লাইফস্টাইল ডেস্ক: সম্প্রতি রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় ফাহমিদা তাহসিন কেয়া নামের এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়। ভালোবেসে সিফাত আলীকে বিয়ে করেছিলেন কেয়া। প্রায় এক যুগের সংসারে তাদের চার সন্তানের জন্ম হয়। কেয়ার পরিবারের অভিযোগ, তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন স্বামী সিফাত। পরে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেন। তারা জানান সিফাত প্রায়ই ফাহমিদাকে মারধর করতেন। অনেকবার এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু চার সন্তানের কথা ভেবে ফাহমিদা সংসারে মানিয়ে চলছিলেন। যদি সাহস করে বেরিয়ে আসতেন, তাহলে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হতো না।
সম্পর্ক যদি বিষাক্ত হয়ে ওঠে, সম্পর্কের কারণে কারো জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়ে যায়, তবে তা থেকে বেরিয়ে আসাটাই ভালো।তবে এই বেরিয়ে আসা বা বিচ্ছেদের পরামর্শ দেওয়াটা যত সহজ, বাস্তবে সেটা ততটাই কঠিন। আত্মীয়, প্রতিবেশী, সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধব অনেকেই কটূ মন্তব্য বা ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বসেন। এই চাপের কারণে অনেকে এই ধরণের সম্পর্ক থেকে বের হতে ভয় পান।
কেয়া-সিফাতের মতো দম্পতিকে কখন এ রকম বিষাক্ত সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে হবে? আমেরিকান কাউন্সিল অন এক্সারসাইজের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কার জেনিফার জ্যাকবসেন জানান, আমরা সকলেই হয়তো এমন একটা সময়ের সম্মুখীন হয়েছি, যখন সঙ্গীর সঙ্গে বিচ্ছেদ করতে হয়েছে। জীবনের এমন পরিস্থিতি এসেছিল যে, তাকে ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু অনেকে আছেন যারা বুঝতে পারেন না কীভাবে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসবেন। তার মতো আরো অনেকের অভিজ্ঞতা ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ কী বলে?
বন্ধুত্ব নষ্ট হলে
সম্পর্কে বন্ধুত্ব থাকা জরুরি। সেই বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে গেলে কোনো সম্পর্কই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। যদি দেখেন সম্পর্কের আর বন্ধুত্ব নেই তাহলে তা দ্রুতই শেষ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
সম্পর্কে বিশ্বাস উঠে গেলে
সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিশ্বাস। পরস্পরের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি থাকলে সে সম্পর্ক নিয়ে বেশিদূর যাওয়া যায় না। যদি মনে হয় আপনা সঙ্গী আপনার সঙ্গে সন্দেহ ও অবিশ্বাসের কাজ করছে। আপনার সেই প্রমাণ পেয়েছেন আহলে সেই সম্পর্ক টিকিযে রাখা অসম্ভব হযে পড়ে বিশ্বাসের ঘাটতি নিয়ে কোনো সম্পর্ক সামনের দিকে ঠেলে নিতে থাকলেও, সামনে চলার এ পথ ক্রমশ বন্ধুর হতে থাকে। যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্বাস প্রাণশক্তির মতো। প্রাণ না থাকলে তো আর বেঁচে থাকা যায় না। ঠিক তেমনি যেকোনো সম্পর্কে বিশ্বাস না থাকলে সে সম্পর্কটা আর টিকিয়ে রাখা যায় না।
শারীরিক ও মানসিকভাবে নিযার্তিত হলে
সম্পর্কে থাকাকালীন মানসিক বা শারীরিক নিগ্রহের শিকার হন, দ্বিতীয় বার না ভেবে বেরিয়ে আসুন। পুরুষ হন বা নারী, সঙ্গী যদি কোনো ভাবে মৌখিক, অর্থনৈতিক, শারীরিক বা মানসিক নিগ্রহ করেন তবে অবিলম্বে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসবেন। ভালোবাসে বলে দুটো থাপ্পড় মারল- এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন এক জরিপ থেকে জানা যায়, প্রতি ৪ জন নারী এবং ১০ জন পুরুষ তার সঙ্গী দ্বারা নির্যাতিত হন। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের মতো দেশে এর হার আরো বেশি।
একসঙ্গে থেকেও একা অনুভব করা
যদি সঙ্গীর ভালো-মন্দের ওঠা নামা বা দৈনন্দিন যাপন আপনার মনে কোনো রকম দাগ না কাটে তাহলে বুঝতে হবে সম্পর্কের কোথাও দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এমনও হতে পারে আপনি যে কথাগুলো বলতে চাইছেন, শুনতে চাইছেন তা আপনার সঙ্গী কিছুতেই আর বুঝতে পারছেন না। সঙ্গী থেকে ও একা অনুভব করছেন। তার সঙ্গে থেকে, একা বোধ করেন। এমন হলে বুঝতে হবে আপনি আপনাকে এই সম্পর্ক তেকে বেড়িয়ে আসতে হবে।
শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে
সম্পর্কে থাকা দুজন সঙ্গীই তার প্রতি যত্নশীল হোক, দায়িত্বশীল হোক। আস্থা চান, প্রতিশ্রুতি চান। কিন্তু সম্পর্কে যদি পারস্পরিক শ্রদ্ধা না থাকে সবসময়ে সঙ্গীকে ছোট করে কথা বলা, তার সাফল্যকে হুমকি মনে করা, সবার সামনে অসম্মান করে কথা বলা কিংবা সঙ্গীকে কেউ অসম্মান করলে কোনো প্রতিবাদ না করা এ সবই সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর। সম্পর্কে মানসিক নিরাপত্তা না থাকলে সেটি আপনার মনের জন্য মোটেই ভালো নয়। এমন হলে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসুন।
সূত্র: টাইম ম্যাগাজিন
এসি/