ঢাকা ১০:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

ভারতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিয়ে ঢাকার অভিযোগ অস্বীকার দিল্লির

  • আপডেট সময় : ১০:০০:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫
  • ২৭ বার পড়া হয়েছে

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাণধীর জয়সওয়াল

প্রত্যাশা ডেস্ক: ভারতে থেকে আওয়ামী লীগের ‘পলাতক’ নেতাকর্মীরা ‘বাংলাদেশ-বিরোধী কার্যক্রম’ চালাচ্ছে বলে যে অভিযোগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করেছে, তার অস্বীকার করেছে দিল্লি।

বুধবার (২০ আগস্ট) এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাণধীর জয়সওয়াল বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো সদস্য ভারতের ভেতরে বসে বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে কিংবা ভারতীয় আইনের পরিপন্থি কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত-এমন কোনো বিষয়ে ভারত সরকার অবগত নয়। “ভারত সরকার তার ভূখণ্ড ব্যবহার করে অন্য দেশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর অনুমতি দেয় না।
ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লি এবং কলকাতায় আওয়ামী লীগের ‘কার্যালয় প্রতিষ্ঠার’ খবর সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। সেসব খবর নজরে আসার কথা তুলে ধরে বুধবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দেয়। ভারতের মাটি থেকে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক যাতে ‘বাংলাদেশ-বিরোধী’ কার্যক্রম চালাতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে এবং আওয়ামী লীগের কার্যালয় এখনই বন্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয় সেখানে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাণধীর জয়সওয়াল বলছেন, বাংলাদেশ সরকারের ওই বিবৃতি ‘যথাযথ নয়’।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন থেকেই ভারত সরকারের আশ্রয়ে দিল্লিতে অবস্থান করছেন। জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচার উদ্যোগ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে ধরপাকড়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নেতাদের অনেকের ভারতে অবস্থান করার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। চলতি বছরের মে মাসে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জুলাই অভ্যুত্থান দমাতে ‘গুম, খুন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, গণহত্যা, বেআইনি আটক, অমানবিক নির্যাতন, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাসী কার্য ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা জারি রাখার কথা বলা হয়। এর মধ্যে গত ৮ অগাস্ট বিবিসি বাংলার এক খবরে বলা হয়, কলকাতার উপকণ্ঠে একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে কার্যালয় খুলেছে আওয়ামী লীগ।

একজন আওয়ামী লীগ নেতাকে উদ্ধৃত করে ওই খবরে বলা হয়, নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ, বৈঠক ইত্যাদির জন্য একটা ঘর দরকার ছিল, এটা পাওয়া গেছে। এটাকে আমরা পার্টি অফিসই বলি, কিন্তু আদতে এটা একটা বাণিজ্যিক অফিস। আগে যে সংস্থা কাজ করত এখানে, তাদেরই ছেড়ে যাওয়া চেয়ার, টেবিল এসবই আমরা ব্যবহার করি। ওই নেতা বিবিসিকে এও বলেন, ৩০-৩৫ জনের বৈঠক এ দপ্তরেই হয়ে যায়, কিন্তু একটু চাপাচাপি করে বসতে হয়। ছোটখাটো বৈঠক বিভিন্ন নেতাদের বাসাবাড়িতে এখনো হয়। তবে বড় বৈঠকগুলো- যেখানে শ দুয়েক নেতা-কর্মীর হাজির হওয়ার কথা, সেরকম বৈঠকের জন্য কোনো ব্যাঙ্কয়েট হল বা কোনো রেস্তোরাঁর একটি অংশ ভাড়া নিয়ে নেওয়া হয়।

এরপর মঙ্গলবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টের এক প্রতিবেদনে কলকাতায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কার্যক্রমের বিষয় তুলে ধরা হয়। সেখান ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতের সঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতাকর্মীদের বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়।

দ্য প্রিন্টের ওই খবর প্রকাশের পর আলোচনার মধ্যে বুধবার (২০ আগস্ট) বিবৃতি দিয়ে এ বিষয়ে দিল্লির পদক্ষেপ চায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর থেকেই সেখানে আওয়ামী লীগের ‘ক্রমবর্ধমান কার্যক্রমের’ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, বৈধ কিংবা অবৈধভাবে ভারতের মাটিতে অবস্থান করে বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের, বিশেষ করে নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতা বা কর্মীদের কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, অফিস প্রতিষ্ঠা হলে সেটা বাংলাদেশর জনগণ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবমাননা। এমন ঘটনা পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে ভালো প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করছে এবং বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। এটা বাংলাদেশের জনগণের আবেগকে উসকে দিতে পারে, যা দুই নিকট প্রতিবেশীর মধ্যে চলমান উদ্যোগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে।

অন্তবর্তীকালীন সরকারের এমন বক্তব্যের জবাবে রাণধীর জয়সওয়াল যে বিবৃতি দিয়েছেন, সেখানে বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন দেখার প্রত্যাশার কথা বলা হয়েছে। জয়সওয়াল বলেন, বাংলাদেশের শিগগিরই অবাধ, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা পুনর্ব্যক্ত করছে ভারত, যাতে জনগণের ইচ্ছা ও ম্যান্ডেট নিশ্চিত হয়।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ভারতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিয়ে ঢাকার অভিযোগ অস্বীকার দিল্লির

আপডেট সময় : ১০:০০:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: ভারতে থেকে আওয়ামী লীগের ‘পলাতক’ নেতাকর্মীরা ‘বাংলাদেশ-বিরোধী কার্যক্রম’ চালাচ্ছে বলে যে অভিযোগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করেছে, তার অস্বীকার করেছে দিল্লি।

বুধবার (২০ আগস্ট) এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাণধীর জয়সওয়াল বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো সদস্য ভারতের ভেতরে বসে বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে কিংবা ভারতীয় আইনের পরিপন্থি কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত-এমন কোনো বিষয়ে ভারত সরকার অবগত নয়। “ভারত সরকার তার ভূখণ্ড ব্যবহার করে অন্য দেশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর অনুমতি দেয় না।
ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লি এবং কলকাতায় আওয়ামী লীগের ‘কার্যালয় প্রতিষ্ঠার’ খবর সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। সেসব খবর নজরে আসার কথা তুলে ধরে বুধবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দেয়। ভারতের মাটি থেকে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক যাতে ‘বাংলাদেশ-বিরোধী’ কার্যক্রম চালাতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে এবং আওয়ামী লীগের কার্যালয় এখনই বন্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয় সেখানে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাণধীর জয়সওয়াল বলছেন, বাংলাদেশ সরকারের ওই বিবৃতি ‘যথাযথ নয়’।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন থেকেই ভারত সরকারের আশ্রয়ে দিল্লিতে অবস্থান করছেন। জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচার উদ্যোগ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে ধরপাকড়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নেতাদের অনেকের ভারতে অবস্থান করার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। চলতি বছরের মে মাসে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জুলাই অভ্যুত্থান দমাতে ‘গুম, খুন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, গণহত্যা, বেআইনি আটক, অমানবিক নির্যাতন, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাসী কার্য ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা জারি রাখার কথা বলা হয়। এর মধ্যে গত ৮ অগাস্ট বিবিসি বাংলার এক খবরে বলা হয়, কলকাতার উপকণ্ঠে একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে কার্যালয় খুলেছে আওয়ামী লীগ।

একজন আওয়ামী লীগ নেতাকে উদ্ধৃত করে ওই খবরে বলা হয়, নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ, বৈঠক ইত্যাদির জন্য একটা ঘর দরকার ছিল, এটা পাওয়া গেছে। এটাকে আমরা পার্টি অফিসই বলি, কিন্তু আদতে এটা একটা বাণিজ্যিক অফিস। আগে যে সংস্থা কাজ করত এখানে, তাদেরই ছেড়ে যাওয়া চেয়ার, টেবিল এসবই আমরা ব্যবহার করি। ওই নেতা বিবিসিকে এও বলেন, ৩০-৩৫ জনের বৈঠক এ দপ্তরেই হয়ে যায়, কিন্তু একটু চাপাচাপি করে বসতে হয়। ছোটখাটো বৈঠক বিভিন্ন নেতাদের বাসাবাড়িতে এখনো হয়। তবে বড় বৈঠকগুলো- যেখানে শ দুয়েক নেতা-কর্মীর হাজির হওয়ার কথা, সেরকম বৈঠকের জন্য কোনো ব্যাঙ্কয়েট হল বা কোনো রেস্তোরাঁর একটি অংশ ভাড়া নিয়ে নেওয়া হয়।

এরপর মঙ্গলবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টের এক প্রতিবেদনে কলকাতায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কার্যক্রমের বিষয় তুলে ধরা হয়। সেখান ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতের সঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতাকর্মীদের বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়।

দ্য প্রিন্টের ওই খবর প্রকাশের পর আলোচনার মধ্যে বুধবার (২০ আগস্ট) বিবৃতি দিয়ে এ বিষয়ে দিল্লির পদক্ষেপ চায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর থেকেই সেখানে আওয়ামী লীগের ‘ক্রমবর্ধমান কার্যক্রমের’ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, বৈধ কিংবা অবৈধভাবে ভারতের মাটিতে অবস্থান করে বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের, বিশেষ করে নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতা বা কর্মীদের কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, অফিস প্রতিষ্ঠা হলে সেটা বাংলাদেশর জনগণ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবমাননা। এমন ঘটনা পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে ভালো প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করছে এবং বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। এটা বাংলাদেশের জনগণের আবেগকে উসকে দিতে পারে, যা দুই নিকট প্রতিবেশীর মধ্যে চলমান উদ্যোগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে।

অন্তবর্তীকালীন সরকারের এমন বক্তব্যের জবাবে রাণধীর জয়সওয়াল যে বিবৃতি দিয়েছেন, সেখানে বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন দেখার প্রত্যাশার কথা বলা হয়েছে। জয়সওয়াল বলেন, বাংলাদেশের শিগগিরই অবাধ, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা পুনর্ব্যক্ত করছে ভারত, যাতে জনগণের ইচ্ছা ও ম্যান্ডেট নিশ্চিত হয়।