ঢাকা ১২:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ঝিনাইদহে টিসিবির ডিলার নবায়নে ঘুরেফিরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীই

  • আপডেট সময় : ০৮:৩৭:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
  • ৭১ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

সুলতান আল এনাম, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে টিসিবির (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) ডিলার নবায়নে ব্যাপক ঘাপলাবাজী ও ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের প্রধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একাধিকবার তদন্ত করে তালিকা জেলা প্রশাসনে জমা দিলেও ঘুরেফিরে সেই আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীদের নামই উঠে আসছে। এ নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা ও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

জানা গেছে, জুন মাসে টিসিবির ১২৪ ডিলারের তালিকায় পলাতক, মৃত ব্যক্তি ও জুলাই আন্দোলনে হামলার আসামিরা ছিল। আপত্তি উঠলে ঝিনাইদহ প্রশাসন নতুনভাবে তালিকা প্রস্তুত করে। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তারা তদন্তের নামে আর্থিক সুবিধা নিয়ে প্রকৃত তথ্য গোপন করে ঘুরেফিরে সেই আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীদের নাম তালিকায় তুলে দেন।

অভিযোগ উঠেছে, জেলার ৬ উপজেলায় নতুন নবায়নের ১০৪ জন ডিলারের মধ্যে ৬৭ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগের নামে মামলা ও ৫ আগস্টের পর পলাতক রয়েছে। দ্বিতীয় দফায় তদন্ত করেও তাদের নাম কেন তালিকায় উঠলো, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডে মাগুরার আওয়ামী লীগের নেতা বীরেন শিকদারের চাচা কুমারেশ চন্দ্রের নাম রয়েছে। ৫ নং ওয়ার্ডের ডিলার এনায়েত উল্লাহ তিন লাখ টাকায় তার ডিলারশিপ বিক্রি করে দিলেও তিনি তালিকায় রয়েছেন। সদরের মধুহাটী ইউনিয়নে সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা খায়রুল ইসলামকে ডিলারশিপের সুপারিশ করা হয়েছে। ঝিনাইদহ পৌরসভার পাগলাকানাই ইউনিয়নে একই পরিবারে মেহেরিমা কাসেম ও আফরোজা খানমের নাম তালিকায় হয়েছে। হরিশংকরপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা কনক কান্তি দাসের ভাতিজা বিকাশ কুমার দাসের নাম রয়েছে। হরিণাকুন্ডুর কাপাশহাটীয়া ইউনিয়নে পতিত সরকারের এমপি সমি সিদ্দিকীর পিএস কামালের চাচা মামুন রশিদ ও চাঁদপুর ইউনিয়নে সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা শরিফুলের নাম রয়েছে। নলডাঙ্গা ইউনিয়নে আ’লীগ নেতা এনামের স্বজন শওকত আলীকে দেওয়া হয়েছে। কালীগঞ্জের সিমলা-রোকনপুর ইউনিয়নে আ’লীগের সাবেক মেয়র পলাতক বিজুর সহযোগী মোস্তাক আহম্মেদকে দেওয়া হয়েছে। এভাবে কালীগঞ্জে টিসিবির ১৩ ডিলারের মধ্যে ১৩ জনই ফ্যাসিস্ট সরকারে দোসর বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ঝিনাইদহ সদরে ৩৫ জনের মধ্যে ২৪ জন, হরিণাকুন্ডুতে ১৬ জনের মধ্যে ১১ জন, শৈলকুপায় ১৮ জনের মধ্যে ১১ জন ও মহেশপুরে ১৬ জনের মধ্যে ৬ জন পতিত সরকারের দোসর ও সমর্থকদের নাম রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিষয়খালী বাজারের মুদি ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ অভিযোগ করেন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এক অফিস সহকারী তার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা ঘুষ নিয়েও তার তালিকায় নাম দেননি। একই উপজেলার চোরকোল বাজারের তরিকুল ও কলমনখালী বাজারের ইকবাল হোসেনও ঘুষ দিয়েও নবয়নের তালিকায় তাদের নাম ওঠেনি বলে অভিযোগ করেন।

এদিকে ঝিনাইদহ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ বিশ্বাস ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতা আবু হুরায়রা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় টিসিবির ডিলারের তালিকায় পতিত সরকারের দোসরদের নাম থাকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, গ্রামাঞ্চলে পতিত সরকারের লোকজন পন্য বিক্রি করতে গেলে সাধারণ মানুষের রোষানলে পড়তে পারে। এতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।

সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতা আবু হুরায়রা জেলায় টিসিবির সব ডিলারশিপ বাতিলের দাবি জানান। জবাবে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল আশ্বস্ত করে জানান, প্রয়োজনে অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে নির্ভেজাল তালিকা প্রণয়ন করা হবে।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা জানান, নানা মহল থেকে অভিযোগ ওঠায় ইতোমধ্যে আবারও তদন্তের জন্য তালিকা করা হয়েছে। তিনি জানান, ৯৮ জনের নাম যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ঝিনাইদহে টিসিবির ডিলার নবায়নে ঘুরেফিরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীই

আপডেট সময় : ০৮:৩৭:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

সুলতান আল এনাম, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে টিসিবির (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) ডিলার নবায়নে ব্যাপক ঘাপলাবাজী ও ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের প্রধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একাধিকবার তদন্ত করে তালিকা জেলা প্রশাসনে জমা দিলেও ঘুরেফিরে সেই আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীদের নামই উঠে আসছে। এ নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা ও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

জানা গেছে, জুন মাসে টিসিবির ১২৪ ডিলারের তালিকায় পলাতক, মৃত ব্যক্তি ও জুলাই আন্দোলনে হামলার আসামিরা ছিল। আপত্তি উঠলে ঝিনাইদহ প্রশাসন নতুনভাবে তালিকা প্রস্তুত করে। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তারা তদন্তের নামে আর্থিক সুবিধা নিয়ে প্রকৃত তথ্য গোপন করে ঘুরেফিরে সেই আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীদের নাম তালিকায় তুলে দেন।

অভিযোগ উঠেছে, জেলার ৬ উপজেলায় নতুন নবায়নের ১০৪ জন ডিলারের মধ্যে ৬৭ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগের নামে মামলা ও ৫ আগস্টের পর পলাতক রয়েছে। দ্বিতীয় দফায় তদন্ত করেও তাদের নাম কেন তালিকায় উঠলো, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডে মাগুরার আওয়ামী লীগের নেতা বীরেন শিকদারের চাচা কুমারেশ চন্দ্রের নাম রয়েছে। ৫ নং ওয়ার্ডের ডিলার এনায়েত উল্লাহ তিন লাখ টাকায় তার ডিলারশিপ বিক্রি করে দিলেও তিনি তালিকায় রয়েছেন। সদরের মধুহাটী ইউনিয়নে সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা খায়রুল ইসলামকে ডিলারশিপের সুপারিশ করা হয়েছে। ঝিনাইদহ পৌরসভার পাগলাকানাই ইউনিয়নে একই পরিবারে মেহেরিমা কাসেম ও আফরোজা খানমের নাম তালিকায় হয়েছে। হরিশংকরপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা কনক কান্তি দাসের ভাতিজা বিকাশ কুমার দাসের নাম রয়েছে। হরিণাকুন্ডুর কাপাশহাটীয়া ইউনিয়নে পতিত সরকারের এমপি সমি সিদ্দিকীর পিএস কামালের চাচা মামুন রশিদ ও চাঁদপুর ইউনিয়নে সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা শরিফুলের নাম রয়েছে। নলডাঙ্গা ইউনিয়নে আ’লীগ নেতা এনামের স্বজন শওকত আলীকে দেওয়া হয়েছে। কালীগঞ্জের সিমলা-রোকনপুর ইউনিয়নে আ’লীগের সাবেক মেয়র পলাতক বিজুর সহযোগী মোস্তাক আহম্মেদকে দেওয়া হয়েছে। এভাবে কালীগঞ্জে টিসিবির ১৩ ডিলারের মধ্যে ১৩ জনই ফ্যাসিস্ট সরকারে দোসর বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ঝিনাইদহ সদরে ৩৫ জনের মধ্যে ২৪ জন, হরিণাকুন্ডুতে ১৬ জনের মধ্যে ১১ জন, শৈলকুপায় ১৮ জনের মধ্যে ১১ জন ও মহেশপুরে ১৬ জনের মধ্যে ৬ জন পতিত সরকারের দোসর ও সমর্থকদের নাম রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিষয়খালী বাজারের মুদি ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ অভিযোগ করেন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এক অফিস সহকারী তার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা ঘুষ নিয়েও তার তালিকায় নাম দেননি। একই উপজেলার চোরকোল বাজারের তরিকুল ও কলমনখালী বাজারের ইকবাল হোসেনও ঘুষ দিয়েও নবয়নের তালিকায় তাদের নাম ওঠেনি বলে অভিযোগ করেন।

এদিকে ঝিনাইদহ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ বিশ্বাস ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতা আবু হুরায়রা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় টিসিবির ডিলারের তালিকায় পতিত সরকারের দোসরদের নাম থাকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, গ্রামাঞ্চলে পতিত সরকারের লোকজন পন্য বিক্রি করতে গেলে সাধারণ মানুষের রোষানলে পড়তে পারে। এতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।

সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতা আবু হুরায়রা জেলায় টিসিবির সব ডিলারশিপ বাতিলের দাবি জানান। জবাবে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল আশ্বস্ত করে জানান, প্রয়োজনে অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে নির্ভেজাল তালিকা প্রণয়ন করা হবে।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা জানান, নানা মহল থেকে অভিযোগ ওঠায় ইতোমধ্যে আবারও তদন্তের জন্য তালিকা করা হয়েছে। তিনি জানান, ৯৮ জনের নাম যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ