নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সূত্রে জানা গেছে, রোডম্যাপে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং ভোটগ্রহণের অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ইসি।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) দুপুরের পর সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, সংসদীয় আসনগুলোর সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশের জন্য ১৫ সেপ্টেম্বরকে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের ভৌগোলিক সীমানা চূড়ান্ত করা হবে। একই সঙ্গে, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা জিআইএস (ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা) ম্যাপ প্রকাশ করা হবে ৩০ সেপ্টেম্বর। এই জিআইএস ম্যাপের মাধ্যমে প্রতিটি আসনের সীমানা ডিজিটাল ফরম্যাটে স্পষ্ট করে তুলে ধরা হবে, যা স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতা নিশ্চিত করবে বলে ইসি জানিয়েছে।
নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন
সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের প্রক্রিয়াও চলছে পুরোদমে। প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য ১৪ সেপ্টেম্বরকে সময়সীমা ধরা হয়েছে। যেসব দল এই সময়ের মধ্যে প্রাথমিক আবেদন করবে, তাদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে ৩০ সেপ্টেম্বর। এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের পথ উন্মুক্ত হবে।
কারাবন্দিদের ভোটাধিকার
নির্বাচন কমিশন কারাবন্দি ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ভোটের ঠিক দুই সপ্তাহ আগে দেশের বিভিন্ন জেলখানায় কারাবন্দিদের কাছে ব্যালট পেপার পৌঁছে দেওয়া হবে, যাতে তারাও ভোট দিতে পারেন। এই পদক্ষেপটি কারাবন্দিদের নাগরিক অধিকার সংরক্ষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
নির্বাচনী তথ্য প্রচার
নির্বাচনি তথ্য প্রচারের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়, টিঅ্যান্ডটি, বিটিআরসিসহ বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সঙ্গে সভা আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে।
পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন
নির্বাচন প্রক্রিয়াকে পর্যবেক্ষণের জন্য দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর চূড়ান্ত নিবন্ধনের কাজ শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী, ১৫ নভেম্বরের মধ্যে এই সংস্থাগুলোর নিবন্ধন চূড়ান্ত করা হবে। নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রগুলোতে তাদের প্রতিনিধি পাঠাতে পারবে, যা নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
প্রশিক্ষণ শুরু আজ থেকে (২৮ আগস্ট)
এদিকে আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, যা শেষ হবে ভোটের কয়েকদিন আগে। নির্বাচনী ম্যানুয়েল, নির্দেশিকা, পোস্টার ইত্যাদি মুদ্রণ ১৫ সেপ্টেম্বর মধ্যে নির্বাচনের সব ধরনের মালামাল সংগ্রহ ও বিতরণ কার্যক্রম ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স চূড়ান্ত
ব্যবহার উপযোগী স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স চূড়ান্ত করা হবে ৩০ নভেম্বর মধ্যে, ১৫ নভেম্বর চূড়ান্ত করা হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাজেট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুকূলে অর্থ বরাদ্দের জন্য বৈঠক ১৬ নভেম্বর থেকে ২০ নভেম্বর। ভোটাগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত শেষ হবে ৩০ সেপ্টেম্বরে মধ্যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম সভা হবে ২৫ সেপ্টেম্বর। আবার নির্বাচনের আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ৩১ অক্টোবর হবে। একই সময়ের মধ্যে ৩১ আইসিটি সংক্রান্ত সব কাজ সম্পন্ন করা হবে।
নির্বাচন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু ও সফল আয়োজনের জন্য প্রতিটি ধাপ সময়মতো সম্পন্ন করা হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তারা একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
এসি/আপ্র/২৮/০৮/২০২৫