নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি ঘটে যাওয়া পারিবারিক সহিংসতার দুটি মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ জানিয়েছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলছে, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অপরাধীরা বারবার এমন নৃশংস অপরাধ করার সাহস পাচ্ছে।
এক সপ্তাহে দুই তরুণী খুন: ঢাকার সৈয়দা ফাহমিদা তাহসিন কেয়া (২৫) এবং গাজীপুরের জেমি আক্তারকে (১৯) তাদের স্বামী নির্মমভাবে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমজেএফ মনে করছে, এ ধরনের ঘটনা নারীর প্রতি দীর্ঘস্থায়ী সহিংসতা ও ভয়াবহ সংকটকে আরো প্রকট করছে।
বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অপরাধীরা বারবার
এমন নৃশংস অপরাধ করার সাহস পাচ্ছে।
ঘটনাগুলো সমাজের জন্য বড় সতর্কবার্তা।
অবিলম্বে বিচারহীনতার অবসান ঘটিয়ে নারীর মর্যাদা,
নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান
পরিসংখ্যান যা বলছে: আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৩২২ জন নারী পারিবারিক সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ১৩৩ জনকে হত্যা করেছেন তাদের স্বামী। একই সময়ে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ স্বামীর নির্যাতনের অভিযোগে ৯ হাজারের বেশি কল রেকর্ড হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৪ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৭০ শতাংশ নারী কোনো না কোনো ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন, যার অর্ধেকের বেশি স্বামীর হাতে।
যা বলছে এমজেএফ: মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, অসংখ্য ঘটনা প্রকাশ্যে আসে না। ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটলেও অভিযোগ দায়েরের অভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। বিচারহীনতার সংস্কৃতি অপরাধীদের আরো বেপরোয়া করে তুলছে।
তিনি বলেন, নিম্নআয়ের অনেক নারী আর্থিক অসচ্ছলতা ও সামাজিক মর্যাদার ভয়ে সহিংস দাম্পত্য থেকে মুক্তি পান না। সন্তানদের ভবিষ্যতের চিন্তায় অসংখ্য নারী নীরবে নির্যাতন সহ্য করতে বাধ্য হন।
সরকারের প্রতি আহ্বান: এমজেএফ সরকারের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সমাজের প্রতি কয়েকটি দাবি জানিয়েছে।
যার মধ্যে-পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং সাধারণ মানুষের জন্য সহজ ভাষায় প্রচার করতে হবে। ভুক্তভোগী নারীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র, কাউন্সেলিং ও জীবিকা সহায়তা সেবা সম্প্রসারণ করতে হবে। যেসব সামাজিক প্রতিবন্ধকতা নারীদের নীরব করে রাখে, সেগুলো চিহ্নিত করে দূর করতে হবে। পারিবারিক সহিংসতাকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি ভাঙতে জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালু করতে হবে।
নীরবতায় ঢাকা যাবে না: এমজেএফ বলেছে, কেয়া ও জেমির মর্মান্তিক মৃত্যু কোনোভাবেই নীরবতার আড়ালে চাপা পড়ে যেতে পারে না। এ ঘটনাগুলো সমাজের জন্য এক বড় সতর্কবার্তা। অবিলম্বে বিচারহীনতার অবসান ঘটিয়ে নারীর মর্যাদা, নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।