ঢাকা ০১:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫
তদন্তের আওতায় সাবেক গভর্নররাও

২৬ ব্যাংকের এমডি-পরিচালকের সম্পদ যাচাই করছে সরকার

  • আপডেট সময় : ০৪:৩৮:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫
  • ১৪ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে ব্যাংক খাতে সংঘটিত নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর অংশ হিসেবে ২৬টি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সম্পদ যাচাইয়ে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একইসঙ্গে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানরাও তদন্তের আওতায় এসেছেন।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে একটিং সংবাদমাধ্যম এসব তথ্য জানিয়েছে।

টানা ১৫ বছরের শাসনামলে ব্যাংক খাতে
সংঘটিত নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের
অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

তদন্তের আওতায় যারা: অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে দুদককে ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে সরকারি ব্যাংক: সোনালী, রূপালী, জনতা, অগ্রণী, বেসিক ও বিডিবিএল।
বেসরকারি ব্যাংক: ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, আইএফআইসি, ইউসিবি, এক্সিম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, আল-আরাফাহ্ ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, ন্যাশনাল, এনআরবি, এনআরবি গ্লোবাল, মেঘনা, বাংলাদেশ কমার্স, প্রিমিয়ার, পদ্মা, এবি ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক। বিশেষ করে আলোচিত এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন অন্তত ছয়টি ব্যাংকও রয়েছে এ তালিকায়। ব্যাংক খাত নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক তিন গভর্নর— ড. আতিউর রহমান, ড. ফজলে কবির ও আবদুর রউফ তালুকদার এবং ছয়জন ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যেই তলব করেছে দুদক।

অনিয়মের প্রেক্ষাপট: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, বিগত ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে ভয়াবহ মাত্রায় অনিয়ম হয়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলোতে বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারি, খেলাপি ঋণ সৃষ্টি ও অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটেছে। বেসরকারি খাতের অনেক ব্যাংকও একইভাবে প্রভাবশালী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থেকে অসংখ্য আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে। ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদের যোগসাজশে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কিছু ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের প্রত্যক্ষ যোগসাজশে অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংকের খেলাপিঋণের হার ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমনকি একটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৯৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে শুনেছি।

সরকারি পদক্ষেপ: অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, টানা ১৫ বছর ধরে রাজনৈতিক প্রভাব, শিথিল তদারকি ও দায়মুক্তির সংস্কৃতির কারণে ব্যাংক খাত গভীর সঙ্কটে নিমজ্জিত হয়েছে। সরকারি খাতের ব্যাংকগুলো ঋণ আদায়ে অক্ষম হয়ে পড়েছে। কিছু বেসরকারি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে, আমানত ফেরত দিতেও হিমশিম খাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ব্যাংক খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদকের মাধ্যমে তদন্ত শুরু। কয়েকটি দুর্বল বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন। একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু করে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ। নতুন ঋণ নীতি, আমানত সুরক্ষা ও কঠোর তদারকি।

রাজনৈতিক প্রভাব ও দায়: অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ব্যাংক খাতের এই সংকট কেবল অর্থনৈতিক নয়, বরং রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তিরও ফল। আওয়ামী লীগ আমলে ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, বিশেষ করে এস আলম গ্রুপের মতো কিছু কনগ্লোমারেট ব্যাংক খাতকে প্রায় একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করেছে। ফলে নীতি, অনুমোদন ও ঋণ বিতরণে প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা ভেঙে পড়ে। অর্থনীতিবিদদের মতে, যদি দুদকের এ তদন্ত স্বচ্ছ ও কার্যকরভাবে শেষ করা যায়, তবে ব্যাংক খাতে আস্থা ফেরানো সম্ভব হবে। তবে কেবল ব্যক্তি পর্যায়ের দায় নিরূপণ নয়, ব্যাংকিং কাঠামোর গভীরে থাকা রাজনৈতিক প্রভাব, নিয়ন্ত্রক দুর্বলতা এবং আইনগত ফাঁকফোকর দূর না করলে সমস্যার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।

 

এসি/সানা/২৬/৮/২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

তদন্তের আওতায় সাবেক গভর্নররাও

২৬ ব্যাংকের এমডি-পরিচালকের সম্পদ যাচাই করছে সরকার

আপডেট সময় : ০৪:৩৮:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে ব্যাংক খাতে সংঘটিত নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর অংশ হিসেবে ২৬টি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সম্পদ যাচাইয়ে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একইসঙ্গে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানরাও তদন্তের আওতায় এসেছেন।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে একটিং সংবাদমাধ্যম এসব তথ্য জানিয়েছে।

টানা ১৫ বছরের শাসনামলে ব্যাংক খাতে
সংঘটিত নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের
অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

তদন্তের আওতায় যারা: অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে দুদককে ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে সরকারি ব্যাংক: সোনালী, রূপালী, জনতা, অগ্রণী, বেসিক ও বিডিবিএল।
বেসরকারি ব্যাংক: ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, আইএফআইসি, ইউসিবি, এক্সিম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, আল-আরাফাহ্ ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, ন্যাশনাল, এনআরবি, এনআরবি গ্লোবাল, মেঘনা, বাংলাদেশ কমার্স, প্রিমিয়ার, পদ্মা, এবি ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক। বিশেষ করে আলোচিত এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন অন্তত ছয়টি ব্যাংকও রয়েছে এ তালিকায়। ব্যাংক খাত নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক তিন গভর্নর— ড. আতিউর রহমান, ড. ফজলে কবির ও আবদুর রউফ তালুকদার এবং ছয়জন ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যেই তলব করেছে দুদক।

অনিয়মের প্রেক্ষাপট: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, বিগত ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে ভয়াবহ মাত্রায় অনিয়ম হয়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলোতে বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারি, খেলাপি ঋণ সৃষ্টি ও অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটেছে। বেসরকারি খাতের অনেক ব্যাংকও একইভাবে প্রভাবশালী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থেকে অসংখ্য আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে। ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদের যোগসাজশে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কিছু ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের প্রত্যক্ষ যোগসাজশে অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংকের খেলাপিঋণের হার ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমনকি একটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৯৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে শুনেছি।

সরকারি পদক্ষেপ: অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, টানা ১৫ বছর ধরে রাজনৈতিক প্রভাব, শিথিল তদারকি ও দায়মুক্তির সংস্কৃতির কারণে ব্যাংক খাত গভীর সঙ্কটে নিমজ্জিত হয়েছে। সরকারি খাতের ব্যাংকগুলো ঋণ আদায়ে অক্ষম হয়ে পড়েছে। কিছু বেসরকারি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে, আমানত ফেরত দিতেও হিমশিম খাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ব্যাংক খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদকের মাধ্যমে তদন্ত শুরু। কয়েকটি দুর্বল বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন। একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু করে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ। নতুন ঋণ নীতি, আমানত সুরক্ষা ও কঠোর তদারকি।

রাজনৈতিক প্রভাব ও দায়: অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ব্যাংক খাতের এই সংকট কেবল অর্থনৈতিক নয়, বরং রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তিরও ফল। আওয়ামী লীগ আমলে ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, বিশেষ করে এস আলম গ্রুপের মতো কিছু কনগ্লোমারেট ব্যাংক খাতকে প্রায় একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করেছে। ফলে নীতি, অনুমোদন ও ঋণ বিতরণে প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা ভেঙে পড়ে। অর্থনীতিবিদদের মতে, যদি দুদকের এ তদন্ত স্বচ্ছ ও কার্যকরভাবে শেষ করা যায়, তবে ব্যাংক খাতে আস্থা ফেরানো সম্ভব হবে। তবে কেবল ব্যক্তি পর্যায়ের দায় নিরূপণ নয়, ব্যাংকিং কাঠামোর গভীরে থাকা রাজনৈতিক প্রভাব, নিয়ন্ত্রক দুর্বলতা এবং আইনগত ফাঁকফোকর দূর না করলে সমস্যার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।

 

এসি/সানা/২৬/৮/২৫