ঢাকা ০৮:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫

সড়ক না থাকায় দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা

  • আপডেট সময় : ১২:১৮:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ১১৫ বার পড়া হয়েছে

সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা : রায়গঞ্জের পাঙ্গাসী ইউনিয়নের বেংনাই উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অবকাঠামো সবই আছে শুধু বিদ্যালয়ে যাতায়াতের নেই কোনো রাস্তা। তারপরও শিক্ষা লাভের আশায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বর্ষা মৌসুমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কলা গাছের বানানো ভুরা নিয়ে বিদ্যালয়ের যাতায়াত করে। আর বাকিটা শুকনো মৌসুমে অন্যের বাড়ির ওপর ও ক্ষেতের আইল দিয়ে যেতে হয় বিদ্যালয়ে। এতে কখনও কখনও শুনতে হয় বাজে ভাষায় গালাগালিও। শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, পানিতে ভিজে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করেন শিক্ষকরাও। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক থেকে প্রায় ২৫০ মিটার দূরে মাঠের ভিতরে বেংনাই উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্থানীয়দের উদ্যোগে ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। ২০১৩ সালে এসে স্কুলটি সরকারিও হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২ লাখ টাকা ব্যয়ে খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল একটি কালভার্ট কিন্তু সেটি এখন কোনো কাজেই আসছে না। নির্মিত কালভার্টটির উভয়পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি, পানিতে ভাসমানভাবে রয়েছে কালভার্টটি। আর এভাবেই কেটে গেছে ৩৩ বছর, তবুও স্কুলে যাবার একটি রাস্তা পায়নি শিক্ষার্থীরা। এলাকাবাসী ও স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছেন, অনেক জায়গায় ধরনা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। যার প্রভাবে এই বিদ্যালয়ের ১৬৫ জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দিন দিন কমে যাচ্ছে। স্কুলের সামনের মহাসড়কে পৌঁছাতেই দেখা যায় শিক্ষার্থীদের বাড়ি ফেরার সময় হয়েছে। তারা অপেক্ষা করছে খালের ওপারে। পানির মধ্য দিয়ে কীভাবে বাড়ি ফিরবে জানতে চাইলে পঞ্চম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, এখন পানি কমে গেছে। তাই অন্যের জমির আইল ও বাড়ির ওপর দিয়ে যাওয়া যায়। বর্ষার সময় কলা গাছের ভেলায় একমাত্র ভরসা। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ও রাস্তার বিষয় নিয়ে কথা হয় এলাকাবাসী আব্দুর রাজ্জাক ও সোলাইমান শেখসহ আরও অনেকের সঙ্গেই। তারা বলেন, এই বিষয় নিয়ে অনেকবার বলেছি কিন্তু আজও কোনো সমাধান হয়নি। বর্ষায় যখন কলা গাছের ভেলায় ভেসে শিশুরা স্কুলে যায়, তখন প্রতিটি মুহূর্তে আতঙ্কে থাকি। বেংনাই উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা উম্মে জান্নাতী বলেন, বিভিন্ন দফতরে ধরনা দিয়েছি, দরখাস্ত দিয়েছি কিন্তু কোনো সমাধান পাইনি। যেহেতু এটা বড় কাজ তাই এমন কাজ করার মতো ফান্ডও আমাদের নেই। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শেখ আব্দুর রহিম মাষ্টার বলেন, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা খুব কষ্ট করে স্কুলে যাতয়াত করে। এখানে একটি রাস্তা বা ফুট ওভারব্রিজ খুবই দরকার। পাঙ্গাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সালাম বলেন, আমি ২০১২-১৩ অর্থবছরে এডিপির একটি ২ লাখ টাকার কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে দিয়েছিলাম সেখানে একটি কালভার্ট নির্মাণের জন্য। কিন্তু ঠিকাদার তখন কাজ শেষ না করেই অফিস থেকে বিল উত্তোলন করে নেন। আমি জানি না কীভাবে তারা বিল পেল। তিনি আরও বলেন, আমি চেষ্টা করব সামনে কোনো প্রকল্প আসলে সেটি দিয়ে এখানে শিশুদের জন্য একটি রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়ার। রায়গঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি নিজেও বিষয়টি দেখেছি। ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে সরকারিভুক্ত হয়। কিন্তু আজ অবধি রাস্তা না হওয়াটা সত্যিই খুব দুঃখজনক।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সড়ক না থাকায় দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা

আপডেট সময় : ১২:১৮:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা : রায়গঞ্জের পাঙ্গাসী ইউনিয়নের বেংনাই উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অবকাঠামো সবই আছে শুধু বিদ্যালয়ে যাতায়াতের নেই কোনো রাস্তা। তারপরও শিক্ষা লাভের আশায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বর্ষা মৌসুমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কলা গাছের বানানো ভুরা নিয়ে বিদ্যালয়ের যাতায়াত করে। আর বাকিটা শুকনো মৌসুমে অন্যের বাড়ির ওপর ও ক্ষেতের আইল দিয়ে যেতে হয় বিদ্যালয়ে। এতে কখনও কখনও শুনতে হয় বাজে ভাষায় গালাগালিও। শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, পানিতে ভিজে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করেন শিক্ষকরাও। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক থেকে প্রায় ২৫০ মিটার দূরে মাঠের ভিতরে বেংনাই উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্থানীয়দের উদ্যোগে ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। ২০১৩ সালে এসে স্কুলটি সরকারিও হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২ লাখ টাকা ব্যয়ে খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল একটি কালভার্ট কিন্তু সেটি এখন কোনো কাজেই আসছে না। নির্মিত কালভার্টটির উভয়পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি, পানিতে ভাসমানভাবে রয়েছে কালভার্টটি। আর এভাবেই কেটে গেছে ৩৩ বছর, তবুও স্কুলে যাবার একটি রাস্তা পায়নি শিক্ষার্থীরা। এলাকাবাসী ও স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছেন, অনেক জায়গায় ধরনা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। যার প্রভাবে এই বিদ্যালয়ের ১৬৫ জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দিন দিন কমে যাচ্ছে। স্কুলের সামনের মহাসড়কে পৌঁছাতেই দেখা যায় শিক্ষার্থীদের বাড়ি ফেরার সময় হয়েছে। তারা অপেক্ষা করছে খালের ওপারে। পানির মধ্য দিয়ে কীভাবে বাড়ি ফিরবে জানতে চাইলে পঞ্চম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, এখন পানি কমে গেছে। তাই অন্যের জমির আইল ও বাড়ির ওপর দিয়ে যাওয়া যায়। বর্ষার সময় কলা গাছের ভেলায় একমাত্র ভরসা। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ও রাস্তার বিষয় নিয়ে কথা হয় এলাকাবাসী আব্দুর রাজ্জাক ও সোলাইমান শেখসহ আরও অনেকের সঙ্গেই। তারা বলেন, এই বিষয় নিয়ে অনেকবার বলেছি কিন্তু আজও কোনো সমাধান হয়নি। বর্ষায় যখন কলা গাছের ভেলায় ভেসে শিশুরা স্কুলে যায়, তখন প্রতিটি মুহূর্তে আতঙ্কে থাকি। বেংনাই উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা উম্মে জান্নাতী বলেন, বিভিন্ন দফতরে ধরনা দিয়েছি, দরখাস্ত দিয়েছি কিন্তু কোনো সমাধান পাইনি। যেহেতু এটা বড় কাজ তাই এমন কাজ করার মতো ফান্ডও আমাদের নেই। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শেখ আব্দুর রহিম মাষ্টার বলেন, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা খুব কষ্ট করে স্কুলে যাতয়াত করে। এখানে একটি রাস্তা বা ফুট ওভারব্রিজ খুবই দরকার। পাঙ্গাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সালাম বলেন, আমি ২০১২-১৩ অর্থবছরে এডিপির একটি ২ লাখ টাকার কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে দিয়েছিলাম সেখানে একটি কালভার্ট নির্মাণের জন্য। কিন্তু ঠিকাদার তখন কাজ শেষ না করেই অফিস থেকে বিল উত্তোলন করে নেন। আমি জানি না কীভাবে তারা বিল পেল। তিনি আরও বলেন, আমি চেষ্টা করব সামনে কোনো প্রকল্প আসলে সেটি দিয়ে এখানে শিশুদের জন্য একটি রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়ার। রায়গঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি নিজেও বিষয়টি দেখেছি। ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে সরকারিভুক্ত হয়। কিন্তু আজ অবধি রাস্তা না হওয়াটা সত্যিই খুব দুঃখজনক।