ভিড় পরিচালনা, মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ, এবং পুলিশি বাধা সামলানোর পরিকল্পনা করতেন। হাসপাতাল ও চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থাও আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাখা হয়, যাতে আহতরা দ্রুত সহায়তা পান।

চতুর্থ ধাপে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পুনরায় চালুর দাবির পাশাপাশি তিনি সরাসরি সরকারের পদত্যাগের আহ্বান জানান। এই সংগঠিত, সুপরিকল্পিত আন্দোলন দুই দিনের মধ্যেই সরকারকে চরম চাপে ফেলে। রাজধানী থেকে প্রাদেশিক শহর—সবখানে তরুণদের বিক্ষোভ, আন্তর্জাতিক মহলের নজর, এবং জনসমর্থনের ঢেউ—সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

সরকার পতনের পর সুদান গুরুং আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বার্তায় বলেন—এটি শুধু একটি দাবির জয় নয়, বরং নেপালের জন্য নতুন এক সূচনা। তিনি সবাইকে শান্ত থাকতে, সহিংসতা এড়াতে এবং অর্জিত সাফল্যকে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনে রূপ দিতে আহ্বান জানান। তার ভাষায়, এখনই সময় নেপালকে দুর্নীতি ও অকার্যকারিতার পথ থেকে সরিয়ে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থার পথে নিয়ে যাওয়ার।

ওআ/আপ্র/০৯/০৯/২০২৫