প্রত্যাশা ডেস্ক: দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। পর পর দুইবার তফসিল ঘোষণা করার পর অবশেষে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আসন্ন জাকসু নির্বাচন। এরই মধ্যে এবারের নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে জাকসু নির্বাচন কমিশন। যেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ১২৪ জন। অন্যদিকে ৬৫ পদে কোনো প্রার্থী নেই।
নির্বাচন কমিশন সূত্র মতে, এবারের জাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি পদের বিপরীতে ১৭৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। অপরদিকে ২১টি হল সংসদে ৩১৫টি পদের বিপরীতে প্রার্থী ৪৪৩ জন। এসব পদের ৬৫টিতে নেই কোনো প্রার্থী, আর ১২৪ পদে প্রার্থীরা জয় লাভ করবেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এর মধ্যে ১১টি ছাত্র হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ৬৫ জন প্রার্থী, ৯টি পদে নেই কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী। অপরদিকে ১০টি ছাত্রী হলে ৫৯টি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জয়ী হবেন প্রার্থীরা, কোনো প্রার্থী নেই ৫৬টি পদে।
গত ২৯ আগস্ট জাকসু নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা হতে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি ছাত্র হলে পদ রয়েছে ১৬৫। যেখানে ১০ নম্বর ছাত্র হল সংসদে ৬ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করবেন। ২১ নম্বর হলে ১টি আসন শূন্য ও ৫ পদে একাধিক প্রার্থী নেই। আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলে ৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে চলেছেন। আল বেরুনী হলে ৪ পদে কোনো প্রার্থী নেই ও ৫ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে যাচ্ছেন ১০ জন, ফাঁকা আছে আরো ১টি পদ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ১ পদে একাধিক প্রার্থী নেই।
মওলানা ভাসানী হলে ৬ পদে একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। মীর মশাররফ হোসেন হলে পাঁচটি পদে একাধিক প্রার্থী নেই। শহীদ রফিক-জব্বার হলে ৬ জন প্রতিনিধি নির্ধারিত হবেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। শহীদ সালাম-বরকত হলে ২ পদে কোনো প্রার্থী পাওয়া যায়নি ও ৯ পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে ১টি পদ ফাঁকা রয়ে গেছে। অপরদিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হবেন ৪ জন প্রার্থী।
এ ছাড়া মেয়েদের ১০ হলের মধ্যে বেগম সুফিয়া কামাল হলে ১০ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় লাভ করবেন। যেখানে বাকি ৫ পদে কোনো প্রার্থী নেই। বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলে চারটি পদে একাধিক প্রার্থী নেই, ৬ পদ প্রার্থী শূন্য। রোকেয়া হলে ৬ পদ শূন্য, ৪ পদে একাধিক প্রার্থী নেই। প্রীতিলতা হলে ১১টি পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা জয়ী হতে যাচ্ছেন, শূন্য পদ রয়েছে ৩টি। নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ৬ পদে একাধিক প্রার্থী নেই, ৯ পদ শূন্য। ফজিলতুন্নেছা হলে ৯ পদে একাধিক প্রার্থী নেই, ৩ পদ শূন্য। বেগম খালেদা জিয়া হলের ৭ পদ শূন্য, ৬ পদে একাধিক প্রার্থী নেই। ১৫ নম্বর হলে ৫ পদে প্রার্থী নেই, ৮ পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হবেন। সবচেয়ে বেশি প্রার্থী সংকটে রয়েছে জাবির ১৩ নম্বর ছাত্রী হল সংসদ। যেখানে ১২টি পদে কোনো প্রার্থী নেই। ১ জন প্রার্থী সরাসরি জয়লাভ করবেন।
প্রার্থী সংকটের বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, বিগত দিনের জুলুমের রাজনীতির জন্য অনেকে প্রার্থী হননি। বিশেষ করে ছাত্রলীগের সময় মেয়েদের যেভাবে অনলাইন ও সরাসরি হেনস্তা করা হয়েছে এর জন্য মেয়েদের নেতৃত্ব আসতে দ্বিধাবোধ কাজ করছে। আমাদের প্যানেলের জিএস প্রার্থীও একজন মেয়ে। যা পর্বরতীতে মেয়েদের নেতৃত্ব আসতে সাহায্য করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আরিফ উল্লাহ আদিব বলেন, ফ্যাসিবাদ আমলের নোংরা রাজনীতির জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে অনীহা রয়েছে। জাকসু নির্বাচনের গুরুত্ব শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপলব্ধি করানো এই নির্বাচনের অন্যতম কাজ। সুষ্ঠু নির্বাচন ও কেন্দ্রীয় সংসদে নির্বাচিত প্রার্থীদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নির্বাচন নিয়ে সবার আস্থা অর্জন করা সম্ভব।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) সমর্থিত ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, জুলাইসহ দেশের সব আন্দোলনে মেয়েদের ভূমিকা অন্যতম। কিন্তু অনলাইনে নারী নেত্রীদের নানা রকমের বুলিং ও হেনস্তা করা হয়। নারীদের সবদিক দিয়ে অবহেলিত করা হয়ে থাকে। এটি নারীদের নির্বাচনে না আসার অন্যতম কারণ।
জাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, দীর্ঘ ৩৩ বছর পর নির্বাচন হচ্ছে। সেই হিসেবে আমরা বহু শিক্ষার্থীর সাড়া পেয়েছি। শিক্ষার্থীদের কাক্সিক্ষত সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের আরো নির্বাচন ও নেতৃত্বের বিষয়ে এগিয়ে আনতে পারবো।