ঢাকা ১০:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫

‘প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, অংশীদার’ হওয়ার অঙ্গীকার করলো চীন-ভারত

  • আপডেট সময় : ০৯:৪০:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫
  • ৬০ বার পড়া হয়েছে

চীনের তিয়ানজিয়ানে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সাইডলাইনে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে একে অপরের সঙ্গে হাত মেলান চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী -ছবি রয়টার্স

প্রত্যাশা ডেস্ক: চীনের তিয়ানজিয়ানে এক নিরাপত্তা সম্মেলনের সাইডলাইনে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে হওয়া এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ভারতের নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, নয়া দিল্লি বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

রোববার (৩১ আগস্ট) থেকে তিয়ানজিয়ানে দুই দিনব্যাপী সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে। তাতে অংশ নিতে ৭ বছর পর চীন গেছেন মোদী। এসসিওর এবারের সম্মেলনে মোদী ছাড়াও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, বেলারুশের আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো এবং পশ্চিম, মধ্য, দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান উপস্থিত আছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
তিয়ানজিয়ানের এই সম্মেলনকে ‘গ্লোবাল সাউথের জোরাল সংহতি’ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আস্থা ও সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে আমাদের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ, বৈঠকে মোদী শি-কে এমনটাই বলেছেন বলে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি এক্স একাউন্টে পোস্ট করা এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে শি বলেছেন, উভয় পক্ষেরই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কৌশলগত উচ্চতা ও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ও পরিচালনা করা দরকার। একে অপরের বন্ধু হওয়াই একে অপরের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত, চীনা প্রেসিডেন্ট এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
মস্কোর তেল কেনার শাস্তি হিসেবে ওয়াশিংটন ভারতীয় পণ্যে যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, তা কার্যকর হওয়ার পাঁচদিনের মাথায় চীন-ভারত এ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হল। দুই নেতা এখন পশ্চিমা চাপের বিপক্ষে এশিয়ার দুই গুরুত্বপূর্ণ পরাশক্তি যে ঐক্যবদ্ধ তা দেখাতে চাইছেন, বলছেন বিশ্লেষকরা।
বিরোধপূর্ণ হিমালয় সীমান্তে এখন ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতার’ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলেও দাবি করেছেন মোদী। ২০২০ সালে ওই সীমান্তে দুই দেশের সংঘর্ষে কয়েকজনের প্রাণহানি বেইজিং-নয়া দিল্লি সীমান্ত উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে, এক পর্যায়ে দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে প্রায় সবক্ষেত্রেই সহযোগিতা বন্ধও হয়ে যায়। তবে গত বছর থেকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। দুই দেশ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে একমত হয়েছে বলেও মোদী জানিয়েছেন, তবে এ নিয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি। গত বছর শি ও মোদী রাশিয়াতে বরফগলানো এক বৈঠকে সীমান্তে টহল নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছান। এরপর থেকে বিশ্বের শীর্ষ দুই জনবহুল দেশের মধ্যে বিবাদ কমতে শুরু করে; সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তারা একে অপরের আরো কাছে এসেছে ওয়াশিংটনের দেওয়া শুল্কের চাপে পড়ে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ককে মোকাবেলায় দিল্লি যখন বিকল্প পথ খুঁজতে শুরু করে, তখন বেইজিংকে তারা পাশে পায়।
দুই দেশের মধ্যে শিগগিরই সরাসরি বিমান চলাচল ফের চালু হবে বলে মোদী জানিয়েছেন। এটি ২০২০ সাল থেকে বন্ধ ছিল। তবে ঠিক কখন থেকে এই সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তা বলেননি।

ভারতে দুর্লভ মৌল, সার ও টানেল বোরিং মেশিন রপ্তানিতে বিধিনিষেধ ছিল চীনের, ভারতে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র সফরের সময় বেইজিং তা তুলে নিতে রাজি হয়। ওয়াশিংটন ভারতীয় পণ্যে যে চড়া শুল্ক আরোপ করেছে তারও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে চীন, এ ইস্যুতে বেইজিং ‘দৃঢ়ভাবে ভারতের পাশে থাকবে’ বলে চলতি মাসেই নয়া দিল্লিতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত সু ফেইহং মন্তব্য করেছিলেন। দশকের পর দশক ধরে ওয়াশিংটন এশিয়ায় বেইজিংয়ের প্রভাব মোকাবেলায় নয়া দিল্লিকে কাছে টানার চেষ্টা করেছে। কিন্তু দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনের সময় তার উল্টোটাই দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীন তিব্বতের বৌদ্ধ স্থাপনায় ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের যেতে দিচ্ছে। দুই দেশই একে অপরের উপর থেকে ভিসা বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ভারত ও চীন সম্পর্কের নতুন ভারসাম্য খুঁজে পেতে এক দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়ায় জড়িয়েছে, বলেছেন বেঙ্গালুরুর তক্ষশীলা ইনস্টিটিউটের চীন-ভারত সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ মনোজ কেওয়ালরামানাই।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

‘প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, অংশীদার’ হওয়ার অঙ্গীকার করলো চীন-ভারত

আপডেট সময় : ০৯:৪০:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: চীনের তিয়ানজিয়ানে এক নিরাপত্তা সম্মেলনের সাইডলাইনে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে হওয়া এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ভারতের নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, নয়া দিল্লি বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

রোববার (৩১ আগস্ট) থেকে তিয়ানজিয়ানে দুই দিনব্যাপী সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে। তাতে অংশ নিতে ৭ বছর পর চীন গেছেন মোদী। এসসিওর এবারের সম্মেলনে মোদী ছাড়াও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, বেলারুশের আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো এবং পশ্চিম, মধ্য, দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান উপস্থিত আছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
তিয়ানজিয়ানের এই সম্মেলনকে ‘গ্লোবাল সাউথের জোরাল সংহতি’ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আস্থা ও সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে আমাদের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ, বৈঠকে মোদী শি-কে এমনটাই বলেছেন বলে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি এক্স একাউন্টে পোস্ট করা এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে শি বলেছেন, উভয় পক্ষেরই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কৌশলগত উচ্চতা ও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ও পরিচালনা করা দরকার। একে অপরের বন্ধু হওয়াই একে অপরের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত, চীনা প্রেসিডেন্ট এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
মস্কোর তেল কেনার শাস্তি হিসেবে ওয়াশিংটন ভারতীয় পণ্যে যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, তা কার্যকর হওয়ার পাঁচদিনের মাথায় চীন-ভারত এ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হল। দুই নেতা এখন পশ্চিমা চাপের বিপক্ষে এশিয়ার দুই গুরুত্বপূর্ণ পরাশক্তি যে ঐক্যবদ্ধ তা দেখাতে চাইছেন, বলছেন বিশ্লেষকরা।
বিরোধপূর্ণ হিমালয় সীমান্তে এখন ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতার’ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলেও দাবি করেছেন মোদী। ২০২০ সালে ওই সীমান্তে দুই দেশের সংঘর্ষে কয়েকজনের প্রাণহানি বেইজিং-নয়া দিল্লি সীমান্ত উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে, এক পর্যায়ে দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে প্রায় সবক্ষেত্রেই সহযোগিতা বন্ধও হয়ে যায়। তবে গত বছর থেকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। দুই দেশ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে একমত হয়েছে বলেও মোদী জানিয়েছেন, তবে এ নিয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি। গত বছর শি ও মোদী রাশিয়াতে বরফগলানো এক বৈঠকে সীমান্তে টহল নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছান। এরপর থেকে বিশ্বের শীর্ষ দুই জনবহুল দেশের মধ্যে বিবাদ কমতে শুরু করে; সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তারা একে অপরের আরো কাছে এসেছে ওয়াশিংটনের দেওয়া শুল্কের চাপে পড়ে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ককে মোকাবেলায় দিল্লি যখন বিকল্প পথ খুঁজতে শুরু করে, তখন বেইজিংকে তারা পাশে পায়।
দুই দেশের মধ্যে শিগগিরই সরাসরি বিমান চলাচল ফের চালু হবে বলে মোদী জানিয়েছেন। এটি ২০২০ সাল থেকে বন্ধ ছিল। তবে ঠিক কখন থেকে এই সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তা বলেননি।

ভারতে দুর্লভ মৌল, সার ও টানেল বোরিং মেশিন রপ্তানিতে বিধিনিষেধ ছিল চীনের, ভারতে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র সফরের সময় বেইজিং তা তুলে নিতে রাজি হয়। ওয়াশিংটন ভারতীয় পণ্যে যে চড়া শুল্ক আরোপ করেছে তারও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে চীন, এ ইস্যুতে বেইজিং ‘দৃঢ়ভাবে ভারতের পাশে থাকবে’ বলে চলতি মাসেই নয়া দিল্লিতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত সু ফেইহং মন্তব্য করেছিলেন। দশকের পর দশক ধরে ওয়াশিংটন এশিয়ায় বেইজিংয়ের প্রভাব মোকাবেলায় নয়া দিল্লিকে কাছে টানার চেষ্টা করেছে। কিন্তু দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনের সময় তার উল্টোটাই দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীন তিব্বতের বৌদ্ধ স্থাপনায় ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের যেতে দিচ্ছে। দুই দেশই একে অপরের উপর থেকে ভিসা বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ভারত ও চীন সম্পর্কের নতুন ভারসাম্য খুঁজে পেতে এক দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়ায় জড়িয়েছে, বলেছেন বেঙ্গালুরুর তক্ষশীলা ইনস্টিটিউটের চীন-ভারত সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ মনোজ কেওয়ালরামানাই।