ঢাকা ০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

রক্তাক্ত জুলাই এবং একজন আবু সাঈদ

  • আপডেট সময় : ০৬:৪১:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
  • ৯ বার পড়া হয়েছে

আব্দুল মুনঈম

রক্তাক্ত জুলাই। সরকারি চাকরির কোটা বাতিলের দাবিতে ২০২৪ সালের এই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল রাজধানীসহ সারা দেশ। গত বছরের এ মাসেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিষ্ঠুর-নির্দয়ভাবে পাখির মতো মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। রংপুরের তরুণ সহযোদ্ধা আবু সাঈদের আত্মত্যাগের পথ ধরে শিক্ষার্থী, শ্রমিক, মজুরসহ হাজার হাজার মানুষ বন্দুকের সামনে বুক পেতে দাঁড়ানোর সাহস দেখান। এ সময়টায় ছাদের ওপর, ঘরের জানালায়, হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে নারী-শিশুদের হত্যা করা হয়; যা গণহত্যার শামিল। হত্যার পর পুড়িয়ে ফেলা হয় বহু মৃতদেহ। অবশেষে শত শত মানুষের আত্মত্যাগে সফল হয় ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থান। জনজোয়ারে ভেসে যায় শেখ হাসিনার ক্ষমতার দম্ভ। টানা ৩৬ দিনের আন্দোলনে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। পরিসমাপ্তি ঘটে টানা ১৫ বছরের স্বৈরাচারী আওয়ামী শাসনের। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে প্রায় দুই হাজার মানুষকে হত্যা, হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত ও পঙ্গু হয়- যাদের আত্মত্যাগে সৃষ্টি হয় নতুন এক বাংলাদেশ।

এখানে স্মরণ করা যায়, ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি করে সাধারণ ছাত্ররা। এক পর্যায়ে কোটা বাতিল বিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ২০২১ সালে সেই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করেন কয়েকজন। ২০২৪ সালের ৫ জুন ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপনকে হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করে। এতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়; যা মেধাবীদের প্রতি আবারও বৈষম্য। প্রতিবাদে আবারও রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা।

১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ২ থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসেন। ৭ জুলাই শিক্ষার্থীরা সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ১৬ জুলাই রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ শহীদ হন। দেশের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। এদিন সারা দেশে পুলিশের গুলিতে আরও ৬ জনের মৃত্যুর সংবাদ শুনতে পাই। এতগুলো লাশের পরে আন্দোলন থেমে যাওয়ার পর্যায় আখতার হোসেন (এনসিপির বর্তমান মহাসচিব) পরের দিন গায়েবানা জানাজার আয়োজন করেন। ১৭ জুলাই এই আন্দোলনে প্রথম গ্রেফতার হন। ১৮ জুলাই আন্দোলনকারীরা সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউনের ডাক দেন। সেই দিন সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়, কারফিউ জারি করা হয় এবং আন্দোলনের নেতাদের গ্রেপ্তার চলতে থাকে। ২৬ জুলাই আন্দোলনের তিনজন সমন্বয়ককে সাদা পোশাকধারী পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। ২৮ জুলাই দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশের ঢল নামে। ৩১ জুলাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একযোগে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।

১ আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে থাকা ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়। ২ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচি পালিত হয়। ৩ আগস্ট ব্যাপক বিক্ষোভের পর শহীদ মিনার থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন নাহিদ ইসলাম। ৪ আগস্টও পুলিশ প্রতিবাদী ক্ষুব্ধ জনতার ওপর আক্রমণ চালায়। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন অবরোধের জন্য ছাত্র সমন্বয়করা ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির আহ্বান জানান। ৫ আগস্ট সোমবার সকালেও রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ছাত্র-জনতার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ চলে। সেদিনও গুলিতে বহু শিক্ষার্থী নিহত হন। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া লাখো মানুষের সমাবেশ দুপুর আড়াইটার দিকে যাত্রা করে গণভবনের দিকে। তারপর জনগণের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা বলেন সেনাপ্রধান। ৬ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রস্তাব মেনে নেন রাষ্ট্রপতি। সংসদ বিলুপ্ত করা হয়। ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসসহ ১৪ জন উপদেষ্টাকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি। এই টানা ৩৬ দিনের আন্দোলনে তৎকালীন সরকার সারা দেশে ছাত্র-জনতার ওপর যে নৃশংসতা চালায়, তা সত্যিই নির্মম ও বর্বর।

এই রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের এক কালো অধ্যায় ১৬ জুলাই। এদিন ২০২৪-এর অভ্যুত্থানের অন্যতম বীর শহীদ আমাদের সহযোদ্ধা আবু সাঈদ এদিন শেখ হাসিনার পুলিশের গুলি জীবন উৎসর্গ করেন। নম্র, ভদ্র, সাদাসিধে এই ছেলেটি ছিল অত্যন্ত সাহসী ও স্পষ্টভাষী। ৫ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনে আবু সাঈদ ছিল রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক। আন্দোলনটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে দেশের বহু শিক্ষাঙ্গন অচল হয়ে পড়ে। আন্দোলন চলাকালীন ক্যাম্পাসের তথাকথিত কিছু ছাত্রলীগ নেতা আবু সাঈদকে আন্দোলন থামানোর হুমকি দেয়। এমনকি তার গায়ে হাতও তোলে। কিন্তু আবু সাঈদ দমে যায়নি, সে পুরোদমে আন্দোলন চালিয়ে যায়।

দেখতে দেখতে চলে আসে সেই কলঙ্কময় ক্ষণ। ১৬ জুলাই মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল ১ নম্বর গেটের সামনে গেলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা প্রধান ফটক আটকে তাদের প্রবেশে বাধা দেয় এবং ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পুলিশ ও ছাত্রলীগ হামলা করছিল ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে এবং আন্দোলনকারী ছাত্ররা পার্কের মোড় এলাকায় অবস্থান করছিল। আন্দোলন দমাতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও লাঠিপেটা শুরু করে। তখনও আবু সাঈদ মিছিলের নেতৃত্বে ছিল। এক পর্যায়ে পুলিশ বুলেট ছোড়া শুরু করলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুহূর্তেই ছত্রভঙ্গ হয়ে পার্কের মোড় অভিমুখে চলে আসে, কিন্তু আবু সাঈদ পিছু হটেননি। তিনি হাতে একটি মাত্র লাঠি নিয়ে আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। উল্লেখ্য, আবু সাঈদ আন্দোলনকে বেগবান করতে ১৫ জুলাই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শামসুজ্জোহাকে উল্লেখ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন।

আবু সাঈদ সেদিন দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দিয়েছিলেন পুলিশের বন্দুকের সামনে। প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এবং তুলে ধরেছিল ছাত্র-জনতার স্পিরিট। হঠাৎ বেশ কয়েকটি রাবার বুলেট এসে লাগে আবু সাঈদের শরীরে। শরীরের ভারসাম্য হারানোর উপক্রম হলেও আবারও বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন আবু সাঈদ। সবাই মিলে ডেকেও তাকে তার স্থান থেকে সরাতে পারিনি। পরবর্তী সময়ে যখন আবার গুলি লাগে, তখন আর উঠতে পারেনি, রাস্তার মধ্যে বসে পড়ে। কয়েকজন শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে ফিরিয়ে আনতে যায়, ততক্ষণে সে অচেতন হয়ে পড়ে। কিন্তু তখনো ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স দেয়নি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য। রিকশায় করে রংপুর মেডিক্যালে যাওয়ার পথেই তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করে। আবু সাঈদের এই আত্মত্যাগ সারা দেশে জ্বলে ওঠে আগুনের স্ফুলিঙ্গ। মুহূর্তেই আবু সাঈদ হয়ে ওঠে দেশের সব মায়ের সন্তান এবং সব শিক্ষার্থীর ভাই। তাকে হারানোর বেদনায় উত্তাল হয়ে ওঠে রংপুরসহ পুরো বাংলাদেশ।

২০০১ সালে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করা আবু সাঈদ ছিলেন ৯ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট। ছিলেন সবার আদরের। পিতা মকবুল হোসেন পেশায় একজন দিনমজুর। মা মনোয়ারা বেগম একজন গৃহিণী। ছেলেবেলা থেকেই আবু সাঈদ অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় মেধার সাক্ষর রাখেন। তারপর রংপুর সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ২০২০ সালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। আবু সাঈদ তার পরিবাবের প্রথম সদস্য, যিনি উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। আবু সাঈদের মৃত্যু আন্দোলনে যে মাত্রা যোগ করে তার অবধারিত পরিণতিতে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়। আমরা ঠিকই কাঙ্ক্ষিত মুক্তি পেলাম, কিন্তু আবু সাঈদের জীবনের বিনিময়ে।

জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানকে আমরা ছাত্র-জনতা দ্বিতীয় স্বাধীনতা হিসেবে গণ্য করি। বিগত ১৫ বছরের যে পরাধীনতা, সেই পরাধীনতা-চাটুকারিতার জায়গা থেকে বিপ্লবী জনতা বেরিয়ে আসার প্রাণপণ প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে। এতদিনের জঞ্জাল সরাতে হয়তো কিছুটা সময়ের প্রয়োজন বলে মনে করি। আমরা আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার পাহারাদার হিসেবে এখনো মাঠে লড়াই করে যাচ্ছি। সামনেও তা অব্যাহত থাকবে- যতক্ষণ পর্যন্ত এ গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা পূরণ না হয়।

আমাদের বিশ্বাস, আগামীর বাংলাদেশ হবে দেশের গণমানুষের। যেখানে প্রতিটি মানুষের অধিকার সমুন্নত থাকবে। সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা পাবে। বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এই বাস্তবতায় ‘গণঅভ্যুত্থান’ কেবল একটি দমনমূলক শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী জনতার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়; এটি এক নতুন সমাজব্যবস্থা নির্মাণের গভীর আকাঙ্ক্ষারও প্রতীক। এই আকাঙ্ক্ষা একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণমুখী ও মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্নকে ধারণ করে, যেখানে নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পায় নৈতিকতা, যুক্তি ও মানবিক বোধের ভিত্তিতে। এখানে ‘ইনসাফ’ বা ন্যায়ের ধারণাটি আবেগনির্ভর কোনো কল্পনা নয়, বরং এটি একটি রূপান্তরধর্মী দার্শনিক ও রাজনৈতিক চেতনা; যার শিকড় বিস্তৃত মানবসভ্যতার গভীরে। জুলাই আমাদের অনেক শিখিয়েছে। সাধারণ মানুষের ঐক্য পারে না এমন কিছুই নেই, এটাই জুলাইয়ের প্রথম শিক্ষা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার প্রেরণাও আমরা পাই জুলাইয়ের আন্দোলন থেকে।

২০২৪ সালের জুলাই আর ২০২৫ সালের জুলাই সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভীতসন্ত্রস্ত একটি পরিবেশ থেকে আমরা মুক্ত স্বাধীন পরিবেশে ফিরতে পেরেছি। গত জুলাইয়ে যে ধরনের অন্যায়-অবিচার ছিল, যে পরিমাণ মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, সেসব এখন নেই। গণমাধ্যমসহ সবকিছুতে এখন অনেকটা মুক্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে এ কথা সত্য যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে ধরনের অরাজনৈতিক ঐক্য তৈরি হয়েছিল, তা নানা কারণে কিছুটা যেন বিচ্যুত হয়েছে। অথচ দেশ গড়ার জন্য সেই ঐক্যটা জরুরি ছিল। এখন জুলাইয়ে যারা অভ্যুত্থান করেছেন তাদের মধ্যে ঐক্যে ফাটল, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বিধা বিভক্তি। এই বোঝাপড়াটা না থাকার কারণে জুলাই সনদ কিংবা জুলাই ঘোষণাপত্র আটকে আছে। এটি খুব দুঃখজনক।

আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের রুহের মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা করছি। জুলাই যোদ্ধাদের যারা দেশ গড়ায় কাজ করছেন, তাদের শ্রদ্ধা ও সালাম জানাই। রাষ্ট্র যেন শহীদ ও আহতদের পরিবারের পাশে থাকে, তাদের ঋণ যেন স্বীকার করে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে যেমন ৭১ ভুলিনি, তেমনিভাবে ২৪-ও ভুলবো না- লালন করবো আমাদের স্মৃতিতে। শহীদ আবু সাঈদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সালাম।

লেখক: কেন্দ্রীয় সদস্য, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

রক্তাক্ত জুলাই এবং একজন আবু সাঈদ

আপডেট সময় : ০৬:৪১:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

আব্দুল মুনঈম

রক্তাক্ত জুলাই। সরকারি চাকরির কোটা বাতিলের দাবিতে ২০২৪ সালের এই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল রাজধানীসহ সারা দেশ। গত বছরের এ মাসেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিষ্ঠুর-নির্দয়ভাবে পাখির মতো মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। রংপুরের তরুণ সহযোদ্ধা আবু সাঈদের আত্মত্যাগের পথ ধরে শিক্ষার্থী, শ্রমিক, মজুরসহ হাজার হাজার মানুষ বন্দুকের সামনে বুক পেতে দাঁড়ানোর সাহস দেখান। এ সময়টায় ছাদের ওপর, ঘরের জানালায়, হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে নারী-শিশুদের হত্যা করা হয়; যা গণহত্যার শামিল। হত্যার পর পুড়িয়ে ফেলা হয় বহু মৃতদেহ। অবশেষে শত শত মানুষের আত্মত্যাগে সফল হয় ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থান। জনজোয়ারে ভেসে যায় শেখ হাসিনার ক্ষমতার দম্ভ। টানা ৩৬ দিনের আন্দোলনে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। পরিসমাপ্তি ঘটে টানা ১৫ বছরের স্বৈরাচারী আওয়ামী শাসনের। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে প্রায় দুই হাজার মানুষকে হত্যা, হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত ও পঙ্গু হয়- যাদের আত্মত্যাগে সৃষ্টি হয় নতুন এক বাংলাদেশ।

এখানে স্মরণ করা যায়, ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি করে সাধারণ ছাত্ররা। এক পর্যায়ে কোটা বাতিল বিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ২০২১ সালে সেই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করেন কয়েকজন। ২০২৪ সালের ৫ জুন ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপনকে হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করে। এতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়; যা মেধাবীদের প্রতি আবারও বৈষম্য। প্রতিবাদে আবারও রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা।

১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ২ থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসেন। ৭ জুলাই শিক্ষার্থীরা সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ১৬ জুলাই রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ শহীদ হন। দেশের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। এদিন সারা দেশে পুলিশের গুলিতে আরও ৬ জনের মৃত্যুর সংবাদ শুনতে পাই। এতগুলো লাশের পরে আন্দোলন থেমে যাওয়ার পর্যায় আখতার হোসেন (এনসিপির বর্তমান মহাসচিব) পরের দিন গায়েবানা জানাজার আয়োজন করেন। ১৭ জুলাই এই আন্দোলনে প্রথম গ্রেফতার হন। ১৮ জুলাই আন্দোলনকারীরা সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউনের ডাক দেন। সেই দিন সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়, কারফিউ জারি করা হয় এবং আন্দোলনের নেতাদের গ্রেপ্তার চলতে থাকে। ২৬ জুলাই আন্দোলনের তিনজন সমন্বয়ককে সাদা পোশাকধারী পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। ২৮ জুলাই দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশের ঢল নামে। ৩১ জুলাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একযোগে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।

১ আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে থাকা ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়। ২ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচি পালিত হয়। ৩ আগস্ট ব্যাপক বিক্ষোভের পর শহীদ মিনার থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন নাহিদ ইসলাম। ৪ আগস্টও পুলিশ প্রতিবাদী ক্ষুব্ধ জনতার ওপর আক্রমণ চালায়। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন অবরোধের জন্য ছাত্র সমন্বয়করা ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির আহ্বান জানান। ৫ আগস্ট সোমবার সকালেও রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ছাত্র-জনতার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ চলে। সেদিনও গুলিতে বহু শিক্ষার্থী নিহত হন। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া লাখো মানুষের সমাবেশ দুপুর আড়াইটার দিকে যাত্রা করে গণভবনের দিকে। তারপর জনগণের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা বলেন সেনাপ্রধান। ৬ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রস্তাব মেনে নেন রাষ্ট্রপতি। সংসদ বিলুপ্ত করা হয়। ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসসহ ১৪ জন উপদেষ্টাকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি। এই টানা ৩৬ দিনের আন্দোলনে তৎকালীন সরকার সারা দেশে ছাত্র-জনতার ওপর যে নৃশংসতা চালায়, তা সত্যিই নির্মম ও বর্বর।

এই রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের এক কালো অধ্যায় ১৬ জুলাই। এদিন ২০২৪-এর অভ্যুত্থানের অন্যতম বীর শহীদ আমাদের সহযোদ্ধা আবু সাঈদ এদিন শেখ হাসিনার পুলিশের গুলি জীবন উৎসর্গ করেন। নম্র, ভদ্র, সাদাসিধে এই ছেলেটি ছিল অত্যন্ত সাহসী ও স্পষ্টভাষী। ৫ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনে আবু সাঈদ ছিল রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক। আন্দোলনটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে দেশের বহু শিক্ষাঙ্গন অচল হয়ে পড়ে। আন্দোলন চলাকালীন ক্যাম্পাসের তথাকথিত কিছু ছাত্রলীগ নেতা আবু সাঈদকে আন্দোলন থামানোর হুমকি দেয়। এমনকি তার গায়ে হাতও তোলে। কিন্তু আবু সাঈদ দমে যায়নি, সে পুরোদমে আন্দোলন চালিয়ে যায়।

দেখতে দেখতে চলে আসে সেই কলঙ্কময় ক্ষণ। ১৬ জুলাই মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল ১ নম্বর গেটের সামনে গেলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা প্রধান ফটক আটকে তাদের প্রবেশে বাধা দেয় এবং ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পুলিশ ও ছাত্রলীগ হামলা করছিল ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে এবং আন্দোলনকারী ছাত্ররা পার্কের মোড় এলাকায় অবস্থান করছিল। আন্দোলন দমাতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও লাঠিপেটা শুরু করে। তখনও আবু সাঈদ মিছিলের নেতৃত্বে ছিল। এক পর্যায়ে পুলিশ বুলেট ছোড়া শুরু করলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুহূর্তেই ছত্রভঙ্গ হয়ে পার্কের মোড় অভিমুখে চলে আসে, কিন্তু আবু সাঈদ পিছু হটেননি। তিনি হাতে একটি মাত্র লাঠি নিয়ে আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। উল্লেখ্য, আবু সাঈদ আন্দোলনকে বেগবান করতে ১৫ জুলাই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শামসুজ্জোহাকে উল্লেখ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন।

আবু সাঈদ সেদিন দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দিয়েছিলেন পুলিশের বন্দুকের সামনে। প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এবং তুলে ধরেছিল ছাত্র-জনতার স্পিরিট। হঠাৎ বেশ কয়েকটি রাবার বুলেট এসে লাগে আবু সাঈদের শরীরে। শরীরের ভারসাম্য হারানোর উপক্রম হলেও আবারও বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন আবু সাঈদ। সবাই মিলে ডেকেও তাকে তার স্থান থেকে সরাতে পারিনি। পরবর্তী সময়ে যখন আবার গুলি লাগে, তখন আর উঠতে পারেনি, রাস্তার মধ্যে বসে পড়ে। কয়েকজন শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে ফিরিয়ে আনতে যায়, ততক্ষণে সে অচেতন হয়ে পড়ে। কিন্তু তখনো ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স দেয়নি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য। রিকশায় করে রংপুর মেডিক্যালে যাওয়ার পথেই তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করে। আবু সাঈদের এই আত্মত্যাগ সারা দেশে জ্বলে ওঠে আগুনের স্ফুলিঙ্গ। মুহূর্তেই আবু সাঈদ হয়ে ওঠে দেশের সব মায়ের সন্তান এবং সব শিক্ষার্থীর ভাই। তাকে হারানোর বেদনায় উত্তাল হয়ে ওঠে রংপুরসহ পুরো বাংলাদেশ।

২০০১ সালে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করা আবু সাঈদ ছিলেন ৯ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট। ছিলেন সবার আদরের। পিতা মকবুল হোসেন পেশায় একজন দিনমজুর। মা মনোয়ারা বেগম একজন গৃহিণী। ছেলেবেলা থেকেই আবু সাঈদ অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় মেধার সাক্ষর রাখেন। তারপর রংপুর সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ২০২০ সালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। আবু সাঈদ তার পরিবাবের প্রথম সদস্য, যিনি উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। আবু সাঈদের মৃত্যু আন্দোলনে যে মাত্রা যোগ করে তার অবধারিত পরিণতিতে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়। আমরা ঠিকই কাঙ্ক্ষিত মুক্তি পেলাম, কিন্তু আবু সাঈদের জীবনের বিনিময়ে।

জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানকে আমরা ছাত্র-জনতা দ্বিতীয় স্বাধীনতা হিসেবে গণ্য করি। বিগত ১৫ বছরের যে পরাধীনতা, সেই পরাধীনতা-চাটুকারিতার জায়গা থেকে বিপ্লবী জনতা বেরিয়ে আসার প্রাণপণ প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে। এতদিনের জঞ্জাল সরাতে হয়তো কিছুটা সময়ের প্রয়োজন বলে মনে করি। আমরা আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার পাহারাদার হিসেবে এখনো মাঠে লড়াই করে যাচ্ছি। সামনেও তা অব্যাহত থাকবে- যতক্ষণ পর্যন্ত এ গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা পূরণ না হয়।

আমাদের বিশ্বাস, আগামীর বাংলাদেশ হবে দেশের গণমানুষের। যেখানে প্রতিটি মানুষের অধিকার সমুন্নত থাকবে। সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা পাবে। বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এই বাস্তবতায় ‘গণঅভ্যুত্থান’ কেবল একটি দমনমূলক শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী জনতার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়; এটি এক নতুন সমাজব্যবস্থা নির্মাণের গভীর আকাঙ্ক্ষারও প্রতীক। এই আকাঙ্ক্ষা একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণমুখী ও মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্নকে ধারণ করে, যেখানে নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পায় নৈতিকতা, যুক্তি ও মানবিক বোধের ভিত্তিতে। এখানে ‘ইনসাফ’ বা ন্যায়ের ধারণাটি আবেগনির্ভর কোনো কল্পনা নয়, বরং এটি একটি রূপান্তরধর্মী দার্শনিক ও রাজনৈতিক চেতনা; যার শিকড় বিস্তৃত মানবসভ্যতার গভীরে। জুলাই আমাদের অনেক শিখিয়েছে। সাধারণ মানুষের ঐক্য পারে না এমন কিছুই নেই, এটাই জুলাইয়ের প্রথম শিক্ষা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার প্রেরণাও আমরা পাই জুলাইয়ের আন্দোলন থেকে।

২০২৪ সালের জুলাই আর ২০২৫ সালের জুলাই সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভীতসন্ত্রস্ত একটি পরিবেশ থেকে আমরা মুক্ত স্বাধীন পরিবেশে ফিরতে পেরেছি। গত জুলাইয়ে যে ধরনের অন্যায়-অবিচার ছিল, যে পরিমাণ মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, সেসব এখন নেই। গণমাধ্যমসহ সবকিছুতে এখন অনেকটা মুক্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে এ কথা সত্য যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে ধরনের অরাজনৈতিক ঐক্য তৈরি হয়েছিল, তা নানা কারণে কিছুটা যেন বিচ্যুত হয়েছে। অথচ দেশ গড়ার জন্য সেই ঐক্যটা জরুরি ছিল। এখন জুলাইয়ে যারা অভ্যুত্থান করেছেন তাদের মধ্যে ঐক্যে ফাটল, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বিধা বিভক্তি। এই বোঝাপড়াটা না থাকার কারণে জুলাই সনদ কিংবা জুলাই ঘোষণাপত্র আটকে আছে। এটি খুব দুঃখজনক।

আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের রুহের মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা করছি। জুলাই যোদ্ধাদের যারা দেশ গড়ায় কাজ করছেন, তাদের শ্রদ্ধা ও সালাম জানাই। রাষ্ট্র যেন শহীদ ও আহতদের পরিবারের পাশে থাকে, তাদের ঋণ যেন স্বীকার করে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে যেমন ৭১ ভুলিনি, তেমনিভাবে ২৪-ও ভুলবো না- লালন করবো আমাদের স্মৃতিতে। শহীদ আবু সাঈদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সালাম।

লেখক: কেন্দ্রীয় সদস্য, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ