প্রত্যাশা ডেস্ক: থাইল্যান্ডের প্রভাবশালী সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন শিনাওয়াত্রাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে যে, তার হাসপাতালে থাকার সময়কাল ছিল কারাগার এড়ানোর একটি প্রচেষ্টা। আদালতের এ রায়কে গত দুই দশক ধরে থাই রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারকারী এক ক্ষমতাধর পরিবারের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
আদালত বলেছেন, থাকসিন এর আগে তার সাজার বেশিরভাগ সময় বেআইনিভাবে হাসপাতালে কাটিয়েছেন, ওই সময়টুকু তাকে অবশ্যই কারাগারে কাটাতে হবে। বিচারকরা আরো বলেন, থাকসিনের গুরুতর কোনো অসুস্থতা ছিল না এবং তাকে কারাগারেই চিকিৎসা দেওয়া যেতা।
বিতর্কিত এই ধনকুবের ২০২৩ সালের আগস্টে ১৫ বছরের আত্ম-নির্বাসন শেষে দেশে ফেরার পর মাত্র কয়েক ঘণ্টা কারাগারে কাটিয়েছিলেন। এরপর হৃদরোগ ও বুক ব্যথার অভিযোগে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন, যা নিয়ে ব্যাপক সংশয় এবং জনরোষ সৃষ্টি হয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে স্বার্থের সংঘাত ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে দেওয়া তার আট বছরের সাজা রাজা এক বছর করে দেন এবং মাত্র ছয় মাস কারাভোগের পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। এই পুরো সময়টাই তিনি হাসপাতালে ভিআইপি ওয়ার্ডে কাটিয়েছিলেন।
আদালতের অভিযোগ, তিনি এবং তার চিকিৎসকেরা ইচ্ছাকৃতভাবে হাসপাতাল থাকার সময় দীর্ঘায়িত করেছেন।
রায়ে বলা হয়, আসামি জানতেন বা সচেতন ছিলেন যে পরিস্থিতি কোনো গুরুতর জরুরি অবস্থা নয়। তার কেবল দীর্ঘস্থায়ী রোগ ছিল যা বহির্বিভাগে চিকিৎসা সম্ভব, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন ছিল না। রায় ঘোষণার এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে থাকসিনকে বহনকারী কারা বিভাগের গাড়ি ব্যাংককের একটি কারাগারে প্রবেশ করতে দেখা যায়।
৭৬ বছর বয়সী এই প্রভাবশালী নেতা এখন রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের সময় পার করছেন। থাকসিনের বোন ও কন্যাও পরে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হন। তার কন্যা ও রাজনৈতিক উত্তরসূরি পায়েতংতার্ন শিনাওয়াত্রাকে ২৯ আগস্ট আদালত প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কম্বোডিয়ার নেতা হুন সেনের সঙ্গে এক ফোনালাপে নৈতিকতার মান লঙ্ঘনের অভিযোগে সাংবিধানিক আদালত তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেয়।
মঙ্গলবার রায় ঘোষণার সময় আদালতে বাবার সঙ্গেই পায়েতংতার্নকে দেখা গেছে। রায় ঘোষণার পর পায়েতংতার্ন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি তার বাবাকে নিয়ে চিন্তিত। তবে থাকসিন ও তার পরিবারের সবাই মানসিকভাবে শক্ত আছেন। থাকসিন এক চতুর্থাংশ শতাব্দী ধরে থাই রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন। তিনি থাইল্যান্ডের প্রথম সাবেক প্রধানমন্ত্রী যাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। থাকসিন রায় মেনে নিয়েছেন এবং বলেছেন তিনি দৃঢ় থাকবেন। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে থাকসিন বলেন, আজ আমি হয়তো স্বাধীনতা হারিয়েছি, কিন্তু দেশের ও জনগণের কল্যাণে চিন্তার স্বাধীনতা আমার রয়েছে।
সানা/ওআ/আপ্র/০৯/০৯/২০২৫























