খুলনা প্রতিনিধি: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ‘সংবিধান পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত আগে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেই পদ্ধতিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের দুই মাস আগে তফসিল হবে। তখন নির্বাচন কবে, মনোনয়ন পত্রসহ এ সংক্রান্ত সব তথ্য জানা যাবে।’
খুলনা নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে শনিবার (২৬ জুলাই) সকাল ১০টায় মতবিনিময় করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এর আগে সাংবাদিকদের তিনি এ সব কথা বলেন। নির্বাচন প্রসঙ্গে এ সময় সিইসি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন করার চ্যালেঞ্জ তো বহুবিধ। নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে দেখা দিচ্ছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, মানুষের আস্থা। নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে, নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করা। ভোট দিতে না পেরে মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তাই তাদের ভোটকেন্দ্রমুখী করা বড় চ্যালেঞ্জ।’
সামাজিকমাধ্যমে নির্বাচন নিয়ে ভুল তথ্য প্রচার হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে যথাসম্ভব সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে প্রযুক্তির অপব্যবহার। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্রিস্টাইলে যাচাই-বাছাই না করে ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এ আই পদ্ধতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে হুবহু নকল করা হচ্ছে একজনের বক্তব্য। এজন্য দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে। আধুনিক যুগে এটি অস্ত্রের চেয়েও ভয়াবহ। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সমস্যা।’
সিইসি সব অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য মিডিয়াকর্মীদের সার্বিক সহযোগিতা চেয়ে বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা ওয়াদাবদ্ধ। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে। একটি নির্বাচনে বহুবিধ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং ভোটারদের ফিরিয়ে আনার জন্যই আমরা কাজ করছি।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদের, খুলনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফারাজি বেনজির আহম্মেদসহ কর্মকর্তারা।
পর্যবেক্ষক সংস্থা চেয়ে ইসির বিজ্ঞপ্তি জারি: স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা চেয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ১০ আগস্টের মধ্যে ইসির সিনিয়র সচিব বরাবর আবেদন করতে বলা হয়েছে। শনিবার (২৬ জুলাই) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখা থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
ইসি জানায়, বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে নিবন্ধিত ৯৬টি স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০২৫’ এর ধারা ১৬ মোতাবেক স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়েছে। ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০২৫’ অনুসারে ‘পর্যবেক্ষক সংস্থা’ হিসেবে নিবন্ধনে আগ্রহী যোগ্যতা সম্পন্ন বেসরকারি সংস্থাসমূহের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করা হচ্ছে। নিবন্ধনে আগ্রহী সংস্থাসমূহকে আগামী ১০ আগস্ট (রোববার) বিকেল ৫টার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব বরাবর স্থানীয় পর্যবেক্ষক নিবন্ধনের আবেদন ফরম (ঊঙ-১) এ আবেদন দাখিল করতে হবে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০২৫, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি এবং আবেদন ফরম (ঊঙ-১) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখায় (কক্ষ নং-১০৫) এবং নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট িি.িবপং.মড়া.নফ -তে পাওয়া যাবে।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০২৩ সালের নীতিমালা বাতিল ও তৎকালীন ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করে নতুন নীতিমালা জারি করে নাসির উদ্দিন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৯৬টি দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়া হয়। কিন্তু ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধন বিষয়ে বিদ্যমান নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামীতে নতুন নীতিমালা অনুযায়ী পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধিত করা হবে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে গণবিজ্ঞপ্তির উদ্যোগ নিলো নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পর্যবেক্ষক নিবন্ধন প্রথা শুরু করে ইসি। সে সময় ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল। ওই নির্বাচনে দেশি পর্যবেক্ষক ছিল ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৩ জন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ২০১৪ সালে ৩৫টি সংস্থার ৮ হাজার ৮৭৪ জন পর্যবেক্ষক ভোট দেখেছেন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১১৮টি নিবন্ধিত সংস্থার মধ্যে ৮১টি দেশি সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন পর্যবেক্ষক ভোট পর্যবেক্ষণ করেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৯৬টি নিবন্ধিত সংস্থার মধ্যে ৮০টির মতো সংস্থার ২০ হাজার ২৫৬ জন ভোট দেখেছেন।