আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নতুন রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হলো ফ্রান্স। পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে পরাজিত হয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরু। তাকে পদচ্যুত করার পক্ষে সোমবার ভোট দিয়েছেন পার্লামেন্টের বেশির ভাগ সদস্য। এর ফলে এখন ফ্রান্সের সরকারকেও ক্ষমতা ছাড়তে হবে। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বাইরু তার সরকারের পদত্যাগপত্র প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর কাছে জমা দেবেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুত করার পক্ষে ভোট পড়ে ৩৬৪টি। বিপক্ষে ভোট দেন ১৯৪ জন পার্লামেন্ট সদস্য। ২৫ জন সদস্য ভোটদানে বিরত ছিলেন। এই আস্থা ভোটের আহ্বান করেছিলেন বাইরু নিজেই। সরকারের জাতীয় ঋণ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনার পক্ষে সমর্থন আদায় করার লক্ষ্য ছিল তার।
ভোটে পরাজয়ের ফলে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ৯ মাসের মাথায় পদ ছাড়তে হবে বাইরুকে। শুধু তাই নয়, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে দুই বছরের কম সময়ের মধ্যে এখন পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী বেছে নিতে হবে। বিষয়টি ম্যাক্রোঁর দ্বিতীয় মেয়াদের হতাশা ও স্থবিরতাকে আরো স্পষ্ট করছে।
তবে ম্যাক্রোঁর দফতর জানিয়েছে, এ প্রক্রিয়া ‘আসন্ন কয়েক দিনের মধ্যে’ সম্পন্ন হবে।
সম্ভাব্য বিকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে কেন্দ্র-ডানপন্থা থেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ; বাম দিকে ঝুঁকে সমাজতান্ত্রিক দলের সাথে সমন্বয় করে একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা; অথবা সংসদ ভেঙে নতুন নির্বাচন ঘোষণা করা।
কেউ কেউ ধারণা করছেন, এবার ম্যাক্রোঁ বামপন্থী প্রধানমন্ত্রীর দিকে ঝুঁকতে পারেন, যেহেতু রক্ষণশীল বার্নিয়ে ও মধ্যপন্থী বাইরু দুজনেই ব্যর্থ হয়েছেন।
তাই মনে হচ্ছে ম্যাক্রোঁ প্রথমে তার নিজস্ব শিবির থেকেই নতুন কাউকে বেছে নিতে চাইবেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নু, শ্রমমন্ত্রী ক্যাথরিন ভোট্রাঁ এবং অর্থমন্ত্রী এরিক লম্বার্ডকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আনা হচ্ছে।
দূর-বামপন্থী ফ্রান্স আনবাওড দলের কট্টর প্রতিপক্ষরা অবশ্য ম্যাক্রোঁর নিজস্ব পদত্যাগ দাবি করেছে, যদিও অধিকাংশ বিশ্লেষকরা মনে করেন এর সম্ভাবনা কম।
কিছু বিশ্লেষক বাইরুর পতনকে রাজনৈতিক আত্মহত্যা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। প্রয়োজন ছাড়াই তিনি আগাম আস্থা ভোট ডাকেন; অথচ তিনি চাইলে আগামী মাসগুলো সমর্থন তৈরির চেষ্টা করতে পারতেন।
অথচ ভোটের আগে পার্লামেন্ট সদস্যদের তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভুগবে যদি ফ্রান্স তার আর্থিক স্বাধীনতা হারায়। ঋণের কাছে আত্মসমর্পণ মানেই অস্ত্রের কাছে আত্মসমর্পণ। তিনি সতর্ক করে দেন, উল্লেখ করে যে বর্তমান ঋণের মাত্রা মানে ‘তরুণ প্রজন্মকে দাসত্বের দিকে ঠেলে দেওয়া’।
তিনি আরো বলেন, আপনারা হয়তো সরকারকে পতন ঘটানোর ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু বাস্তবতাকে মুছে ফেলতে পারবেন না।
তবে পার্লামেন্ট কিংবা ফ্রান্সে বাইরুর সতর্কবার্তার কোনো প্রভাব পড়েনি। বাম ও চরম-ডানপন্থী সদস্যরা অভিযোগ করেছেন যে, তিনি তার এবং ম্যাক্রোঁর দায়িত্ব আড়াল করার চেষ্টা করছেন, যারা ফ্রান্সকে বর্তমান অবস্থায় এনেছেন।
দেশজুড়েও বাইরুর বিশ্লেষণ তেমন সাড়া জাগায়নি – জরিপে দেখা যাচ্ছে, অল্প লোকই ঋণ নিয়ন্ত্রণকে জাতীয় অগ্রাধিকার মনে করে, বরং জীবনযাত্রার খরচ, নিরাপত্তা ও অভিবাসনকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে।
এসি/আপ্র/০৯/০৯/২০২৫